‘বিষাদবৃক্ষ’-খ্যাত মিহির সেনগুপ্ত মারা গেছেন
অনলাইন ডেস্ক | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:৪৭
মিহির সেনগুপ্ত
দেশভাগ, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক সুনিপুণ গদ্যে ফুটিয়ে তোলা পশ্চিমবঙ্গের লেখক মিহির সেনগুপ্ত আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
কিছুদিন ধরে ব্লাড ক্যানসারে ভুগছিলেন মিহির। সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি, রেখে গেলেন স্ত্রী ও দুই কন্যাকে।
পেশায় ছিলেন ব্যাংককর্মী। মধ্য জীবনে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ মিহিরের। আত্মজৈবনিক গদ্য ‘বিষাদবৃক্ষ’-এর জন্য তিনি আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে।
শৈশবের বরিশালকে আজীবন লেখনীর মধ্যে বহন করেছেন মিহির। ‘ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি’, ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’, ‘ধানসিদ্ধির পরনকথা’, ‘ভাটিপুত্রের বরিশালি গদ্যসংগ্রহ’ প্রমুখ নানা লেখার মধ্যে বারবার বুনে দিয়েছেন বরিশালের ভাষা ও আখ্যান।
তার লেখা উসকে দিয়েছিল বরিশাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে থিতু হওয়া ইতিহাসবিদ তপন রায় চৌধুরীকেও। তপন লেখেন, ‘এই পোলায় যে ফাউকাইছে, এ্যাহন য়্যারে লইয়া কী করন যায়। আসলে পোলায় খারাপ ল্যাহে নাই। বইয়ে আমার ভুল হুধরাইছে, বইরহালের বিক্রম লইয়া ম্যালা কথা!’
দেশভাগ মিহিরকে কুরে কুরে খেয়েছে আমৃত্যু। ‘বিষাদ বৃক্ষ’ গ্রন্থের অবতরণিকায় মিহির সেনগুপ্ত লিখেছেন, “যাঁরা পঞ্চাশের ছিন্নমূল কাফেলা, তাঁদের জীবনভর দুঃখ, সংগ্রাম, হারিয়ে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা নিয়ে নির্মাণ হয়েছে কত লেখা, ছবি, ছায়াছবি। আজও উপমহাদেশ জুড়ে বন্ধ হয়নি তার হাহাকারি চর্চা, রোমন্থন। কেউ সামগ্রিকতায়, কেউ বা ব্যক্তিক খণ্ডিত গণ্ডিতে অব্যাহত রেখে চলেছেন সেই দুঃস্বপ্নের ব্রতকথা।”
“পঞ্চাশের সেই ক্যারাভানের শেষ প্রান্ত আজও চলমান। আরও কতকাল তার প্রবাহ চলবে, কেউ জানে না। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম যারা, যারা সেই পঞ্চাশ/একান্নর নরমেধের রক্ত, বসা, মেদের স্রোত পেরিয়ে আসতে পারিনি, যাদের হতভাগ্য অভিভাবকদের এপারে কোনো সহায় সম্পদ ছিল না চলে এসে স্থায়ী হয়ে, থিতু হয়ে বসার মতো, তারা সেদিন কীভাবে তথাকার স্বাধীন ভূমিতে বেড়ে উঠেছিল বা কতটা নাগরিক অধিকার লাভ করেছিল, এ গ্রন্থ তারই একটি আলেখ্যর প্রচেষ্টা।”
মিহির সেনগুপ্তর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর, তদানীন্তন বরিশাল জেলা অধুনা ঝালকাঠি জেলার কেওড়া গ্রামে। পাশের গ্রাম কীর্তিপাশার প্রসন্নকুমার উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে এক বছর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে কলকাতায় চলে যান। পরের বছর প্রাইভেটে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। স্নাতক স্তরের ছাত্রাবস্থাতেই ব্যাংকের কাজে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে চাকরিরত অবস্থায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা-সাহিত্যে সম্মান-সহ স্নাতক করেন।
১৯৯৩ সালে ‘নাইয়া’ পত্রিকার মাধ্যমে তার লেখালেখি শুরু। তার পর লেখালেখি করেছেন ‘বর্তিকা’, ‘কালান্তর’, ‘কম্পাস’ ও অন্যান্য কিছু পত্রপত্রিকায়।
মিহির সেনগুপ্ত রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বিদুর’, ‘উজানিখালের সোঁতা’, ‘টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি’, ‘হেমন্ত শেষের পাখিরা’, ‘গোধূলি সন্ধির রাখাল’, ‘নীল সায়রের শালুক’, ‘একুশ বিঘার বসত’ ইত্যাদি।
২০০২ সালে বাংলাদেশ শ্রুতি অ্যাকাডেমি ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ গ্রন্থের জন্য তাকে ‘শ্রেষ্ঠ রচনা’র পুরস্কারে সম্মানিত করেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:৪৭

