
শীতের রাতে যতই গরম পোশাক পরে গা-গরম করুন না কেন, পায়ে মোজা না পরলে কিন্তু ঠান্ডা কাটতে চায় না। অনেকেই আবার শীতের রাতে উষ্ণতা পেতে মোজা পরেই ঘুমাতে যান। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুরা পায়ে মোজা পরেই ঘুমাতে যায়। কিন্তু ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে এই অভ্যাস অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করছে, তা কি আপনি জানেন? আসুন, জেনে নিই, পায়ে মোজা পরে ঘুমাতে গেলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
রক্ত সঞ্চালন
রাতে পায়ে মোজা পরে ঘুমালে দেহে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। বেড়ে যেতে পারে হার্টরেট। ঘুমের মধ্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, রক্ত সঞ্চালন সঠিক না হলে মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্যা হতে পারে।
পায়ের ত্বকের সমস্যা
দীর্ঘক্ষণ পায়ে মোজা পরে থাকলে পায়ের চামড়া ঘেমে ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি সেই মোজা নাইলনের হয়, তা হলে ক্ষতি আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষজ্ঞরা সব সময়ে সুতির জিনিস পরার পরামর্শ দেন। এ ছাড়াও দীর্ঘক্ষণ মোজা পরে থাকলে ত্বকে র্যাশ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
মোজা ছাড়া কী কী উপায়ে পা গরম রাখবেন?
সর্ষের তেল বা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে পায়ের তলায় মালিশ করতে পারেন; পায়ের পাতায় গরম পানির সেঁক দিতে পারেন; হট প্যাড গরম করেও পায়ে সেঁক দিতে পারেন।
চলছে শীত মৌসুম। এই সময় ফুলকপি খাবেন না, তা কি হয়? ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; যা রান্না কিংবা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। তবে ফুলকপির পাতাও কম উপকারী নয়। অনেকেই ফুলকপির পাতা ফেলে দেন। কিন্তু এর গুণ জানলে এমন করার আগে দু’বার ভাববেন।
ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে
মেদ ঝরাতে পরিশ্রম কম করেন না কেউই। অথচ হাতের সামনে এমন উপকারী জিনিস থাকতেও, অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দিচ্ছি। ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। ওজন কমাতে চাইলে অতি অবশ্যই রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন এই পাতা। শুধু লেটুস নয়, সালাদেও এই পাতা রাখতে পারেন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
গবেষণা বলছে, ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি, চোখ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করে। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন ফুলকপির পাতার উপর। রাতকানা রোগের আশঙ্কা দূর করতে এই পাতা কার্যকর।
হাড়ের যত্নে
শীতকালে হাড়ের বাড়তি খেয়াল রাখার দরকার পড়ে। তাই চিকিৎসকরা ক্যালশিয়ামে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন। ফুলকপির পাতা হল ক্যালশিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এমনকি, ঋতুবন্ধের পরেও অনেক শারীরিক সমস্যা এড়াতে খেতে পারেন ফুলকপির পাতা।
সন্তানের বেড়ে ওঠায়
ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদরা শিশুর বা়ড়ন্ত বয়সে এমন কিছু খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন, যেগুলো তাদের উচ্চতা, ওজন এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। ফুলকপির পাতা সেই খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
নারী শরীরে অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি প্রচলিত সমস্যা। সাধারণত একজন নারীর জীবনে ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পর থেকে ২১ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে যেটি হয় সেটি নিয়মিত ঋতুস্রাব। আর যদি ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হয় তবে সেটিকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব বলে। তবে ঋতুস্রাব হতে খুব বেশি দেরি হওয়া একেবারেই ভাল না। বিভিন্ন কারণে এমন হতে পারে। তবে কয়েকটি খাবার আছে যেগুলো অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আদা চা
ঠান্ডা লাগা থেকে সর্দি-কাশি— সুস্থ থাকতে আদা চায়ের জুড়ি মেলা ভার। আদায় ‘জিঞ্জেরল’ নামক একটি উপাদান থাকে। যা শরীরের প্রদাহনাশক সমস্যা দূর করে। আদা চা খেলে ঋতুস্রাবকালীন সময়ের অনেক সমস্যা দূর হয়।
