
আজ থেকে চলবে মেট্রোরেল। সাধারণ যাত্রী নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সবাই যাতায়াত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে ঢাকাবাসী অনেক প্রথমের দেখা পাবেন। এই মেট্রোরেল হচ্ছে দেশের প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। আর এই ট্রেন চলাচল করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। মেট্রোরেলের টিকিট পুরোপুরিই কম্পিউটারাইজড। সব মিলিয়ে যাত্রীরা অনেক হয়রানি পাশ কাটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন।
মেট্রোরেল কর্র্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, দিয়াবাড়ীতে ডিপোয় একটি অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কোথায় থামবে, কত সময় থামবে, কত গতিতে চলবেএর সবই আগে থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এর বাইরে রেললাইনের প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ মিটার পরপর রেডিও অ্যানটেনা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে আছে চারটি করে অ্যানটেনা। প্রতিটি অ্যানটেনা ট্রেন ও কন্ট্রোল সেন্টারের (নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র) সঙ্গে যোগাযোগ করবে। স্টেশনে এসে ট্রেন যেখানে থামার কথা, এর চেয়ে ছয় ইঞ্চিও এদিক-ওদিক হতে পারবে না। তাহলে ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজা বরাবর হবে না। ট্রেন পরিচালনার জন্য একজন চালক (অপারেটর) এবং স্টেশনে একজন নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) থাকবেন। পাশাপাশি ওসিসিতে থাকবেন কর্মকর্তারা। সবার কাজ মূলত পর্যবেক্ষণ করা, নির্দেশনা ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা দেখা।
সূত্র জানিয়েছে, গ্রিড বিপর্যয় হলেও ট্রেন বন্ধ হবে না। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও যাতায়াতে ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে বলে হিসাব করেছে কর্র্তৃপক্ষ। এই ট্রেন চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য উত্তরার ডিপোয় সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। মতিঝিলে আরেকটি স্থাপনের কাজ চলছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানান, মেট্রোরেলের প্রতি ট্রেনে ছয়টি কোচ বা বগি থাকছে। দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। ট্রেন স্টেশনে থামলে চারটি দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। বাকি চারটি বন্ধ থাকবে। পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে থাকবে অডিও-ভিজ্যুয়াল ঘোষণা। দুই প্রান্তের দুটি কোচে দুটি করে চারটি হুইলচেয়ার বসানোর ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।
চ্যালেঞ্জ জয় করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরণের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দুয়ার খুলেছে বাংলাদেশ। নদীর দুই তীরে দুই শহরের স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল করার মধ্য দিয়ে। আজ বুধবার নগর পরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে।
সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক বড় প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল। এ প্রকল্পের আওতায় ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণ হবে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। উত্তরার দিয়াবাড়ী (উত্তরা উত্তর) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ থেকে ট্রেন উদ্বোধন হবে আজ।
মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর মানুষ পাবে যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির পাওয়ার স্বস্তির বার্তা। সেই সঙ্গে যানজটে আটকা পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্টের যে আর্থিক ক্ষতি সেটা কেটে যাবে। কমবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণের মাত্রা। আবাসনসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসার প্রসারে অর্থনীতিতেও প্রাণ সঞ্চার হবে। জীবনযাপনে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর বড় একটা অংশের যাত্রীদের এই মেট্রোরেলে চড়াতে পারলে নগর পরিবহনে সুফল পাওয়া যাবে। আর যানজটের শহরে নিরাপদ একটি বাহন হবে মানুষের জন্য।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি নিজের আয়ে চলার কথা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল শহরের যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।’
বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ : স্বাধীন বাংলাদেশের বায়ান্ন বছরে এসে যোগাযোগের নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এমআরটি লাইন-৬-এর পর আরও পাঁচটি মেট্রোরেল আসছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণকাজ তিন পর্যায়ে শেষ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ বা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা-আগারগাঁও রুটে ট্রেন উদ্বোধনের পরদিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর থেকে চড়তে পারবেন সাধারণ যাত্রীরা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন। শুরুতে মেট্রোরেল চলবে দিনে চার ঘণ্টা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা। উত্তরা-আগারগাঁও ৬০ টাকা। আর মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে ১০ সেট ট্রেন চললেও ধীরে ধীরে মেট্রোরেল চলাচলের সময় ও ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো হবে। ২৪ সেট রেল নিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে চলবে দেশের প্রথম উড়াল রেল। ডিএমটিসিএলের তথ্যমতে, মেট্রোরেল ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। শুরুর দিকে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে যাত্রার সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে। উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশনে যাত্রী পরিবহনে থাকছে শাটল বাস সার্ভিস।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৭টি স্টেশনের মধ্যে তিনটি আইকনিক স্টেশন। জাপানের আদলে তৈরি হচ্ছে এসব স্টেশন। নান্দনিক এসব স্টেশনে থাকছে যাত্রীদের অত্যাধুনিক সেবার সব সুবিধা। স্থায়ী পাস ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। অন্য স্টেশনগুলোতে থাকছে বিপণিবিতান, সময় কাটানোর হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ ও বিনোদন কেন্দ্র। অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধীদের ওঠানামার জন্য থাকছে লিফট, সঙ্গে এক্সেলেটরও। ভ্রমণের জন্য থাকছে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের র্যাপিড পাস।
মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। তবে গ্রিড বিপর্যয় হলেও তাতে বন্ধ হবে না। ট্রেন চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য উত্তরার ডিপোয় সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল ডিপোতে একটি পরিচালন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কখন থামবে অথবা কত গতিতে চলবে এসব স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ঠিক করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল একটি পরীক্ষিত যাতায়াতমাধ্যম। এটিকে বহুল ব্যবহৃত করতে চাইলে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি একটু বিবেচনা করা উচিত। এখন যে ভাড়া আছে সেটি যারা প্রাইভেট কারে যাতায়াত করে তাদের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু শুধু প্রাইভেট কারের যাত্রীরা যদি এটি ব্যবহার করে, অন্য মাধ্যমে যারা যাতায়াত করে তারা না চড়লে যানজটের সমস্যা সমাধান হবে না।’ তিনি মনে করেন, মোটরসাইকেলের যাত্রীদের টার্গেট করা উচিত। এ বাহনটি ৬০ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে। তাদের দিক বিবেচনা করে হলেও যদি ভাড়া সমন্বয় করে কিছুটা কমানো যায় তাহলে ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর আশপাশে যেন অন্য যানবাহনের যানজট লেগে না থাকে সেগুলোও মনিটরিং করা দরকার। সব স্টেশনে চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত। তাহলে সব বয়সীর মানুষ এ মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল চালু হলেও পুরো কাজ না শেষ করে অর্ধেক চালুর ফলে সেভাবে সুফল পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সরকারের উচিত মেট্রোরেলের ভাড়া কমানো। তাহলে বেশিরভাগ যাত্রী চড়বে। তাহলে যানজটও কমবে।’
প্রকল্প : ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রথমে উত্তরা (দিয়াবাড়ী) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এর মধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করায় কাজ শেষ করতে আরও প্রায় এক বছর সময় বেশি লাগতে পারে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি : গত মাস (নভেম্বর) শেষে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি হয়েছে ৮৪.২২ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫.৭৬ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ঢাকাবাসীর দিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়গুলোর বেশিরভাগ কেটে যায় যানজটে আটকা পড়ে। যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, জ্বালানি ব্যয়ও বাড়ছে। এতে অর্থনীতির অপচয় বাড়ছে। মেট্রোরেল চালু হলে কর্মঘণ্টা, যাতায়াত খরচসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাঁচবে। বছরে জাতীয় অর্র্থনীতিতে যোগ হবে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে অন্যান্য গণপরিবহনের সংখ্যা কমবে, এতে করে কমবে দুই লাখ টন কার্বন নিঃসরণ।
উত্তরা-কমলাপুর রুটে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন যা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ বা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাত্র ৩৮ মিনিটের এ যাত্রায় মানুষের সময় বাঁচবে। সাধারণত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আসতে সময় লাগে গড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা।
গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের তীব্র যানজট ও এর প্রভাবে প্রতি বছর দেশের ৩৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা লোকসান হয়। উত্তরা-কমলাপুর রুটের মেট্রোরেল চালু হলে কিছুটা হলেও লোকসান কমবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এমআরটি লাইন-৬ সম্পূর্ণ চালু হলে প্রতিদিন ভ্রমণ সময়ের ব্যয় বাঁচবে ৮ কোটি ৩৮ লাখ এবং যানবাহনের খরচ বাঁচবে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মেট্রোরেলের কারণে ট্রানজিট ব্যবস্থা বাড়বে এবং স্টেশনগুলোর আশপাশে অসংখ্য ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। উন্নত পরিবহন পরিকাঠামোর কারণে নতুন সংস্থাগুলো বিকাশের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বর্তমান ব্যবসাগুলো উপকৃত হবে। সামগ্রিকভাবে, স্টেশন ও রুটের কাছাকাছি স্থাপন করা এ ব্যবসাগুলো দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যথেষ্ট অবদান রাখবে।
মেট্রোরেলের আশপাশে মিরপুর ১১, ১২, পল্লবী এলাকা, দিয়াবাড়ীর পার্শ্ববর্তী পঞ্চবটী, উত্তরা ওয়েস্ট অ্যাভিনিউ ও বিরুলিয়া এলাকা। এসব এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস কারখানা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, খাবার প্রস্তুতকারীসহ নানা প্রতিষ্ঠান। দিয়াবাড়ীসংলগ্ন বিরুলিয়া ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এই এলাকায় জমির দামও এখন অনেক বেড়েছে।
এ ছাড়াও এই এলাকাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি বড় বেসরকারি হাসপাতালও হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের একটি হাসপাতাল করা হয়েছে দিয়াবাড়ী উত্তর এলাকায়। গ্যালাক্সি গ্রুপের একটি বড় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হচ্ছে দিয়াবাড়ীসংলগ্ন বিরুলিয়া এলাকায়।
সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের জন্য ১৩০ কিলোমিটারের রেল নেটওয়ার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতেরও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাড়বে। মেট্রোরেলের পুরো নেটওয়ার্ক চালু হলে এতে দৈনিক যাত্রী চলাচল করবে ৫০ লাখেরও বেশি। এ নেটওয়ার্কের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ চলবে মাটির নিচ দিয়ে। এটিই হবে দেশে মাটির নিচের প্রথম কোনো রেল। ইতিমধ্যে এর কাজও শুরু হয়েছে। ৩১ দশমিক ২ কিলোমিটারের এ প্রকল্পের দুটো অংশ প্রথমটি ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটারের এ অংশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। আর বাকি ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটারের অংশটি এলিভেটেড ওয়েতে নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত।
মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন নীলিমা বেগম। তিনি প্রতিদিনই নিজের কর্মস্থল আগারগাঁও সমবায় অফিসে যাতায়াত করেন। গত কয়েক বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে এ কর্মজীবী নারীকে। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকে তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।
গতকাল মঙ্গলবার নীলিমা বেগমের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তিনি বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। যানবাহনের চরম সংকটের মধ্যে একজন মহিলা হিসেবে বেশিরভাগ সময় গণপরিবহনে উঠতে পারিনি। বাধ্য হয়ে রিকশা বা অটোরিকশায় চলাফেরা করেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। বাসা থেকে বের হয়ে খুব সহজেই মেট্রোরেল দিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারব। আমার মতো এমন হাজার হাজার কর্মজীবী মহিলা এ সুবিধা পাবেন। ভাবতেই ভালো লাগছে।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পে বসবাস করেন মমতাজ উদ্দিন। তিনি ফার্মগেট এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। গতকাল বিকেলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উন্নত দেশের মতো আমরাও মেট্রোরেলে চড়তে পারব। যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে। সময়ও বাঁচবে। এখন ব্যবস্থাপনা কেমন হয় তাও দেখার বিষয়। তবে আমার মতো অনেকেই আশাবাদী ভালোই হবে।’
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা নিয়ে নীলিমা বেগম ও মমতাজ উদ্দিনের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। বিশেষ করে উত্তরা পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের মাত্রা একটু বেশিই। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকা হয়ে যারা বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ এলাকায় যাতায়াত করবেন তারা মেট্রোরেল ব্যবহার করে যাত্রাপথের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াতের সঙ্গে কিছু এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাসহ সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) নীতিমালা তৈরি করার ক্ষেত্রে ‘লো ইমপ্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট’ নীতি অনুসরণ করা; যেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে ট্রানজিট স্টেশনের আশপাশে ধরে রাখা যায় এবং জেনট্রিফিকেশন প্রভাব সীমিত মাত্রায় রাখা যায়। মেট্রো করিডরে মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। টিওডি ডিজাইন করার সময় সাশ্রয়ী আবাসন ও সামাজিক আবাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ ছাড়া ঢাকার যোগাযোগ পরিকল্পনার সঙ্গে ভূমি ব্যবহার ও নির্মিত এলাকার ভৌত বৃদ্ধি ও ব্যবহারের ধরনকে সমন্বয় করে সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। টঙ্গী-এয়ারপোর্ট-বনানী-তেজগাঁও-কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ এ রেল করিডরে কমিউটার সার্ভিস চালু করে বিশালসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে মনে করেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,‘যোগাযোগব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের পাশাপাশি মেট্রোরেল ভূমি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখবে। মেট্রোরেলের কারণে স্টেশনের আশপাশের এলাকার ভূমি ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে, যার আলামত ইতিমধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও এলাকায় চোখে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবেই এ ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় মেট্রোরেল হওয়ার আগে যে ধরনের ও আয়শ্রেণির লোক এসব এলাকায় এর আগে বসবাস করত, তারা নতুন ও তুলনামূলক উঁচু আয়শ্রেণির মানুষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, নগর পরিকল্পনার ভাষায় যাকে বলে হয় ‘জেনট্রিফিকেশন’ বা বসবাসকারী জনসংখ্যার শ্রেণি পরিবর্তন। ফলে নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় সঠিক নীতি কৌশল প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও যথাযথ উন্নয়ন নজরদারি প্রয়োজন, যেন এই জেনট্রিফিকেশন তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং মেট্রোরেলের সুফল সব আয়শ্রেণির মানুষ পেতে পারে ও সার্বিক জনকল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।’
জানতে চাইলে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘মেট্রোরেল ঢাকাবাসীকে সুশৃঙ্খল গণপরিবহনের নতুন স্বাদ এনে দেবে। মেট্রোরেলের আশপাশের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ছোট ছোট প্লট একত্রীকরণ বা ল্যান্ড কনসোলিডেশন করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মেট্রোরেল চালু হলে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধ করা, স্টেশন অপরিচ্ছন্ন করা এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার শহরের অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে মেট্রো ব্যবস্থা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। তবে মেট্রোরেলকে কার্যকর করতে মেট্রোর পাশাপাশি সমন্বিত উপায়ে বাস সার্ভিস চালু করা এবং স্টেশনগুলোতে পর্যাপ্ত পদচারী সুবিধা ও গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ করতে ঢাকার সঙ্গে কাছাকাছি দূরত্বের আঞ্চলিক শহরগুলোর দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রো স্টেশনের ৫০০ মিটারের মধ্যে ভবনের আকার-আয়তন-ব্যবহার সুনির্দিষ্টকরণ করা দরকার, যেন এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা, উন্নয়নের মাত্রা এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য টেকসই ও এলাকার ভারবহন ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। মেট্রো স্টেশনের ৫০০ মিটার প্রভাব বলয়ে বেসরকারি অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট প্রকল্পে বাধ্যতামূলক সাশ্রয়ী আবাসনের মাধ্যমে নিম্নবিত্তদের জন্য আবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি করা দরকার।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) প্রকল্পের পরামর্শক ড. আফসানা হক বলেন, ‘মেট্রোরেলের আশপাশের ভূমি ব্যবহার এবং স্টেশন প্লাজাকেন্দ্রিক পরিকল্পনার যে উদ্যোগ এখন নেওয়া হচ্ছে, তা কয়েক বছর আগেই শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে সন্নিহিত পাড়া-মহল্লার বৈশিষ্ট্য ও ধরন অনুযায়ী স্টেশনগুলোর ডিজাইনে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আনা দরকার।’
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মো. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মেট্রোরেল চালাতে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দেওয়া লাগে। বাংলাদেশে মেট্রোরেলে ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে এবং যাত্রীদের জন্য ভাড়া সহনীয় ও সাশ্রয়ী করতে মেট্রো স্টেশনে বিজ্ঞাপন এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকা সুনির্দিষ্ট করে লিজ দেওয়াসহ বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।’
