সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার ৭ উপায়
অনলাইন ডেস্ক | ১২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:২৭
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে শিশুদের বাইরে হওয়া এক প্রকার বন্ধই ছিল বলা যায়, সেসময় ঘরবন্দী শিশুরা সময় কাটাতে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া লকডাউনে স্কুলের পড়াশোনা চলছে এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সেদিক দিয়েও ইন্টারনেট এখন আপনার সন্তানের নিত্য সঙ্গী।
ইন্টারনেটের ওপর শিশুদের এই নির্ভরশীল হয়ে পড়া কতটুকু নিরাপদ? তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন বাবা-মায়েরা? এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ করতে বাবা-মা কে মূলত দুটি জিনিস নজরদারিতে রাখতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে যে, শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো ধরনের বিপদে পড়ছে কি না। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তারা কোনো আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে কিনা।
তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌলিক কিছু জিনিসে পরিবর্তন এনে একটু সচেতন হলেই শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বা তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে-
১. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন
শিশুদের যদি কোনো ডিভাইস দেয়া হয় তাহলে সেটিতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করাটাই নিরাপদ বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘গুগলে একটা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম আছে। যা ব্যবহার করে শিশু কী দেখছে তার ওপর নজরদারি করা সম্ভব।’
তিনি যে পরামর্শটি দিয়েছেন তা হচ্ছে, শিশুদের যে ডিভাইসটি দেয়া হলো সেটি চালু করতে হলে একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দরকার হয়। আর এটি যদি জি-মেইল হয় তাহলে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এটিকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাকাউন্ট হিসেবে খোলা যায়।
শিশুদের ই-মেইল অ্যাকাউন্টটি খোলার সময় তার জন্ম তারিখটি সংযুক্ত করার পর সেটি যদি ১৩ বছরের নিচে হয় তাহলে, গুগল আপনা-আপনিই বলবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের অধীনে হবে। আপনি করতে চান কিনা।
সেক্ষেত্রে জানতে চাওয়া হবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি অন্য কার অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। অর্থাৎ সেখানে যেকোনো একজন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট চাইবে। এখানে বাবা কিংবা মায়ের একটা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দেয়ার সুযোগ থাকে।
এরপর থেকে এই জি-মেইল অ্যাকাউন্ট পুরো ডিভাইসের অ্যাকাউন্ট লগ-ইন করা হবে তখন সে এটি দিয়ে কী কী খুঁজলো, কী কী অ্যাপ ইনস্টল করলো, ইউটিউব-ফেসবুকে কী দেখল-সব কিছু তখন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে দেখা যাবে। এমনকি ওই ডিভাইসটি নিয়ে শিশু কোথায় গেলো সেই স্থানটিও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
২. কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ইনস্টল করুন
তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘প্যারেন্টাল সেফ ব্রাউজার একটি অ্যাপ আছে। এটা যদি শিশুর ডিভাইসে ইনস্টল করা হলে এটি ব্যবহার করে কোনো ধরনের অ্যাডাল্ট কনটেন্ট দেখতে পারবে না শিশু।’
ইউটিউব কিডস নামে একটি অ্যাপ আছে যেটি শিশুদের কথা মাথায় রেখেই কনটেন্ট তৈরি করে। তবে এটি এখনো বাংলাদেশে নেই বলে জানান সেলিম। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