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল
শরীরের যত্ন নিতে ভিটামিন সি দারুণ উপকারী। দাঁতের যত্ন থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো— ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকর। কমলালেবু, কিউয়ি, পাতিলেবু, স্ট্রবেরির মতো ফলে ভিটামিন সি ভরপুর পরিমাণে থাকে। সঠিক সময়ে ঋতুস্রাব হোক তা চাইলে ভরসা রাখতে পারেন এই ধরনের ফলের উপর।
গুড়
গুড়ে পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের মাত্রা বেশি। নিয়মিত গুড় খেলে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা অনেকটা কমবে। সেই সঙ্গে শরীর ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্যে করে গুড়। তাই ঋতুস্রাবকালীন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গুড় সাহায্য করতে পারে।
হলুদ
শীতকালীন সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। অনেকেই অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভরসা রাখতে পারেন হলুদের ওপর। গরম দুধে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে খেলে এ ক্ষেত্রে দারুণ উপকার পাবেন।
দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা চলতে থাকলে, ঘরোয়া টোটকায় ভরসা না রেখে বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কেন ঋতুস্রাব দেরিতে হচ্ছে, তার কারণ বাইরে থেকে সব সময়ে বোঝা যায় না। তাই এমন চলতে থাকলে অবশ্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি।
চুলকে ভাল রাখতে শ্যাম্পুর কোনও বিকল্প নেই। বিশেষ করে যাদের মাথার ত্বক খুব তৈলাক্ত, শ্যাম্পু করা ছাড়া তাদের উপায় থাকে না।তবে বাজারচলতি শ্যাম্পুতেও মিশে থাকে রাসায়নিক নানা উপাদান। ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের হাল আরও শোচনীয় হতে থাকে। তবে শ্যাম্পুর কিছু বিকল্প ঘরোয়া উপায় আছে, যেগুলো ব্যবহার করলে শ্যাম্পুর মতোই সুফল পাবেন।
আপেল সিডার ভিনেগার
ওজন ঝরতে আপেল সিডার ভিনেগার দারুণ কার্যকর। মেদ ঝরানোর পাশাপাশি চুল পরিষ্কার রাখতেও এই ভিনেগার সাহায্য করে। এই ভিনেগারে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মতো উপাদান। তা মাথার ত্বকের ময়লা, মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। খুশকির সমস্যা থাকলে এই ভিনেগার দিয়ে চুল ধুতে পারেন। সুফল পাবেন।
লেবুর রস
শ্যাম্পু করতে গিয়ে দেখলেন বোতল ফাঁকা। কিন্তু শ্যাম্পু না করলেও চলবে না। তা হলে উপায়? স্নানঘর থেকে সোজা চলে যান রান্নাঘরে। একটু খুঁজলেই পাতিলেবু পাওয়া যাবে। শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে মাথায় মাখুন লেবুর রস। লেবুর রস খুশকির সমস্যা দূর করতেও দারুণ উপকারী। গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে তার পরেই ব্যবহার করুন। বেশি উপকার পাবেন।
অ্যালোভেরা
ভিটামিন, মিনারেলস, এনজাইম, সেলিসাইলিক অ্যাসিড-সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বকে জমে থাকা তেল র্যাশ, ব্রণর জন্ম দেয়। অ্যালোভেরা এই সব কিছুর সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান চুলের যত্ন নেয়। শ্যাম্পুর পরিবর্তে চোখ বন্ধ করে ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা।
পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস— সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম শর্ত। কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তার সঙ্গে মন খুলে সব বলতে পারছেন মানেই ধরে নেওয়া যায় সম্পর্কের ভিত শক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। সম্পর্ক যদি খোলা পাতার মতো হয়, তার চেয়ে ভাল আর কিছু হয় না। সঙ্গীকে উজাড় করে দেওয়ার যেমন একটি ইতিবাচক দিক আছে, তেমনই সুস্থ সম্পর্কের জন্য কিছু কিছু কথা গোপন রাখাও জরুরি। সম্পর্কে ভারসাম্য রাখতে হয়। কী বলবেন আর কতটা বলবেন, সেটা মাথায় রাখা প্রয়োজন। তবে এমন কিছু কথা রয়েছে, যেগুলো সঙ্গীর কাছ থেকে অবলীলায় গোপন করে যেতে পারেন। এতে ভুল বোঝাবুঝি কম হয়।
গোপন অভ্যাস
এমন অনেক কিছু থাকে, যা একান্ত প্রিয় মানুষটিকে বলতেও অস্বস্তি হয়। আপনার যদি মনে হয়, যে অভ্যাসটিতে আপনি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু প্রকাশ্যে বলতে অস্বস্তি হচ্ছে, তাহলে না বলাই ভাল। জীবনসঙ্গী মানেই সব বলতে হবে, তার কোনও মানে নেই। কিছু কথা নিজের মনে চেপে রাখা দোষের নয়।
