
মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু যখন শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা বা তার বেশি হয় তখন তাকে জ্বর বলা হয়।
জ্বর মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক ধরনের প্রতিক্রিয়া। সাধারণত কোনো রোগ বা ইনফেকশন হলে তার লক্ষণ হিসেবে আমাদের জ্বর আসে।
তবে গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে তা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া জরুরি। কারণ গর্ভাবস্থায় জ্বর বা অতিরিক্ত তাপমাত্রা গর্ভের শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি অনেক সময় মা ও শিশু দুজনের জন্যই প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
কারণ তবে গর্ভাবস্থায় একজন নারীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আগের তুলনায় দুর্বল হয়ে যায়, কারণ মা এবং শিশু উভয়কে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। তাই গর্ভবতী নারীদের জ্বর হলেই সাথে সাথে তা কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইউটিআই বা মূত্রনালীর সংক্রমণ গর্ভাবস্থায় খুবই সাধারণ এবং এর উপসর্গ হিসাবে জ্বর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাল সংক্রমণের কারণেও জ্বর হতে পারে। এই সময় সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত ৩-৪ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে ও অনেক সময় জ্বর হতে পারে। এটি শ্বাস নালীর একটি ভাইরাল সংক্রমণ। এটা সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ হতে পারে, যার কারণে জ্বর হওয়াটা স্বাভাবিক লক্ষণ। তবে এ সংক্রমণে আক্রান্ত গর্ভবতীর ডায়রিয়া এবং বমির মতো উপসর্গ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় জ্বর হওয়াটা স্বাভাবিক, তাই জ্বর হলে বেশি চিন্তা না করে কি কারণে জ্বর হয়েছে তা বের করতে হবে এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তাই জ্বর কমাতে ঘরে বসে যে পদ্ধতিগুলো করা যায়,
১. গর্ভাবস্থায় সারাদিন হাইড্রেটেড থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। যাতে করে শরীরে পানির অভাব না হয়।
২. একটি কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়ে কপালে দিয়ে রাখুন। কাপড় গরম হয়ে এলে আবার পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিন এবং কপালে দিন। এভাবে করে তাপমাত্রা কিছুটা কমানো যায় এবং আরাম পাওয়া যায়।
৩. হালকা গরম বা উষ্ণ পানিতে গোসল করুন। এতে করে শরীর কিছুটা ঠান্ডা হয় ও আরাম পাওয়া যায়। তবে পানি যেনো বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪. গোসল করতে না চাইলে উষ্ণ পানি দিয়ে স্পঞ্জ বাথ করুন। অর্থাৎ একটা স্পঞ্জ ভিজিয়ে নিয়ে তা দিয়ে সারা শরীর মুছে নিন।
৫. বাইরে রোদ বা গরম স্থানে না থেকে ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। ঘরে ফ্যান বা এসি থাকলে তা চালু করে দিন। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসার পাশাপাশি ঠান্ডা হবে।
৬. যথাসম্ভব আরামদায়ক পোশাক পড়ুন। সুতি, হালকা ও ঢিলেঢালা কাপড়ের পোশাক পড়ার চেষ্টা করা উচিত।
১. সর্দি বা কাশি আছে এমন কারো সংস্পর্শে না যাওয়া উচিত।
২. খুব গরমে বাইরে বের না হওয়াই ভালো। তবে বের হতে হলে বাহির থেকে ফিরেই হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে নেয়া উচিত।
৩. বেশি বেশি করে ফল, শাক-সবজি খাওয়া উচিত। তবে আধা সিদ্ধ ডিম, মাংস, পনির এবং সামুদ্রিক খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।
৪. মূত্রনালীর সংক্রমণ এড়াতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
বর্তমানে সাধারণ ভাইরাল জ্বর ও ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দেশজুড়েই এর আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হলেও ডেঙ্গু সন্দেহে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তবে, ডেঙ্গু জ্বরকে শুধু ভাইরাল জ্বর ভেবে উপেক্ষা করাও যুক্তিযুক্ত নয়। যদিও এ দুই জ্বর একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ দুটি স্বাস্থ্য সমস্যার পার্থক্য জেনে নেওয়া জরুরি।
মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভাইরাল সংক্রমণ
সাধারণ ভাইরাল জ্বর, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভাইরাল সংক্রমণের কারণেই জ্বর হতে পারে। জ্বর এক ব্যক্তি থেকে অন্যের কাছে যেতে পারে।
ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ
সংক্রমিত ব্যক্তির জ্বর; নাক দিয়ে পানি পড়া; হাঁচি-কাশি; কাশি (সাধারণত শুষ্ক); মাথা ব্যথা; পেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা; গুরুতর অস্বস্তি (অস্বস্তিবোধ); গলা ব্যথা হতে পারে।
ফ্লু সংক্রমণের ২-৪ দিন পর উপসর্গ দেখা দেয়। ভাইরাল জ্বর ৩-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং এরপর সাধারণত কোনো জটিলতা থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফ্লু এমনিতেই প্রশমিত হয়ে যায়।
ডেঙ্গু
ডেঙ্গু এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গু ২-৭ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং জ্বর ভালো হওয়ার ২-৩ দিন ঝুঁকিপূর্ণ সময়। ডেঙ্গু চলে যাওয়ার পরই সাধারণত সতর্কতা লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে অন্য কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়া শুধু জ্বর হয়, ডেঙ্গু সাধারণত সংক্রমিত মশা কামড়ানোর ৪-১০ দিন পরে শুরু হয়।
ডেঙ্গুতে খুব উচ্চমাত্রার জ্বর হয় অর্থাৎ ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। পর্যায়ক্রমে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়— মাথা ব্যথা। পেশি, হাড় বা গিড়ায় ব্যথা। বমি বমি ভাব ও বমি। চোখের পেছনে ব্যথা। ফুসকুড়ি।
সম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু হয়েছে বলে সন্দেহ হলে এবং কোনো সতর্কতা লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সতর্কতা লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে— প্রচণ্ড পেট ব্যথা; ক্রমাগত বমি হওয়া; মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত; বমি, মল বা প্রস্রাবে রক্ত; ত্বকের নিচে রক্তপাত; ভারি ও দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস; ক্লান্তি ও অস্থিরতা।
জটিলতা
অতীতে ডেঙ্গু হয়ে থাকলে অর্থাৎ দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুর সংক্রমণ মারাত্মক মৃত্যুর ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং জটিলতা দেখা দেয়। মারাত্মক ডেঙ্গুতে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত এবং অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে যেতে পারে, ডেঙ্গুতে রক্তের প্লেটিলেটের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং রোগীকে ৭-১০ দিনের জন্য সঠিক খাবারের মাধ্যমে প্লেটিলেটের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে প্লেটিলেট ট্রান্সফিউশন দিতে হতে পারে।
ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের পার্থক্যটা সহজে বোঝার উপায় হলো প্রথম তিন দিনে এনএসওয়ান, ভাইরাল অ্যান্টিজেন ডিটেকশন করা। তিন দিন পার হয়ে গেলে ডেঙ্গু আইজিজি ও ডেঙ্গু আইজিএম টেস্ট করতে হবে।
প্রতিবছর বিশ্বে বিষাক্ত সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় প্রচুর মানুষ। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সর্পদংশন প্রায়ই ঘটে।
তবে সাপে কাটলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দেশে বিষধর সাপের চেয়ে বিষহীন সাপের সংখ্যাই বেশি। সাধারণত কিং কোবরা, গোখরা, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খচূড়, গ্রিন পিট ভাইপার, রাসেল ভাইপার ইত্যাদি বিষধর সাপ দেখা যায়।
তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত চন্দ্রবোড়া। এক সময় এই প্রজাতির সাপ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হলেও গত বছর দশেক ধরে আবারও এই সাপের দংশনের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে যারা ক্ষেতখামারে কাজ করেন, তারা চন্দ্রবোড়া সাপে কাটার আশঙ্কায় থাকেন।
বিষহীন সাপের কামড়ের সাধারণ লক্ষণ হল কামড়ের স্থানে ব্যথা, আঘাত এবং আঁচড়।
তবে বিষাক্ত সাপের কামড়ের পরে, সাধারণত কামড়ের স্থানটিতে গুরুতর ব্যথা থাকে। এ ছাড়া কামড়ের চারপাশে লালভাব, ফোলাভাব, ক্ষত, রক্তপাত বা ফোসকা হয়ে যেতে পারে। অন্যান্য উপসর্গগুলি হল বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, মুখে একটি অদ্ভুত স্বাদ, কামড়ের স্থানে জ্বালাপোড়া করে, খিঁচুনি।
