
খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, কর্মব্যস্ততার কারণে বর্তমানে লিভারে রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের কিছু ভুলের কারণেই শরীরে বাসা বাঁধে লিভারের অসুখ। অনেকের ধারণা, কেবল মদ্যপান করলেই লিভারের ক্ষতি হয়। তবে কিছু কিছু খাবারেও কিন্তু লিভারের ক্ষতি হয়ে থাকে।
রক্ত থেকে যাবতীয় দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে লিভার। তাই লিভার সচল রাখতে কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বিশেষ করে কয়েক ধরনের খাবার ক্ষতি করতে পারে এই লিভারের। তাই এসব খাবারের উপর লাগাম টানতে হবে।
১) মাফিন, কেক, পেস্ট্রি, কুকিজ়ের মতো বেক করা খাবার লিভারের জন্য ভাল নয়। সকালের নাস্তায় অনেকেই পাউরুটিতে মাখন মাখিয়ে খান। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই ধরনের খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এই ফ্যাট নিয়মিত শরীরে গেলে কেবল ওজন বাড়ে না, লিভারেরও ক্ষতি হয়। তাই একেবারে বাদ না দিয়ে এর পরিমাণের উপর লাগাম টানা উচিত।
২) বাইরের ভাজাভুজি, তেল-মশলাদার, চপ-কাটলেটের মতো খাবারেও ভরপুর ফ্যাট থাকে। নিয়মিত এ ধরনের খাবার পেটে গেলেই ফ্যাটি লিভার-সহ আরও নানা ধরনের লিভারের রোগ বাসা বাঁধে শরীরে।
৩) মদ্যপান না করলেও অনেকেরই অতিরিক্ত সোডাযুক্ত পানীয়, নরম পানীয় খাওয়ার অভ্যাস থাকে। এই অভ্যাসও লিভারের অসুখ ডেকে আনে। যাঁরা মদ্যপান করেন না, তারা পার্টিতে গিয়ে এই সব পানীয়ে চুমুক দেন। এতেও কিন্তু লাভের লাভ হচ্ছে না, বরং ক্ষতি হচ্ছে লিভারের।
৪) চিনি খেলেও কিন্তু লিভারের ক্ষতি হয়। সরাসরি চিনি খাওয়া তো ক্ষতিকর বটেই, এ ছাড়াও অতিরিক্ত চিনি আছে এমন কোনও খাবার, যেমন, মিষ্টি, ক্যান্ডি, চকোলেট, কেক-পেস্ট্রি, ডোনাট নিয়মিত খেলে পরবর্তীকালে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫) ময়দার রুটি, পাউরুটি, লুচি, পরোটা কিংবা রোল, চাউমিন, এগুলো খেতে কমবেশি সবাই ভালোবাসেন। টিফিন হোক কিংবা রাতের খাবার, ময়দা রোজই খাওয়া হয়। কিন্তু লিভারের জন্য এগুলি মোটেও ভাল নয়। তাই ময়দার তৈরি খাবার রোজ না খেয়ে মাঝে মাঝে খাওয়াই ভাল।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
অনেকে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হওয়া উচিত স্বচ্ছ কাচের মতো। যেন এক পাশে দাঁড়িয়ে অন্যপাশের চিত্র স্পষ্ট দেখা যায়। আর এই কাজটা করতে পারলেই নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ে। কমে যায় দূরত্ব। তবে নিজের জীবনের কিছু সত্য স্ত্রীর কাছে চেপে যাওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ।
নইলে দাম্পত্যে ফাটল ধরতে মুহূর্ত লাগবে না। আসুন জেনে নিই, নিজের সম্পর্কে ঠিক ঠিক কোন কোন কথা স্ত্রীর কাছে বলা উচিত নয়।
অতীতের শারীরিক সম্পর্ক
হতে পারে আপনার স্ত্রী একজন আধুনিক নারী। সবকিছু সহজে গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপরেও তার কাছে অতীতের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে। এ নিয়ে কথা বললে ফেঁসে যেতে পারেন। আপনার প্রতি তার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কিছুটা হলেও কমে যেতে পারে। তাই সম্পর্কের ভালো চাইলে ভুলেও এই কাজ করবেন না।
পুরনো ভুল
ছোটবেলায় অনেকেই এমন কিছু ভুল করেন যা নিয়ে উচ্চবাচ্য না করাই ভালো। বিশেষ করে চুরি বা অন্য কোনো কারণে পুলিশি কেসে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনাগুলো। এসব বিষয় নিয়ে যত কম আলোচনা করবেন ততই ভালো। স্ত্রীর কাছে এইসব বিষয় চেপে যেতে হবে। এতে দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
বন্ধুদের সঙ্গে নারী বিষয়ক আলাপ