সঙ্গীর বাড়ির লোককে নিয়ে ধারণা
পৃথিবীতে সকলেই পছন্দমতো হবে, তার কোনও মানে নেই। হতেই পারে আপনার স্বামী কিংবা স্ত্রীর বাড়ির কোনও সদস্যকে আপনার পছন্দ নয়। সেটা সঙ্গীকে বলতে নাও পারেন। আপনি আলাদা মানুষ। আপনার নিজস্ব কিছু পছন্দ-অপছন্দ থাকবে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে সেটা নিজের মনের মধ্যে চেপে রাখুন। সব কিছু বললে প্রভাব পড়তে পারে সম্পর্কে।
প্রাক্তনের ভালো দিক
নতুন সম্পর্কে পা দিয়ে পিছনে ফিরে তাকানো বোকামি। অনেকেই মাঝেমাঝে সঙ্গীর সঙ্গে প্রাক্তনের কথা বলতে গিয়ে তার ভাল দিকগুলো বলে ফেলেন। বাইরে থেকে বুঝতে না পারলেও হয়তো আপনার সঙ্গীর মনে এগুলোই খারাপ লাগার জন্ম দিচ্ছে। সম্পর্কের যত্ন নিতে এগুলো এড়িয়ে চলুন।
কোন খাতে অর্থ ব্যয় করছেন
সংসার গড়ে তুলতে দু’জনেরই সমান অবদান প্রয়োজন। তবে আপনার টাকা আপনি কোন কোন খাতে খরচ করছেন, তা সঙ্গীকে জানানো জরুরি নয়। জীবনের যে কথাগুলো গোপনীয়তার চাদরে মুড়ে রাখলে ভাল, তার মধ্যে অন্যতম হল এটি।
কথায় বলে ‘মাঘের শীতে বাঘে পালায়’। ‘মাঘ’ হাড়কাঁপানো শীতের মাস। অথচ বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। এই সময়ে কপালে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা। বাসে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই হাত চলে যাচ্ছে ফ্যানের সুইচে। কিন্তু জানুয়ারি মাসে কি এমন হওয়ার কথা ছিল?
আবহাওয়া অফিস বলছে, আপাতত তাপমাত্রার তারতম্য চলবে। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে তাপমাত্রা আবার খানিকটা নামতে পারে। মিলতে পারে শীতের আমেজ।
কখনও শীত আর কখনও ঠান্ডার এই আবহাওয়া প্রভাব ফেলে শরীরের ওপরও। শীতকালীন রোগবালাই তো ছিলই, তার ওপর আবহাওয়া বদলের এই খবরে শরীর খারাপের আশঙ্কা জাঁকিয়ে বসছে মনে। আবহাওয়ার ওঠানামার প্রভাবে শারীরিক কী কী সমস্যা হতে পারে? কী ভাবেই বা প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ থাকা সম্ভব।
এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার উপায় জানালেন চিকিৎসক। ভারতের চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান মুখোপাধ্যায় বলেন, আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনায় মূলত দু’টি সমস্যা হয়। সর্দি-কাশি আর পেটের সমস্যা। কখনও খুব ঠান্ডা, আবার এই দরদর করে ঘাম ঝরছে কপাল থেকে। এক বার সোয়েটার, পরক্ষণেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের হাওয়ায় স্বস্তি পাওয়া। এ সব তো লেগেই রয়েছে। ফলে বিভিন্ন আবহাওয়ার সংস্পর্শে এসে খারাপ হচ্ছে শরীর। ঘাম বসে আরও বেশি ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে। এ বার এটা যে শীতকালে ঠান্ডা লেগে হচ্ছে নাকি, আবহাওয়ার হেরফেরে হচ্ছে, তা অনেক সময়ে বোঝা যায় না। তাতেই আরও সমস্যা বাড়ে।
কেন হয় এমন? চিকিৎসকের কথায়, ঠান্ডা আর গরম মিশ্রিত আবহাওয়ায় পেট খারাপ হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যায়। শীতকাল মানেই একের পর এক উৎসব চলতেই থাকে। সেই আমেজ এখনও কাটেনি। ফলে বাইরের খাবার খাওয়াদাওয়াও বজায় আছে। একে তো আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি, তার উপর ক্রমাগত তেল-মশলাদার খাবার খেলে চাপ পড়ে পেটের উপর। এটা ছাড়াও শীতকালে পানি খাওয়ার প্রবণতা একেবারে কমে যায়। প্রস্রাবের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে চলবে না।
এই সময়ে সুস্থ থাকতে কী কী সতর্কতা মেনে চলা জরুরি? অদ্রিজা বলেন, ঠান্ডা পুরোপুরি চলে যায়নি। সকালের দিকে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে গরম লাগলেও, রাতের দিকে কিন্তু ঠান্ডা পড়ে। তাই মোটা সোয়েটার না পরলেও অন্তত পাতলা একটা চাদর সঙ্গে রাখুন। দরকার মতো গায়ে জড়িয়ে নিলেই হল। বাইরের খাবার খাওয়াও বন্ধ করলে ভাল। তাতে সুস্থ থাকবে পেট। বাইরে থেকে ফিরেই ফ্যান কিংবা এসি না চালানোই ভালো। গরম লাগছে মানেই ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না। তাতে মারাত্মক ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকলে নরম পানীয়, আইসক্রিম এই সময়ে এড়িয়ে চলা জরুরি। তাতে অ্যালার্জির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
