আল মাহমুদের চলে যাওয়ার দিন
অনলাইন ডেস্ক | ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:৪১
আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
‘কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে,
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে,
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ’
আল মাহমুদের ‘স্মৃতির মেঘলাভোরে’ কবিতার লাইনগুলো ঠাঁই নিয়েছে তার এপিটাফে। তিনিও চলে যান এক শুক্রবারে। কবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে মঙ্গলবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়া টাইমলাইনে শেয়ার করছেন সেই ছবি।
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আল মাহমুদ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মীর আবদুর রব ও মা রওশন আরা মীর।
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন আল মাহমুদ। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু।
সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে মাহমুদ ঢাকা আসেন। কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘কাফেলা’য় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ‘দৈনিক মিল্লাত’ পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী ‘কাফেলা’র চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয় তারই সম্পাদনায়। এ সময় এক বছরের জন্য কারাবন্দী থাকতে হয় তাকে।
১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ পান। পরে তিনি পরিচালক হন। ১৯৯৩ সালে তিনি অবসর নেন।
সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ, কৃত্তিবাস ও কবিতা পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা ও কলকাতার পাঠকদের কাছে তার নাম সুপরিচিত হয়ে ওঠে।
আল মাহমুদের প্রথম বই ‘লোক লোকান্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। দ্বিতীয় বই ‘কালের কলস’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। এ দুটি কবিতার বইয়ের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। বিখ্যাত ‘সোনালী কাবিন’ প্রকাশ হয় ১৯৭৩ সালে।
মুক্তিযুদ্ধের পর গল্প লেখায় মনোযোগী হন আল মাহমুদ। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্পের বই ‘পানকৌড়ির রক্ত’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না, মিথ্যাবাদী রাখাল, কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, ডাহুকি ইত্যাদি। ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ তার আত্মজীবনী গ্রন্থ। ছড়া রচনাতেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়।
সাহিত্যে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আল মাহমুদ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জয় বাংলা পুরস্কার, হুমায়ূন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার, কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, কবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদকসহ বহু সম্মাননা।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:৪১

‘কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে,
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে,
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ’
আল মাহমুদের ‘স্মৃতির মেঘলাভোরে’ কবিতার লাইনগুলো ঠাঁই নিয়েছে তার এপিটাফে। তিনিও চলে যান এক শুক্রবারে। কবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে মঙ্গলবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়া টাইমলাইনে শেয়ার করছেন সেই ছবি।
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আল মাহমুদ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মীর আবদুর রব ও মা রওশন আরা মীর।
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন আল মাহমুদ। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু।
সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে মাহমুদ ঢাকা আসেন। কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘কাফেলা’য় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ‘দৈনিক মিল্লাত’ পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী ‘কাফেলা’র চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয় তারই সম্পাদনায়। এ সময় এক বছরের জন্য কারাবন্দী থাকতে হয় তাকে।
১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ পান। পরে তিনি পরিচালক হন। ১৯৯৩ সালে তিনি অবসর নেন।
সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ, কৃত্তিবাস ও কবিতা পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা ও কলকাতার পাঠকদের কাছে তার নাম সুপরিচিত হয়ে ওঠে।
আল মাহমুদের প্রথম বই ‘লোক লোকান্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। দ্বিতীয় বই ‘কালের কলস’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। এ দুটি কবিতার বইয়ের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। বিখ্যাত ‘সোনালী কাবিন’ প্রকাশ হয় ১৯৭৩ সালে।
মুক্তিযুদ্ধের পর গল্প লেখায় মনোযোগী হন আল মাহমুদ। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্পের বই ‘পানকৌড়ির রক্ত’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না, মিথ্যাবাদী রাখাল, কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, ডাহুকি ইত্যাদি। ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ তার আত্মজীবনী গ্রন্থ। ছড়া রচনাতেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়।
সাহিত্যে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আল মাহমুদ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জয় বাংলা পুরস্কার, হুমায়ূন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার, কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, কবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদকসহ বহু সম্মাননা।