আপনি বন্ধুদের সঙ্গে নারীদের নিয়ে যেসব কথা বলেন তা বড় মুখ করে স্ত্রীর কাছে বলতে যাবেন না। তিনি যদি একবার বুঝতে পারেন আপনারা নারীদের সম্পর্কে কী ভাবেন তা দাম্পত্যে প্রভাব ফেলবে। তাই ভালো সাজতে গিয়ে স্ত্রীকে কখনো নিজেদের বন্ধুদের কথোপকথন শোনাবেন না।
কিছু দুঃখ রেখে দিন
সব মানুষের মধ্যে ভালো-খারাপ দিক রয়েছে। তাই বলে কথায় কথায় স্ত্রীর ভুল ধরা উচিত হবে না। কারণ এই কাজটা করলেই আপনি তার চোখে ছোট হয়ে যাবেন। এমনকি দুজনের মধ্যে বাড়তে পারে দূরত্বও। তাই স্ত্রীর সম্পর্কে খারাপ ধারণা মনে এলেও তা মুখে আনা যাবে না।
পরিবারের কুকর্ম
স্ত্রীর কাছে আপনার পরিবারের কুকর্ম সম্পর্কে যতটা কম বলবেন, ততই ভালো। কারণ আপনার মুখে নিজের পরিবার সম্পর্কে খারাপ কথা শোনার পর তিনি ভয় পেতে পারেন। এমনকি আপনার পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যেতে পারে। তাই ভালো সাজতে গিয়ে পরিবারে কুকর্ম ঘাটবেন না।
অনেক মানুষ মিথ্যা বলতে অপছন্দ করেন। কিন্তু এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। এমনিতে আমরা মিথ্যা ধরার ব্যাপারে দক্ষ নই। ফলে ডাহা মিথ্যাবাদী চেনা আরও কঠিন। তবে কিছু সহজ উপায় আছে যা হয়তো আপনাকে কোনটি মিথ্যা এবং কে ডাহা মিথ্যাবাদী তা সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।
সাধারণত চোখ ও মুখের ভাবই বলে দেয় কে মিথ্যাবাদী। আসলে একজন মিথ্যাবাদী তার চোখের মাধ্যমে অনেক কিছু বলে দেয়। প্রথম দিকে সে এদিক-ওদিক তাকাবে, মুখে কিছু বলবে না। অনেক সময় তাদের কারণে আমরা এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হই যাতে আমরা প্রতারিত বোধ করি।
তবে কেউ কেউ মিথ্যাচার করে মানুষের সহানুভূতি কেড়ে নেয়। কিছু লোক মিথ্যা বলতে এতটাই পারদর্শী যে তাদের ধরা শক্ত কাজ। ফলে মিথ্যাবাদী থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং শুরুতেই তাদের শনাক্ত করতে হবে। চলুন জেনে নিই কীভাবে আমরা মিথ্যাবাদী চিনব।
অতিরঞ্জিত করা
মিথ্যাবাদীরা সাধারণত কিছু করবে না। তারা সবকিছু নিয়ে কথা বলবে। তবে কথাগুলো হবে অতিরঞ্জিত। তারা যা বলবে আপনি এই জিনিসগুলো অনুভব করবেন। এমনকি যদি তারা সাধারণভাবে কথা বলে বা কারও সম্পর্কে কথা বলে, তাদের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে বা আপনাকে উত্তেজিত করতে বিশেষণ ব্যবহার করবে।
চোখ এবং মুখের অভিব্যক্তি
চোখ ও মুখের ভাব বলে দেয় কে মিথ্যাবাদী। আসলে একজন মিথ্যাবাদী তার চোখের মাধ্যমে অনেক কিছু বলে। প্রথম দিকে সে এদিক-ওদিক তাকাবে, মুখে কিছু বলবে না। এছাড়া কথা বলার সময় সে তার পিঠে চুলকাবে বা আঙুল দেখাবে। আর কিছু না হলে সে কম কথা বলবে। বা এত বেশি কথা বলবে যে আপনি সবকিছু ভুলে যাবেন এবং আপনার আসল কথা হারিয়ে যাবে।
ঘটনাগুলোর মধ্যে সংযোগ থাকবে না
যারা মিথ্যা বলে তাদের কথায় আপনি সত্যতা পাবেন না। সে বিষয়গুলো মিশ্রিত করার চেষ্টা করবে এবং এমন কিছু বলবে যেখানে একে অপরের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। সুতরাং যখনই আপনি ঘটনার মধ্যে সামান্যতম সত্য খুঁজে পাবেন না, তখন এ ধরনের মানুষের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করবেন না।
মিথ্যা ধরতে ব্যবহার করুন নিজের কান
আপনি যদি শ্রোতা হিসেবে মনোযোগী হন তবে মিথ্যাবাদী শনাক্তে আপনি এগিয়ে আছেন। কেননা মিথ্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মনোযোগী হয়ে কথা শোনার কোনো বিকল্প নেই। একজন অপরাধীর মতো একজন মিথ্যাবাদীও যখন কোনো মিথ্যা বলে তখন নিজের অজান্তে এমন কিছু প্রমাণ রেখে যায়, যা তার জন্য কাল হয়।
প্রায়শই খেয়াল করবেন যখন কোনো আগাগোড়া মিথ্যা গল্প আপনাকে শোনানো হয় তখন দেখা যায় এগুলোতে অল্পবিস্তর গড়মিল থেকে যায়।