এ ছাড়া, মুখে লালা, শরীরে ঘাম, দ্রুত হৃদস্পন্দন, দুর্বল নাড়ি, নিম্ন রক্তচাপ, মুখ অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চারপাশে অসাড়তা এগুলোও বিষাক্ত সাপের কামড়ের লক্ষণ।
কিছু সাপে আবার এমন কিছু বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে প্রভাবিত করে।
সাপ কামড়ালে সবার প্রথমে যেসব পদক্ষেপ নেয়া উচিত তা নিচে দেয়া হল,
১. প্রথমেই সাপটিকে ধরা বা ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবেন না। এতে করে বার বার কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
২. কামড়ের স্থান কাটাকাটি বা বিষ অপসারণের চেষ্টা করবেন না।
৩. কামড়ের স্থান সাবান ও পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪. একটি পরিষ্কার, শুকনো কাপড় দিয়ে কামড়ের স্থান ঢেকে রাখুন।
৫. রক্ত প্রবাহ বন্ধ করার জন্য কামড়ের স্থানে শক্ত করে ব্যান্ডেজ বাধবেন না।
৬. ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল পান করবেন না।
৭. ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করবেন না, যেমন অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মট্রিন আইবি, অন্যান্য) বা নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম (আলেভ)। এগুলো খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৮. কামড়ের স্থান ফুলে গেলে সমস্ত আংটি, ঘড়ি খুলে ফেলুন এবং টাইট পোশাক পরা থাকলে তা খুলে আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন।
৯. সম্ভব হলে নিরাপদ দূরত্ব থেকে সাপের ছবি নিয়ে রাখুন। সাপ শনাক্ত করা গেলে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় সাহায্য হয়।
১০. বিষাক্ত সাপের কামড় হলে যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া উচিত। কারণ যত তাড়াতাড়ি অ্যান্টিভেনম শুরু করা যায়, তত তাড়াতাড়ি বিষ থেকে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি বন্ধ করা যায়।
১১. বিশ্রাম নিশ্চিত করুন এবং শান্ত থাকুন। রোগীর যাতে আক্রান্ত অঙ্গ নড়াচড়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১২. প্রথাগত প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি, ভেষজ ওষুধ এবং অন্যান্য অপ্রমাণিত বা অনিরাপদ প্রাথমিক চিকিৎসা এড়িয়ে চলুন।
১৩. মুখ দিয়ে চুষে বিশ বের করার চেষ্টা করবেন না।
সাপে কামড়ানোর সম্ভাবনা এড়াতে সাপের বসতি এলাকা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তারপরও অনেক সময় সেটা সম্ভব না হলে সাপের কামড় এড়াতে যেসব পদক্ষেপ নিতে পারেন।
১. সাপ থাকতে পারে এমন জায়গাগুলি এড়িয়ে চলুন। যদি আপনি সাপ দেখতে পান, ধীরে ধীরে এটি থেকে দূরে সরে যান এবং এটি কাছে যাবেন না। সাপকে একা ছেড়ে দিন।
২. লম্বা ঘাস জাতীয় এলাকায় গেলে মোটা চামড়ার বুট পরা উচিত যাতে করে সাপের কামড় শরীরে না লাগে।
৩. রাতে বাইরে হাঁটার সময় সাথে একটি টর্চলাইট জ্বালিয়ে রাখুন।
৪. বাড়িতে বিষধর সাপ দেখতে পেলে দ্রুত প্রাণী নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে ফোন করুন।
সূত্র: মায়োক্লিনিক, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, জন হোপিংস।
মানসিক চাপ দূর করা থেকে ত্বক, চুলের বিভিন্ন সমস্যা রোধে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এসেনশিয়াল অয়েলের ব্যবহার।
আর তাই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দামি প্রসাধনীর বদলে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এসেনশিয়াল অয়েল। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, তৈলাক্ত ত্বকে র্যাশ, ব্রণ, ফুসকুড়ির মত সমস্যাও সমাধান করে থাকে নানা ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল। আবার শুষ্ক ত্বককে পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজ রাখে এই অয়েলগুলি।
তবে সবার ত্বকে সব ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল উপযুক্ত নয় আবার এক একেক ধরনের সমস্যার জন্য আলাদা আলাদা অয়েল রয়েছে। তাই ব্যবহারের আগে জেনে রাখা প্রয়োজন যে কোন সমস্যার জন্য কী ধরনের অয়েল লাগবে।
এই অয়েলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষের জন্ম দিতে পারে এই তেল। গভীর ক্ষতের দাগ সারানোর জন্য ল্যাভেন্ডার বিশেষ কার্যকর বলা হয়। সানবার্ন সারাতেও এই তেল সহায়ক।
