
আজ বুধবার ঘুরছে স্বপ্নের মেট্রোরেলের চাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রেরেলের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে কিছুটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে রেলের নিরাপত্তার বিষয়ে। রেলের নিরাপত্তার জন্য ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ’ বা ‘এমআরটি পুলিশ ফোর্স’ করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বছর দুয়েক আগে। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় আপাতত রেলের নিরাপত্তায় থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ টিম ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। তবে আগামী বছরই নতুন ইউনিটটির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা দিতে ছক আঁকা হয়েছে। ডিএমপি পুলিশ আলাদাভাবে রেলের নিরাপত্তা দেবে। তা ছাড়া পুলিশের নতুন ইউনিটটি চালু প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হবে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, এমআরটি পুলিশ ইউনিট গঠনের জন্য ৩৫৭ জনবলের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এমআরটি পুলিশে একজন ডিআইজি প্রধান থাকবেন। এ ছাড়া একজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সাতজন ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), একজন ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), চারজন সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), দুজন সাব ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), ৫১ জন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), চারজন সহকারী ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), ১০ নায়েক ও ২৭০ কনস্টেবল, একজন উচ্চমান সহকারী, একজন হিসাবরক্ষক ও ৯৬টি যানবাহন থাকবে। ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে পাঁচটি মেট্রোরেল সমন্বয়ে ডিএমটিসিএলের মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে। এই যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ৫১টি উড়াল ও ৫৩টি পাতাল স্টেশনসহ মোট ১০৪টি স্টেশন তৈরি হবে; যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বিশেষ পুলিশ ইউনিট কাজ করবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন ২ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, এই স্থাপনার নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও যাত্রী সুরক্ষায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে প্রতিটি স্টেশনেই ফাঁড়ি স্থাপন করা হবে। নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ ডিপো এলাকায় স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এমআরটি পুলিশের প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য ভূমি চিহ্নিত করে রেখেছে ডিএমটিসিএল। স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতি মিলেছে। জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবনার ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। অনুমোদনের পর আগামী বছরের যেকোনো সময় নতুন ইউনিটটির কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় থানা পুলিশের সঙ্গে রিজার্ভ পুলিশ দিয়ে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কার্যক্রম চালানো হবে। তবে এই নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনে আলাদা প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেলের ভেতর পুলিশ না থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তা ছাড়া প্রবেশমুখে আর্চওয়েতে চেকিং, সিসিটিভি মনিটরিং, মেট্রোরেলের বাইরে স্টেশনের নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করার কথা রয়েছে এমআরটির।
পুলিশ সদর দপ্তরের অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ফারুক আহমেদ বলেন, নানা ধাপ পেরিয়ে এমআরটি পুলিশ গঠনের কার্যক্রম চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিটটির কার্যক্রম শুরু হবে।
চ্যালেঞ্জ জয় করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরণের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দুয়ার খুলেছে বাংলাদেশ। নদীর দুই তীরে দুই শহরের স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল করার মধ্য দিয়ে। আজ বুধবার নগর পরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে।
সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক বড় প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল। এ প্রকল্পের আওতায় ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণ হবে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। উত্তরার দিয়াবাড়ী (উত্তরা উত্তর) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ থেকে ট্রেন উদ্বোধন হবে আজ।
মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর মানুষ পাবে যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির পাওয়ার স্বস্তির বার্তা। সেই সঙ্গে যানজটে আটকা পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্টের যে আর্থিক ক্ষতি সেটা কেটে যাবে। কমবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণের মাত্রা। আবাসনসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসার প্রসারে অর্থনীতিতেও প্রাণ সঞ্চার হবে। জীবনযাপনে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর বড় একটা অংশের যাত্রীদের এই মেট্রোরেলে চড়াতে পারলে নগর পরিবহনে সুফল পাওয়া যাবে। আর যানজটের শহরে নিরাপদ একটি বাহন হবে মানুষের জন্য।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি নিজের আয়ে চলার কথা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল শহরের যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।’
বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ : স্বাধীন বাংলাদেশের বায়ান্ন বছরে এসে যোগাযোগের নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এমআরটি লাইন-৬-এর পর আরও পাঁচটি মেট্রোরেল আসছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণকাজ তিন পর্যায়ে শেষ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ বা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা-আগারগাঁও রুটে ট্রেন উদ্বোধনের পরদিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর থেকে চড়তে পারবেন সাধারণ যাত্রীরা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন। শুরুতে মেট্রোরেল চলবে দিনে চার ঘণ্টা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা। উত্তরা-আগারগাঁও ৬০ টাকা। আর মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে ১০ সেট ট্রেন চললেও ধীরে ধীরে মেট্রোরেল চলাচলের সময় ও ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো হবে। ২৪ সেট রেল নিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোদমে চলবে দেশের প্রথম উড়াল রেল। ডিএমটিসিএলের তথ্যমতে, মেট্রোরেল ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। শুরুর দিকে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে যাত্রার সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে। উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশনে যাত্রী পরিবহনে থাকছে শাটল বাস সার্ভিস।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৭টি স্টেশনের মধ্যে তিনটি আইকনিক স্টেশন। জাপানের আদলে তৈরি হচ্ছে এসব স্টেশন। নান্দনিক এসব স্টেশনে থাকছে যাত্রীদের অত্যাধুনিক সেবার সব সুবিধা। স্থায়ী পাস ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। অন্য স্টেশনগুলোতে থাকছে বিপণিবিতান, সময় কাটানোর হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ ও বিনোদন কেন্দ্র। অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধীদের ওঠানামার জন্য থাকছে লিফট, সঙ্গে এক্সেলেটরও। ভ্রমণের জন্য থাকছে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের র্যাপিড পাস।
মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। তবে গ্রিড বিপর্যয় হলেও তাতে বন্ধ হবে না। ট্রেন চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য উত্তরার ডিপোয় সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল ডিপোতে একটি পরিচালন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কখন থামবে অথবা কত গতিতে চলবে এসব স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ঠিক করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল একটি পরীক্ষিত যাতায়াতমাধ্যম। এটিকে বহুল ব্যবহৃত করতে চাইলে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি একটু বিবেচনা করা উচিত। এখন যে ভাড়া আছে সেটি যারা প্রাইভেট কারে যাতায়াত করে তাদের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু শুধু প্রাইভেট কারের যাত্রীরা যদি এটি ব্যবহার করে, অন্য মাধ্যমে যারা যাতায়াত করে তারা না চড়লে যানজটের সমস্যা সমাধান হবে না।’ তিনি মনে করেন, মোটরসাইকেলের যাত্রীদের টার্গেট করা উচিত। এ বাহনটি ৬০ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে। তাদের দিক বিবেচনা করে হলেও যদি ভাড়া সমন্বয় করে কিছুটা কমানো যায় তাহলে ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর আশপাশে যেন অন্য যানবাহনের যানজট লেগে না থাকে সেগুলোও মনিটরিং করা দরকার। সব স্টেশনে চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত। তাহলে সব বয়সীর মানুষ এ মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল চালু হলেও পুরো কাজ না শেষ করে অর্ধেক চালুর ফলে সেভাবে সুফল পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সরকারের উচিত মেট্রোরেলের ভাড়া কমানো। তাহলে বেশিরভাগ যাত্রী চড়বে। তাহলে যানজটও কমবে।’
প্রকল্প : ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রথমে উত্তরা (দিয়াবাড়ী) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এর মধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করায় কাজ শেষ করতে আরও প্রায় এক বছর সময় বেশি লাগতে পারে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি : গত মাস (নভেম্বর) শেষে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি হয়েছে ৮৪.২২ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫.৭৬ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ঢাকাবাসীর দিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়গুলোর বেশিরভাগ কেটে যায় যানজটে আটকা পড়ে। যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, জ্বালানি ব্যয়ও বাড়ছে। এতে অর্থনীতির অপচয় বাড়ছে। মেট্রোরেল চালু হলে কর্মঘণ্টা, যাতায়াত খরচসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাঁচবে। বছরে জাতীয় অর্র্থনীতিতে যোগ হবে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে অন্যান্য গণপরিবহনের সংখ্যা কমবে, এতে করে কমবে দুই লাখ টন কার্বন নিঃসরণ।
