
বয়সের সাথে শরীরে কোলেস্টেরলের সমস্যা নতুন নয়। তবে শুধু বয়স বাড়লে নয়, কম বয়সেও কোলেস্টেরল হানা দেয় শরীরে।
মানুষের দেহে মূলত দুই ধরনের কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। ‘হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন’ বা ‘এইচডিএল’ এবং ‘লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন’ বা ‘এলডিএল’। এইচডিএল ভাল কোলেস্টেরল হিসাবে পরিচিত হলেও এলডিএল-কে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়।
এই খারাপ কোলেস্টেরল শরীরের ক্ষতির পাশাপাশি স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। তাই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে খাওয়াদাওয়ায় বদল আনতে হবে। স্বাস্থ্যকর হলেও বেশ কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে না। সেগুলির বদলে কোন খাবারগুলি বেছে নেবেন?
মুরগির মাংসের বদলে মাছ
মুরগির মাংস এমনিতে শরীরের জন্য উপকারী। ফিটনেস বজায় রাখতে পুষ্টিবিদরা এই মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে মাংসের তুলনায় বেশি উপকারী মাছ। মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এ ছাড়াও সেলেনিয়াম, আয়োডিনের মতো উপকারী উপাদান আছে। যা খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের পরিমাণ কমায়।
চিপস্ নয়, পপকর্ন খান
আপনি যদি কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগে থাকেন তা হলে চিপসের বদলে খান পপকর্ন। চিপসে রয়েছে ট্র্যান্স ফ্যাট। যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপদসীমার বাইরে নিয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে নিশ্চিন্তে পপকর্ন খান। উপকার পাবেন।
কিনোয়া খান ভাতের বদলে
খারাপ কোলেস্টেরলে ভুগছেন যাঁরা, সুস্থ থাকতে তাঁরা ভাতের বদলে রাখতে পারেন কিনোয়া। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, যা কোলেস্টেরলের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। ফাইবার শুধু কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে না, সেই সঙ্গে বশে রাখে ডায়াবিটিসের মাত্রা।
মিল্ক চকোলেটের বদলে ডার্ক চকোলেট
কোলেস্টেরল থাকলে চকোলেট খেতে বারণ করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অনেকেই চকোলেট খেতে পছন্দ করেন। তাই মিল্ক চকোলেট বা অন্য কোনও স্বাদের চকোলেটের বদলে খেতে পারেন ডার্ক চকোলেট। ২০২০ সালে ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ প্রিভেনটিভ কার্ডিয়োলজি’-র করা একটি গবেষণা জানাচ্ছে, সপ্তাহে এক দিন ডার্ক চকোলেট খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বরং কমতে পারে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা।
কাঠফাটা রোদ আর প্রখর তাপের চোখ রাঙানিতে গরমের এই সময়ে দেখা দেয় ত্বকের যাবতীয় সমস্যা। সারা দিন ঘেমেনেয়ে শরীরে জুড়ে দেখা যায় ঘামাচি। আর এই ঘামাচির জেরে লেগেই থাকে চুলকানির সমস্যা।
ঘামাচি এক বার দেখা দিলে সহজে যায় না। র্যাশ, প্রদাহ সব মিলিয়ে ত্বকের ক্ষতি তো হয়ই, সঙ্গে অস্বস্তি ও শারীরিক কষ্টও বাড়ায়। কিছু পাওডার বা সাবান এই সমস্যা থেকে দূর করতে পারলেও পুরোপুরি যায় না।
শিশুদের ক্ষেত্রে তো অনেক সময় এই সব সাবান বা পাউডার বিরূপ প্রভাবও ফেলে। ঘামাচির বাড়াবাড়ি রকমের সমস্যা থাকলে তাই অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কিন্তু সাধারণত এই ঘামাচির সমস্যায় আরাম দিতে পারে ঘরোয়া উপায়ও।
১) একটা শুকনো কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ নিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে ঘামাচির উপর লাগান। দিনে ৩-৪ বার এই ভাবে করলে ভাল ফল পাবেন।
২) চার টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে ঘামাচির উপর লাগান। কিছুক্ষণ রেখে শুকিয়ে নিন। এর পর ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন।
