
আদার গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা সকলেই মোটামুটি ওয়াকিবহাল। রান্নায় আলাদা স্বাদ আনতেও এর কোনো তুলনা নেই। আদায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করতেও সহায়তা করে।
আদা চায়ের মধ্যে মিশিয়ে খেলে তা এক আলাদা মাত্রা এনে দেয়। গলা খুশখুশ করলে এককাপ আদা চা খেলেই মিটতে পারে সমস্যা। তবে এই আদার মধ্যেও এমন অনেক কিছু আছে যা শরীরে বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখায়। বিশেষ করে রান্নায় অতিরিক্ত আদা ব্যবহার বা শুকোনো আদা খাওয়ার নেশা শরীরে ক্ষতি ডেকে আনে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ‘আমরা না জেনেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেচ্ছ আদা ব্যবহার করি। অতিরিক্ত যে কোনও জিনিসই খারাপ, আদাও তার ব্যতিক্রমী নয়। বেশকিছু রোগ থাকলেও আদা এড়িয়ে চলা উচিত। তাই খুব বেশি আদা খাওয়ার আগে একটু সচেতন হোন।
>> জ্বর, ঠাণ্ডা, শরীর ব্যথায় আদা বেশ উপকারী। বডি টেম্পারেচারের ভারসাম্য ধরে রাখতে সহায়তা করে আদা। ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে আদা কুচি করে নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়।
>> আদা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাড়ের জোড়ায় সৃষ্ট ব্যথা এবং আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের প্রদাহ দূর করে।
>> জিমে ব্যায়াম করতে যাওয়ার আগে আদা খেলে ব্যথা কম হয়। কারণ আদা একটি প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী এবং প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে।
>> বমিভাব দূর করা ছাড়াও হজম শক্তি বাড়াতে এবং অস্বস্তিদায়ক পেট ফাঁপা থেকে রক্ষা করে আদা।
>> মস্তিষ্কের আলজেইমারস রোগের সমস্যায় উপকারী আদা। মস্তিষ্কে অপ্রয়োজনীয় অ্যামিলয়েড প্রোটিন জমা হওয়ার মাধ্যমে এই রোগের সৃষ্টি হয়। আদা এই স্নায়ুক্ষয়ী প্রোটিন থেকে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রতিরক্ষা দিতে সক্ষম।
>> আদা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় বলে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে। নিয়মিত আদা খেলে ইনসুলিনের ব্যবহারও কমে যায়।
>> রক্তের জীবাণু দূর করতে আদা বেশ সহায়ক। শরীরের জমাট রক্ত দূর করতে সাহায্য করে আদা।
আদার নানা উপকারিতা থাকলেও গর্ভবতী নারী ও দাঁতে সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত।
যেকোনো বিচ্ছেদই কষ্টের। প্রেম হোক বা বিয়ে—সুখের সময় কাটানোর পর হঠাৎ বিচ্ছেদ হলে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। সম্পর্কে বিভিন্ন সময় টানাপোড়েন দেখা দেয়। সব বাঁধা পেরিয়ে নতুন করে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
বিচ্ছেদের কষ্ট প্রতিনিয়তই কষ্ট দেয় সবাইকে। ভালোবাসার মানুষকে ভুলে থাকতে অনেকেই বিভিন্ন পথ বেছে নেন। যার কোনোটি ভালো আবার কোনোটি খারাপ। কিন্তু কী করলে অতিদ্রুত মনের কষ্ট ভুলে দুঃখ উপশম হয়, তা অনেকেরই অজানা।
তাই বিচ্ছেদের পর নিজেকে সামলে উঠে কি কি করণীয় এবং ডেইলি রুটিন কী হতে পারে, তা জেনে নেওয়া যাক।
সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর প্রথম যে কাজটি করা উচিত তা হলো, নিজেকে সময় দেওয়া। বিচ্ছেদে কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করুন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন, নিজের ভুলগুলোর কথা মনে করুন। সর্বোপরি নিজেকে আরও নির্ভুল ও শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
বিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে নিজের যত্ন নেয়া এবং শুধুমাত্র নিজেকে নিয়েই মনোযোগী হওয়া উচিত। এ সময় পুষ্টিকর খাবার খান এবং দৈনন্দিন শারীরিক ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তাহলে মন ভালো থাকবে। এ ছাড়া প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করুন।
বিচ্ছেদের পর নিজের ওপর আস্থা রাখুন, সামনের দিকে যাওয়া সহজ হবে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজুন, ঘুরতে যান, খাওয়া দাওয়া করুন। কারও সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সময় সে কী পছন্দ করত না করত, সেই ভাবনা ঝেড়ে ফেলুন মাথা থেকে। এমন ছোট ছোট বিষয়ে নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে দেখুন, হৃদয়ের ক্ষতস্থান পূরণ হতে বেশি সময় লাগবে না।