উত্তরা-কমলাপুর রুটে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন যা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ বা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাত্র ৩৮ মিনিটের এ যাত্রায় মানুষের সময় বাঁচবে। সাধারণত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আসতে সময় লাগে গড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা।
গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের তীব্র যানজট ও এর প্রভাবে প্রতি বছর দেশের ৩৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা লোকসান হয়। উত্তরা-কমলাপুর রুটের মেট্রোরেল চালু হলে কিছুটা হলেও লোকসান কমবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এমআরটি লাইন-৬ সম্পূর্ণ চালু হলে প্রতিদিন ভ্রমণ সময়ের ব্যয় বাঁচবে ৮ কোটি ৩৮ লাখ এবং যানবাহনের খরচ বাঁচবে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মেট্রোরেলের কারণে ট্রানজিট ব্যবস্থা বাড়বে এবং স্টেশনগুলোর আশপাশে অসংখ্য ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। উন্নত পরিবহন পরিকাঠামোর কারণে নতুন সংস্থাগুলো বিকাশের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বর্তমান ব্যবসাগুলো উপকৃত হবে। সামগ্রিকভাবে, স্টেশন ও রুটের কাছাকাছি স্থাপন করা এ ব্যবসাগুলো দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যথেষ্ট অবদান রাখবে।
মেট্রোরেলের আশপাশে মিরপুর ১১, ১২, পল্লবী এলাকা, দিয়াবাড়ীর পার্শ্ববর্তী পঞ্চবটী, উত্তরা ওয়েস্ট অ্যাভিনিউ ও বিরুলিয়া এলাকা। এসব এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস কারখানা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, খাবার প্রস্তুতকারীসহ নানা প্রতিষ্ঠান। দিয়াবাড়ীসংলগ্ন বিরুলিয়া ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এই এলাকায় জমির দামও এখন অনেক বেড়েছে।
এ ছাড়াও এই এলাকাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি বড় বেসরকারি হাসপাতালও হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের একটি হাসপাতাল করা হয়েছে দিয়াবাড়ী উত্তর এলাকায়। গ্যালাক্সি গ্রুপের একটি বড় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হচ্ছে দিয়াবাড়ীসংলগ্ন বিরুলিয়া এলাকায়।
সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের জন্য ১৩০ কিলোমিটারের রেল নেটওয়ার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতেরও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাড়বে। মেট্রোরেলের পুরো নেটওয়ার্ক চালু হলে এতে দৈনিক যাত্রী চলাচল করবে ৫০ লাখেরও বেশি। এ নেটওয়ার্কের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ চলবে মাটির নিচ দিয়ে। এটিই হবে দেশে মাটির নিচের প্রথম কোনো রেল। ইতিমধ্যে এর কাজও শুরু হয়েছে। ৩১ দশমিক ২ কিলোমিটারের এ প্রকল্পের দুটো অংশ প্রথমটি ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটারের এ অংশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। আর বাকি ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটারের অংশটি এলিভেটেড ওয়েতে নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত।
মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন নীলিমা বেগম। তিনি প্রতিদিনই নিজের কর্মস্থল আগারগাঁও সমবায় অফিসে যাতায়াত করেন। গত কয়েক বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে এ কর্মজীবী নারীকে। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকে তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।
গতকাল মঙ্গলবার নীলিমা বেগমের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তিনি বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। যানবাহনের চরম সংকটের মধ্যে একজন মহিলা হিসেবে বেশিরভাগ সময় গণপরিবহনে উঠতে পারিনি। বাধ্য হয়ে রিকশা বা অটোরিকশায় চলাফেরা করেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। বাসা থেকে বের হয়ে খুব সহজেই মেট্রোরেল দিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারব। আমার মতো এমন হাজার হাজার কর্মজীবী মহিলা এ সুবিধা পাবেন। ভাবতেই ভালো লাগছে।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পে বসবাস করেন মমতাজ উদ্দিন। তিনি ফার্মগেট এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। গতকাল বিকেলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উন্নত দেশের মতো আমরাও মেট্রোরেলে চড়তে পারব। যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে। সময়ও বাঁচবে। এখন ব্যবস্থাপনা কেমন হয় তাও দেখার বিষয়। তবে আমার মতো অনেকেই আশাবাদী ভালোই হবে।’
