
পদ্মা সেতুর পরে যোগাযোগ খাতে আরও একটি বড় সাফল্য মেট্রোরেল। তারপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেল। এগুলোকে ‘ক্যাশ’ করে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দোদুল্যমান ভোটে ভাগ বসাতে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন করেছে। এ কথা অকপটে স্বীকার করবে যে কেউ।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে মানুষ দেখতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে থাকলে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কী করে। ফলে আমরা যা করেছি তা নিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইব। মানুষ নিশ্চয়ই এর প্রতিদান দেবে।’
দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বড় অংশের ভোট নির্দিষ্ট। কেউ আওয়ামী লীগের দিকে কেউ বিএনপিসহ অন্যান্য দলের। এ ক্ষেত্রে দোদুল্যমান ভোটই বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। এ ভোট যে দলের বাক্সে যায়, সে দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ কারণে সব দলেরই লক্ষ্য থাকে দোদুল্যমান ভোট নিজেদের পক্ষে টানার।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে থাকা দোদুল্যমান ভোট পক্ষে রাখতে গত ১৪ বছর সরকার যেসব উন্নয়নকাজ করেছে, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর জন্য প্রচার-প্রচারণায় নানামুখী পদক্ষেপ নেবে দলটি। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর যে সুফল জনগণ ভোগ করবে, সেটা জাতীয় নির্বাচনের সময় দলীয় প্রচারে গুরুত্ব দেবে ক্ষমতাসীনরা।
ওই নেতারা বলছেন, সরকারের উন্নয়নের প্রচার দিয়ে দোদুল্যমান ভোটের বড় অংশটি নৌকার পক্ষে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আওয়ামী লীগের। ভোটের মাঠে দলকে আলোচনায় রাখতে চাই মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো সরকারের বড় সাফল্যকে। মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব না হলেও আজ বুধবার আংশিক উদ্বোধন করছে সরকার। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে সেটা উদ্বোধন করা হবে নির্বাচনের আগেই।
যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের গুরুত্ব ও সুবিধা তুলে ধরে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ ভোট চাইবে, এ কথা জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নিশ্চয়ই জনগণ তাদের খালি হাতে ফেরাবে না এটা বিশ্বাস করেন তারা। সে জন্য উন্নয়ন প্রচারের দিকে বেশি জোর দিচ্ছেন নেতারা। মেট্রোরেলের পুরো কাজ শেষ করে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার মধ্য দিয়ে ভোটের মাঠে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে চায় আওয়ামী লীগ।
নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করার মধ্য দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে সরকার নজির স্থাপন করেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেট্রোরেল আংশিক উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে জনগণের মনোভাব দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তাই ‘টেস্ট কেইস’ ধরে নিয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হচ্ছে। পাশাপশি এ ধরনের পরিবহনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোও জানা সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে টানেল ও মেট্রোরেল প্রকল্প উদ্বোধন করার চিন্তা ছিল। তার আগে মেট্রোরেল আংশিক উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনের আগে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধনে অনেক বড় আয়োজন থাকবে। যাতে সারা দেশের মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। সর্বস্তরে আলোচনা তৈরি হয়।
ওই নেতারা বলেন, রাজধানীর উন্নয়ন মানুষের চোখে পড়ে বেশি। গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পায় ঢাকার উন্নয়ন। তাই শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নে আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জের উন্নয়নেও অগ্রধিকার দেয় সরকার।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা আরও বলেন, যোগাযোগব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় উন্নয়ন পদ্মা সেতু হলেও নির্বাচনের অনেক আগে উদ্বোধন হয় এই সেতু। ফলে মানুষের আলোচনায় কম থাকবে পদ্মা সেতু। তবুও পদ্মা সেতু আলোচনায় রাখার পাশাপাশি মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলকে নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাঁচ বছর পর নির্বাচনে মানুষ হিসাব নেয়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে জনগণের কাছে পরীক্ষা দেবে আওয়ামী লীগ। আমরা বিশ্বাস করি, সে পরীক্ষায় আমরাই উত্তীর্ণ হব।’
চ্যালেঞ্জ জয় করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরণের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দুয়ার খুলেছে বাংলাদেশ। নদীর দুই তীরে দুই শহরের স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল করার মধ্য দিয়ে। আজ বুধবার নগর পরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে।
সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক বড় প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল। এ প্রকল্পের আওতায় ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণ হবে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। উত্তরার দিয়াবাড়ী (উত্তরা উত্তর) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ থেকে ট্রেন উদ্বোধন হবে আজ।
মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর মানুষ পাবে যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির পাওয়ার স্বস্তির বার্তা। সেই সঙ্গে যানজটে আটকা পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্টের যে আর্থিক ক্ষতি সেটা কেটে যাবে। কমবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণের মাত্রা। আবাসনসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসার প্রসারে অর্থনীতিতেও প্রাণ সঞ্চার হবে। জীবনযাপনে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর বড় একটা অংশের যাত্রীদের এই মেট্রোরেলে চড়াতে পারলে নগর পরিবহনে সুফল পাওয়া যাবে। আর যানজটের শহরে নিরাপদ একটি বাহন হবে মানুষের জন্য।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি নিজের আয়ে চলার কথা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল শহরের যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।’
বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ : স্বাধীন বাংলাদেশের বায়ান্ন বছরে এসে যোগাযোগের নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এমআরটি লাইন-৬-এর পর আরও পাঁচটি মেট্রোরেল আসছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণকাজ তিন পর্যায়ে শেষ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ বা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা-আগারগাঁও রুটে ট্রেন উদ্বোধনের পরদিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর থেকে চড়তে পারবেন সাধারণ যাত্রীরা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন। শুরুতে মেট্রোরেল চলবে দিনে চার ঘণ্টা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা। উত্তরা-আগারগাঁও ৬০ টাকা। আর মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে ১০ সেট ট্রেন চললেও ধীরে ধীরে মেট্রোরেল চলাচলের সময় ও ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো হবে। ২৪ সেট রেল নিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে চলবে দেশের প্রথম উড়াল রেল। ডিএমটিসিএলের তথ্যমতে, মেট্রোরেল ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। শুরুর দিকে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে যাত্রার সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে। উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশনে যাত্রী পরিবহনে থাকছে শাটল বাস সার্ভিস।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৭টি স্টেশনের মধ্যে তিনটি আইকনিক স্টেশন। জাপানের আদলে তৈরি হচ্ছে এসব স্টেশন। নান্দনিক এসব স্টেশনে থাকছে যাত্রীদের অত্যাধুনিক সেবার সব সুবিধা। স্থায়ী পাস ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। অন্য স্টেশনগুলোতে থাকছে বিপণিবিতান, সময় কাটানোর হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ ও বিনোদন কেন্দ্র। অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধীদের ওঠানামার জন্য থাকছে লিফট, সঙ্গে এক্সেলেটরও। ভ্রমণের জন্য থাকছে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের র্যাপিড পাস।
মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। তবে গ্রিড বিপর্যয় হলেও তাতে বন্ধ হবে না। ট্রেন চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য উত্তরার ডিপোয় সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল ডিপোতে একটি পরিচালন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কখন থামবে অথবা কত গতিতে চলবে এসব স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ঠিক করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল একটি পরীক্ষিত যাতায়াতমাধ্যম। এটিকে বহুল ব্যবহৃত করতে চাইলে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি একটু বিবেচনা করা উচিত। এখন যে ভাড়া আছে সেটি যারা প্রাইভেট কারে যাতায়াত করে তাদের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু শুধু প্রাইভেট কারের যাত্রীরা যদি এটি ব্যবহার করে, অন্য মাধ্যমে যারা যাতায়াত করে তারা না চড়লে যানজটের সমস্যা সমাধান হবে না।’ তিনি মনে করেন, মোটরসাইকেলের যাত্রীদের টার্গেট করা উচিত। এ বাহনটি ৬০ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে। তাদের দিক বিবেচনা করে হলেও যদি ভাড়া সমন্বয় করে কিছুটা কমানো যায় তাহলে ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর আশপাশে যেন অন্য যানবাহনের যানজট লেগে না থাকে সেগুলোও মনিটরিং করা দরকার। সব স্টেশনে চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত। তাহলে সব বয়সীর মানুষ এ মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল চালু হলেও পুরো কাজ না শেষ করে অর্ধেক চালুর ফলে সেভাবে সুফল পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সরকারের উচিত মেট্রোরেলের ভাড়া কমানো। তাহলে বেশিরভাগ যাত্রী চড়বে। তাহলে যানজটও কমবে।’