প্রাক্তনের উপর রাগ-ক্ষোভ জমিয়ে না রেখে বরং তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। এতে আপনার মানবিকতা প্রকাশ পাবে। মনে রাখবেন, একটা সময় কিন্তু সে আপনার ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। তাই বিচ্ছেদের পর তাকে অসম্মান করবেন না।
আপনার যদি সন্তান থাকে তাহলে আপনার প্রতিদিনের নতুন রুটিন যতই ব্যস্ত হোক না কেন সন্তানদের অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় দিন। প্রতি সপ্তাহে কোন নতুন নতুন স্থানে তাদের ঘুরতে নিয়ে যান। তাদের সাথে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। তাদের সাথে মজার কোন খেলা খেলুন। সন্তানদের বুঝান যে আপনার বিচ্ছেদে তাদের কোন দোষ নেই। তাদেরকে একটি সুখী সম্পর্ক দেয়ার চেষ্টা করুন। মোট কথা সন্তানদের সাথে ব্যাস্ত থাকুন, কোন কিছু মনে পরবে না।
বিচ্ছেদের পর সাধারণত রাগ, দুঃখ এবং ব্যথা অনুভব হবে। তাই পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে প্রিয় কোন মানুষের সাথে দেখা করুন এবং তার কাছে মনের সব কথা খুলে বলুন। বিশেষ করে শৈশব-কৈশোরের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন এবং পুরনো দিনের মজার স্মৃতি মনে করুন। এতে করে মন হালকা হবে।
বিচ্ছেদ ঘটলে দুঃখের সাগরে ভেসে গিয়ে নিয়মিত জীবন এলোমেলো করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেকে সামলে নিয়ে ক্যারিয়ার ও নিজের কাজে মন দেওয়া অতি জরুরি। কারণ জীবন থেমে থাকে না কারোরই জন্য। ভালোবাসার মানুষটি নেই বলে জীবনের প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকেও পিছিয়ে রাখা যাবে না। বরং আরও উন্নত করতে হবে নিজের ক্যারিয়ার।
বিচ্ছেদের দুঃখ ভুলতে অনেকেই মাদক বা অ্যালকোহলের নেশায় বুঁদ হয়ে পরে। কিন্তু এসব করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা হয়। আর তাই অ্যালকোহল, তামাক, নিকোটিন বা সিগারেটসহ সব ধরনের মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এসব আপনাকে দুঃখ থেকে মুক্তি তো দেবেই না, বরং শরীরের বড় ক্ষতি করবে।
একাকীত্বের অনুভূতি এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত আবেগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজের প্রতিদিনের রুটিন পরিবর্তন করতে পারেন। বারান্দায় গাছ লাগানো, খাঁচায় পাখি পালন, ঘরে অ্যাকুরিয়াম রাখা এবং এগুলোর যত্ন নিয়ে নিজের সময় কাটানো যেতে পারে। অথবা বিকেলে বারান্দায় চা নিয়ে বা পছন্দের বই নিয়ে বসা বা পেইন্ট করা। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি সময় রেখে দিন নিজের জন্য।
ডেঙ্গু আক্রান্তের কারণে প্লাটিলেট শব্দটির সঙ্গে আমরা কম বেশি পরিচিত। ফ্রিজে রক্ত সংরক্ষণ করার পর সেই রক্ত থেকে প্লাটিলেট তৈরি করা যায় না। কারণ +২ ডিগ্রি থেকে +৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্লাটিলেট কার্যকর থাকে না। প্লাটিলেট সংরক্ষণের তাপমাত্রা +২০ ডিগ্রি থেকে +২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং এজিটেটরে সব সময় মৃদু ঝাঁকুনিতে পাঁচ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
এখন, এক প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার চার ব্যাগ ফ্রিজে সংরক্ষিত রক্ত থেকে প্লাটিলেট তৈরি করার জন্য বললেন। অন্য এক প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার প্লাটিলেট তখন পরিসঞ্চালন করা হবে না বলে জানালেন এবং এ জন্য ব্লাড ব্যাংকের ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দিলেন। সেই প্লাটিলেট পরের দিন পরিসঞ্চালন করতে গিয়ে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন।
ফ্রেশ প্লাটিলেট বলে কোনো টার্ম আছে কি?
ফ্রেশ প্লাটিলেট বিষয়টি লেখা হচ্ছে অহরহ। ৪ থেকে ৬ জনের রক্ত নিয়ে যে রেন্ডম ডোনার প্লাটিলেট তৈরি করা হয় সেটা পরিসঞ্চালন করলে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার প্লাটিলেট বাড়ে যদি সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি এবং পরিসঞ্চালন করা হয়। সিঙ্গেল ডোনার মানে এ্যাফেরেরেসিস পদ্ধতিতে একজনের থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করলে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার প্লাটিলেট বাড়ে। এই বৃদ্ধি এক ঘণ্টার মধ্যে দেখতে হয়। একদিন পর দেখলে সঠিক বৃদ্ধি বোঝা যায় না। কারণ যে কারণে প্লাটিলেট কমছে সেই কারণেই পরিসঞ্চালিত প্লাটিলেটও কমবে। যেই চারজন ডোনারের রক্ত থেকে প্লাটিলেট তৈরি করা হলো তাদের লোহিত কণিকা কিন্তু ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য রাখা আছে। পুরোনো রক্ত বলে ডাক্তাররা সেটা ব্যবহার করেন না। ফলে এই অমূল্য রক্ত নষ্ট হয়।
ফ্রেশ রক্ত কী?