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা নিয়ে নীলিমা বেগম ও মমতাজ উদ্দিনের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। বিশেষ করে উত্তরা পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের মাত্রা একটু বেশিই। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকা হয়ে যারা বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ এলাকায় যাতায়াত করবেন তারা মেট্রোরেল ব্যবহার করে যাত্রাপথের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াতের সঙ্গে কিছু এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাসহ সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) নীতিমালা তৈরি করার ক্ষেত্রে ‘লো ইমপ্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট’ নীতি অনুসরণ করা; যেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে ট্রানজিট স্টেশনের আশপাশে ধরে রাখা যায় এবং জেনট্রিফিকেশন প্রভাব সীমিত মাত্রায় রাখা যায়। মেট্রো করিডরে মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। টিওডি ডিজাইন করার সময় সাশ্রয়ী আবাসন ও সামাজিক আবাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ ছাড়া ঢাকার যোগাযোগ পরিকল্পনার সঙ্গে ভূমি ব্যবহার ও নির্মিত এলাকার ভৌত বৃদ্ধি ও ব্যবহারের ধরনকে সমন্বয় করে সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। টঙ্গী-এয়ারপোর্ট-বনানী-তেজগাঁও-কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ এ রেল করিডরে কমিউটার সার্ভিস চালু করে বিশালসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে মনে করেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,‘যোগাযোগব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের পাশাপাশি মেট্রোরেল ভূমি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখবে। মেট্রোরেলের কারণে স্টেশনের আশপাশের এলাকার ভূমি ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে, যার আলামত ইতিমধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও এলাকায় চোখে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবেই এ ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় মেট্রোরেল হওয়ার আগে যে ধরনের ও আয়শ্রেণির লোক এসব এলাকায় এর আগে বসবাস করত, তারা নতুন ও তুলনামূলক উঁচু আয়শ্রেণির মানুষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, নগর পরিকল্পনার ভাষায় যাকে বলে হয় ‘জেনট্রিফিকেশন’ বা বসবাসকারী জনসংখ্যার শ্রেণি পরিবর্তন। ফলে নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় সঠিক নীতি কৌশল প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও যথাযথ উন্নয়ন নজরদারি প্রয়োজন, যেন এই জেনট্রিফিকেশন তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং মেট্রোরেলের সুফল সব আয়শ্রেণির মানুষ পেতে পারে ও সার্বিক জনকল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।’
জানতে চাইলে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘মেট্রোরেল ঢাকাবাসীকে সুশৃঙ্খল গণপরিবহনের নতুন স্বাদ এনে দেবে। মেট্রোরেলের আশপাশের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ছোট ছোট প্লট একত্রীকরণ বা ল্যান্ড কনসোলিডেশন করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মেট্রোরেল চালু হলে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধ করা, স্টেশন অপরিচ্ছন্ন করা এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার শহরের অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে মেট্রো ব্যবস্থা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। তবে মেট্রোরেলকে কার্যকর করতে মেট্রোর পাশাপাশি সমন্বিত উপায়ে বাস সার্ভিস চালু করা এবং স্টেশনগুলোতে পর্যাপ্ত পদচারী সুবিধা ও গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ করতে ঢাকার সঙ্গে কাছাকাছি দূরত্বের আঞ্চলিক শহরগুলোর দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রো স্টেশনের ৫০০ মিটারের মধ্যে ভবনের আকার-আয়তন-ব্যবহার সুনির্দিষ্টকরণ করা দরকার, যেন এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা, উন্নয়নের মাত্রা এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য টেকসই ও এলাকার ভারবহন ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। মেট্রো স্টেশনের ৫০০ মিটার প্রভাব বলয়ে বেসরকারি অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট প্রকল্পে বাধ্যতামূলক সাশ্রয়ী আবাসনের মাধ্যমে নিম্নবিত্তদের জন্য আবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি করা দরকার।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) প্রকল্পের পরামর্শক ড. আফসানা হক বলেন, ‘মেট্রোরেলের আশপাশের ভূমি ব্যবহার এবং স্টেশন প্লাজাকেন্দ্রিক পরিকল্পনার যে উদ্যোগ এখন নেওয়া হচ্ছে, তা কয়েক বছর আগেই শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে সন্নিহিত পাড়া-মহল্লার বৈশিষ্ট্য ও ধরন অনুযায়ী স্টেশনগুলোর ডিজাইনে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আনা দরকার।’