অনেক সময় দেখা যায় যে, বাবা বা মায়ের ডিভাইস-ই শিশু ব্যবহার করে থাকে। সেক্ষেত্রে সেফ ব্রাউজার-প্যারেন্টাল কন্ট্রোল নামে একটা অ্যাপস আছে। সেটি মোবাইল, ল্যাপটপ বা পিসিতে ইনস্টল করে যখন বাচ্চারা ব্যবহার করবে তখন সেটি চালু করে রাখা সম্ভব বলে জানান তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘এই অ্যাপটি এনাবল-ডিসাবল করার অপশন আছে। এটি প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘সিকিউরিটি বিষয়ক আরো অ্যাপস আছে যেগুলো ইনস্টল করে রাখলে অন্যান্য অ্যাপসেও যাতে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট না আসে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সেলিম বলেন, ‘পিসি বা ল্যাপটপের ব্রাউজারে আলাদা ছোট প্লাগ-ইনস এর মতো ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ইনস্টল করে রাখলে সেটিও অ্যাডাল্ট কনটেন্ট আসা বন্ধ করে দেয়। এমনকি সার্চ করলেও পাওয়া আসবে না। এসব ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ফ্রিতে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।’
৩. চাইল্ড ভার্সন অপশনটি ব্যবহার করুন
অ্যাম্বার অ্যাট হোম এর প্রধান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের চাইল্ড ভার্সন আছে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয়া যায় যেটি তারা ব্যবহার করলেও অভিভাবকদের সুপারভাইজ করার সুযোগ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে বাচ্চাদের ব্যবহারের জন্য একটা অপশন আছে। মেসেঞ্জারেও অপশন আছে। সেখানে কেউ আপনার বাচ্চাকে অনুরোধ বা রিকোয়েস্ট পাঠালে আপনার কাছেও সেটি আসবে। আপনি অনুমতি দিলে তারা চ্যাট করতে পারবে।’
৪. ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সময় সচেতন হোন
বাংলাদেশে বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছেন যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন। তবে যে কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগটি নেয়া হচ্ছে তাদের বাচ্চাদের জন্য সেফ ইন্টারনেট-এর ফিচারটি আছে কিনা সেটি যাচাই করে নেয়াটা ভালো।
এই ফিচারটি থাকলে সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছ থেকেই কিছু সাইট বা কনটেন্ট ব্লক করে দেয়ার ব্যবস্থা থাকে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘ওয়াইফাই সংযোগের জন্য আমরা যে অ্যাকসেস পয়েন্ট বা ডিভাইস যেমন রাউটার ব্যবহার করি সেগুলোর বেশির ভাগ গুলোতেই কিছু সুবিধা থাকে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়।’
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একবার ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এগুলোর মাধ্যমে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আর ঘেঁটে দেখা হয় না।
সুমন আহমেদ বলেন, ‘এগুলোর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড নিজে নিয়ে নিতে হবে যাতে এর ওপর কন্ট্রোল থাকে। এর মাধ্যমে ল্যাপটপ থেকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের ফিচারগুলো এনাবল বা চালু করে দিতে হবে।’
৫. ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় বেধে দিন
শিশুরা কতক্ষণ অনলাইন বা ইন্টারনেটে থাকবে তার একটা নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে ইন্টারনেট সংযোগ বাসায় কখন কখন থাকবে আর কখন থাকবে না সেটির একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।’
এক্ষেত্রে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন তাদের পোর্টালে ঢুকে একটা আবেদনের মাধ্যমে সংযোগের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়া যায়।
আবার এটি ব্যক্তি পর্যায়েও করা যায় বলে জানান সুমন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভালো মানের যেসব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আছে তাদের কাছে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের একটা ফিচার আছে। যেখানে নির্ধারণ করা যায় যে, কোন কোন ডিভাইসে কখন ইন্টারনেট থাকবে, কোন কোন কনটেন্ট থাকবে, কোন কোন অ্যাপস থাকবে কোনটা থাকবে না।’
এছাড়া ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থা আছে। এটি চালু থাকলে কোনোভাবেই কিছু কনটেন্ট শিশুদের কাছে আসবে না।
ল্যাপটপসহ যেকোনো ডিভাইস এবং ব্রাউজারেও এসব ফিচার রয়েছে। এগুলো অন বা চালু করে দেয়া উচিত বলে জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ।
৬. শিশুর সঙ্গে আপনিও অংশ নিন