মনোবিজ্ঞানী কাডি যা বলেছেন
সামনের মানুষটি মিথ্যা কথা বলছেন কিনা, সেটা ধরার জন্য খেয়াল করুন তার কথার সঙ্গে চেহারার অভিব্যক্তির মিল আছে কি নেই। এমন ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় মিথ্যাবাদী ব্যক্তির গলায় হয়তো খুশির আভাস দেখা যায়, কিন্তু চেহারায় থাকে দুশ্চিন্তার ঝলক। এছাড়াও অনেকে মিথ্যা কথা বলার সময় কৃত্রিম হাসি দিয়ে শ্রোতাকে আশ্বস্ত করতে চায় বা তার বিশ্বাস অর্জন করতে চায়। অতিরিক্ত মিথ্যা বলতে গেলে হাঁচি, কাশি অনেক কিছুরই আশ্রয় নিতে হয়। ফলে খুব সহজেই আপনি বুঝে যাবেন।
আর্থ্রাইটিস বা বাতের রোগীরা হাঁটু, গোড়ালি, পিঠ, কব্জি বা ঘাড়ের জয়েন্টগুলিতে ব্যথায় ভোগেন। এই রোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৫০ বছরের পরে মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। তবে বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রায় অনিয়মের কারণে তরুণরাও এর শিকার হচ্ছে।
বাত বা আর্থ্রাইটিস একটি সিস্টেমিক ডিজিজ অর্থাৎ যা কিনা পুরো শরীরে প্রভাব ফেলে। অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে এ রোগের উৎপত্তি হয়। মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ স্বাভাবিক ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায়, তার থেকে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড যখন আমাদের যকৃৎ তৈরি করে তখনই তা রক্তের পরিমাণ বাড়ায়।
অথবা খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড শরীরে প্রবেশ করলে এবং কিডনি রক্ত থেকে যথেষ্ট পরিমাণে তা ফিল্টার করতে না পারলে বাতের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
বাত হলো একটি অটোইমিউন ব্যাধি। মানে এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম বা ইমিউন সিস্টেম আপনার জয়েন্টগুলোকে আক্রমণ করে। এর ফলে জয়েন্টে বা গিরায় গিরায় ব্যথা, লালভাব, ফুলে যাওয়া এবং প্রদাহ হয়।
অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমার কারণেই বাত হয়ে থাকে। শতকরা ২০ ভাগেরও বেশি রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাতরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে।
এ ছাড়া স্থূলতা, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ, সিকল সেল এনিমিয়া (এক ধরনের রত্তস্বল্পতা), নিয়মিত অ্যালকোহল পানের কারণেও শরীরে ইউরিক এসিড বেড়ে গিয়ে বাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাতের প্রাথমিক লক্ষন হলো ব্যথা। শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে লালচে ভাব দেখা দেয়। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে ফুলে যাওয়া বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়াও বাতের লক্ষণ। জয়েন্টের চারপাশে অস্বাভাবিক অবস্থা হয়ে যায় এবং জয়েন্টের স্থানে উষ্ণ গরম অনুভব হয়।
পায়ের গিরার জোড়া আক্রান্ত হয় এবং অত্যাধিক ব্যথা হয়। অল্প অল্প জ্বর থাকে অনেক ক্ষেত্রে। ব্যথা কমে যাবার পর আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়। হাঁটুর জোড়া, পায়ের গোড়ালি, নখের জোড়া, হাতের কব্জি, কুনুই প্রভৃতি স্থানে প্রবল ব্যথা অনুভব করা।
বাতের চিকিৎসা হিসেবে ফিজিওথেরাপি সঠিক বিকল্প। বাত একটি প্রোগ্রেসিভ রোগ, এটি চলতেই থাকে শরীরের ভেতর। তাই সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে অন্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বাতের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় কিছু লাইফস্টাইল পরিবর্তন প্রয়োজন। যেমন ওজন বেশি থাকলে কমাতে হবে। মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে বাদ দিতে হবে। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, মাংস ডিম, শিমের বিচি, কলিজা ইত্যাদি খাওয়া যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।