অনেক প্রসাধনীতেই আজকাল টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করা হয়। ত্বককে সজীব করতে যেমন এই তেলের জুড়ি নেই, তেমনই এতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি সেপটিক উপাদান রয়েছে। ব্রণ, ক্ষতের দাগ সারাতে এবং রোদে পোড়া ভাব দূর করতে এই তেল সাহায্য করে। খুশকির সমস্যাতেও দারুণ কার্যকরী এই অয়েল।
ত্বকের কালো ছোপ দূর করার কাজে এই তেল সহায়ক। এর অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান অ্যালার্জিজনিত দাগ দূর করতেও সাহায্য করে। অনেক পুরনো ক্ষতের দাগও এই তেলের সাহায্যে সারিয়ে ফেলা যায়।
মন পরিশ্রান্ত থাকলে তার ছাপ পড়ে মুখে। এই অয়েল ব্যবহারে সেই ক্লান্তির ছায়া দূর হয়ে যায় সহজেই। পাশাপাশি ত্বকে কোনও রকম প্রদাহ হলে তা-ও দূর করতে পারে এই অয়েল।
ব্রণের দাগ, এগজ়িমার দাগ সারাতে সিডারউড এসেনশিয়াল অয়েল বিশেষ উপকারী। ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে তুলতেও অব্যর্থ এই তেল।
বাংলাদেশের মত দেশে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া একটি সাধারণ ও পরিচিত সমস্যা। কারণ রাস্তায় বা রাস্তার পাশের হোটেলে প্রায়ই খাবারগুলো অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত হয়ে থাকে।
যখন কেউ দূষিত, নষ্ট বা বিষাক্ত খাবার খায়, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবী দ্বারা সংক্রামিত, তখন ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে।
সাধারণত নোরোভাইরাস, সালমোনেলা, ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেন, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর এবং স্টাফিলোকক্কাস নামক প্যাথোজেনের কারণে বেশীরভাগ ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ছাঁচ, টক্সিন পদার্থ, অ্যালার্জেন, কম রান্না করা মাংস ইত্যাদি খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী।
তবে বেশিরভাগ সময়ই খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং এর জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
সাধারণ ক্ষেত্রে ফুড পয়জনিং এ নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো দেখা যায়,
পেটের ব্যথা
ডায়রিয়া
বমি বমি ভাব বা বমি
ক্ষুধামন্দা
অল্প জ্বর
দুর্বলতা
মাথাব্যথা
তবে মারাত্নক ফুড পয়জনিং এ কিছু লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো হল,
ডায়রিয়া যা ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়
১০২ ডিগ্রির বেশি জ্বর
দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধা
গুরুতর ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ, যেমন শুষ্ক মুখ, সামান্য প্রস্রাব করা
রক্তাক্ত প্রস্রাব ইত্যাদি
এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
খাদ্যের বিষক্রিয়ার প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বমি এবং ডায়রিয়া ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে, তাই ফুড পয়জনিং হলে কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করা উচিত।
এ ছাড়া ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গুলো এই সময়ে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। এ ছাড়া নন-ক্যাফেইনযুক্ত সোডা, ভেষজ চা, মুরগি বা সবজির স্যুপ ইত্যাদি বেশি করে খাওয়া উচিত।
ফুড পয়জনিং হলে মসৃণ, কম চর্বিযুক্ত, কম ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কারণ এ সময় পেটের জন্য চর্বি ও উচ্চ ফাইবার হজম করা কঠিন। তাই এ সময় কলা, খাদ্যশস্য, ডিমের সাদা অংশ, মধু, ওটমিল, আলু, রাইস, আপেল ইত্যাদি খাওয়া উপকারি।
খাদ্যের বিষক্রিয়ার সময় ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করাই মূল লক্ষ্য। তাই এ সময় আদা চা, দই বা প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল খাওয়া উপকারি। কারণ এগুলো শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
কিছু কিছু খাবার ফুড পয়জনিং কে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। তাই ফুড পয়জনিং এর সময় এসব জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
১. অ্যালকোহল, ক্যাফেইন বা সোডা জাতীয় পানীয়। যেমন এনার্জি ড্রিংকস, কফির মতো পানীয়গুলি এড়িয়ে চলা উচিত।
২. উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন অ্যাভোকাডো, ব্রোকলি, মটরশুটি, পুরো শস্য, বাদামী চাল ইত্যাদি।
