ক্যানসারে আক্রান্ত কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের জন্য ফেসবুকে উদ্বেগ
উপল বড়ুয়া | ৩১ মার্চ, ২০২২ ২০:৩১
‘ক্যানসারের বিষয়টা ডাক্তার নিশ্চিত করেছেন। কাল সার্জারি।’— বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেন কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ। হঠাৎ সবার মনের আকাশ যেন কালো মেঘে ঢেকে গেল প্রিয় কবির এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে।
শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের মানুষদের এখন চাওয়া— কবি যেন সেরে ওঠেন দ্রুত। তার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দোয়া ও প্রার্থনায় পোস্ট দিচ্ছেন ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতার অনুরাগীরা।
কবির সুস্থতা কামনায় চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘গেট ওয়েল সুন, ইমতিয়াজ মাহমুদ! প্রার্থনায় রাখবো। লাভ ইউ!’ এই পোস্টের নিচে কবি ও গীতিকার সোমেশ্বর অলির মন্তব্য, ‘দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক কবি।’
কবি সাখাওয়াত টিপু ফেসবুকে লেখেন, ‘কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের অসুস্থতার খবর শুনে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। সে আমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবানদের একজন। ছাত্রাবস্থা থেকে ইমতিয়াজকে চিনি। কবিতা নিয়ে কত কথা, কত স্মৃতি! খুব সংবেদনশীল একজন মানুষ ও কবি। প্রতিবার ভাবি বরিশাল যাব, তার সাথে দেখা হবে! আর যাওয়া হয় না। ইমতিয়াজ মাহমুদ সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক, আমার প্রার্থনা এটুকুই!’
ঔপন্যাসিক মাহবুব মোর্শেদের পোস্ট, ‘যদি মানুষের শুভকামনা ও ভালোবাসার কোনো মেডিসিনাল গুণ থাকতো তবে কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ আজই ভাল হয়ে উঠতেন।’
ইমতিয়াজ মাহমুদের অসুস্থতার খবর শুনে কবি কামরুজ্জামান কামু লেখেন, ‘কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ ক্যানসারে আক্রান্ত! খুব বিমর্ষ লাগতেছে!’
কবি ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ লেখেন, ‘কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ ক্যানসারে আক্রান্ত, খবর মন খারাপ করে দিল। মানুষটা বড় প্রতিষ্ঠান আর করপোরেটদের উপেক্ষার মধ্যে দিয়ে লেখার জোরেই পাঠকের মনে দাগ কেটেছেন। তাঁর নিজস্ব স্বর ও ভঙ্গিমা বাংলাদেশে কবিতাকে আবারও জনপ্রিয় করে তুলেছে। আমি মনে করি, ইমতিয়াজ একজনই। আগামী কাল তাঁর ক্যানসারের সার্জারি হবে ভারতের চেন্নাইয়ে। আশা করি, নীরোগ হয়ে ফিরে আসবেন নিজের নির্জনতায়। আমাদের অনেকের ভালোবাসা আপনার সাথে আছে, ইমতিয়াজ।’
কেবল সাহিত্যিকরা নন; কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের সুস্থতা কামনা করেছেন তাঁর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। জুয়েল মাজহার, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, শোয়েব সর্বনাম, মোস্তফা হামেদী, নাহিদ ধ্রুব, অর্বাক আদিত্য-সহ অনেক কবি-সাহিত্যিক সুস্থতা কামনা করেছেন তাঁর।
চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ইমতিয়াজ মাহমুদ চেন্নাইয়ে আছেন। তিন মাস আগে ডাক্তার দেখাতে ভারতে যান তিনি। বুধবার এক স্ট্যাটাসে ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, ফুসফুস ও হার্টসহ তাঁর শরীরে নানা ধরনের জটিলতা ছিলো। এর বাইরে মাইনর একটা সমস্যা ছিলো, কণ্ঠস্বরে। কয়েক বছর ধরেই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল।
ওই স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘এক সপ্তাহ আগে সিটি স্ক্যান থেকে জানা গেলো থাইরয়েডের সমস্যা। তারা (চিকিৎসক) বায়োপসি করতে দিলো। রিপোর্টে ক্যানসারের আশঙ্কা; সার্জারির পরামর্শ।’
যে আশঙ্কা ইমতিয়াজ মাহমুদ করেছিলেন তাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। পরদিন শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতির কথা জানান তিনি।
সমকালের বাংলা কবিতার অনন্য কণ্ঠস্বর ইমতিয়াজ মাহমুদ। জনপ্রিয় কবিদের একজন। তাঁর জন্ম বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায় ১৯৮০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক করার পর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিতে বছরখানেক কাজ করেন তিনি।
২০০৬ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইমতিয়াজ মাহমুদ। তাঁর কবিতার বই ‘মানুষ দেখতে কেমন’, ‘কালো কৌতুক’ ও ‘পেন্টাকল’ ব্যাপক সমাদৃত পাঠক সমাজে। তাঁর কবিতার পঙ্ক্তি ও ফেসবুকে পোস্ট করা ‘কাপলেট’ মুখে মুখে ফেরে মানুষের কাছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
