
জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো ‘নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’ লাইনটাকে সত্য প্রমাণ করে দিয়ে চলে গেলেন সমরেশ মজুমদার। তার লেখালেখির বয়স জীবনের অর্ধেক সময়ের চেয়ে বেশি। লিখেছেন বিস্তর। কিন্তু তিনি যদি শুধু ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘গর্ভধারিণী’, ‘সাতকাহন’ লিখেই থেমে যেতেন; হয়তো রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করা নক্ষত্রের মতোই চেনা যেত তাকে!
কিশোর বয়সে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠ চুকিয়ে যখন উপন্যাসের সমুদ্রে নিজেকে ভাসালাম, তখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে সমরেশ মজুমদারে ঢুকেছি। প্রথম যে বইটা হাতে নিলাম নাম ছিল ‘উত্তরাধিকার’। নামটা বেশ ভারী, বইটাও বড় আর আমার বয়সটা কম, মগজে একটা আলাদা চাপ কাজ করছিল। কিন্তু বইয়ের পৃষ্ঠা ওলটাতে ওলটাতে আমি কখন যেন নেশাতুর ডুবে গেছি জলপাইগুড়ি শহর আর ডুয়ার্সের চা বাগানে। বইয়ের মূল চরিত্র অনিমেষ। শান্ত নিরিবিলি স্বর্গ ছেঁড়া চা বাগান, ওপারে খুঁটিমারির জঙ্গল, এপারে আঙরাভাসা নদী, মাথার ওপর ভুটানের পাহাড়, বিষণ্ন মেঘদল ভেসে আসে সেখান থেকে। মাঠ পেরিয়ে আসাম রোড, মদেসিয়া কুলিদের লাইন, এসব কিছু জুড়েই অনিমেষের শৈশব।
পড়তে পড়তে আমি নিজেকে অনুভব করেছি অনিমেষের মতো করে। বহুবার চা বাগানের নিঃস্বর্গ আমার চোখের সামনে ছবি হয়ে ফুটে উঠেছে। যেন সেসব জায়গায় আমি কতকাল কাটিয়েছি! সমতলের চা বাগান কেমন হয় তার একটা বর্ণনা নিমেষেই এঁকে ফেলতে পারতাম। সমরেশ মজুমদারের লেখা পড়ে আমি বারবারই ভেবেছি তিনি লেখেন না দেখান। পাকা হাতে ক্যামেরায় বন্দী করা ছবির মতো তার লেখা পাঠকের চোখে দৃশ্যমান হয়। তিনি আমাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে যান সেই মুহূর্তগুলোতে। প্রগাঢ় মুগ্ধতায় ‘উত্তরাধিকার’ খুব দ্রুত পড়া শেষ হয়ে গেল।
সমরেশ মজুমদারের পাঠক যারা আছেন তারা সবাই কমবেশি ‘সাতকাহন’ পড়েছেন। যখনই কোথাও কোনো আড্ডায় সাহিত্যিক উপন্যাস নিয়ে আলাপ উঠবে’ সাতকাহন সেখানে বহুবার উচ্চারিত হওয়া নাম। সাতকাহনের কথা বলতেই এক অদ্ভুত আবেগ কাজ করে মনে, যেন সাতকাহন আলাদা কিছু না, আমাদেরই জীবনের অংশ। আর তা হবেই বা না কেন? জীবন থেকে নিয়েই তো লিখেছেন সমরেশ তার সাতকাহন।
সে কথায় পরে আসছি। তবে এই যে এত সাতকাহন, সাতকাহন করছি, বইটা যখন শুরু করেছিলাম বুঝতে পারিনি দীপাবলি নামের এ সাধারণ মেয়েটা, যে কিনা সোনালি চাঁপা ফুল ছিঁড়তে গিয়ে বাড়ি ফিরে এসে সৎ মায়ের মার খেল, সে এত অদম্য অসাধারণ এক নারী হয়ে উঠবে। মাত্র ১২ বছর বয়সে দীপার বিয়ের পর বিধবা হওয়া, সৎ মার সংসার, কলেজজীবনের বন্ধুত্ব-প্রেম, ব্যক্তিগত আবেগ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
প্রিয় বান্ধবীর অকাল মৃত্যু, দুইবার বিয়ে, সিভিল সার্ভিসে জয়েন, অন্যায়ের সঙ্গে কোনোরকম আপস না করে সততার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া। শেষের দিকে নিজের একাকিত্বের অবসান ঘটিয়ে বৃদ্ধা দাদির দায়িত্ব নেওয়া- সব মিলিয়ে সাতকাহনে সমরেশ মজুমদার এক অসামান্য, অনবদ্য চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। যে চরিত্র আলো ছড়ায় সবার মাঝে, সাহস দেয়, প্রেরণা দেয়, কুসংস্কার আঁকড়ে ধরা সমাজে একটা আঘাতও দিতে চেয়েছিলেন বোধ হয় সাতকাহন লিখেই।