যেসব রোগের কারণে গিঁটে ব্যথা হয়, সেসব রোগের যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। কিছু ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ঘরোয়া যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো হল,
ফিজিওথেরাপিস্ট তার হাত দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে এবং জয়েন্ট এবং পেশীতে শক্ত হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। এটি ব্যথা কমাতে এবং গতির পরিসীমা প্রসারিত করতে সাহায্য করতে পারে।
সাধারণভাবে, ব্যায়াম শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বলে মনে করা হয়। তবে আর্থ্রাইটিসে, বিশেষ এবং স্থিতিশীল ব্যায়াম যৌথ শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।
তাপ থেরাপি ব্যথা এবং মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে। একটি বোতলে হালকা গরম পানি নিয়ে, কাপড় গরম করে বা হট ব্যাগগুলো ব্যবহার করে তাপ থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কুলিং থেরাপি ব্যথা এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এটি আইস প্যাক, কোল্ড কম্প্রেস বা ক্রায়োথেরাপির আকারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
স্প্লিন্ট এবং ব্রেসের মতো কিছু ডিভাইস আপনার জয়েন্টগুলোকে বিশ্রামে রাখতে পারে। ফলে এগুলোর সাহায্যে বাতের ব্যথাও কমতে পারে। তবে এগুলো ব্যবহারের মাঝে বিরতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ব্যথা অবস্থায় হাঁটাচলা বা কাজ করার জন্য প্রয়োজনে হাতের লাঠি বা ক্র্যাচ ব্যবহার করতে পারেন। এতে ব্যথার স্থানে চাপ কম পড়বে।
খাদ্যাভ্যাসের উন্নতি ঘটিয়ে এটি এড়ানো যায়। বাতের রোগীদের এসব খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত,
আর্থ্রাইটিস রোগীদের খাবারে মিষ্টির পরিমাণ কমানো উচিত। বিশেষ করে অতিরিক্ত চিনি কমাতে হবে। ক্যান্ডি, সোডা, আইসক্রিম এবং বারবিকিউ সসের মতো জিনিসগুলিতে অতিরিক্ত চিনি থাকে। ২১৭ জনের উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, মিষ্টি সোডা এবং অন্যান্য মিষ্টি আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার- যেমন ফাস্ট ফুড, শস্য এবং বেকড খাবারে মিহি শস্য, যোগ করা চিনি, প্রিজারভেটিভের মোট জিনিস থাকে যা, শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা দেখায় যে, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া দ্রুত স্থূলতা বাড়ায়। ফলে আর্থ্রাইটিসও বাড়তে থাকে।
গম, বার্লি এবং রাইতে গ্লুটেন প্রোটিন পাওয়া যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই জিনিসগুলি আর্থ্রাইটিস বাড়াতে কাজ করে। এ ছাড়া গ্লুটেন মুক্ত খাবার বাতের লক্ষণগুলি কমাতে কাজ করে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, গ্লুটেন ফ্রি এবং নিরামিষভোজীদের মধ্যে আর্থ্রাইটিস রোগ খুব কম পাওয়া গেছে।
অ্যালকোহল, আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি ও লক্ষণ বাড়িয়ে তুলে। আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য অ্যালকোহল পান একেবারেই নিষিদ্ধ। একটি সমীক্ষা অনুসারে, অ্যালকোহল স্পন্ডিলাইটিস আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের মেরুদণ্ডের কাঠামোগত ক্ষতি করে।