উপল বড়ুয়া | ৩১ মার্চ, ২০২২ ২০:৩১

‘ক্যানসারের বিষয়টা ডাক্তার নিশ্চিত করেছেন। কাল সার্জারি।’— বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেন কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ। হঠাৎ সবার মনের আকাশ যেন কালো মেঘে ঢেকে গেল প্রিয় কবির এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে।
শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের মানুষদের এখন চাওয়া— কবি যেন সেরে ওঠেন দ্রুত। তার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দোয়া ও প্রার্থনায় পোস্ট দিচ্ছেন ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতার অনুরাগীরা।
কবির সুস্থতা কামনায় চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘গেট ওয়েল সুন, ইমতিয়াজ মাহমুদ! প্রার্থনায় রাখবো। লাভ ইউ!’ এই পোস্টের নিচে কবি ও গীতিকার সোমেশ্বর অলির মন্তব্য, ‘দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক কবি।’
কবি সাখাওয়াত টিপু ফেসবুকে লেখেন, ‘কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের অসুস্থতার খবর শুনে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। সে আমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবানদের একজন। ছাত্রাবস্থা থেকে ইমতিয়াজকে চিনি। কবিতা নিয়ে কত কথা, কত স্মৃতি! খুব সংবেদনশীল একজন মানুষ ও কবি। প্রতিবার ভাবি বরিশাল যাব, তার সাথে দেখা হবে! আর যাওয়া হয় না। ইমতিয়াজ মাহমুদ সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক, আমার প্রার্থনা এটুকুই!’
ঔপন্যাসিক মাহবুব মোর্শেদের পোস্ট, ‘যদি মানুষের শুভকামনা ও ভালোবাসার কোনো মেডিসিনাল গুণ থাকতো তবে কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ আজই ভাল হয়ে উঠতেন।’
ইমতিয়াজ মাহমুদের অসুস্থতার খবর শুনে কবি কামরুজ্জামান কামু লেখেন, ‘কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ ক্যানসারে আক্রান্ত! খুব বিমর্ষ লাগতেছে!’
কবি ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ লেখেন, ‘কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ ক্যানসারে আক্রান্ত, খবর মন খারাপ করে দিল। মানুষটা বড় প্রতিষ্ঠান আর করপোরেটদের উপেক্ষার মধ্যে দিয়ে লেখার জোরেই পাঠকের মনে দাগ কেটেছেন। তাঁর নিজস্ব স্বর ও ভঙ্গিমা বাংলাদেশে কবিতাকে আবারও জনপ্রিয় করে তুলেছে। আমি মনে করি, ইমতিয়াজ একজনই। আগামী কাল তাঁর ক্যানসারের সার্জারি হবে ভারতের চেন্নাইয়ে। আশা করি, নীরোগ হয়ে ফিরে আসবেন নিজের নির্জনতায়। আমাদের অনেকের ভালোবাসা আপনার সাথে আছে, ইমতিয়াজ।’
কেবল সাহিত্যিকরা নন; কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের সুস্থতা কামনা করেছেন তাঁর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। জুয়েল মাজহার, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, শোয়েব সর্বনাম, মোস্তফা হামেদী, নাহিদ ধ্রুব, অর্বাক আদিত্য-সহ অনেক কবি-সাহিত্যিক সুস্থতা কামনা করেছেন তাঁর।
চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ইমতিয়াজ মাহমুদ চেন্নাইয়ে আছেন। তিন মাস আগে ডাক্তার দেখাতে ভারতে যান তিনি। বুধবার এক স্ট্যাটাসে ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, ফুসফুস ও হার্টসহ তাঁর শরীরে নানা ধরনের জটিলতা ছিলো। এর বাইরে মাইনর একটা সমস্যা ছিলো, কণ্ঠস্বরে। কয়েক বছর ধরেই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল।
ওই স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘এক সপ্তাহ আগে সিটি স্ক্যান থেকে জানা গেলো থাইরয়েডের সমস্যা। তারা (চিকিৎসক) বায়োপসি করতে দিলো। রিপোর্টে ক্যানসারের আশঙ্কা; সার্জারির পরামর্শ।’
যে আশঙ্কা ইমতিয়াজ মাহমুদ করেছিলেন তাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। পরদিন শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতির কথা জানান তিনি।
সমকালের বাংলা কবিতার অনন্য কণ্ঠস্বর ইমতিয়াজ মাহমুদ। জনপ্রিয় কবিদের একজন। তাঁর জন্ম বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায় ১৯৮০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক করার পর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিতে বছরখানেক কাজ করেন তিনি।
২০০৬ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইমতিয়াজ মাহমুদ। তাঁর কবিতার বই ‘মানুষ দেখতে কেমন’, ‘কালো কৌতুক’ ও ‘পেন্টাকল’ ব্যাপক সমাদৃত পাঠক সমাজে। তাঁর কবিতার পঙ্ক্তি ও ফেসবুকে পোস্ট করা ‘কাপলেট’ মুখে মুখে ফেরে মানুষের কাছে।