৩. অতিরিক্ত ঝাল বা অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার ফুড পয়জনিং এর সময় পেটে জ্বালা অনুভব তৈরি করে। তাই এসব খাবার না খাওয়াই ভালো।
৪. পনির এবং আইসক্রিমের মতো কিছু দুগ্ধজাত খাবারে সাধারণত চর্বি বেশি থাকে। এগুলো পেটে সমস্যা তৈরি করে থাকে।
৫. উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং আধাসিদ্ধ মাংস।
৬. অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার যেমন ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি টাইপের খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।
৭. ধূমপান।
৮. ফলের রস।
ফুড পয়জনিং বা খাদ্যের বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলি মেনে চলা উচিত,
১. খাবার তৈরির স্থান, জিনিসপত্র এবং আপনার হাত সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
২. গরুর মাংস খুব ভালোভাবে রান্না করুন। ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রান্না করা উচিত। এ ছাড়া রোস্ট, স্টেক এবং চপস ১৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রান্না করুন।
৩. মুরগি এবং টার্কি জাতীয় মাংস ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রান্না করুন।
৪. সামুদ্রিক খাবার সম্পূর্ণরূপে ভাল মত পরিস্কার করে রান্না করা উচিত।
৫. যে কোন স্থান থেকে মেয়াদ দেখে এবং ভেজাল কিনা নিশ্চিত হয়ে খাবার কেনা উচিত।
৬. পচনশীল খাবার ১ ঘন্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখুন।
৭. খাবার সন্দেহজনক মনে হলে বা গন্ধযুক্ত হয়ে গেলে তা ফেলে দিন।
৮. পানি ভালো মত ফুটিয়ে বা পরিশোধন করে পান করুন।
জমির নামজারির জন্য ঘুষের দর নির্ধারণ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠা পিরোজপুরের নাজিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড মো. মাসুদুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছিল। অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, পিরোজপুরের নাজিরপুরে জমির নামজারি করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা সরকার নির্ধারিত ফি ১ হাজার ১৭০ টাকার জায়গায় ছয় হাজার টাকা ঘুষ নেবেন বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন এসি ল্যান্ড মাসুদুর রহমান। গত জুলাই মাসে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে ওই ঘুষ নেওয়ার কথা বলা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমালোচনা হয়।
মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তার সহকর্মীদের নামজারি মামলায় অবৈধ অর্থ লেনদেন-সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদানের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি অডিও ক্লিপের কথোপকথনের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’
এসি ল্যান্ড মাসুদুর রহমানের আচরণকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা মোতাবেক অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাসুদুর রহমানকে তার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা আবশ্যক। তাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন। পিরোজপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সেলিম হোসেনকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাধবী রায় ও সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) রিয়ায মাহমুদ।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
১ম ওয়ানডে
বাংলাদেশ–নিউজিল্যান্ড
দুপুর ২টা
টি স্পোর্টস ও গাজী টিভি
উয়েফা ইউরোপা লিগ
এলএএসকে–লিভারপুল
রাত ১০–৪৫ মিনিট
সনি স্পোর্টস টেন ২
শেরিফ–এএস রোমা
রাত ১০–৪৫ মিনিট
সনি স্পোর্টস টেন ১
ওয়েস্ট হাম–বাক্কা তোপোলা
রাত ১টা
সনি স্পোর্টস টেন ১
সৌদি প্রো লিগ
দামাক–আল হিলাল
রাত ৯টা
সনি স্পোর্টস টেন ৫
আল ইত্তিহাদ–আল ফাতেহ
রাত ১২টা
সনি স্পোর্টস টেন ৫
রাগবি বিশ্বকাপ
ফ্রান্স–নামিবিয়া
রাত ১টা
সনি স্পোর্টস টেন ২।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
বাংলাদেশের স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘দ্বীনিয়াত’ নামে পরিচালিত বিশেষ শিক্ষাধারা পরিচালনা করছেন মুফতি সালমান আহমাদ। তিনি দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের প্রধান। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে চলমান এই বিশেষ শিক্ষা কারিকুলাম বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কয়েক লাখ মানুষ দ্বীনিয়াতের কারিকুলামে দ্বীন শিখছে। দ্বীনিয়াত শিক্ষার ধরন, পদ্ধতি, কারিকুলাম ও কার্যকারিতা নিয়ে মুফতি সালমান আহমাদ দেশ রূপান্তরের মুখোমুখি হন। কথা বলেছেন রকিব মুহাম্মদ