আগেই বলেছিলাম লেখক সমরেশ মজুমদার সাতকাহন লিখেছিলেন জীবন থেকে নিয়ে। তার বাড়ির পাশেই ১২ বছরের এক মেয়ে বিয়ের আগের দিন তাকে ধরে খুব আকুতি করে বলেছিল ‘কাকু, আমাকে বাঁচাও’। সেদিন অনেক চেষ্টা করেও তিনি বিয়েটা আটকাতে পারেননি। কিন্তু বিয়ের মাত্র আট দিন পর বিধবা হয়ে বাড়িতে ফিরেই ছোট্ট মেয়েটি তাকে বলেছিল ‘কাকু, আমি বেঁচে গেলাম’। এই তো, তারপর তিনি লিখে ফেললেন আস্ত একটা উপন্যাস বিখ্যাত সাতকাহন। একজন সমরেশ মজুমদার বিয়ে থামাতে জাদুকরী না হতে পারলেও তার লেখার জাদুতে আবহমান সমাজকে নতুন এক আয়না তিনি দেখিয়েছেন, সে কথা মানতেই হবে! গর্ভধারিণীর সুদীপ, আনন্দের বিদ্রোহী মনোভাব, নির্ভীক চেতনা আদতে তো তারই চেতনা।
দারুণ রকম লিখতে লিখতেই সমরেশ মজুমদারের কলম থেমে গেল। এই এক জীবনে যা লিখলেন তাতেই তিনি আমাদের চেনালেন হিমালয় পর্বত, জলপাইগুড়ি, ডুয়ার্স কিংবা ভুটানের পাহাড় থেকে নেমে আসা মেঘ। তিনি লিখেছিলেন, ‘যে সব সময় মন জুড়ে থাকে তাকে বাহিরে থেকে মনে পড়বে কেন?’ কিন্তু তিনি আমাদের মনজুড়ে আছেন, থেকে যাবেন। তাকে মনে পড়বে আড্ডায়, উপন্যাসে, সাহিত্য সভায়। তাকে মনে না পড়ে উপায় নেই, সমরেশের রেশ কাটবে না।
রাহাতুল জান্নাত: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।
বাংলাদেশি লেখক আবু সাঈদ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকারের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ’ শীর্ষক বইটি স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। পেরুর প্রকাশনা সংস্থা মানো আলজাদা বইটি প্রকাশ করেছে। এর আগে বইটি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থা স্বপ্ন ’৭১ থেকে প্রকাশিত হয়।
গত ০২ সেপ্টেম্বর পেরুর কাজামার্কা বইমেলায় ‘জর্জ হ্যারিসন অ্যান্ড দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন মানো আলজাদা প্রকাশনার প্রকাশক ওয়াল্টার ভিলানুয়েভা, বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ পোচো ভেলাসকেজ, লেখক ক্রিশ্চিয়ান শ্যাভেজ। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন আবু সাঈদ ও প্রিয়জিৎ দেবসরকার।
ওয়াল্টার ভিলানুয়েভা বলেন, তিন বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকীতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পারি। সে সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালায় তার বিরুদ্ধে জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটনের মতো সংগীতশিল্পীরা একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। সেই কাহিনি নিয়ে এই বই।
তিনি আরও বলেন, বইটি প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পেরুর মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ সৃষ্টি হলো। আগামী দিনে আমরা দুই দেশের শিল্প–সাহিত্য–ইতিহাসসহ নানা রকমের আয়োজনে যুক্ত থাকব। উল্লেখ্য, এই বইটি অনুবাদ করেছেন ভাষাবিদ এনরিক ফার্নান্দো লিওন।
তখনও স্বাধীনতা স্তম্ভ হয়নি মোল্লার দোকানই বলতো জায়গাটাকে, ছবির হাট নামটাও এত প্রচলিত হয়নি। এখনকার মতন এত ভিড়ও ছিল না। সঙ্গে কোনও বন্ধু বা বিশ্বস্ত কেউ না থাকলে বেশি ভেতরেও যেতাম না, এতটাই নির্জন। তার ওপর দিনটা ছিল মেঘলা, সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। আমি আর রাজীব আড্ডা দিচ্ছিলাম উদ্যানে, ছবির হাট থেকে একটু ডান পাশে। আমি একটা সাদা শাড়ি পরে ছিলাম, সাদা শাড়িতে কাদা লাগবে বলে ঘাসের ওপর না বসে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলাম আমরা। আমাদের একটু দূর দিয়েই দুই পুলিশ সদস্য খুব সন্দেহের দৃষ্টিতে আমাদের দেখতে দেখতে চলে গেল। একটু পর নিজেদের মধ্যে কী যেন বলাবলি করে আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকল। রাজীব বলল, ‘তুমি এখানেই দাঁড়াও, আমি দেখে আসি কী বলে!’