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মো. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মেট্রোরেল চালাতে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দেওয়া লাগে। বাংলাদেশে মেট্রোরেলে ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে এবং যাত্রীদের জন্য ভাড়া সহনীয় ও সাশ্রয়ী করতে মেট্রো স্টেশনে বিজ্ঞাপন এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকা সুনির্দিষ্ট করে লিজ দেওয়াসহ বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।’
পদ্মা সেতুর পরে যোগাযোগ খাতে আরও একটি বড় সাফল্য মেট্রোরেল। তারপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেল। এগুলোকে ‘ক্যাশ’ করে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দোদুল্যমান ভোটে ভাগ বসাতে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন করেছে। এ কথা অকপটে স্বীকার করবে যে কেউ।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে মানুষ দেখতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে থাকলে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কী করে। ফলে আমরা যা করেছি তা নিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইব। মানুষ নিশ্চয়ই এর প্রতিদান দেবে।’
দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বড় অংশের ভোট নির্দিষ্ট। কেউ আওয়ামী লীগের দিকে কেউ বিএনপিসহ অন্যান্য দলের। এ ক্ষেত্রে দোদুল্যমান ভোটই বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। এ ভোট যে দলের বাক্সে যায়, সে দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ কারণে সব দলেরই লক্ষ্য থাকে দোদুল্যমান ভোট নিজেদের পক্ষে টানার।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে থাকা দোদুল্যমান ভোট পক্ষে রাখতে গত ১৪ বছর সরকার যেসব উন্নয়নকাজ করেছে, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর জন্য প্রচার-প্রচারণায় নানামুখী পদক্ষেপ নেবে দলটি। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর যে সুফল জনগণ ভোগ করবে, সেটা জাতীয় নির্বাচনের সময় দলীয় প্রচারে গুরুত্ব দেবে ক্ষমতাসীনরা।
ওই নেতারা বলছেন, সরকারের উন্নয়নের প্রচার দিয়ে দোদুল্যমান ভোটের বড় অংশটি নৌকার পক্ষে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আওয়ামী লীগের। ভোটের মাঠে দলকে আলোচনায় রাখতে চাই মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো সরকারের বড় সাফল্যকে। মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব না হলেও আজ বুধবার আংশিক উদ্বোধন করছে সরকার। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে সেটা উদ্বোধন করা হবে নির্বাচনের আগেই।
যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের গুরুত্ব ও সুবিধা তুলে ধরে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ ভোট চাইবে, এ কথা জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নিশ্চয়ই জনগণ তাদের খালি হাতে ফেরাবে না এটা বিশ্বাস করেন তারা। সে জন্য উন্নয়ন প্রচারের দিকে বেশি জোর দিচ্ছেন নেতারা। মেট্রোরেলের পুরো কাজ শেষ করে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার মধ্য দিয়ে ভোটের মাঠে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে চায় আওয়ামী লীগ।
নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করার মধ্য দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে সরকার নজির স্থাপন করেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেট্রোরেল আংশিক উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে জনগণের মনোভাব দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তাই ‘টেস্ট কেইস’ ধরে নিয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হচ্ছে। পাশাপশি এ ধরনের পরিবহনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোও জানা সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে টানেল ও মেট্রোরেল প্রকল্প উদ্বোধন করার চিন্তা ছিল। তার আগে মেট্রোরেল আংশিক উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনের আগে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধনে অনেক বড় আয়োজন থাকবে। যাতে সারা দেশের মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। সর্বস্তরে আলোচনা তৈরি হয়।
ওই নেতারা বলেন, রাজধানীর উন্নয়ন মানুষের চোখে পড়ে বেশি। গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পায় ঢাকার উন্নয়ন। তাই শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নে আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জের উন্নয়নেও অগ্রধিকার দেয় সরকার।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা আরও বলেন, যোগাযোগব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় উন্নয়ন পদ্মা সেতু হলেও নির্বাচনের অনেক আগে উদ্বোধন হয় এই সেতু। ফলে মানুষের আলোচনায় কম থাকবে পদ্মা সেতু। তবুও পদ্মা সেতু আলোচনায় রাখার পাশাপাশি মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলকে নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাঁচ বছর পর নির্বাচনে মানুষ হিসাব নেয়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে জনগণের কাছে পরীক্ষা দেবে আওয়ামী লীগ। আমরা বিশ্বাস করি, সে পরীক্ষায় আমরাই উত্তীর্ণ হব।’