দেশ রূপান্তর : স্কুলশিক্ষার্থীদের ধর্ম শিক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কারিকুলাম দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ শাখার প্রধান আপনি। দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের কর্মসূচি এবং কবে, কীভাবে এটা শুরু হয়েছে এ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
মুফতি সালমান আহমাদ : সমাজের ৯৮ ভাগ মুসলমান জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত। মাত্র ২ ভাগ মাদ্রাসাপড়ুয়া। ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শেখার অধিকার ৯৮ ভাগ মানুষেরও রয়েছে। দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ সেই ৯৮ ভাগ মানুষের ধর্মীয় জ্ঞান শেখানোর মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করছে। তাদের কীভাবে দ্বীনের মৌলিক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষায় আলোকিত করা যায় সেটাই আমাদের মূল পরিকল্পনা। মানুষ তার যাপিত জীবনে ধর্মীয় অনুশীলনের জন্য যে জ্ঞানটুকু দরকার, আমরা তা শিখিয়ে থাকি। এক কথায় বলতে গেলে, দ্বীনিয়াত হলো সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্কুলগামী শিশুদের জন্য দ্বীন শেখার স্বতন্ত্র একটি প্ল্যাটফরম।
দেশ রূপান্তর : দ্বীনিয়াত কারিকুলাম মৌলিকভাবে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে কাজ করে?
মুফতি সালমান আহমাদ : স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত নানা পেশার সঙ্গে সংযুক্ত কর্মজীবী মানুষ, মুসলিম মা-বোনদের নিয়ে আমাদের পথচলা। এই তিন শ্রেণিসহ যারা স্বাক্ষরজ্ঞান থেকে পেছনে রয়েছেন তাদেরও কীভাবে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়, সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ। যেহেতু আমাদের স্লোগান হলো শতভাগ মানুষকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। এ কারণে দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধীদের নিয়েও রয়েছে আমাদের বিশেষ পদ্ধতির পড়াশোনা। এ ছাড়া সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সেবা ও শিক্ষা প্রদানেও দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। দ্বীনিয়াত প্রকাশিত বিশেষ সিলেবাসের মাধ্যমে তারা ধর্মীয় জ্ঞান শিখছে। অন্ধদের জন্যও দ্বীনিয়াত সম্পূর্ণ সিলেবাস প্রকাশ করেছে।
দেশ রূপান্তর : দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ কোন পদ্ধতিতে পাঠদান করে? সেখানে কারা ওস্তাদ এবং কীভাবে পাঠদান করেন?
মুফতি সালমান আহমাদ : আপনি জানেন, বাংলাদেশের প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা হলো মক্তব শিক্ষাব্যবস্থা। আমরা মূলত সেই মক্তব ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই। প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও এ কথা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মক্তব শিক্ষাটাই প্রাচীনতম শিক্ষাব্যবস্থা।’ আসলে শুধু বাংলাদেশ নয়, যত মুসলিম দেশ রয়েছে; সবখানে মক্তব শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা মনে করা হয়। বর্তমানে আমাদের মক্তব শিক্ষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমরা সেই পদ্ধতি ফিরিয়ে এনেছি আধুনিক ও মানসম্মত কারিকুলামে। দ্বীনিয়াতের শিক্ষা কারিকুলাম ৩ স্তর বিশিষ্ট। ১. প্রাইমারি, ২. সেকেন্ডারি, ৩. অ্যাডভান্স।
এই তিনস্তরের শিক্ষা কারিকুলাম দুভাবে পরিচালিত হয়। এক. স্কুলের সাধারণ পাঠ্যসূচির সঙ্গে। দুই. সকালবেলার মক্তবে। উভয়ক্ষেত্রে দ্বীনিয়াত প্রতিদিন সময় নেয় ১ ঘণ্টা করে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীনিয়াত সেন্টার নামে একটা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেখানে এসে যার যার সুবিধামতো সময় অনুযায়ী একজন শিক্ষকের কাছে দ্বীন শিখে যায়।
দেশ রূপান্তর : ১ ঘণ্টায় কতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান শেখা সম্ভব? এ সময়ে তাদের কী পড়াতে চান, কী পড়াচ্ছেন?