রক্তের উপাদান পরিসঞ্চালন করার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় বলে যখন যেটা প্রয়োজন সেটা পরিসঞ্চালন করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) আলোকে সাত দিন পর্যন্ত রক্ত ফ্রেশ। এন্টিকোয়াগুলেন্ট ভেদে রক্ত বিভিন্ন মেয়াদে রাখা হয়। আমরা সিপিডিএ১ ব্যবহার করি বলে ৩৫ দিন পর্যন্ত রক্ত ব্যবহার উপযোগী। এক ইউনিট ফ্রেশ ব্লাডে যে পরিমাণ প্লাটিলেট, ক্লটিং ফ্যাক্টর থাকে সেটা রোগীর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট নয়। সে জন্য রক্তের উপাদান ব্যবহার জরুরি। যে রোগীর যেটা লাগবে সেটাই কেবল মাত্র পরিসঞ্চালন করা হবে। যার অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা তার জন্য রক্তের লাল অংশ পরিসঞ্চালন করতে হয়। যার প্লাটিলেট প্রয়োজন তাকে লাল রক্ত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যার এফএফপি প্রয়োজন তাকে সেটাই দিতে হবে।
এখন রক্ত পরিসঞ্চালন মানেই রক্তের উপাদান পরিসঞ্চালন। একজন ডোনারের থেকে ৩ থেকে ৪ জন রোগীকে এই সেবা দেওয়া যায়। অহেতুক পরিসঞ্চালন জটিলতা কামানো যায়। রক্ত পরিসঞ্চালন একটি অতি সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। রক্ত কোনো টনিক নয় বা স্যালাইন নয়। শুধুমাত্র রক্ত পরিসঞ্চালন করার প্রয়োজন বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রক্তের নানানরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এমন কী জীবননাশের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
সবাই আমরা সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। একেকজন একেক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়েছি। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে পরিসঞ্চালন করুন। রোগীদের ক্ষতি করার অধিকার আমাদের কারও নেই। চল্লিশ বছর পুরোনো কায়দায় এখন আর রক্ত পরিসঞ্চালন চলে না, চলবে না। বিষয়টি বুঝুন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা; কনসালট্যান্ট- ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
রান্না সুস্বাদু করে তুলতে লবণ হল অপরিহার্য উপাদান। তবে খাবারে লবণের পরিমাণটাও সঠিক হওয়া অনেক জরুরি। একটু এদিক-সেদিক হলেই অনেক স্বাধের রান্না বিফলে যায়।
তবে অনেক সময়ে দেখা যায় মাংস রান্নায় পরিমাণে বেশি লবণ পড়ে যায় বেকায়দায়। পরবর্তীতে স্বাধের মাংসটা নোনতা বা তেতো হয়ে যায়, দেখা যায় যে খাবারটা খাওয়ারই উপযোগী থাকে না। তবে রান্নায় লবণ কমানোর কয়েকটি কৌশল জেনে নিলেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক মাংস রান্নায় লবণ কমানোর কয়েকটি পদ্ধতি,
একটি পেঁয়াজ খোসা ছাড়িয়ে কেটে দুই টুকরা করে নিন। তারপর সেগুলি রান্নায় দিয়ে দিন। পেঁয়াজ রান্নার অতিরিক্ত লবণ টেনে নেবে। অবশ্য ভাজা পেঁয়াজও ব্যবহার করতে পারেন। তাতে রান্না সুস্বাদু হবে।
বাড়িতে টক দই থাকলে রান্নায় লবণ বেশি পড়ে গেলেও চিন্তা নেই। একটি ছোট্ট পাত্রে দই ভাল করে ফেটিয়ে নিন। তার পর সেটা রান্নায় দিয়ে দিন। রান্নার নোনতা স্বাদ কেটে যাবে। ঝোলেও অন্য রকম স্বাদ আসবে।
রান্নায় বেশি লবণ হয়ে গেলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বরং চিনি এবং সামান্য ভিনিগার মিশিয়ে নিন। লেবুর রসও দিতে পারেন ভিনিগারের বদলে। এগুলো খাবারের নোনতা ভাব কাটাতে সাহায্য করে।
মাংসের পাতলা ঝোল রেঁধেছেন, কিন্তু লবণ বেশি পড়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে লবণ বেশি হলে একটি সহজ উপায় রয়েছে। কিছু আলুর খোসা অথবা বড় বড় আলুর টুকরা রান্নায় দিয়ে দিন। নিমেষে সব বাড়তি লবণ টেনে নেবে। স্বাদ স্বাভাবিক হয়ে গেলে আলুর খোসাগুলো তুলে ফেলে দিন।
দাঁত শরীরের একটি অপরিহার্য অংশ। এর যেকোনো সমস্যায় মোটেও অবহেলা করা উচিৎ নয়। দাঁতের চিকিৎসা একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জন্মের পরপরই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুর মুখে দাঁত ওঠে। ওই দাঁত দেখা গেলে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিতে হবে, তা না হলে শিশু ও মায়ের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বয়স্কদেরও দাঁতের চিকিৎসা করাতে হয়। দাঁতের কোনো সমস্যা না হলেও বছরে দুইবার চিকিৎসককে দেখালে দাঁত ভালো রাখা সম্ভব হয়।
কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
দাঁতের চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে প্রতারিত হন এমন ঘটনা অনেক আছে। সেক্ষেত্রে সেবাপ্রার্থীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন তিনি বিডিএস ডিগ্রিধারী কি না। যদি বিডিএস ডিগ্রিধারী হন, তাহলে তিনি দাঁতের চিকিৎসক। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালেও রোগীরা দাঁতের চিকিৎসা নিতে পারেন।
কোন সমস্যার কোন চিকিৎসা
দাঁতের পরীক্ষা : রুটিন ডেন্টাল চেকআপের মধ্যে আপনার দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা এবং অন্য মৌখিক টিস্যুগুলোর একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করা হয়, যাতে কোনো সম্ভাব্য সমস্যা আগেভাগেই শনাক্ত করা যায়।
স্কেলিং : নিয়মিত ডেন্টাল ক্লিনিংয়ে আপনার দাঁত থেকে প্লাক, টারটার (কঠিন ফলক) এবং দাগ অপসারণ জরুরি। এটি গহ্বর, মাড়ির রোগ এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
ফিলিং : ডেন্টাল ফিলিং অথবা ক্ষয় হওয়া দাঁত বিশেষ মেডিসিনের মাধ্যমে পূরণ করা জরুরি। দাঁতের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ অপসারণ করে এবং অ্যামালগাম বা সিরামিকের মতো উপাদান দিয়ে স্থান পূরণ করে গহ্বরের চিকিৎসা করা হয়।
রুট ক্যানেল থেরাপি : যখন দাঁতের মজ্জা (অভ্যন্তরীণ অংশ) সংক্রমিত হয় বা স্ফীত হয়, তখন এই চিকিৎসা করা হয়। সংক্রমিত টিস্যু সরানো হয় এবং পরে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দাঁতটি সিল করা হয়।
দাঁত অপসারণ : যখন একটি দাঁত গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্ষয়প্রাপ্ত হয় বা আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচুর কারণ হয়, তখন এটি তোলার প্রয়োজন হতে পারে। ইনফেকশনজনিত সমস্যা সৃষ্টি করলে সাধারণত আক্কেল দাঁতও তোলা হয়।
ডেন্টাল ক্রাউন : ক্রাউন হলো কাস্টম-মেড ক্যাপ, যা ক্ষতিগ্রস্ত বা দুর্বল দাঁতকে তাদের আকৃতি, শক্তি এবং দাঁতের গঠন পুনরুদ্ধার করতে ঢেকে রাখে।
ডেন্টাল ব্রিজ : অপসারিত অথবা হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দাঁত ডেন্টাল ব্রিজ বা ইমপ্লান্টের মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল বা নকল দাঁত প্রতিস্থাপন করা হয়।
ডেন্টাল ইমপ্লান্ট : ইমপ্লান্ট বা টাইটেনিয়াম স্ক্র হলো কৃত্রিম দাঁতের শিকড়, যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোয়ালের হাড়ে স্থাপন করা হয়। তারা প্রতিস্থাপন দাঁতের জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি প্রদান করে যেমন—মুকুট, ক্যাপ বা ডেনচার।
ডেনচার : ডেনচার হলো যে জায়গায় দাঁত নেই সে জায়গা এবং আশপাশের টিস্যুগুলোর জন্য অপসারণযোগ্য প্রতিস্থাপন। এগুলো আংশিক (কিছু দাঁত প্রতিস্থাপন) বা সম্পূর্ণ (সব দাঁত প্রতিস্থাপন) হতে পারে।
অর্থোডন্টিক ট্রিটমেন্ট : অর্থোডনটিক্সে আরো ভালো কার্যকারিতা এবং নান্দনিকতার জন্য দাঁত ও চোয়ালের সারিবদ্ধতা সংশোধন করতে ব্রেসেস, অ্যালাইনার বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।
দাঁত সাদা করা : দাঁত সাদা করার পদ্ধতিগুলো দাঁত থেকে দাগ এবং বিবর্ণতা দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
মাড়ির চিকিৎসা : এই চিকিৎসা মাড়ির নিচের অংশ থেকে প্লাক এবং টারটার অপসারণের জন্য স্কেলিং এবং রুট প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে মাড়ির রোগ যেমন—মাড়ির প্রদাহ ও পিরিয়ডোনটাইটিসকে মোকাবেলা করে।
মাউথগার্ডস : কাস্টম-মেড মাউথগার্ড খেলাধুলার সময় দাঁত রক্ষার জন্য বা দাঁত পিষে যাওয়া (ব্রুকসিজম) বা টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (টিএমজে) রোগের মতো সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়।
খিলাল ব্যবহার করা যাবে কি?