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনিও শিশুর সঙ্গে বসুন। শিক্ষামূলক বিভিন্ন চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। তাদের সেগুলো দেখতে উৎসাহিত করুন। নতুন কিছু শিখতে বা তৈরি করতে তাদের আগ্রহী করে তুলুন।
এ বিষয়ে সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘ইউটিউব কিংবা অন্য সাইটগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী যে বিষয়গুলো দেখে সেই একই ধরনের বিষয় বা কন্টেন্টগুলোই পরামর্শ বা সাজেশন হিসেবে আসতে থাকে।’
আর এ জন্যই শিশুদের আগ্রহ অনুযায়ী ভালো ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট দেখতে উৎসাহিত করলে তাদের কাছে সেসব কনটেন্টই আসবে।
৭. আপনি কী দেখছেন সে বিষয়েও সতর্ক হোন
বাংলাদেশে সাধারণত কোনো একটি বাড়িতে একটি ওয়াইফাই সংযোগ নেয়া হয় এবং বাড়ির প্রতিটি সদস্য সেই একই ওয়াইফাই শেয়ার করে ব্যবহার করে। প্রতিটি ওয়াইফাই ডিভাইসের একটা নির্দিষ্ট আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নম্বর বা অ্যাড্রেস থাকে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ওই বাড়ির বাবা-মা বা প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যরা যদি ওই ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে উল্টা-পাল্টা কিছু সার্চ করে বা দেখে, তাহলে সেগুলো ওই আইপি অ্যাড্রেসেই জমা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ওই ইন্টারনেট ব্যবহার করে যদি বাড়ির শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও কিছু ব্রাউজ করে তাহলে ওই জিনিস বা কনটেন্টগুলো তাদেরও সামনে চলে আসে।’
আর তাই শিশুদের এ ধরনের কনটেন্ট থেকে দূরে রাখতে ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে বলে মতো দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
তবে এক্ষেত্রে শিশুদের ডিভাইসে যদি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল জি-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি অ্যাডাল্ট কনটেন্ট শিশুদের থেকে ফিল্টার করে দূরে রাখে বলে জানান সেলিম।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:২৭

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে শিশুদের বাইরে হওয়া এক প্রকার বন্ধই ছিল বলা যায়, সেসময় ঘরবন্দী শিশুরা সময় কাটাতে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া লকডাউনে স্কুলের পড়াশোনা চলছে এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সেদিক দিয়েও ইন্টারনেট এখন আপনার সন্তানের নিত্য সঙ্গী।
ইন্টারনেটের ওপর শিশুদের এই নির্ভরশীল হয়ে পড়া কতটুকু নিরাপদ? তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন বাবা-মায়েরা? এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ করতে বাবা-মা কে মূলত দুটি জিনিস নজরদারিতে রাখতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে যে, শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো ধরনের বিপদে পড়ছে কি না। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তারা কোনো আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে কিনা।
তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌলিক কিছু জিনিসে পরিবর্তন এনে একটু সচেতন হলেই শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বা তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে-
১. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন
শিশুদের যদি কোনো ডিভাইস দেয়া হয় তাহলে সেটিতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করাটাই নিরাপদ বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘গুগলে একটা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম আছে। যা ব্যবহার করে শিশু কী দেখছে তার ওপর নজরদারি করা সম্ভব।’
তিনি যে পরামর্শটি দিয়েছেন তা হচ্ছে, শিশুদের যে ডিভাইসটি দেয়া হলো সেটি চালু করতে হলে একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দরকার হয়। আর এটি যদি জি-মেইল হয় তাহলে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এটিকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাকাউন্ট হিসেবে খোলা যায়।