৩) এক কাপ ঠান্ডা পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। পরিষ্কার কাপড় ডুবিয়ে ঘামাচির উপর ১০ মিনিট পর্যন্ত রেখে আলতো হাতে মুছতে থাকুন।
৪) ঘামাচির মোক্ষম দাওয়াই হল অ্যালোভেরা। ঘামাচির উপর শুধু অ্যালোভেরার রস বা হলুদের সঙ্গে অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৫) ২ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে ঘামাচির উপর লাগান। দ্রুত উপশম পাবেন।
সন্তান নাদুস-নুদুস থাকলে প্রতিটি বাবা-মায়ের মন-প্রাণ ভরে ওঠে। সুন্দর স্বাস্থ্যের সন্তান প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাম্য। তবে ছোটদের ওজন বেশি থাকাটাও কিন্তু বিরাট সমস্যার কারণ।
অল্প বয়সেই বেশি মেদের কারণে একাধিক সমস্যা তাদের পিছু নিতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাচ্চাদের ওজন বেশি থাকলে পরবর্তী সময়ে অ্যাজমা, স্লিপ অ্যাপনিয়া, জয়েন্টে ব্যথা, টাইপ ২ ডায়াবিটিস ও হাই প্রেশারের মতো একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
তাই চাইল্ডহুড ওবেসিটির খপ্পর থেকে সন্তানকে বের করে আনাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বাচ্চার ওজন নিয়ে অবশ্যই সচেতন থাকা দরকার। তাই প্রত্যেক বাবা-মাকে জানতে হবে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে সন্তানের ওজন।
ছোটরা মুখোরোচক খাবার খেতে পছন্দ করে। আর তাদের এহেন পছন্দের ফাঁদে পড়েই বাবা-মা সন্তানকে চকোলেট থেকে শুরু করে চপ, পিৎজা, বার্গার- সব কিনে দেন। আর এই সমস্ত হাই ক্যালোরি খাবার খেয়ে সন্তানের ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই সন্তানের ওজন কমাতে চাইলে খাদ্যাভ্যাস থেকে এই ধরনের খাবারগুলি বাদ দিতে পারলেই দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই ওজন কমেছে। এমনকী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমবে।
ছোটদের খাবারে কী কী খাবার রাখা উচিত তা অনেক অভিভাবকই বুঝে উঠতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে বাচ্চাদের খাবারে বেশি করে ফল, শাক-সবজি, লিন প্রোটিন, হোল গ্রেইন ও লো ফ্যাট জাতীয় খাবার রাখতে হবে। এর মাধ্যমেই ছোট্টটির শরীরে পুষ্টির ঘাটতি মিটবে। এমনকী কমবে ওজনও।
এখনকার দিনের বাচ্চারা মাঠে খেলে না। বরং তাঁদের কাছে কম্পিউটার ও মোবাইল অনেক বেশি আপন। তাই অভিভাবকদের এগিয়ে এসে সন্তানকে মাঠে নিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে মাঠে খেলতে আগ্রহী করুন। বন্ধুদেরকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে লাফালাফি করতে দিন। এতেই তার শরীর থাকবে একদম ফিট।
সাঁতার বা সাইকেল চালানো হল লাইফ স্কিল। তাই সন্তানকে এই দুই কাজে পারদর্শী করে তুলতেই হবে। এ ছাড়া, নিয়মিত সাঁতার কাটলে বা সাইকেল চালালে ওজন দ্রুত গতিতে কমে যায়। এক্ষেত্রে সন্তানকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এই ধরনের এরোবিক এক্সারসাইজের সঙ্গে যুক্ত রাখুন। তাতেই দেখবেন ওর শরীর ঝরঝরে হয়েছে। এমনকী বাচ্চার পেশির ও হাড়ের জোরও বাড়বে।
ছোটদের একটু বেশি সময় ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম হলেই তাদের বিপাকক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করতে পারবে। আর তাতেই ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কমবে। তাই দিনে অন্ততপক্ষে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুম হল মাস্ট। তাতেই দেখবেন সন্তানের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ভ্যাপসা গরমের এ সময়ে সুতি কাপড়ের মত আরাম আর কোন কাপড়ে নেই। অফিস পার্টি হোক কিংবা কোনও অনুষ্ঠানে দাওয়াত, সুতির কাপড়ের জামাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অনেকেই। বাটিক, বাঁধনি কিংবা মলমল— গরমের ফ্যাশনে বিকল্পের শেষ নেই।
তবে ঠিক মতো যত্ন না নিলে শখের কেনা জামাটারও রং হয়ে যেতে পারে ফ্যাকাশে। আবার অনেক সময় বার বার ধোয়াতে কিছুদিনেই পুরনো লাগে দেখতে।