যশরাজ ফিল্মসের হাত ধরে বড় পর্দায় শাহরুখ খানের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী বলিউড। তার 'পাঠান' বক্স অফিসে নজির গড়ছে। ভারতীয় ছবির সাফল্য পাড়ি দিয়েছে আমেরিকাতেও।
৪ বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন শাহরুখ। 'পাঠান'-এ তার অ্যাকশন দেখতে দলে দলে হলে যাচ্ছেন অনুরাগীরা। মুক্তির পর প্রথম কয়েক দিনেই বিপুল টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে এই ছবি। গড়েছে একাধিক নজির। গত বুধবার, ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় 'পাঠান'। রবিবার পঞ্চম দিনে ছবিটি বিশ্বজুড়ে ৫০০ কোটির বেশি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে দাবি, পঞ্চম দিনের শেষে 'পাঠান'-এর আয় সাড়ে ৫০০ কোটি। মুক্তির প্রথম ৪ দিনই দেশের বাজারে হাফ সেঞ্চুরি করেছিল 'পাঠান'। রবিবারও তার অন্যথা হয়নি। ৫০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে এই ছবি রবিবার দেশে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ভারতে এখন পর্যন্ত 'পাঠান'-এর মোট আয় ২৮২ কোটি টাকা। শনি ও রবিবার সপ্তাহান্তেই আরও বেশি করে এই ছবি দেখতে হলে যান মানুষ। চতুর্থ দিনে দেশের বক্স অফিসে শাহরুখের ছবির আয় ছিল ৫১ কোটি টাকা। সারা বিশ্বে এ ছবির মোট রোজগার শনিবার পর্যন্ত ছিল ৪২৯ কোটি টাকা। রবিবার এক লাফে ৫০০ কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছে 'পাঠান'।
দেশের বাইরে 'পাঠান' মোট ১০০টি দেশে মুক্তি পেয়েছে। বিদেশে ২৫০০টি পর্দায় এই ছবি দেখানো হচ্ছে। ভারতে এই ছবি চলছে সাড়ে ৫ হাজার পর্দায়। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৬৯৪টি সিনেমা হলে 'পাঠান' মুক্তি পেয়েছে। সেখানে রমরমিয়ে চলছে শাহরুখ, দীপিকা পাডুকোন এবং জন আব্রাহাম অভিনীত ছবিটি। নজির গড়েছে। উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে হিন্দি ছবি হিসাবে 'পাঠান'-এর প্রথম দিনের আয় সর্বোচ্চ। ছবিটি মুক্তির দিন ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ কোটি টাকা) আয় করেছে আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকার ৬৯৪টি সিনেমা হলে সাম্প্রতিককালে মুক্তিপ্রাপ্ত যেকোনো ছবির তুলনায় 'পাঠান'-এর গড় সবচেয়ে বেশি।
আয়ের গড় হিসাবে হলিউডকেও টেক্কা দিচ্ছেন শাহরুখ। এই নিরিখে হলিউডের ৩টি ছবি কেবল 'পাঠান'-এর সামনে রয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সেরা গড়ের তালিকায় তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্থানে শেষ করতে পারে 'পাঠান'। তালিকায় 'পাঠান'-এর আগে রয়েছে 'অ্যাভাটার : দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’, 'পুস ইন দ্য বুটস : দ্য লাস্ট উইশ' এবং 'এ ম্যান কলড ওটো'।
কাস্টমস লাইসেন্সিং বিধিমালা বাতিলের দাবিতে আজ থেকে দুই দিন দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান।
লিখিত বক্তব্যে সুলতান হোসেন খান জানান, কাস্টমস এজেন্টস লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০১৬ তে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সন্নিবেশিত থাকায় বিধিমালা জারির পর ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হলেও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিধিমালা সংশোধনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
‘উপরন্তু ২০২০-২০২১ সালের বাজেট প্রস্তাবনার সঙ্গে আরও কঠিন শর্ত যুক্ত করে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ জারি করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে উত্থাপিত লাইসেন্সিং রুলের কয়েকটি বিধি ও উপবিধি সংশোধনীর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত বাজেটেও কোনোরূপ সংশোধনী আনা হয়নি।’