পদ্মা সেতুর পরে যোগাযোগ খাতে আরও একটি বড় সাফল্য মেট্রোরেল। তারপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেল। এগুলোকে ‘ক্যাশ’ করে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দোদুল্যমান ভোটে ভাগ বসাতে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন করেছে। এ কথা অকপটে স্বীকার করবে যে কেউ।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে মানুষ দেখতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে থাকলে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কী করে। ফলে আমরা যা করেছি তা নিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইব। মানুষ নিশ্চয়ই এর প্রতিদান দেবে।’
দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বড় অংশের ভোট নির্দিষ্ট। কেউ আওয়ামী লীগের দিকে কেউ বিএনপিসহ অন্যান্য দলের। এ ক্ষেত্রে দোদুল্যমান ভোটই বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। এ ভোট যে দলের বাক্সে যায়, সে দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ কারণে সব দলেরই লক্ষ্য থাকে দোদুল্যমান ভোট নিজেদের পক্ষে টানার।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে থাকা দোদুল্যমান ভোট পক্ষে রাখতে গত ১৪ বছর সরকার যেসব উন্নয়নকাজ করেছে, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর জন্য প্রচার-প্রচারণায় নানামুখী পদক্ষেপ নেবে দলটি। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর যে সুফল জনগণ ভোগ করবে, সেটা জাতীয় নির্বাচনের সময় দলীয় প্রচারে গুরুত্ব দেবে ক্ষমতাসীনরা।
ওই নেতারা বলছেন, সরকারের উন্নয়নের প্রচার দিয়ে দোদুল্যমান ভোটের বড় অংশটি নৌকার পক্ষে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আওয়ামী লীগের। ভোটের মাঠে দলকে আলোচনায় রাখতে চাই মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো সরকারের বড় সাফল্যকে। মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব না হলেও আজ বুধবার আংশিক উদ্বোধন করছে সরকার। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে সেটা উদ্বোধন করা হবে নির্বাচনের আগেই।
যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের গুরুত্ব ও সুবিধা তুলে ধরে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ ভোট চাইবে, এ কথা জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নিশ্চয়ই জনগণ তাদের খালি হাতে ফেরাবে না এটা বিশ্বাস করেন তারা। সে জন্য উন্নয়ন প্রচারের দিকে বেশি জোর দিচ্ছেন নেতারা। মেট্রোরেলের পুরো কাজ শেষ করে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার মধ্য দিয়ে ভোটের মাঠে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে চায় আওয়ামী লীগ।
নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করার মধ্য দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে সরকার নজির স্থাপন করেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেট্রোরেল আংশিক উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে জনগণের মনোভাব দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তাই ‘টেস্ট কেইস’ ধরে নিয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হচ্ছে। পাশাপশি এ ধরনের পরিবহনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোও জানা সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে টানেল ও মেট্রোরেল প্রকল্প উদ্বোধন করার চিন্তা ছিল। তার আগে মেট্রোরেল আংশিক উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনের আগে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধনে অনেক বড় আয়োজন থাকবে। যাতে সারা দেশের মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। সর্বস্তরে আলোচনা তৈরি হয়।
ওই নেতারা বলেন, রাজধানীর উন্নয়ন মানুষের চোখে পড়ে বেশি। গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পায় ঢাকার উন্নয়ন। তাই শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নে আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জের উন্নয়নেও অগ্রধিকার দেয় সরকার।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা আরও বলেন, যোগাযোগব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় উন্নয়ন পদ্মা সেতু হলেও নির্বাচনের অনেক আগে উদ্বোধন হয় এই সেতু। ফলে মানুষের আলোচনায় কম থাকবে পদ্মা সেতু। তবুও পদ্মা সেতু আলোচনায় রাখার পাশাপাশি মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলকে নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাঁচ বছর পর নির্বাচনে মানুষ হিসাব নেয়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে জনগণের কাছে পরীক্ষা দেবে আওয়ামী লীগ। আমরা বিশ্বাস করি, সে পরীক্ষায় আমরাই উত্তীর্ণ হব।’
স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরদিন থেকে রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে। ঢাকার নারকীয় পরিবেশের গণপরিবহনব্যবস্থা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে ঢাকা মেট্রোরেল এমআরটি-৬ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে শুরুর দীর্ঘ ১০ বছর পর এই প্রকল্পের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে চালু করা হচ্ছে মেট্রোরেল।