প্রকল্প : ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রথমে উত্তরা (দিয়াবাড়ী) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এর মধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করায় কাজ শেষ করতে আরও প্রায় এক বছর সময় বেশি লাগতে পারে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি : গত মাস (নভেম্বর) শেষে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি হয়েছে ৮৪.২২ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫.৭৬ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ঢাকাবাসীর দিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়গুলোর বেশিরভাগ কেটে যায় যানজটে আটকা পড়ে। যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, জ্বালানি ব্যয়ও বাড়ছে। এতে অর্থনীতির অপচয় বাড়ছে। মেট্রোরেল চালু হলে কর্মঘণ্টা, যাতায়াত খরচসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাঁচবে। বছরে জাতীয় অর্র্থনীতিতে যোগ হবে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে অন্যান্য গণপরিবহনের সংখ্যা কমবে, এতে করে কমবে দুই লাখ টন কার্বন নিঃসরণ।
উত্তরা-কমলাপুর রুটে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন যা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ বা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাত্র ৩৮ মিনিটের এ যাত্রায় মানুষের সময় বাঁচবে। সাধারণত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আসতে সময় লাগে গড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা।
গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের তীব্র যানজট ও এর প্রভাবে প্রতি বছর দেশের ৩৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা লোকসান হয়। উত্তরা-কমলাপুর রুটের মেট্রোরেল চালু হলে কিছুটা হলেও লোকসান কমবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এমআরটি লাইন-৬ সম্পূর্ণ চালু হলে প্রতিদিন ভ্রমণ সময়ের ব্যয় বাঁচবে ৮ কোটি ৩৮ লাখ এবং যানবাহনের খরচ বাঁচবে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মেট্রোরেলের কারণে ট্রানজিট ব্যবস্থা বাড়বে এবং স্টেশনগুলোর আশপাশে অসংখ্য ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। উন্নত পরিবহন পরিকাঠামোর কারণে নতুন সংস্থাগুলো বিকাশের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বর্তমান ব্যবসাগুলো উপকৃত হবে। সামগ্রিকভাবে, স্টেশন ও রুটের কাছাকাছি স্থাপন করা এ ব্যবসাগুলো দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যথেষ্ট অবদান রাখবে।
মেট্রোরেলের আশপাশে মিরপুর ১১, ১২, পল্লবী এলাকা, দিয়াবাড়ীর পার্শ্ববর্তী পঞ্চবটী, উত্তরা ওয়েস্ট অ্যাভিনিউ ও বিরুলিয়া এলাকা। এসব এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস কারখানা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, খাবার প্রস্তুতকারীসহ নানা প্রতিষ্ঠান। দিয়াবাড়ীসংলগ্ন বিরুলিয়া ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এই এলাকায় জমির দামও এখন অনেক বেড়েছে।
এ ছাড়াও এই এলাকাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি বড় বেসরকারি হাসপাতালও হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের একটি হাসপাতাল করা হয়েছে দিয়াবাড়ী উত্তর এলাকায়। গ্যালাক্সি গ্রুপের একটি বড় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হচ্ছে দিয়াবাড়ীসংলগ্ন বিরুলিয়া এলাকায়।
সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের জন্য ১৩০ কিলোমিটারের রেল নেটওয়ার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতেরও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাড়বে। মেট্রোরেলের পুরো নেটওয়ার্ক চালু হলে এতে দৈনিক যাত্রী চলাচল করবে ৫০ লাখেরও বেশি। এ নেটওয়ার্কের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ চলবে মাটির নিচ দিয়ে। এটিই হবে দেশে মাটির নিচের প্রথম কোনো রেল। ইতিমধ্যে এর কাজও শুরু হয়েছে। ৩১ দশমিক ২ কিলোমিটারের এ প্রকল্পের দুটো অংশ প্রথমটি ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটারের এ অংশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। আর বাকি ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটারের অংশটি এলিভেটেড ওয়েতে নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত।
মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন নীলিমা বেগম। তিনি প্রতিদিনই নিজের কর্মস্থল আগারগাঁও সমবায় অফিসে যাতায়াত করেন। গত কয়েক বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে এ কর্মজীবী নারীকে। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকে তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।
গতকাল মঙ্গলবার নীলিমা বেগমের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তিনি বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। যানবাহনের চরম সংকটের মধ্যে একজন মহিলা হিসেবে বেশিরভাগ সময় গণপরিবহনে উঠতে পারিনি। বাধ্য হয়ে রিকশা বা অটোরিকশায় চলাফেরা করেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। বাসা থেকে বের হয়ে খুব সহজেই মেট্রোরেল দিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারব। আমার মতো এমন হাজার হাজার কর্মজীবী মহিলা এ সুবিধা পাবেন। ভাবতেই ভালো লাগছে।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পে বসবাস করেন মমতাজ উদ্দিন। তিনি ফার্মগেট এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। গতকাল বিকেলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উন্নত দেশের মতো আমরাও মেট্রোরেলে চড়তে পারব। যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে। সময়ও বাঁচবে। এখন ব্যবস্থাপনা কেমন হয় তাও দেখার বিষয়। তবে আমার মতো অনেকেই আশাবাদী ভালোই হবে।’
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা নিয়ে নীলিমা বেগম ও মমতাজ উদ্দিনের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। বিশেষ করে উত্তরা পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের মাত্রা একটু বেশিই। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকা হয়ে যারা বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ এলাকায় যাতায়াত করবেন তারা মেট্রোরেল ব্যবহার করে যাত্রাপথের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াতের সঙ্গে কিছু এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাসহ সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) নীতিমালা তৈরি করার ক্ষেত্রে ‘লো ইমপ্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট’ নীতি অনুসরণ করা; যেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে ট্রানজিট স্টেশনের আশপাশে ধরে রাখা যায় এবং জেনট্রিফিকেশন প্রভাব সীমিত মাত্রায় রাখা যায়। মেট্রো করিডরে মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। টিওডি ডিজাইন করার সময় সাশ্রয়ী আবাসন ও সামাজিক আবাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ ছাড়া ঢাকার যোগাযোগ পরিকল্পনার সঙ্গে ভূমি ব্যবহার ও নির্মিত এলাকার ভৌত বৃদ্ধি ও ব্যবহারের ধরনকে সমন্বয় করে সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। টঙ্গী-এয়ারপোর্ট-বনানী-তেজগাঁও-কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ এ রেল করিডরে কমিউটার সার্ভিস চালু করে বিশালসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে মনে করেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,‘যোগাযোগব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের পাশাপাশি মেট্রোরেল ভূমি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখবে। মেট্রোরেলের কারণে স্টেশনের আশপাশের এলাকার ভূমি ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে, যার আলামত ইতিমধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও এলাকায় চোখে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবেই এ ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় মেট্রোরেল হওয়ার আগে যে ধরনের ও আয়শ্রেণির লোক এসব এলাকায় এর আগে বসবাস করত, তারা নতুন ও তুলনামূলক উঁচু আয়শ্রেণির মানুষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, নগর পরিকল্পনার ভাষায় যাকে বলে হয় ‘জেনট্রিফিকেশন’ বা বসবাসকারী জনসংখ্যার শ্রেণি পরিবর্তন। ফলে নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় সঠিক নীতি কৌশল প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও যথাযথ উন্নয়ন নজরদারি প্রয়োজন, যেন এই জেনট্রিফিকেশন তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং মেট্রোরেলের সুফল সব আয়শ্রেণির মানুষ পেতে পারে ও সার্বিক জনকল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।’