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত বছরের জুনে সারা দেশে একদিনের কর্মবিরতি পালন করে সিঅ্যান্ডএফ সংশ্লিষ্টরা। জুন মাসের শেষে আবারও দুই দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে লাইসেন্সিং রুলসহ অন্যান্য বিধিসমূহ সংশোধনের জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। এ বিষয়ে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও কার্যকর কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এর আইন ও বিধি পরিবর্তন ও সংশোধনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি সোম ও মঙ্গলবার দেশের সকল কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফেডারেশন যে সকল বিধিবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আমদানিকারকের কাছে শুল্ক করাদি পাওনা থাকলে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের লাইসেন্স নবায়ন না করার বিধান বাতিল করা, উত্তরাধিকারের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর সংশ্লিষ্ট শর্ত শিথিল করা, শুল্ককর পরিশোধ না করলে লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ড আরোপের বিধান বাতিল করা, মূল লাইসেন্স বাতিল হলে রেফারেন্স লাইসেন্স বাতিলের বিধি বাদ দেওয়া, দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান না করা, শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা-২০০০ এর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ভুলের অজুহাতে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার আদেশ বাতিলের দাবি উল্লেখযোগ্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব শামছুর রহমান, সহসভাপতি জনাব শেখ মো. মোখলেছুর রহমান (লাভলু), অর্থ সচিব এ কে এম আকতার হোসেন, বন্দর বিষয়ক সচিব জনাব মো. খায়রুল বাশার প্রমুখ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল ও মেশিনারি পণ্য নিয়ে রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি জাহাজ ‘এম,ভি আনকা সান’ ও ‘এম,ভি সাপোডিলা’ মোংলা বন্দরে ভিড়েছে। রবিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়ে আনকা সান ও সন্ধ্যা ৭টায় ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে সাপোডিলা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল মালামাল নিয়ে ভেনুটা পতাকাবাহী জাহাজ এম,ভি আনকা সান রবিবার বিকেল পৌনে ৫টায় মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। ১ হাজার ৯৭৯ প্যাকেজের ১ হাজার ৪শ মেট্রিক টন ইলেকট্রিক্যাল পণ্য নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর রাশিয়ার নভরস্কি বন্দর থেকে ছেড়ে আসে এ জাহাজটি। এ ছাড়া রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর থেকে ৪৩৬ প্যাকেজের ৫১৮ মেট্রিক টন মেশিনারি পণ্য নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে বিদেশি জাহাজ এম,ভি সাপোডিলা।
বিদেশি জাহাজ আনকা সান’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কনভেয়ার শিপিং লাইনসের খুলনার ম্যানেজার (অপারেশন শিপিং) সাধন কুমার চক্রবর্তী ও সাপোডিলা’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ইন্টারপোর্ট’র খুলনার ম্যানেজার অসিম মন্ডল জানান, বন্দর জেটিতে অবস্থান নেয়া এ জাহাজ দুটি থেকে রবিবার সন্ধ্যার পর অর্থাৎ রাত থেকে পণ্য খালাস শুরু হবে। এরপর জাহাজের এ পণ্য খালাস করে জেটিতে রাখা হবে। তারপর সোম বা মঙ্গলবার থেকে তা সড়ক পথে নেয়া হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে এসেছিল বিদেশি জাহাজ এম,ভি কামিল্লা। এ জাহাজগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত।
উল্লেখ্যে, সম্প্রতি ৭টি জাহাজ কোম্পানির ৬৯টি জাহাজে রূপপুরের মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রেক্ষিতে রূপপুরের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এম,ভি উসরা মেজরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। ওই জাহাজটির ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে ভেড়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য ওই জাহাজটি পণ্য খালাসে ভারতে গেলে সেখানেও পণ্য খালাস করতে না পারায় ফেরত যায় উসরা মেজর। যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
চলছে শীত মৌসুম। এই সময় ফুলকপি খাবেন না, তা কি হয়? ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; যা রান্না কিংবা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। তবে ফুলকপির পাতাও কম উপকারী নয়। অনেকেই ফুলকপির পাতা ফেলে দেন। কিন্তু এর গুণ জানলে এমন করার আগে দু’বার ভাববেন।
ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে
মেদ ঝরাতে পরিশ্রম কম করেন না কেউই। অথচ হাতের সামনে এমন উপকারী জিনিস থাকতেও, অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দিচ্ছি। ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। ওজন কমাতে চাইলে অতি অবশ্যই রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন এই পাতা। শুধু লেটুস নয়, সালাদেও এই পাতা রাখতে পারেন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
গবেষণা বলছে, ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি, চোখ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করে। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন ফুলকপির পাতার উপর। রাতকানা রোগের আশঙ্কা দূর করতে এই পাতা কার্যকর।
হাড়ের যত্নে
শীতকালে হাড়ের বাড়তি খেয়াল রাখার দরকার পড়ে। তাই চিকিৎসকরা ক্যালশিয়ামে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন। ফুলকপির পাতা হল ক্যালশিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এমনকি, ঋতুবন্ধের পরেও অনেক শারীরিক সমস্যা এড়াতে খেতে পারেন ফুলকপির পাতা।
সন্তানের বেড়ে ওঠায়
ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদরা শিশুর বা়ড়ন্ত বয়সে এমন কিছু খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন, যেগুলো তাদের উচ্চতা, ওজন এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। ফুলকপির পাতা সেই খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির বাধা কাটার খবর মিলেছিল গত ২১ জানুয়ারি। সেই দিনও ছিল শনিবার। এরপর দশ দিন কেটে গেলেও এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি হাতে পাননি ছবিটির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেন্সর বোর্ডের প্রতি দ্রুত চিঠি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
ফেসবুকে পেজে দেওয়া পোস্টে সোমবার ফারুকী লিখেছেন, ‘সেন্সর বোর্ডের প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমরা এখনও আপনাদের চিঠির অপেক্ষায়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আপিল বোর্ড একটা সিনেমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা রাখে। শনিবার বিকেলের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত দেশি-আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনের কল্যাণে সারা দুনিয়ার মানুষ জানে। তারা সবাই তাকিয়ে আছে। আর দেরি না করে চিঠিটা তাড়াতাড়ি পাঠান।’
বাংলাদেশকে আর বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলার অনুরোধ রাখেন ফারুকী, ‘আমরা বাংলাদেশকে আর বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলি। ওদিকে ফারাজ রিলিজ হচ্ছে তিন তারিখ (৩ ফেব্রুয়ারি)। বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে শনিবার বিকেল মুক্তির দিকে, ফারাজের সাথে একই দিন বা এক ঘণ্টা আগে হলেও।’
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি নির্মিত। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, পরমব্রত, তিশা, ইরেশ যাকেরের সঙ্গে ফিলিস্তিনি অভিনেতা ইয়াদ হুরানিও। বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই তিন দেশের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি বানাতে টানা ১৫ দিন মহড়ায় মাত্র ৭ দিনেই শুটিং শেষ করেন ফারুকী। এরপর বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হলেও দেশে সেন্সর বোর্ডে এটি আটকে দেয়।
২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দুবার দেখার পর এটি আটকে দেন মূলত বোর্ডে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির আপত্তিতে। তখন বলা হয়েছিল, ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়টি নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
যদিও ফারুকী বরাবরই বলে আসছিলেন, চলচ্চিত্রটি হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনা নিয়ে নয়, ওই ঘটনার ‘অনুপ্রেরণায়’ নির্মিত একটি কাহিনিচিত্র। তারপর ফারুকী ছাড়াও চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবাই সিনেমাটি মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিল।
গুলশান হামলা নিয়ে সম্প্রতি ভারতে নির্মিত সিনেমা ফারাজ এর মুক্তির দিন ঘোষণার পর নতুন করে শনিবার বিকেল নিয়ে সবাই সরব হয়। এর মধ্যে ফারুকীর করা আপিল আবেদন নিয়ে শুনানিতে বসে আপিল বোর্ড।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের সেই আপিল কমিটিতে রয়েছেন সংসদ সদস্য অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম, অভিনেত্রী সুচরিতা ও সাংবাদিক শ্যামল দত্ত।