শিশুদের ই-মেইল অ্যাকাউন্টটি খোলার সময় তার জন্ম তারিখটি সংযুক্ত করার পর সেটি যদি ১৩ বছরের নিচে হয় তাহলে, গুগল আপনা-আপনিই বলবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের অধীনে হবে। আপনি করতে চান কিনা।
সেক্ষেত্রে জানতে চাওয়া হবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি অন্য কার অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। অর্থাৎ সেখানে যেকোনো একজন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট চাইবে। এখানে বাবা কিংবা মায়ের একটা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দেয়ার সুযোগ থাকে।
এরপর থেকে এই জি-মেইল অ্যাকাউন্ট পুরো ডিভাইসের অ্যাকাউন্ট লগ-ইন করা হবে তখন সে এটি দিয়ে কী কী খুঁজলো, কী কী অ্যাপ ইনস্টল করলো, ইউটিউব-ফেসবুকে কী দেখল-সব কিছু তখন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে দেখা যাবে। এমনকি ওই ডিভাইসটি নিয়ে শিশু কোথায় গেলো সেই স্থানটিও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
২. কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ইনস্টল করুন
তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘প্যারেন্টাল সেফ ব্রাউজার একটি অ্যাপ আছে। এটা যদি শিশুর ডিভাইসে ইনস্টল করা হলে এটি ব্যবহার করে কোনো ধরনের অ্যাডাল্ট কনটেন্ট দেখতে পারবে না শিশু।’
ইউটিউব কিডস নামে একটি অ্যাপ আছে যেটি শিশুদের কথা মাথায় রেখেই কনটেন্ট তৈরি করে। তবে এটি এখনো বাংলাদেশে নেই বলে জানান সেলিম। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
অনেক সময় দেখা যায় যে, বাবা বা মায়ের ডিভাইস-ই শিশু ব্যবহার করে থাকে। সেক্ষেত্রে সেফ ব্রাউজার-প্যারেন্টাল কন্ট্রোল নামে একটা অ্যাপস আছে। সেটি মোবাইল, ল্যাপটপ বা পিসিতে ইনস্টল করে যখন বাচ্চারা ব্যবহার করবে তখন সেটি চালু করে রাখা সম্ভব বলে জানান তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘এই অ্যাপটি এনাবল-ডিসাবল করার অপশন আছে। এটি প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘সিকিউরিটি বিষয়ক আরো অ্যাপস আছে যেগুলো ইনস্টল করে রাখলে অন্যান্য অ্যাপসেও যাতে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট না আসে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সেলিম বলেন, ‘পিসি বা ল্যাপটপের ব্রাউজারে আলাদা ছোট প্লাগ-ইনস এর মতো ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ইনস্টল করে রাখলে সেটিও অ্যাডাল্ট কনটেন্ট আসা বন্ধ করে দেয়। এমনকি সার্চ করলেও পাওয়া আসবে না। এসব ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ফ্রিতে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।’
৩. চাইল্ড ভার্সন অপশনটি ব্যবহার করুন
অ্যাম্বার অ্যাট হোম এর প্রধান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের চাইল্ড ভার্সন আছে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয়া যায় যেটি তারা ব্যবহার করলেও অভিভাবকদের সুপারভাইজ করার সুযোগ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে বাচ্চাদের ব্যবহারের জন্য একটা অপশন আছে। মেসেঞ্জারেও অপশন আছে। সেখানে কেউ আপনার বাচ্চাকে অনুরোধ বা রিকোয়েস্ট পাঠালে আপনার কাছেও সেটি আসবে। আপনি অনুমতি দিলে তারা চ্যাট করতে পারবে।’
৪. ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সময় সচেতন হোন
বাংলাদেশে বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছেন যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন। তবে যে কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগটি নেয়া হচ্ছে তাদের বাচ্চাদের জন্য সেফ ইন্টারনেট-এর ফিচারটি আছে কিনা সেটি যাচাই করে নেয়াটা ভালো।
এই ফিচারটি থাকলে সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছ থেকেই কিছু সাইট বা কনটেন্ট ব্লক করে দেয়ার ব্যবস্থা থাকে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘ওয়াইফাই সংযোগের জন্য আমরা যে অ্যাকসেস পয়েন্ট বা ডিভাইস যেমন রাউটার ব্যবহার করি সেগুলোর বেশির ভাগ গুলোতেই কিছু সুবিধা থাকে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়।’