জানতে চাইলে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘মেট্রোরেল ঢাকাবাসীকে সুশৃঙ্খল গণপরিবহনের নতুন স্বাদ এনে দেবে। মেট্রোরেলের আশপাশের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ছোট ছোট প্লট একত্রীকরণ বা ল্যান্ড কনসোলিডেশন করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মেট্রোরেল চালু হলে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধ করা, স্টেশন অপরিচ্ছন্ন করা এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার শহরের অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে মেট্রো ব্যবস্থা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। তবে মেট্রোরেলকে কার্যকর করতে মেট্রোর পাশাপাশি সমন্বিত উপায়ে বাস সার্ভিস চালু করা এবং স্টেশনগুলোতে পর্যাপ্ত পদচারী সুবিধা ও গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ করতে ঢাকার সঙ্গে কাছাকাছি দূরত্বের আঞ্চলিক শহরগুলোর দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রো স্টেশনের ৫০০ মিটারের মধ্যে ভবনের আকার-আয়তন-ব্যবহার সুনির্দিষ্টকরণ করা দরকার, যেন এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা, উন্নয়নের মাত্রা এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য টেকসই ও এলাকার ভারবহন ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। মেট্রো স্টেশনের ৫০০ মিটার প্রভাব বলয়ে বেসরকারি অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট প্রকল্পে বাধ্যতামূলক সাশ্রয়ী আবাসনের মাধ্যমে নিম্নবিত্তদের জন্য আবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি করা দরকার।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) প্রকল্পের পরামর্শক ড. আফসানা হক বলেন, ‘মেট্রোরেলের আশপাশের ভূমি ব্যবহার এবং স্টেশন প্লাজাকেন্দ্রিক পরিকল্পনার যে উদ্যোগ এখন নেওয়া হচ্ছে, তা কয়েক বছর আগেই শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে সন্নিহিত পাড়া-মহল্লার বৈশিষ্ট্য ও ধরন অনুযায়ী স্টেশনগুলোর ডিজাইনে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আনা দরকার।’
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মো. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মেট্রোরেল চালাতে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দেওয়া লাগে। বাংলাদেশে মেট্রোরেলে ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে এবং যাত্রীদের জন্য ভাড়া সহনীয় ও সাশ্রয়ী করতে মেট্রো স্টেশনে বিজ্ঞাপন এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকা সুনির্দিষ্ট করে লিজ দেওয়াসহ বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।’
স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরদিন থেকে রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে। ঢাকার নারকীয় পরিবেশের গণপরিবহনব্যবস্থা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে ঢাকা মেট্রোরেল এমআরটি-৬ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে শুরুর দীর্ঘ ১০ বছর পর এই প্রকল্পের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে চালু করা হচ্ছে মেট্রোরেল।
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও দীর্ঘদিনের নারকীয় পরিবেশে যাতায়াতের কারণে নগরজীবন এক প্রকার বিষিয়ে উঠেছে। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে গণপরিবহন চলাচলে স্বস্তির দরজা খুলবে।
আমাদের দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও চলাচল এই প্রথম। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোনো অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ নেই। এহেন পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এম এন সিদ্দিককে এই মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেট্রোরেল নির্মাণে অনভিজ্ঞতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ খোঁজখবর নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমাদের দেশীয় বহু অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেত। এতে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি বহু সময় আগে এই প্রকল্প চালু করা যেত।
সম্প্রতি নির্মিত এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি মেট্রোরেলের নির্মাণ ও ব্যয় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কলকাতা ও দিল্লি মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় কম হওয়ায় এসব রেলে ভাড়াও কম। এ দুটি রেল নির্মাণে ঢাকা থেকে বহুগুণে কম ব্যয় হয়েছে। যদিও এ দুটি মেট্রোরেল বহু আগে নির্মিত হয়েছে। তবে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নর্থ-সাউথ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মিত ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে লাইন-২এ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালে নির্মিত ভারতের দিল্লি লাইন-১ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে নির্মিত পাকিস্তানের লাহোর অরেঞ্জ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ ঢাকা উত্তরা থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