যাদের বাত আছে, তাদের লবণ কম খাওয়া উচিত। চিংড়ি, টিনজাত স্যুপ, পিৎজ্জা, পনির, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং অন্যান্য অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে। ইঁদুরের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ইঁদুর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লবণ খায়, তাদের মধ্যে গুরুতর আর্থ্রাইটিস দেখা যায়। একই সময়ে, উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাবার খেলেও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
ওমেগা ৬ ফ্যাট বেশি এবং কম ওমেগা ৩ চর্বিযুক্ত খাবার অস্টিও আর্থারাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদিও এই চর্বিগুলি স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের দুর্বল অনুপাত শরীরে প্রদাহ বাড়ায়।
কিছু গবেষণায় জানা গেছে যে, লাল এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস শরীরে প্রদাহ বাড়ায়, যা বাতের উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে। রেড মিটে ইন্টারলিউকিন-৬, সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন এবং হোমোসিস্টাইন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য এটি বিপজ্জনক। ২৫,৬৩০ জনের উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায়, রেড মিট খাওয়া লোকদের বেশিরভাগেরই আর্থ্রাইটিস পাওয়া গেছে।
বর্তমান সময়ের কর্মব্যস্ততায় খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, কম ঘুম, শরীরচর্চায় অনীহা— এ সব কারণে ঘরে ঘরে বিভিন্ন রোগের কবলে পড়ছেন নানা বয়সী মানুষ।
কেউ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, কেউ আবার হার্টের রোগী। অনেকের শরীরে আবার ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড একসঙ্গেই বাসা বেঁধেছে।
কম বয়সে রোগবালাইয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন, সকালে উঠে এক গ্লাস বিটের রসে চুমুক দিলেই কিন্তু অনেক অসুখ থেকে দূরে থাকা যায়।
জেনে নিন, কেন সকালে খালি পেটে বিটের রস খাওয়া উপকারী।
বিটে আছে নাইট্রেট যা শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিণত হয়। রক্তনালিগুলির মুখ খুলে যায়, যার হাত ধরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে শরীরে৷ হৃৎপিণ্ড অনেক বেশি সচল থাকে৷ এ ছাড়া, নিয়মিত বিট খেলে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজেরও প্রকোপ কিছুটা কমে। এর মূলে আছে বিটেইন নামের উপাদান।
বর্ষার মৌসুমে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া কাবু করে আমাদের। ফলে জ্বর, সর্দি, কাশি এখন ঘরে ঘরে। এই সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও শরীর চাঙ্গা রাখতে নিয়ম করে বিটের রস খেতে পারেন। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
বিটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন সি। ত্বকের দাগ-ছোপ, বলিরেখার মতো সাধারণ সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করে এই বিট। বিটে থাকা বেটালেন্স নামক যৌগটি শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল হলে ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
বিটে থাকা নাইট্রেট শরীরে রক্ত সঞ্চালনের হার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কেও রক্ত চলাচল ভাল হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। বিটের রস নিয়ম করে খেলে স্মৃতিশক্তিও ভাল থাকে।
আয়রন, ফোলেট এবং ভিটামিন সি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুল ভাল রাখতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই সব খনিজই রয়েছে বিটের মধ্যে। শুধু চুল ঝরা বন্ধ নয়, নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে বিটের রস।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।