তাহলে কী ভাবে নেবেন সুতির পোশাকের যত্ন? নিচে দেয়া হল কিছু উপায়।
১) সুতির পোশাক ধোয়ার সময়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। তরল সাবানে ধুতে পারলে খুব ভাল। অনেকের অভ্যাস গরম পানিতে কিছুক্ষণ জামাকাপড় ভিজিয়ে রেখে তার পর ধোয়ার। সুতির কাপড় কিন্তু কখনোই গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না। রং চটে যেতে পারে।
২) সুতির কাপড় যদি ওয়াশিং মেশিনে ধুতে চান, তা হলে সাবানের সঙ্গে এক কাপ ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এতে সুতির কাপড়ের উজ্জ্বলতা নষ্ট হবে না। জামাকাপড়ে সুগন্ধও আসবে।
৩) চড়া রোদে সুতির কাপড় কখনওই মেলবেন না। এতে জামাকাপড়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। সুতির কাপড় শুকোতে খুব বেশি সময় লাগে না। তাই জামাকাপড়ের রং টিকিয়ে রাখতে পড়ন্ত রোদে কিংবা ছায়া আছে এমন জায়গায় কাপড় মেলে দিন।
৪) অনেক সুতির কাপড় প্রথম বার ধোয়ার সময়ে রং ছাড়ে। এ ক্ষেত্রে সুতির কাপড় প্রথম বার ধোয়ার সময়ে লবণ পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। তারপর সাবান পানিতে ধুয়ে নিন। এতে কাপড়ের রং টেকসই হবে।
৫) সুতির পোশাক কাচার সময় পোশাকগুলি উল্টো করে তার পর সাবান পানিতে ধুতে পারলে ভাল। এই পদ্ধতি মেনে চললে দীর্ঘ দিন টিকে থাকবে জামাকাপড়ের রং।
বর্তমান ব্যস্ত জীবন এবং কাজের চাপের কারণে মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে ক্লান্তি, পেশী ব্যথা, বুকে ব্যথা, যৌন স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব, মনোযোগের অভাব, ক্ষুধা হ্রাস, রাগ, বিরক্তির মতো সমস্যা হতে পারে।
এই মানসিক চাপ এড়ানোর উপায় কি? মানসিক চাপ মোকাবেলা করার জন্য, আপনার খাদ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। পুষ্টিবিদরা এমন কিছু খাবারের কথা বলছেন, যেগুলো মস্তিষ্ককে সুখী হরমোনে ভরিয়ে স্ট্রেস ও উদ্বেগ দূর করতে কাজ করে।
১. ছোলা এবং শাক-সবজির মতো বি ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া স্ট্রেস মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে। যখন জীবনে চাপ থাকে, তখন আপনার শরীর বি ভিটামিনের মজুদ ব্যবহার করতে থাকে। মাংস, পনির, দুধ, টকদই, শাক, ডিম, সয়াবিন, নাট ও মাশরুম এগুলো ভিটামিন বি এর ভালো উৎস।
২. শরীরে হ্যাপি হরমোন বাড়াতে সহায়তা করে কাঁচা সবজি। এক্ষেত্রে জোয়ান বা গাজরের মত কাঁচা সবজি খাওয়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩. সবুজ পাতার শাকসবজি শরীরে হ্যাপি হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়। সবুজ শাক সবজি ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস এবং নিয়মিত সেবন করলে তা স্ট্রেস এবং উদ্বেগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।
৪. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে পারে। ব্রোকলি, আঙ্গুর, কমলালেবু, লেবু থেকে ভালো ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
৫. হালকা এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন মসুর ডাল এবং ভাত খাওয়া সুখী হরমোন সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়াতে এবং লোভ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৬. ভিটামিন ই যুক্ত খাবার শরীরে হ্যাপি হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে এবং শরীর ও মনকে ফুরফুরে রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বাদাম খান এবং মানসিক চাপের জন্য বি ভিটামিনযুক্ত খাবার খান। জটিল কার্বোহাইড্রেট খেয়ে মস্তিষ্ক বেশি সেরোটোনিন তৈরি করে। গম, বাদাম, শাক, ভূট্টা তেল, কড লিভার তেল, মাখন এবং সূর্যমুখী থেকে ভাল পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
ওজন কমাতে কে না চায়। তাই নিয়ম করে রোজ জিমে যাচ্ছেন, কঠোর পরিশ্রমও করছেন অথচ ওজন আগের মতই!
নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করার পরও ওজন না কমলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। আপনি হয়তো জানেনই না আপনার শরীরচর্চাতেই কিছু কিছু গলদ থেকে যাচ্ছে, যার জন্য ওজন কমছে না। অনেক সময় অজান্তে এমন কিছু ভুল হয়ে যায় যার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করেও কোনও লাভ হয় না! তাই জেনে নিন জিমে যাওয়া শুরু করলে কোন ভুলগুলি এড়িয়ে চলতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করলে পেশির শক্তি ও শারীরিক শক্তি ফেরানোর জন্য প্রোটিন খেতে হয়। তবে এক্ষেত্রে প্রোটিনও খেতে হবে পরিমাণ মতো। অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন খেয়ে ফেললে ওজন কমানোয় সমস্যা হবেই। ওজন ঝরানোর পরিকল্পনা থাকলে দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১.২ গ্রাম থেকে ১.৬ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত।
সপ্তাহের তিন দিন জিমে গিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করে নিলেন আর বাকি দিনগুলি ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলেন, এমনটা করলে কিন্তু চলবে না। ওজন ঝরাতে চাইলে শরীরচর্চার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। প্রতিদিন যে শরীরচর্চাটাই করবেন, সেটা ৩০-৪০ মিনিট টানা করা উচিত। কোনও দিন কম, কোনও দিন বেশি করলে ফল পাওয়া যায় না।
কার্ডিয়োতে অনেক বেশি ক্যালোরি ঝরে, এটা ঠিকই। কিন্তু অনেকটা ওজন কমাতে গেলে কেবল কার্ডিয়োর উপর ভরসা রাখলে চলবে না। প্লাঙ্ক, জাম্পিং জ্যাক, স্কোয়াটের মতো ব্যায়াম কার্ডিয়োর মধ্যে পড়ে। হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, জগিং, সাইকেল চালানোও কিন্তু কার্ডিয়োর মধ্যেই পড়ে। তাই সব ধরনের শরীরচর্চা মিলিয়ে-মিশিয়ে করার চেষ্টা করুন।
সব সময় ওজন দেখার মেশিনে না দেখে, খেয়াল রাখুন যে জামাটা আপনি পরতেন, সেটা ঢিলে হল কি না। কিংবা আপনার নিজের শরীরটা আগের চেয়ে অনেক হালকা লাগছে কি না। রোজ রোজ ওজন পরিমাপ করবেন না। প্রতি সপ্তাহে ওজন পরিমাপ করুন।
খালি পেটে বা কম খেয়ে শরীরচর্চা করা আর একটি ভুল কাজ। ঠিক মতো খাবার খেয়ে শরীরচর্চা করুন, তাতে শক্তিও পাবেন। শরীরচর্চা করলে কিন্তু ডায়েটের উপর জোর না দিলে মুশকিলে পড়বেন। কার্বোহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের ভারসাম্য বজায় রাখা ভীষণ জরুরি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।