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও দীর্ঘদিনের নারকীয় পরিবেশে যাতায়াতের কারণে নগরজীবন এক প্রকার বিষিয়ে উঠেছে। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে গণপরিবহন চলাচলে স্বস্তির দরজা খুলবে।
আমাদের দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও চলাচল এই প্রথম। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোনো অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ নেই। এহেন পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এম এন সিদ্দিককে এই মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেট্রোরেল নির্মাণে অনভিজ্ঞতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ খোঁজখবর নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমাদের দেশীয় বহু অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেত। এতে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি বহু সময় আগে এই প্রকল্প চালু করা যেত।
সম্প্রতি নির্মিত এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি মেট্রোরেলের নির্মাণ ও ব্যয় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কলকাতা ও দিল্লি মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় কম হওয়ায় এসব রেলে ভাড়াও কম। এ দুটি রেল নির্মাণে ঢাকা থেকে বহুগুণে কম ব্যয় হয়েছে। যদিও এ দুটি মেট্রোরেল বহু আগে নির্মিত হয়েছে। তবে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নর্থ-সাউথ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মিত ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে লাইন-২এ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালে নির্মিত ভারতের দিল্লি লাইন-১ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে নির্মিত পাকিস্তানের লাহোর অরেঞ্জ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ ঢাকা উত্তরা থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
কর্তৃপক্ষের অনভিজ্ঞতার কারণে কোনো প্রকার সমীক্ষা বা গবেষণা ছাড়া কেবলমাত্র এশিয়ার সর্বোচ্চ ব্যয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের যাবতীয় খরচ যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে চড়া দামে উশুলের লক্ষ্যে এবং বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার মানসে ঢাকার মেট্রোরেলে সর্বোচ্চ হারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মেট্রোরেলে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আশপাশের দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। ফলে রাজধানীর বেসরকারি বাসের দ্বিগুণ এশিয়ার দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ২ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি বাড়তি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিবহন সেক্টরের অন্যতম স্টেকহোল্ডার যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব বাদ দিয়ে বেসরকারি বাসের মালিক ও সরকার মিলেমিশে একচেটিয়া ভাড়া নির্ধারণের যে রেওয়াজ গড়ে উঠেছে, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতা থাকলেও এই সক্ষমতা কাজে লাগানোর মতো আমাদের নগরীতে সার্বিক অবকাঠামো নেই। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয় সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে। আমাদের এখানে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে কোনো উদ্যোগ ছাড়া। আমাদের উত্তরাঞ্চলের ১৬ থেকে ১৮ জেলার সংযোগস্থল আব্দুল্লাহপুর। অথচ মেট্রো শুরুর স্টেশন করা হয়েছে দিয়াবাড়ি।
একজন যাত্রী আব্দুল্লাহপুর থেকে অনায়াসে মহাখালী বা ফার্মগেট পৌঁছে যাবে। উত্তরা থেকে মতিঝিলের বাস ভাড়া ৫০ টাকা আর মেট্রোরেলের ভাড়া ১০০ টাকা। এহেন কারণে সাধারণ মানুষ এবং নিয়মিত যাত্রীরা মেট্রোরেল বিমুখ হতে পারে। এ ছাড়া টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর থেকে সিংহভাগ যাত্রী মহাখালী, ফার্মগেট ও মতিঝিলের পথে যাতায়াত করে। ফলে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশে চালু হওয়া মেট্রো চালুর কয়েক মাস পর যাত্রীর সংকট দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে মেট্রোরেলের ভাড়া কমানোর পাশাপাশি নিয়মিত যাত্রীদের মাসিক কার্ডে বিশেষ সাবসিডি প্রদান, বন্ধের দিনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ভাড়ার হার নির্ধারণ, মেট্রো থেকে নামার পর হাঁটার পরিবেশ তৈরির জন্য ফুটপাত পরিষ্কার রাখা, কানেক্টিং রোডে পর্যাপ্ত বাস ও অন্যান্য গণপরিবহনের ব্যবস্থা রাখা, বিশেষ বিশেষ স্টেশনগুলোতে কার ও বাইসাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং মেট্রোরেলের পরিচালনা পরিষদে যাত্রী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি
ই-মেইল : [email protected]
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।