মুফতি সালমান আহমাদ : প্রতিদিন ১ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে একজন স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী দ্বীনের পাঁচটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। কোরআন, হাদিস, আকাইদ, মাসায়েল ও ইসলামি তরবিয়ত এবং আরবি ভাষা। সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন দেখে তেলাওয়াত করা, হাদিস মুখস্থ করা, কোরআনের মৌলিক সুরা, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা, মাসনুন দোয়া ইত্যাদি বিষয় তারা দ্বীনিয়াত কারিকুলামে শিখতে ও পড়তে পারবে।
দেশ রূপান্তর : দ্বীনিয়াতের সিলেবাস পড়ে কেউ কি কোরআনের হাফেজ হতে পারবে?
মুফতি সালমান আহমাদ : দ্বীনিয়াত বাংলাদেশে যেহেতু শতভাগ মানুষকে দীন শিক্ষা দেয়। দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ হিফজের ব্যবস্থাও করে রেখেছে, আফটার স্কুল তাহফিজ নামে। স্কুল শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থী দ্বীনিয়াতের সেন্টার কিংবা কোনো শাখায় যদি প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, তবে তারা কোরআন মাজিদ হেফজ করতে পারবে। ক্লাস ফাইভে পড়া পর্যন্ত তার হেফজ পড়া শেষ হয়ে যাবে। সে একজন দক্ষ হাফেজ হিসেবে গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে বাচ্চারা দ্বীনের প্রাথমিক জ্ঞানও অর্জন করতে পারবে।
দেশ রূপান্তর : দ্বীনিয়াতের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পৃক্ত হলেন? বাংলাদেশে দ্বীনিয়াতের কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাই।
মুফতি সালমান আহমাদ : দ্বীনিয়াতের প্রথম ধারণা তৈরি হয় ১৯২৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার আলেমরা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের দ্বীন শেখার ব্যবস্থা করে। দক্ষিণ আফ্রিকার কারিকুলামটির নাম তাসহিল (সহজ দ্বীনশিক্ষা)। ভারতের একদল মুসলিম দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর করেন। সফর করার পর তারা দেখতে পান সেখানে মুসলিম শিশুদের জন্য ইসলামি শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তখন তারা সাধারণ শিক্ষা লাভের পাশাপাশি মুসলিম শিশুরা যেন ইসলামি শিক্ষা লাভ করতে পারে সে জন্য এ কারিকুলাম চালু করেন।
ভারতের মুম্বাইয়ে জিম্মাদার হাজী রফিক এশিয়া মহাদেশের উপযোগী করে এই বিষয়টির জন্য নিজের জানমাল কোরবান করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় আলেম উলামা দারুল উলুম দেওবন্দের পরামর্শে এ সিলেবাস প্রণয়ন করেন। বর্তমানে বিশ্বের ৪০টি দেশে দ্বীনিয়াতের কার্যক্রম রয়েছে। দ্বীনিয়াতের সিলেবাসভুক্ত বইগুলো প্রায় ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
২০০৫ সালের দিকে আমি আফ্রিকা সফর করি। সেখানে প্রত্যেকটি বাচ্চা স্কুল-কলেজে পড়ে কিন্তু এর আগে তারা হাফেজে কোরআন হয়। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, একেকজন একেকটা হচ্ছে। এর আগে তারা হাফেজে কোরআন হয়েছে। কীভাবে হলো? যখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলাম, দেখলাম প্রত্যেক বাচ্চা স্কুলে যাওয়ার আগে বা পরে এই দুই সময়ের যে কোনো এক সময় তারা দ্বীনিয়াতের সিলেবাস অনুসরণ করে দ্বীন শিক্ষা করে। এরপর আমি দ্বীনিয়াতের কাজ দেখতে শ্রীলঙ্কা সফর করি। এ ছাড়া ব্রাজিল, চিলি ও পানামাসহ বিভিন্ন দেশে দ্বীনিয়াতের কার্যক্রম দেখেছি। বেশ কয়টি দেশ সফর করে এই সিলেবাসের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ তৈরি হয়। আমি ভারতের মুম্বাইয়ে যোগাযোগ করে বেশ কয়েকটি বই অনুবাদ করি। ১ম ও ২য় বর্ষের বইয়ের পড়ানোর বিস্তারিত বিষয়ে জানি। পরে বাংলাদেশে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করি ২০০৯ সালে। আমার সঙ্গে মুফতি নোমান আহমদ কাসেমি এই কাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন শুরু থেকে। দ্বীনিয়াতের সিলেবাস অনুবাদের ক্ষেত্রে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানেও তিনি দ্বীনিয়াতের কাজে সক্রিয়।
দেশ রূপান্তর : দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ নিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কী?