অনেক সময় দাঁতের মাঝে খাবার আটকে যায়। তা বের করতে অনেকেই কাঠি বা খিলাল ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে ডেন্টাল ফ্লক্স ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
নিয়মিত দাঁতের যত্ন করবেন যেভাবে
দিনে দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সকালে খাবারের পর আর রাতে খাবার গ্রহণ শেষে। এটি যদি কেউ নিয়মিত করে থাকেন, তাহলে অনেক সমস্যা থেকে দাঁত সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ব্রাশ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, দাঁতের ওপর ও ভেতরের সবখানেই যেন ব্রাশ ঠিকভাবে পৌঁছায়। আর অবশ্যই ভালো মানের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। কোয়ালিটি ব্রাশ না হলে তা দাঁতের ক্ষতির কারণ হতে পারে। গুল, তামাকসহ যেসব খাবার দাঁতের ক্ষতি করতে পারে সেগুলো গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
উদ্বেগ বা মানসিক চাপ শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এটি ভয়ের বহিঃপ্রকাশ। কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা বিষয়টি হলে কি হতে পারে এসব চিন্তাকেই উদ্বেগ বলে থাকে।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে নানা রকমের চিন্তা বা সমস্যা থাকে এবং তার কারণে উদ্বেগ ও থাকে। কিন্তু উদ্বেগ অতিরিক্ত হলে শরীরে নানারকম সমস্যা বা রোগ দেখা দেয়। এমনকি মাতাতিরিক্ত উদ্বেগ মানুষকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।
উদ্বেগের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল,
হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া
দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া
অস্থিরতা
মনোযোগে সমস্যা
প্রতিটি মানুষের জীবনে নির্দিষ্ট মাত্রার উদ্বেগ থাকে। কিন্তু যখন কেউ মাতাতিরিক্ত উদ্বেগ বা চিন্তা করে তখনই নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগ ঘিরে ধরে। উদ্বেগের কারণে সাধারণত যেসব রোগ দেখা দিতে পারে তা হল,
প্যানিক ডিসঅর্ডার
পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
সেপারেশন এনক্সাইটি
ফোবিয়া
নিয়মিত ব্যায়াম শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপয়াক্রি। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে উদ্বেগজনিত ব্যাধিযুক্ত ব্যক্তিরা যারা নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বা ব্যায়ামের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদের উদ্বেগ অনেকখানি কমে গিয়েছিল।
অর্থাৎ ব্যায়াম মানুষের মনোযোগকে উদ্বেগ সৃষ্টি করে এমন কিছু থেকে সরিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি নিউরোকেমিক্যালের জন্য আরও জায়গা তৈরি করে।
গবেষণা বলে যে, দুশ্চিন্তা এবং অ্যালকোহল সেবনের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে অ্যালকোহল গ্রহণ কমালে উদ্বেগ এবং হতাশা দুটোই কমে যায়। ভারী মদ্যপান নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যকে হস্তক্ষেপ করে, যা ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া অ্যালকোহল শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের ক্ষমতাকে ব্যাহত করে থাকে।
গবেষণার তথ্যমতে, জীবনে যত তাড়াতাড়ি ধূমপান শুরু, পরবর্তীতে আপনার উদ্বেগজনিত ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি তত বেশি। সিগারেটের ধোঁয়ার নিকোটিন এবং অন্যান্য রাসায়নিকগুলি উদ্বেগ বৃদ্ধি করে থাকে। তাই জীবন থেকে উদ্বেগ কমাতে আগে ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
যদি কারও দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগজনিত সমস্যা থাকে তবে দ্রুত ক্যাফেইন গ্রহণ বন্ধ করা বা কমানো উচিত। কারণ ক্যাফেইন নার্ভাসনেস এবং খিঁচুনির তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফেইন উদ্বেগজনিত ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে। এটির কারণে প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্যানিক অ্যাটাকও হতে পারে।
উদ্বেগজনিত সমস্যা এড়াতে রাতে ভালো ঘুমের প্রয়োজন। তাই রাতে ঘুমানোর আগে টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এ ছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন, ভারী খাবার এবং ধূমপান এড়িয়ে চলুন। চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর।
রক্তে কম শর্করার মাত্রা, ডিহাইড্রেশন বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের রাসায়নিক মানুষের মন মেজাজ পরিবর্তন করতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত চিনির খাদ্যও মেজাজকে প্রভাবিত করতে পারে। খাওয়ার পরে যদি আপনার উদ্বেগ আরও খারাপ হয় তবে আপনার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে চিন্তা করুন এবং পরিবর্তন আনুন। সব সময় হাইড্রেটেড থাকুন, প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে জটিল কার্বোহাইড্রেট, ফল ও শাকসবজি এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত।