আমি দূর থেকে দেখলাম রাজীব প্রথমে খুব ফরমালি কথা বলল, তারপর হাসি-হাসি মুখে কে জানে কী বলল, বিদায়ের সময় দুই পুলিশের সঙ্গে হ্যান্ডশেকও করল। ও ফিরলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী এত কথা বললা তুমি ওদের সাথে?’ ও বলল, ‘প্রথমেই বললাম, আমি রাজীব আশরাফ, এমনভাবে বললাম, যেন আমার নাম হূমায়ূন আহমেদ’— বলে তার সে কি হাসি! কি যে সুন্দর সেই হাসি!
রাজীব সবাইকেই প্রভাবিত করতে পারত। শুধুমাত্র কথা বলেই। হূমায়ূন আহমেদের মতনই কথার কারিগর ছিল সে। গল্প উপন্যাস লেখার ধৈর্য বা ইচ্ছা হয়তো ওর ছিলই না। কিন্তু এমনটা আমার মনে পড়ে না রাজীবের সঙ্গে দেখা হয়েছে আর ও কোনও না কোনও গল্প বলেনি। সবই সিনেমার গল্প, সিনেমার গল্প মানে সিনেমার প্লট আর স্টোরিলাইন। ও যখন গল্প বলত দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসত।
তখন আমি কলাভবনে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে পড়ি। আমার বিভাগ পাঁচতলায়। পাশেই ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট, সেখানে পড়ত স্বর্ণা আপু। আমি আর স্বর্ণা আপু মাঝে মাঝে একসাথে চারুকলায় যেতাম। রাজীবের সঙ্গে দেখা হয়ে ওর কথার যাদুতে প্রভাবিত হয়ে অনেকবারই ক্লাস বাংক মেরেছি আমি, স্বর্ণা আপুও দুই-একবার। তবে আপুকে ক্লাস বাংক মারতে রাজি করানো এত সহজ ছিল না, আমি আর রাজীব মিলেও পারিনি এমনও হয়েছে। তো, একদিন রাজীবের সঙ্গে কথা হলো ফোনে। ও বললো, একটা ফিল্মের গল্প ভেবেছে, আমাকে শোনাতে চায়। আমি জানতাম ওর সঙ্গে দেখা করতে চারুকলায় গেলে আর ফেরা হবে না। কাজেই আমি বললাম, আমার পর পর দুই পিরিয়ড ক্লাস আছে, এখন নামতে পারব না। ও কলাভবনে আসুক।
কলাভবনে তখন লিফট ছিল না। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হত। রাজীব আসতে আসতে আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেল। আমি ক্লাস থেকে দেখলাম ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, সকালের সুন্দর রোদে। এত অস্থির ছেলেটা ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকল পুরোটা সময়। তারপর দুই ক্লাসের মাঝখানে যেটুকু সময় তার মধ্যে ও আমাকে গল্পটা শোনাল, করিডোরে দাঁড়িয়েই। আমি শুনছি আর আড়চোখে দেখছি ম্যাম ক্লাসে ঢুকলেন কিনা!