মুফতি সালমান আহমাদ : আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মসজিদকে একটি জীবন্ত মসজিদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, এ লক্ষ্যে কাজ চলমান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারা দেশে মসজিদভিত্তিক মক্তব গড়ে তুলতে চাই। কারণ, মক্তব ছাড়া মসজিদ জীবন্ত হয় না। মানুষের সুবিধামতো সময়ে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাই। এটি আমাদের দ্বিতীয় পদক্ষেপ। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মক্তব কায়েম করা। পথশিশু ও নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলছে। সময়ে সময়ে স্কুল-কলেজপড়ুয়া নারীদের জন্য দ্বীন শেখানোর পাশাপাশি বিশেষ প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আমাদের আরও বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করছি ইনশাআল্লাহ।
দেশ রূপান্তর : ‘পাঁচ মিনিটের মাদ্রাসা’ নামে দ্বীনিয়াত কর্র্তৃক প্রকাশিত একটি বই রয়েছে। এটি জনসাধারণের জন্য কতটুকু উপকারী?
মুফতি সালমান আহমাদ : শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীনিয়াতের নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি বিভিন্ন বই-পুস্তক থাকলেও সর্বশ্রেণির মানুষের জন্য উপকারী একটি গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভব হচ্ছিল। সেই শূন্যতা পূরণে দ্বীনিয়াতের ‘পাঁচ মিনিটের মাদ্রাসা’ বইটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। আরবি মাসের তারিখ অনুযায়ী সন্নিবেশিত বইটির ভূমিকাতে লেখা হয়, মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর কিতাব এবং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের কাছাকাছি করার উদ্দেশ্যে এই কিতাব কোরআন-হাদিসের আলোকে সংকলন করা হয়েছে। এতে দ্বীনের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কোরআন-হাদিসের আলোকে ১০টি শিরোনামে একত্রিত করা হয়েছে। একদিনের পাঠে ১০টি করে বিষয় রয়েছে। দিনে ৫ মিনিট পড়ে পুরো বছরে ৩ হাজার ৫ শ বিষয়ে জানা যাবে।
দেশ রূপান্তর : দ্বীনিয়াতের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
মুফতি সালমান আহমাদ : আমি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলব, সাধারণ মানুষের দ্বীনি শেখার মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনারা দেশের সাধারণ মানুষের নিরক্ষরতা দূর করতে কাজ করবেন। এ দেশের একজন শিশুও যেন দ্বীনি শেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে সচেষ্ট থাকবেন।
অভিভাবকদের বলব, দুনিয়া ও আখেরাতে সুখে-শান্তিতে থাকতে সন্তানকে অবশ্যই দ্বীনিদার বানাবেন। যদি আদর্শ সন্তান দুনিয়াতে তৈরি করতে পারি, তাহলে এই সন্তান আমাকে যেমন মূল্যায়ন করবে; আমার সৃষ্টিকর্তাও তেমন মূল্যায়ন করবে। মনে রাখবেন, দ্বীনি শেখার বিকল্প কোনো কিছু নেই।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।