অগভীর, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস উদ্বেগের লক্ষণ। তাই গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত। নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে বড় করে প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাস বের করে দেয়া হয়। এটি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণ পুনরুদ্ধার করতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
এক কাপ ক্যামোমাইল চা হল একটি সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার যা স্নায়ুকে শান্ত করে এবং ঘুমের উন্নতি করে। এর ফলে মানসিক উদ্বেগ থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়
অ্যারোমাথেরাপি হল একটি সামগ্রিক নিরাময় চিকিৎসা যা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। প্রাকৃতিক গাছের নির্যাস বা এসেনশিয়াল অয়েল এর মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি করা হয়। এসেনশিয়াল অয়েলের সুগন্ধ নেয়ার মাধ্যমে উদ্বেগ কমানো হয়ে থাকে।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
মানুষ একসময় বেঁচে থাকার জন্য পশুপাখি শিকার করত। বহু পথ পাড়ি দিয়ে সেই শিকার মধ্যযুগে সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম হয়ে ওঠে। বিশে্বর নামকরা শিকারিরা কেবল পশু শিকারই করেননি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পক্ষেও কথা বলেন। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
শিকারি এবং সংরক্ষণবাদী শব্দ দুটি একেবারেই বিপরীত। প্রথমটি বন্যপ্রাণী শিকার যারা করে, তাদের বলা হয় আর বন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষাকারীরা সংরক্ষণবাদী। প্রথম দল প্রাণ সংহার করে আর পরের দল প্রাণরক্ষার কথা বলে। মজার বিষয় হলো, গত শতাব্দীতে প্রথম বিশে^র পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা বিশ্বাস করা শুরু করেন, ন্যাচারাল ইকোসিস্টেম বা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে শিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিকার ও শিকারির অনুপাত নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে এমনটা সম্ভব। শিকার বা শিকারির প্রসঙ্গ এলে অবধারিতভাবে জিম করবেটের নাম আসবেই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এই শিকারি ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের ঘন জঙ্গলে কয়েক ডজন মানুষখেকো বাঘ ও চিতাবাঘ শিকার করেছিলেন। তবে একই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখা জরুরি, করবেট সংরক্ষণবাদীও ছিলেন। তার বন্দুক থেকে ছোড়া গুলি যেমন একদিকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও তাদের আবাসস্থল ফুঁড়ে বের হতো, তেমনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পক্ষেও তাকে কথা বলতে দেখা যায়। জিম করবেটের ক্ষেত্রে শিকারি ও সংরক্ষণবাদী শব্দ দুটি ঠিক বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে না। তিনি এমন বেশ কয়েকটি বাঘ মেরেছিলেন, যেগুলো স্থানীয় গ্রামবাসীদের জখম করেছিল। বাঘের আক্রমণে কয়েকজনের প্রাণও যায়।
শিকারের গুরুত্ব
ইতিহাসবিদরা দীর্ঘদিন মনে করতেন, আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা মৃত বা আহত প্রাণীর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকতেন। পরে এই ধারণায় পরিবর্তন আসে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হেনরি বান বলেন, ‘কমপক্ষে ২০ লাখ বছর ধরে মানুষ বড় প্রাণী শিকার করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা শিকারের পদ্ধতি পরিবর্তন করে, যা জটিল থেকে জটিলতর হয়।’ প্রাচীন যুগের প্রাণীদের জীবাশ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অধ্যাপক বান আবিষ্কার করেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা বন্যপ্রাণী শিকার করতেন, সেগুলো কবে মারা যাবে বা অসুস্থ হবে, তার জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন না। শিকারের জন্য তারা সাধারণত বয়স্ক প্রাণী বাছাই করতেন। গাছে বসে প্রাণীদের একত্র হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন তারা। এরপর সেগুলোকে বর্শা দিয়ে আঘাত করা হতো। অধ্যাপক বানের আবিষ্কার মানবদেহের বিকাশ বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিশেষ করে যুগের পর যুগ ধরে মানব মস্তিষ্ক যেভাবে বিবর্তিত হয়, তার সঙ্গে শিকারের সম্পর্ক নিরূপণ করা সহজ হয়। বান মনে করেন, মানুষ যখন শিকারের অস্ত্র বানানো শিখল, তখন সে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার তথা শক্তির সন্ধানও পেয়ে গেল। এর আগে মানুষ শক্তির জন্য শাকসবজি ও ফলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। দেহে প্রোটিন প্রবেশ করার পর মানুষের মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটে। অন্য জীবের চেয়ে মানব মস্তিষ্কের আকার বড় হতে থাকে। মার্কিন বিজ্ঞানলেখক রবার্ট আরড্রের মতে, আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রাণী শিকারের তাড়না বর্শা ও কুড়ালের মতো অস্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে।