দেশভাগ, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক সুনিপুণ গদ্যে ফুটিয়ে তোলা পশ্চিমবঙ্গের লেখক মিহির সেনগুপ্ত আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
কিছুদিন ধরে ব্লাড ক্যানসারে ভুগছিলেন মিহির। সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি, রেখে গেলেন স্ত্রী ও দুই কন্যাকে।
পেশায় ছিলেন ব্যাংককর্মী। মধ্য জীবনে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ মিহিরের। আত্মজৈবনিক গদ্য ‘বিষাদবৃক্ষ’-এর জন্য তিনি আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে।
শৈশবের বরিশালকে আজীবন লেখনীর মধ্যে বহন করেছেন মিহির। ‘ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি’, ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’, ‘ধানসিদ্ধির পরনকথা’, ‘ভাটিপুত্রের বরিশালি গদ্যসংগ্রহ’ প্রমুখ নানা লেখার মধ্যে বারবার বুনে দিয়েছেন বরিশালের ভাষা ও আখ্যান।
তার লেখা উসকে দিয়েছিল বরিশাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে থিতু হওয়া ইতিহাসবিদ তপন রায় চৌধুরীকেও। তপন লেখেন, ‘এই পোলায় যে ফাউকাইছে, এ্যাহন য়্যারে লইয়া কী করন যায়। আসলে পোলায় খারাপ ল্যাহে নাই। বইয়ে আমার ভুল হুধরাইছে, বইরহালের বিক্রম লইয়া ম্যালা কথা!’
দেশভাগ মিহিরকে কুরে কুরে খেয়েছে আমৃত্যু। ‘বিষাদ বৃক্ষ’ গ্রন্থের অবতরণিকায় মিহির সেনগুপ্ত লিখেছেন, “যাঁরা পঞ্চাশের ছিন্নমূল কাফেলা, তাঁদের জীবনভর দুঃখ, সংগ্রাম, হারিয়ে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা নিয়ে নির্মাণ হয়েছে কত লেখা, ছবি, ছায়াছবি। আজও উপমহাদেশ জুড়ে বন্ধ হয়নি তার হাহাকারি চর্চা, রোমন্থন। কেউ সামগ্রিকতায়, কেউ বা ব্যক্তিক খণ্ডিত গণ্ডিতে অব্যাহত রেখে চলেছেন সেই দুঃস্বপ্নের ব্রতকথা।”
“পঞ্চাশের সেই ক্যারাভানের শেষ প্রান্ত আজও চলমান। আরও কতকাল তার প্রবাহ চলবে, কেউ জানে না। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম যারা, যারা সেই পঞ্চাশ/একান্নর নরমেধের রক্ত, বসা, মেদের স্রোত পেরিয়ে আসতে পারিনি, যাদের হতভাগ্য অভিভাবকদের এপারে কোনো সহায় সম্পদ ছিল না চলে এসে স্থায়ী হয়ে, থিতু হয়ে বসার মতো, তারা সেদিন কীভাবে তথাকার স্বাধীন ভূমিতে বেড়ে উঠেছিল বা কতটা নাগরিক অধিকার লাভ করেছিল, এ গ্রন্থ তারই একটি আলেখ্যর প্রচেষ্টা।”
মিহির সেনগুপ্তর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর, তদানীন্তন বরিশাল জেলা অধুনা ঝালকাঠি জেলার কেওড়া গ্রামে। পাশের গ্রাম কীর্তিপাশার প্রসন্নকুমার উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে এক বছর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে কলকাতায় চলে যান। পরের বছর প্রাইভেটে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। স্নাতক স্তরের ছাত্রাবস্থাতেই ব্যাংকের কাজে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে চাকরিরত অবস্থায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা-সাহিত্যে সম্মান-সহ স্নাতক করেন।
১৯৯৩ সালে ‘নাইয়া’ পত্রিকার মাধ্যমে তার লেখালেখি শুরু। তার পর লেখালেখি করেছেন ‘বর্তিকা’, ‘কালান্তর’, ‘কম্পাস’ ও অন্যান্য কিছু পত্রপত্রিকায়।
মিহির সেনগুপ্ত রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বিদুর’, ‘উজানিখালের সোঁতা’, ‘টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি’, ‘হেমন্ত শেষের পাখিরা’, ‘গোধূলি সন্ধির রাখাল’, ‘নীল সায়রের শালুক’, ‘একুশ বিঘার বসত’ ইত্যাদি।
২০০২ সালে বাংলাদেশ শ্রুতি অ্যাকাডেমি ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ গ্রন্থের জন্য তাকে ‘শ্রেষ্ঠ রচনা’র পুরস্কারে সম্মানিত করেন।