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একবার ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এগুলোর মাধ্যমে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আর ঘেঁটে দেখা হয় না।
সুমন আহমেদ বলেন, ‘এগুলোর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড নিজে নিয়ে নিতে হবে যাতে এর ওপর কন্ট্রোল থাকে। এর মাধ্যমে ল্যাপটপ থেকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের ফিচারগুলো এনাবল বা চালু করে দিতে হবে।’
৫. ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় বেধে দিন
শিশুরা কতক্ষণ অনলাইন বা ইন্টারনেটে থাকবে তার একটা নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে ইন্টারনেট সংযোগ বাসায় কখন কখন থাকবে আর কখন থাকবে না সেটির একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।’
এক্ষেত্রে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন তাদের পোর্টালে ঢুকে একটা আবেদনের মাধ্যমে সংযোগের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়া যায়।
আবার এটি ব্যক্তি পর্যায়েও করা যায় বলে জানান সুমন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভালো মানের যেসব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আছে তাদের কাছে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের একটা ফিচার আছে। যেখানে নির্ধারণ করা যায় যে, কোন কোন ডিভাইসে কখন ইন্টারনেট থাকবে, কোন কোন কনটেন্ট থাকবে, কোন কোন অ্যাপস থাকবে কোনটা থাকবে না।’
এছাড়া ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থা আছে। এটি চালু থাকলে কোনোভাবেই কিছু কনটেন্ট শিশুদের কাছে আসবে না।
ল্যাপটপসহ যেকোনো ডিভাইস এবং ব্রাউজারেও এসব ফিচার রয়েছে। এগুলো অন বা চালু করে দেয়া উচিত বলে জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ।
৬. শিশুর সঙ্গে আপনিও অংশ নিন
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনিও শিশুর সঙ্গে বসুন। শিক্ষামূলক বিভিন্ন চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। তাদের সেগুলো দেখতে উৎসাহিত করুন। নতুন কিছু শিখতে বা তৈরি করতে তাদের আগ্রহী করে তুলুন।
এ বিষয়ে সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘ইউটিউব কিংবা অন্য সাইটগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী যে বিষয়গুলো দেখে সেই একই ধরনের বিষয় বা কন্টেন্টগুলোই পরামর্শ বা সাজেশন হিসেবে আসতে থাকে।’
আর এ জন্যই শিশুদের আগ্রহ অনুযায়ী ভালো ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট দেখতে উৎসাহিত করলে তাদের কাছে সেসব কনটেন্টই আসবে।
৭. আপনি কী দেখছেন সে বিষয়েও সতর্ক হোন
বাংলাদেশে সাধারণত কোনো একটি বাড়িতে একটি ওয়াইফাই সংযোগ নেয়া হয় এবং বাড়ির প্রতিটি সদস্য সেই একই ওয়াইফাই শেয়ার করে ব্যবহার করে। প্রতিটি ওয়াইফাই ডিভাইসের একটা নির্দিষ্ট আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নম্বর বা অ্যাড্রেস থাকে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ওই বাড়ির বাবা-মা বা প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যরা যদি ওই ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে উল্টা-পাল্টা কিছু সার্চ করে বা দেখে, তাহলে সেগুলো ওই আইপি অ্যাড্রেসেই জমা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ওই ইন্টারনেট ব্যবহার করে যদি বাড়ির শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও কিছু ব্রাউজ করে তাহলে ওই জিনিস বা কনটেন্টগুলো তাদেরও সামনে চলে আসে।’
আর তাই শিশুদের এ ধরনের কনটেন্ট থেকে দূরে রাখতে ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে বলে মতো দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
তবে এক্ষেত্রে শিশুদের ডিভাইসে যদি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল জি-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি অ্যাডাল্ট কনটেন্ট শিশুদের থেকে ফিল্টার করে দূরে রাখে বলে জানান সেলিম।