ওই দিনের গল্পটাও মনে পড়ে একটু একটু। এক নিঃসন্তান দম্পতির গল্প, দুটো এতিম বাচ্চার গল্প, সন্তান কামনায় জলে মুদ্রা ছুড়ে ফেলার গল্প, পিতৃমাতৃহীন দুই শিশু-কিশোরের পানিতে ডুব দিয়ে পয়সা তুলে আনার গল্প। আমি নিশ্চিত এই গল্প ও আরও অনেককেই শুনিয়েছে, কেউ যদি গল্পটা মনে করে করে একটা ছোট সিনেমা বানিয়ে ফেলত! রাজীব গল্প শোনাতে পছন্দ করত, ওর মতন স্টোরিটেলার আমি আর দেখিনি। ইশ, রাজীব যদি স্ট্যান্ডআপ কমেডি করত! কি মজাটাই না হত!
রাজীবের সব গল্প হত ভীষণ মানবিক, মাঝে মাঝে খুব নিষ্ঠুরও, একদম জীবনের মতন নিষ্ঠুর। যেমন ওর একটা কবিতা আছে আবুল হাসানের মহাবিখ্যাত নিঃসঙ্গতা কবিতার একটা কাউন্টার মতন।
আবুল হাসানের মেয়ে
রাজীব আশরাফ (উৎসর্গ- কবি পরম গুরু আবুল হাসান)
অতটুকু চায়নি বালিকা অত শোভা অত স্বাধীনতা চেয়েছিল আরও কিছু কমকিন্তু যে ঘটনা ঘটিয়ে গেছে হাওয়া ও আদমতার দায় থেকে বাঁচাবে কে বালিকাকে?ব্যর্থ স্বয়ং যেখানে যম!
অতটুকু চায়নি বালিকা অত শোভা অত স্বাধীনতা চেয়েছিল আরও কিছু কম চাহিদার তালিকায় প্রথমেই রেখে ‘ইজ্জত’ ও ‘সম্ভ্রম’এটা ছিল না বালিকার বয়ঃসন্ধিকালীন রোগজন্ম থেকেই সে জানতবালিকার ভিন্ন নাম সম্ভোগ!
অতটুকু চায়নি বালিকা অত শোভা অত স্বাধীনতাচেয়েছিল আরও কিছু কম পাটক্ষেতে উপর্যুপরি পালাক্রমে সংঘবদ্ধ তার পরও টিকে থাকে যেন তার দমআর চেয়েছিল মৃতদেহের প্রতিবিষপিঁপড়ার সংযম!
এই কবিতাটা প্রথমবার শুনে শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি হয়েছিল আমার। পড়ে নয়, শুনে। অনেকদিন পর্যন্ত নিজের লেখা ওর মুখস্ত থাকত, তারপর নতুন কবিতা লিখে আগেরগুলো আস্তে আস্তে ভুলে যেত। এই লেখাটাকে বাংলা কবিতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। ফেমিনিস্ট ট্যাগ না লাগিয়েও বলা যায়, পুরুষ কবিদের পৌরুষিক বালিকাবিলাসের বিপরীতে ধর্ষণের সংস্কৃতির এই দুনিয়ায় এমন কবিতার প্রয়োজন ছিল। এই লেখাটা অনেক পুরনো। এটা যে থেকে গেছে তার কারণ সম্ভবত এটা ওর মুখস্ত ছিল। শুধু ওর কেন, এই লেখাটা আমার নিজেরও মুখস্ত।
রাজীব মুখে মুখে বলে যেত লাইনের পর লাইন। আগের দিনের ধর্ম প্রচারক, দার্শনিক, চারণ কবি বলা হয় যাদের,তাদের বাণী যেমন মুখে মুখে প্রচলিত থাকত, লালনের গান যেমন, অনেকটা ওই রকম! হোক কলরব যেমন, মানুষের মুখে মুখে ফেরে। আমি লাস্টবেঞ্চ আমি ব্যাকডোর যেমন ইয়ং জেনারেশনের ঠোঁটের ডগায় থাকে!
আমার ছেলে প্রভুকে আমি কখনও রাইমস শেখাইনি, শিশুদের যে ছোটবেলা থেকেই নতুন কারও সাথে পরিচয় হওয়া মাত্র ‘একটা ছড়া বলো তো’ বলতে লজ্জা পেলে, ‘আচ্ছা তুমি পারো না, পারো? তাহলে বলো!’ ইত্যাদি বলে একটা পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয় এই বিষয়টা আমার খুব নিষ্ঠুর মনে হত সব সময়। আমার ছেলেকে কেউ এই কথা জিজ্ঞেস করা মাত্র আমি নিজেই বলে দিতাম, ‘না ও ছড়া পারে না, শেখাইনি।‘ পরে বুঝেছি, কবিতা মুখস্ত করার দরকার আছে। এতে স্মৃতিশক্তি বাড়ে আর কবিতার মাত্রা, তাল আর ছন্দ সম্পর্কে ধারণা হয়। সে যা-ই হোক, প্রভুর যখন তিন বছর বয়স একদিন রান্নাঘর থেকে শুনি গুণগুণ করে গান করছে ও, হোক কলরব ফুলগুলি সব লাল না হয়ে নীল হলো ক্যান! প্রভুর এই গল্প শুনে রাজীব যে কি ভীষণ খুশি হয়েছিলো!