স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরদিন থেকে রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে। ঢাকার নারকীয় পরিবেশের গণপরিবহনব্যবস্থা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে ঢাকা মেট্রোরেল এমআরটি-৬ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে শুরুর দীর্ঘ ১০ বছর পর এই প্রকল্পের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে চালু করা হচ্ছে মেট্রোরেল।
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও দীর্ঘদিনের নারকীয় পরিবেশে যাতায়াতের কারণে নগরজীবন এক প্রকার বিষিয়ে উঠেছে। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে গণপরিবহন চলাচলে স্বস্তির দরজা খুলবে।
আমাদের দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও চলাচল এই প্রথম। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোনো অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ নেই। এহেন পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এম এন সিদ্দিককে এই মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেট্রোরেল নির্মাণে অনভিজ্ঞতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ খোঁজখবর নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমাদের দেশীয় বহু অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেত। এতে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি বহু সময় আগে এই প্রকল্প চালু করা যেত।
সম্প্রতি নির্মিত এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি মেট্রোরেলের নির্মাণ ও ব্যয় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কলকাতা ও দিল্লি মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় কম হওয়ায় এসব রেলে ভাড়াও কম। এ দুটি রেল নির্মাণে ঢাকা থেকে বহুগুণে কম ব্যয় হয়েছে। যদিও এ দুটি মেট্রোরেল বহু আগে নির্মিত হয়েছে। তবে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নর্থ-সাউথ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মিত ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে লাইন-২এ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালে নির্মিত ভারতের দিল্লি লাইন-১ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে নির্মিত পাকিস্তানের লাহোর অরেঞ্জ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ ঢাকা উত্তরা থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
কর্তৃপক্ষের অনভিজ্ঞতার কারণে কোনো প্রকার সমীক্ষা বা গবেষণা ছাড়া কেবলমাত্র এশিয়ার সর্বোচ্চ ব্যয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের যাবতীয় খরচ যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে চড়া দামে উশুলের লক্ষ্যে এবং বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার মানসে ঢাকার মেট্রোরেলে সর্বোচ্চ হারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মেট্রোরেলে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আশপাশের দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। ফলে রাজধানীর বেসরকারি বাসের দ্বিগুণ এশিয়ার দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ২ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি বাড়তি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিবহন সেক্টরের অন্যতম স্টেকহোল্ডার যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব বাদ দিয়ে বেসরকারি বাসের মালিক ও সরকার মিলেমিশে একচেটিয়া ভাড়া নির্ধারণের যে রেওয়াজ গড়ে উঠেছে, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতা থাকলেও এই সক্ষমতা কাজে লাগানোর মতো আমাদের নগরীতে সার্বিক অবকাঠামো নেই। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয় সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে। আমাদের এখানে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে কোনো উদ্যোগ ছাড়া। আমাদের উত্তরাঞ্চলের ১৬ থেকে ১৮ জেলার সংযোগস্থল আব্দুল্লাহপুর। অথচ মেট্রো শুরুর স্টেশন করা হয়েছে দিয়াবাড়ি।
একজন যাত্রী আব্দুল্লাহপুর থেকে অনায়াসে মহাখালী বা ফার্মগেট পৌঁছে যাবে। উত্তরা থেকে মতিঝিলের বাস ভাড়া ৫০ টাকা আর মেট্রোরেলের ভাড়া ১০০ টাকা। এহেন কারণে সাধারণ মানুষ এবং নিয়মিত যাত্রীরা মেট্রোরেল বিমুখ হতে পারে। এ ছাড়া টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর থেকে সিংহভাগ যাত্রী মহাখালী, ফার্মগেট ও মতিঝিলের পথে যাতায়াত করে। ফলে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশে চালু হওয়া মেট্রো চালুর কয়েক মাস পর যাত্রীর সংকট দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে মেট্রোরেলের ভাড়া কমানোর পাশাপাশি নিয়মিত যাত্রীদের মাসিক কার্ডে বিশেষ সাবসিডি প্রদান, বন্ধের দিনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ভাড়ার হার নির্ধারণ, মেট্রো থেকে নামার পর হাঁটার পরিবেশ তৈরির জন্য ফুটপাত পরিষ্কার রাখা, কানেক্টিং রোডে পর্যাপ্ত বাস ও অন্যান্য গণপরিবহনের ব্যবস্থা রাখা, বিশেষ বিশেষ স্টেশনগুলোতে কার ও বাইসাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং মেট্রোরেলের পরিচালনা পরিষদে যাত্রী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি
ই-মেইল : [email protected]
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।