মানুষের শিকারের ধরনে পরিবর্তন বিশে^র নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রাণীদের মধ্যেও প্রভাব ফেলে। ইসরায়েলের ইতিহাসবিদ ইয়ুভাল নোয়াহ হারারির মতে, মানবজাতির উৎপত্তি আফ্রিকা মহাদেশে। সেখানে তাদের একার বিবর্তন হয়, তা নয়। তাদের আশপাশের প্রাণীরাও একই সময়ে বিবর্তিত হয়। মানুষ যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ শিকারি হয়ে ওঠে, তেমনি শিকারির হাত থেকে বাঁচতে জীবজন্তুও নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করা শুরু করে। এসব কৌশলের একটি ছিল দৌড়ের গতিবৃদ্ধি। এ কারণে আফ্রিকার বড় প্রাণীরা আমাদের পূর্বপুরুষদের হাত থেকে কখনো কখনো পালিয়ে বাঁচতে পারলেও পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের প্রাণীদের দৌড়ানোর গতি বেশি না হওয়ায় শিকারির হাতে তাদের ধরা পড়তে বেশি সময় লাগত না।
প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা মানুষকে পাকা শিকারিতে পরিণত করে। প্রাচীন যুগে কেবল মানুষের কাছেই অস্ত্র থাকত, অন্য কোনো প্রাণী অস্ত্র তৈরি করতে পারত না এমনটা দীর্ঘদিন বিজ্ঞানীরা মনে করলেও সাম্প্রতিক সময়ে গবেষকরা এ নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। ২০০৭ সালে গবেষকরা জানান, পশ্চিম আফ্রিকার শিম্পাঞ্জিরা লাঠি থেকে বর্শা বানাতে শিখেছিল। সেসব বর্শা দিয়ে তারা ছোট প্রাণী শিকার করত। মানুষের বাইরে অন্য প্রাণীও যে অস্ত্রের সাহায্যে শিকার করতে পারত, তা ওই প্রথম জানা যায়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জিল প্রুয়েৎজ বলেন, ‘পশ্চিম আফ্রিকার শিম্পাঞ্জিরা হাত ও দাঁত দিয়ে গাছের ডাল ছিঁড়ত। এরপর তারা ডালগুলোর একদিক ধারালো করত। সেসব ডাল দিয়ে তারা দিনের বেলা গাছের গর্তে ঘুমিয়ে থাকা ছোট নিশাচর প্রাণীদের আঘাত করত।’
শুরু যেভাবে
বিশে্বর অনেক জায়গায় শিকারকে ধর্মীয় আচারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হয়। একটা সময়ে মনে করা হতো, শিকারে সফল হলে স্রষ্টার কৃপা পাওয়া সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে প্রাচীন মিসরের কথা বলা যায়। প্রাচীন মিসরের চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্যে শিকার বারবার উঠে আসে, কারণ মিসরীয়রা মনে করত, এর মধ্য দিয়ে দেবতাদের সন্তুষ্ট করা যাবে। সামাজিক মর্যাদা ও কর্র্তৃত্বের সঙ্গে শিকারের সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। শিকারের ক্ষমতাকে বরাবরই সাহসিকতা, শক্তি ও দক্ষতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে শিকার ছিল বিশেষ অধিকার। ইউরোপে মধ্যযুগে অভিজাত শ্রেণির মানুষ শিকার করা উপভোগ করতেন। এটি ছিল তাদের কাছে অর্থ ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম। শিকারে তারা একা যেতেন না। সঙ্গে থাকত ডজনখানেক কুকুর, ঘোড়া ও বাজপাখি। ১৫২০ সালে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ও ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের শিকারের কাহিনি হয়তো অনেকে জানেন। ইতিহাসের পাতায় ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা আছে। ওই সময় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৫২০ সালে ফ্রান্সের কেলে শহরের কাছে এক তৃণভূমিতে হেনরি ও ফ্রান্সিস শিকার অভিযানের পরিকল্পনা করেন। দুই রাজার সঙ্গে ছিলেন তাদের অমাত্যরা। তারাও রাজাদের সঙ্গে শিকার, তীর-ধনুক ছোড়া ও ঘোড়ার পিঠে চড়ে দৌড়ানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। শিকারের সময় ফ্রান্সিস ও হেনরির মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করত। কে কয়টা প্রাণী শিকার করতে পারলেন, এ নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলত তাদের মধ্যে। শত্রুতা থাকলেও শিকার অভিযানের সময় দুজনের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা একসঙ্গে নৈশভোজ করতেন, নিজেদের তাঁবুতে আড্ডা দিতেন, যা শিকারের আগে কেউ কল্পনাই করতে পারতেন না। ফ্রান্সিস ও হেনরির শিকার অভিযান ইউরোপের অন্য দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশ্বের কূটনৈতিক ইতিহাসে ঘটনাটিকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ সেটি মধ্যযুগে ইউরোপের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিল।
শিকারের উপনিবেশায়ন
সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিকারকে ব্যবহার করার রীতি সম্ভবত ঔপনিবেশিক ভারতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ২০১৮ সালে ইম্পেরিয়াল কালচার অ্যান্ড হান্টিং ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া বইয়ে লেখক বিজয়া রামাদাস মান্ডালা এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তার মতে, শিকার ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অপরিহার্য অংশ। ব্রিটিশ অভিজাত শ্রেণি এটিকে বিনোদন হিসেবে দেখত। এর মধ্য দিয়ে তারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব বিস্তার করত। এ ছাড়া ভারতীয় রাজারা ব্রিটিশ প্রভুদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের লক্ষ্যে মাঝেমধ্যেই শিকারের আয়োজন করতেন। ঔপনিবেশিক আমলে বন্যপ্রাণী শিকার এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু বাঘই মেরেছিল ১ হাজার ৫৭৯টি। এক সময় মানুষ বেঁচে থাকার জন্য পশু শিকার করতে বাধ্য হতো। সেই শিকারই কালের বিবর্তনে মর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীতে অবশ্য বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ শিকারকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পরিবেশগত প্রভাব