রাজীব বলতো, আমিও মার্কেজের মতো আমার বন্ধুদের জন্য লিখি। বন্ধুরা যেন আমাকে আরও বেশি ভালোবাসে! রাজীবকে ওর সব বন্ধুরা ভালোবাসে। কে কেন ভালোবাসে তা বোঝা খুব মুশকিল! এটা তো নিক্তি দিয়ে মাপা সম্ভব নয়! আমি নিজেও ঠিক করে বলতে পারব না ওকে এত ভালোবাসি কেন! ওর হাসিমুখের জন্য! ওর অন্তমিলের ছড়াগুলোর জন্য! ওর আর্ট আর ক্র্যাফটের জন্য! ওর কবিতার জন্য! ওর ফটোগ্রাফির জন্য! ওর সিনেমার জন্য! নাকি ওর এই এত্তো বড় হৃদয়টার জন্য! ওর শরীরে তো কিছু ছিল না! পুরাটাই কলিজা! জীবনকে উল্টেপাল্টে দেখার প্রচণ্ড সাহস, সমাজের অনেক বস্তাপচা রীতিনীতি অস্বীকার করার প্রচণ্ড স্পর্ধা নিয়ে বেঁচেছিল রাজীব! কোনও বন্ধুর থাকার জায়গা নেই, কোনও সমস্যা নেই, রাজীবের বাসায় চলে যাও, একদিন দুই রাত নয়, দিনের পর দিন, এমনকি মাসের পর মাস! দেড়টা ঘর একটা খাট! কোনও ব্যাপার না! যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় ন’জন। রাজীব ছিল এমনই এক সুজন, সুহৃদ, নিখাদ বন্ধু! কাজেই ওকে কেন এত ভালোবাসে সবাই সেটা একটা অমীমাংসিত প্রশ্ন। লাল না হয়ে নীল হলো ক্যানের মতনই! এই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর নেই কারও কাছেই।
লেখক: কবি ও লেখক[email protected]
কবি সঞ্জীব পুরোহিতের ৪৫তম জন্মবর্ষ উদযাপন করছে কবির ‘জন্মবর্ষ পঁয়তাল্লিশ উদযাপন পরিষদ’। আয়োজনটি আগামীকাল শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান মিলনায়তনে উদযাপিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
‘পয়তাল্লিশে উড়াল’ শীর্ষক এই আয়োজন করছে কাঁটাচামচ, মগ্নপাঠ ও মাদুলি। এতে থাকছে কবির বক্তৃতা, কবিতা ও কাজ নিয়ে উন্মুক্ত আলাপ, প্রসঙ্গতর্ক, সুফিসঙ্গ এবং সত্ত্বার অন্বেষা।
জন্মবর্ষ পঁয়তাল্লিশ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কবি ফারহান ইশরাক বলেন, সঞ্জীব পুরোহিত আপাদমস্তক কবিতার মানুষ, কবিতার জন্যই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার শুভানুধ্যায়ী বন্ধু-স্বজন হিসেবে আমরা এ আয়োজন করছি, আশা করি সাহিত্যের সব ধারার মানুষেরা এ আয়োজনে কবিকে শুভেচ্ছা জানাতে আসবেন।
কবি সঞ্জীব পুরোহিত বলেন, কবির কাজ ভালোবাসা দেওয়া ও নেওয়া। আমাকে ভালোবেসে যারা এ আয়োজন করছে তাদের আমি ভৎর্সনা করি যেনে কবিতাই তাদেরও জীবন হয়। দেখা হবে, লেখায়, সামনাসামনি সবসময়।
তিনি আরও বলেন, কাল আমার জন্মদিন না। সেটা ২৭ আগস্ট। ফলে আমি বারবার চেয়েছিলাম, এটি একটি লেখক-শিল্পীদের প্রীতি সমাবেশ হোক। কেউ না মনে করুক, কষ্ট করে সঞ্জীবের অনুষ্ঠানে গেছি। তারা যেন মনে করে, এটা তাদেরই অনুষ্ঠান। তবে বিশ্বাস করি, আমার এমন অনেক বন্ধু আছেন, যারা আমাকে নিয়ে করা অনুষ্ঠানকেও নিজের অনুষ্ঠান বিবেচনা করেন। সকলের প্রতি ভালোবাসা।
কবি সঞ্জীব পুরোহিতের জন্মদিনের আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয়েছে সম্প্রতি প্রয়াত দুই কবি রাজীব আশরাফ ও ফিরোজ মাহমুদ খানের সৃজনস্মৃতির প্রতি।
হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জারের আগে চিঠিই ছিল যোগাযোগের সহজ মাধ্যম। রাষ্ট্রীয়, প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য সবাই ছিলেন চিঠির ওপর নির্ভরশীল। আজ বিশ্ব চিঠি লেখা দিবসে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের লেখা কিছু বিখ্যাত চিঠি সম্পর্কে জানব।
মিসরের শাসকের প্রতি মহানবীর (সা.) চিঠি
মহানবী (সা.) হুদাইবিয়ার সন্ধির পরে (৬২৮ খ্রিস্টাব্দ) ইসলাম গ্রহণের জন্য বিশ্বের অনেক শাসকের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। মুহাম্মদ (সা.) মিসর, ইথিওপিয়া, সিরিয়া, বাহরাইন, ওমানসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকদের কাছে এই চিঠি পাঠান। মিসরের শাসক আল-মুকাকিসকে লেখা চিঠিটি এখনো সংরক্ষিত আছে।