কর্তৃপক্ষের অনভিজ্ঞতার কারণে কোনো প্রকার সমীক্ষা বা গবেষণা ছাড়া কেবলমাত্র এশিয়ার সর্বোচ্চ ব্যয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের যাবতীয় খরচ যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে চড়া দামে উশুলের লক্ষ্যে এবং বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার মানসে ঢাকার মেট্রোরেলে সর্বোচ্চ হারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মেট্রোরেলে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আশপাশের দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। ফলে রাজধানীর বেসরকারি বাসের দ্বিগুণ এশিয়ার দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ২ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি বাড়তি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিবহন সেক্টরের অন্যতম স্টেকহোল্ডার যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব বাদ দিয়ে বেসরকারি বাসের মালিক ও সরকার মিলেমিশে একচেটিয়া ভাড়া নির্ধারণের যে রেওয়াজ গড়ে উঠেছে, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতা থাকলেও এই সক্ষমতা কাজে লাগানোর মতো আমাদের নগরীতে সার্বিক অবকাঠামো নেই। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয় সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে। আমাদের এখানে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে কোনো উদ্যোগ ছাড়া। আমাদের উত্তরাঞ্চলের ১৬ থেকে ১৮ জেলার সংযোগস্থল আব্দুল্লাহপুর। অথচ মেট্রো শুরুর স্টেশন করা হয়েছে দিয়াবাড়ি।
একজন যাত্রী আব্দুল্লাহপুর থেকে অনায়াসে মহাখালী বা ফার্মগেট পৌঁছে যাবে। উত্তরা থেকে মতিঝিলের বাস ভাড়া ৫০ টাকা আর মেট্রোরেলের ভাড়া ১০০ টাকা। এহেন কারণে সাধারণ মানুষ এবং নিয়মিত যাত্রীরা মেট্রোরেল বিমুখ হতে পারে। এ ছাড়া টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর থেকে সিংহভাগ যাত্রী মহাখালী, ফার্মগেট ও মতিঝিলের পথে যাতায়াত করে। ফলে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশে চালু হওয়া মেট্রো চালুর কয়েক মাস পর যাত্রীর সংকট দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে মেট্রোরেলের ভাড়া কমানোর পাশাপাশি নিয়মিত যাত্রীদের মাসিক কার্ডে বিশেষ সাবসিডি প্রদান, বন্ধের দিনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ভাড়ার হার নির্ধারণ, মেট্রো থেকে নামার পর হাঁটার পরিবেশ তৈরির জন্য ফুটপাত পরিষ্কার রাখা, কানেক্টিং রোডে পর্যাপ্ত বাস ও অন্যান্য গণপরিবহনের ব্যবস্থা রাখা, বিশেষ বিশেষ স্টেশনগুলোতে কার ও বাইসাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং মেট্রোরেলের পরিচালনা পরিষদে যাত্রী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি
ই-মেইল : [email protected]
আজ থেকে চলবে মেট্রোরেল। সাধারণ যাত্রী নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সবাই যাতায়াত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে ঢাকাবাসী অনেক প্রথমের দেখা পাবেন। এই মেট্রোরেল হচ্ছে দেশের প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। আর এই ট্রেন চলাচল করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। মেট্রোরেলের টিকিট পুরোপুরিই কম্পিউটারাইজড। সব মিলিয়ে যাত্রীরা অনেক হয়রানি পাশ কাটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন।
মেট্রোরেল কর্র্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, দিয়াবাড়ীতে ডিপোয় একটি অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কোথায় থামবে, কত সময় থামবে, কত গতিতে চলবেএর সবই আগে থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এর বাইরে রেললাইনের প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ মিটার পরপর রেডিও অ্যানটেনা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে আছে চারটি করে অ্যানটেনা। প্রতিটি অ্যানটেনা ট্রেন ও কন্ট্রোল সেন্টারের (নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র) সঙ্গে যোগাযোগ করবে। স্টেশনে এসে ট্রেন যেখানে থামার কথা, এর চেয়ে ছয় ইঞ্চিও এদিক-ওদিক হতে পারবে না। তাহলে ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজা বরাবর হবে না। ট্রেন পরিচালনার জন্য একজন চালক (অপারেটর) এবং স্টেশনে একজন নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) থাকবেন। পাশাপাশি ওসিসিতে থাকবেন কর্মকর্তারা। সবার কাজ মূলত পর্যবেক্ষণ করা, নির্দেশনা ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা দেখা।
সূত্র জানিয়েছে, গ্রিড বিপর্যয় হলেও ট্রেন বন্ধ হবে না। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও যাতায়াতে ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে বলে হিসাব করেছে কর্র্তৃপক্ষ। এই ট্রেন চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য উত্তরার ডিপোয় সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। মতিঝিলে আরেকটি স্থাপনের কাজ চলছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানান, মেট্রোরেলের প্রতি ট্রেনে ছয়টি কোচ বা বগি থাকছে। দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। ট্রেন স্টেশনে থামলে চারটি দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। বাকি চারটি বন্ধ থাকবে। পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে থাকবে অডিও-ভিজ্যুয়াল ঘোষণা। দুই প্রান্তের দুটি কোচে দুটি করে চারটি হুইলচেয়ার বসানোর ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।