যেসব দেশ শিকারকে অনুমোদন দিয়েছে, তাদের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র থেকে সমস্যাবহুল প্রজাতিকে সরিয়ে ফেলা। উদাহরণ হিসেবে ১৯৩২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কথা বলা যায়। ত্রিশের দশকে দেশটিতে ইমুর সংখ্যা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায়। তারা দেদার কৃষকদের ফসল নষ্ট করা শুরু করলে অস্ট্রেলিয়া সরকার তাদের সংখ্যা হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয়। ইমুদের আবাসস্থলে পাঠানো হয় একদল সেনা, যাদের কাজ মেশিনগানের সাহায্যে পাখিগুলোকে হত্যা করা। কাজে নেমে অল্প সময়ের মধ্যে সেনারা বুঝতে পারলেন, কাজটা যতটা সহজ ভাবা হয়েছিল, ততটা সহজ নয়। ইমু বেশ চালাক ও দ্রুত গতিসম্পন্ন প্রাণী। তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া কঠিন। ওই অভিযান অচিরেই ব্যর্থ হয়। অভিযানের কমান্ডার মেজর গুইনিড মেরেডিথ বলেন, ‘আমাদের যদি এমন কোনো সৈন্যদল থাকত, যেখানে তাদের সহায়তায় নিয়োজিত রাখা হতো অনেক ইমু এবং সেগুলোর শরীরে বাঁধা থাকত বুলেট, তাহলে পৃথিবীর যেকোনো সেনাবাহিনীকে আমাদের ওই সৈন্যদল পরাজিত করতে পারত।’ অস্ট্রেলিয়া সরকার আজও তাদের নাজুক বাস্তুতন্ত্র থেকে ইমুদের নির্মূল করতে পারছে না এবং ক্ষেতে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সহ্য করে যাচ্ছে।
বন্যপ্রাণীর উৎপাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা ছাড়াও শিকারের আরও ইতিবাচক দিক আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিহাসবিদ জন মেকেঞ্জি ১৯৯৭ সালে তার দ্য এম্পায়ার অব নেচার বইয়ে লেখেন, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ‘মহান শ্বেতাঙ্গ শিকারির’ ধারণা রূপান্তরিত হয়ে ‘মহান শ্বেতাঙ্গ আলোকচিত্রীতে’ পরিণত হয়। জিম করবেটের মতো বিখ্যাত শিকারিদের ওই সময় পরিবেশ রক্ষার অগ্রদূত হিসেবে দেখা হতো। তারা জাতীয় পার্ক ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
বিশ্বের অনেক দেশে লাইসেন্স বিক্রির মাধ্যমে শিকারকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। লাইসেন্স বিক্রির অর্থ প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যয় করা হয়। যেমন জিম্বাবুয়ে। দেশটি শিকারের লাইসেন্স বিক্রি করে সেই অর্থ অবৈধ শিকার বন্ধের প্রচারণা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগে খরচ করে। এ ছাড়া কয়েকটি দেশে ট্রফি শিকারের (এক ধরনের শিকার যেখানে শিকার করা বন্যপ্রাণীদের ট্রফি হিসেবে প্রদর্শন করা হয়) চল আছে। এটিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার সফল কৌশল হিসেবে দেখা হয় কারণ দেশগুলো ট্রফি শিকারকে সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করে। এমনকি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডও এ ধরনের শিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ট্রফি শিকার সেসব দেশের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর, যেখানে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনা বা আয় নেই।
১৯৯০ সালে নামিবিয়া সরকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের হাতে নির্দিষ্ট বনাঞ্চলের মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার আইন করে। এই আইন করার উদ্দেশ্য স্থানীয়রা বনাঞ্চলের মালিক হলে সেক্ষেত্রে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী শিকারের সময় তাদের মনে হতে পারে, তারা প্রতিবেশীর সম্পদে হাত দিচ্ছে। ওই আইনের ফলে নামিবিয়ায় অবৈধ শিকার কমে যায়। দেশটির ২০ শতাংশের বেশি বনাঞ্চল এখন স্থানীয়রা সংরক্ষণ করছে। এ ছাড়া ৪৪ শতাংশ বনাঞ্চল কোনো না কোনোভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের হাত থেকে রেহাই পায়। ১৯৯০ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের স্বার্থে ওই আইন প্রণয়নের পর নামিবিয়ায় বন্যপ্রাণীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়।
‘প্রতি অপারেশনের আগে আমার মা আমাদের বলে, ‘আমার চোখের দুই মণি (ইনায়া এবং ইলহাম) দুজনকে তোমরা দেখে রেখো।’ আর আমরা হাসিমুখে বলি, ‘আম্মু এই অপারেশনের পরে তুমি আমাদের চাইতেও স্ট্রং হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তখন তুমি তোমার দুই নাতনির বিয়ে খাইতে পারবা।’ ডিসেম্বরের ২২ তারিখে আম্মুর বাইপাস হয়েছিল। এক বছর যেতে না যেতে আজ আম্মুর আরেকটা অপারেশন হচ্ছে (শহবব রিপ্লেসমেন্ট)। প্রত্যেক অপারেশনের আগে বন্ড সাইন করার সময় হাতটা কেঁপে ওঠে। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। পৃথিবীর সব মায়েরা সুস্থ থাকুক। আমিন!’
গত ২০ সেপ্টেম্বর এই ছবিটি পোস্ট করে ফেসবুক পেইজে কথাগুলো লেখেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তার মায়ের অপারেশন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাবা-মায়ের অসুস্থতায় সন্তানের আকুতি ঠিকই ফুটে উঠেছে এই স্ট্যাটাসে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’