তিনি চিঠিতে আল-মুকাকিসকে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহ প্রবর্তিত আইন অনুসারে রাজ্য পরিচালনার আহ্বান জানান। চিঠিতে তিনি আল-মুকাকিসকে আল্লাহর ইবাদত করার দাওয়াত দেন এবং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করতে নিষেধ করেন। মিশরের শাসক চিঠি গ্রহণ করে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করেন। আল-মুকাকিস মহানবীর (সা.) চিঠির উত্তরও পাঠান। এই ফিরতি চিঠি তিনি আল্লাহর নামে শুরু করেন।
নার্গিসকে লেখা কবি নজরুলের চিঠি
কবি কাজী নজরুলের জীবনে প্রথম প্রেমাস্পদ ছিলেন সৈয়দা খাতুন। নজরুল তার নাম রাখেন নার্গিস। নার্গিসের মামার মাধ্যমে তার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয়। তাদের আকদও সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিবাহের কাবিননামায় নার্গিসের মামা আলি আকবরের জুড়ে দেওয়া শর্তে ক্ষিপ্ত হয়ে কবি ওইদিন রাতেই নার্গিসকে রেখে চলে আসেন।
পরে নার্গিস কবিকে অসংখ্য চিঠি দিলেও অভিমানী কবি তার সরাসরি উত্তর দেননি। বিভিন্ন গীতিকবিতায় নার্গিসের চিঠির জবাব দিলেও সরাসরি চিঠি লেখেন দীর্ঘ ১৫ বছর পর। চিঠির প্রথম বাক্যে তিনি লেখেন, ‘তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নব বর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে।’ চিঠিতে তিনি নার্গিসের সুখ এবং শান্তি কামনা করেন। এই চিঠিতেই কবি লেখেন, ‘তুমি ভুলে যেওনা আমি কবি, আমি আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি।’
রবীন্দ্রনাথের চিঠি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠিও কবিতার মতো মাধুর্যময়। তার চিঠিগুলোর সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। তার চিঠি সংকলন ‘ছিন্নপত্রে’ প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন পূর্ব বাংলার রূপলাবণ্য। তিনি লিখেছেন মৃণালিনী দেবী, মৈত্রেয়ী দেবী, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, অন্নদাশঙ্কর রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে।
রবীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন স্বয়ং বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। জার্মান ভাষায় লেখা তার দুটি চিঠি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে অসংখ্য চিঠি লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তার চিঠিতে অধিকাংশ সময় মৃণালিনীকে ‘ভাই ছুটি’ নামে সম্বোধন করেছেন। ভ্রমণপথে যাত্রার সময় আঙুলের চোট থেকে শুরু করে মশার যন্ত্রণা, দূর দেশ থেকে সন্তানদের প্রতি ভালোবাসাসহ নানা দিক উঠে এসেছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠিতে।
আইনস্টাইনকে সত্যেন বোসের চিঠি
সত্যেন্দ্রনাথ বোস ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ তত্ত্ব নিয়ে। তার গবেষণা আর্টিকেলে রূপান্তর করেন। তা প্রকাশের জন্য চিঠি লিখেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে। তিনি আইনস্টাইনকে অনুরোধ করেন তার গবেষণাটি যাতে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হয়। আইনস্টাইন চিঠি পেয়ে গবেষণাটি অনুবাদ করেন এবং সত্যেন বোসের পছন্দের জার্নালেই প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। তারপর আইনস্টাইন তাকে ইউরোপে আমন্ত্রণ জানান।
আইনস্টাইনের সঙ্গে দেখা করার আগে প্যারিসে বিজ্ঞানী মারি কুরির ল্যাবে তিনি কাজ করেছিলেন ছয় মাস। দুই বছর পর দেশে ফিরে তিনি আইনস্টাইনের রিকোমেন্ডেশন লেটারের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের প্রধানের দায়িত্ব দেন তৎকালীন ভিসি। বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের সেই চিঠির কারণে জন্ম হয় কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিকসের।