ফারুকী তার এদিনের স্ট্যাটাসে সেন্সর বোর্ডকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, ‘এটা দ্রুত সমাধান করেন। আমরা হাসিমুখে সিনেমাটা রিলিজ করি। পৃথিবীর নানা দেশে সিনেমাটা দেখানো হয়েছে, হচ্ছে। এবার বাংলাদেশের মানুষের পালা।’
সেন্সর বোর্ডে সিনেমা আটকে দেওয়াকে সেকেলে চিন্তা উল্লেখ করে ফারুকী লিখেন, ‘এটাও আপনাদের ভাবার সময় আসছে, এই নতুন মিডিয়ার যুগে সিনেমা আটকানোর মতো সেকেলে চিন্তা আদৌ কোনো কাজে আসে কিনা। কারণ যে কেউ চাইলে তার ছবি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত করে দিতে পারে। ফলে ছবি আটকানোর চেষ্টা একটা পণ্ডশ্রম যা কেবল দেশের জন্য বদনাম-ই বয়ে আনতে পারে।’
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দে য়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নীল পানির চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) দেখে মনে হবে যেন উন্নত কোনো দেশের বন্দর। এই নীল জলরাশির তীরেই গড়ে উঠবে উপমহাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এই নীল পানি দেখে আশাবাদী হওয়ার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যার কারণ হলো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলের জন্য খরচ হওয়া প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার দায় পড়তে যাচ্ছে চবকের কাঁধে।
গত রবিবার মাতারবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণও হয়ে গেছে, সেই জেটিতে ইতিমধ্যে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছেও। কিন্তু চ্যানেলের জন্য চবককে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই টাকা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই চ্যানেলটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন যেহেতু এই চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চবককে পরিশোধ করতে হবে বলে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়, যে কমিটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কাছে চ্যানেলটি ও তা নির্মাণের ব্যয় হস্তান্তরের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
কিন্তু এই টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চবক। এ বিষয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাইকার ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ ঋণের পরিশোধ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। সেই হিসাবে প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নয়, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের জন্য জাইকা থেকে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে চবক। এই টাকার বিপরীতে ২০২৯ সালে জাইকাকে দিতে হবে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পরে প্রতি বছর ঋণ ও সুদ বাবদ দিতে হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের ড্রেজিং বাবদ বছরে খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি এবং এই বন্দর পরিচালনায় প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শুধু ঋণ শোধ বাবদ চবককে পরিশোধ করতে হবে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগামী বছর লাগবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সাল থেকে প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে চবক। অন্যদিকে চবকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে চবক এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চবকের দাবি, চ্যানেল নির্মাণের খরচ যাতে তাদের কাঁধে দেওয়া না হয়। কিন্তু এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কয়লাবিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই চ্যানেল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিমির্ত হয়েছে। এখন যেহেতু বন্দর কর্র্তৃপক্ষ চ্যানেল ব্যবহার করবে, তাহলে তো তাদের টাকা দিতেই হবে। আর এই টাকা তো ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লাবিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাইকা একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব পূরণ করবে মাতারবাড়ী বন্দর।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’