হিটলারকে মহাত্মা গান্ধীর চিঠি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না করার জন্য নাৎসি বাহিনীকে চিঠি দিয়েছিলেন অহিংস আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু সেসব চিঠি পৌঁছায়নি হিটলারের কাছে। চিঠিতে তিনি হিটলারকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেন। তিনি লেখেন, ‘আমি আপনাকে সৌজন্যের খাতিরে বন্ধু সম্বোধন করছি না। আমি আপনার শত্রু নই। আমি আমার জীবনের ৩৩ বছর ব্যয় করেছি ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টির প্রচেষ্টায়।’
তিনি ১৯৩৯ এবং ১৯৪০ সালে মোট দুটি চিঠি লেখেন হিটলারকে। চিঠিতে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি হিটলারকে লেখেন, ‘আপনার নৃশংসতা দেখে মনে হচ্ছে, এই সমস্ত কাজ আপনি ধর্ম বলে জ্ঞান করেন।’ তিনি হিটলারকে যুদ্ধ বন্ধ করার এবং মানবতাকে বাঁচানোর আহ্বান জানান। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার নিরস্ত্র যুদ্ধ সম্পর্কেও লেখেন। যদিও ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপের কারণে সে চিঠি পৌঁছায়নি হিটলারের কাছে। গান্ধীর প্রথম চিঠি লেখার ৩৯ দিন পর পোল্যান্ড আক্রমণ করে জার্মান। ফলে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যার ভয়াবহ ফল আজও ভোগ করে চলেছে গোটা বিশ্ব।
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৭ ও ৮ অক্টোবর (শনি ও রবিবার) দুই দিনব্যাপী ‘হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্কে।
গত ২৮ আগস্ট নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সিটিতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। উক্ত বই মেলার আয়োজক হিসেবে থাকবে শোটাইম মিউজিক, ব্যবস্থাপনায় থাকবে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগিতায় থাকবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।
গত পাঁচ বছর ধরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। তবে এবার বই মেলাটি ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজন করা হবে। আগে শুধু হুমায়ূন আহমেদের বই প্রদর্শিত ও বিক্রি হতো। কিন্তু এবার প্রবাসী লেখকসহ বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য সব লেখকের বই থাকবে। আশা করা হচ্ছে, এবারের মেলায় বাংলাদেশ থেকে দশ-বারোটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিবে।
একটি বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে আগামী ৭ অক্টোবর বই মেলার উদ্বোধন করা হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকবে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা। হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হবে। এছাড়া দুদিনে চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত ও প্রবাসী শিল্পীরা।
জানা গেছে, দুই দিনব্যাপী এই হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’য় অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা থেকে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম, হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার আহ্বায়ক কবি মিশুক সেলিম, সাহিত্য অ্যাকাডেমি নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট মোশারফ হোসাইন, নিউইয়র্ক বাংলা ডট কম-এর সম্পাদক আকবর হায়দার কিরণ এবং লেখক-সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদ।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’