পদ্মার চরে হঠাৎ কুমির
পাবনা প্রতিনিধি | ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২১:২৯
গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি মাছধরা নৌকায় কুমিরটি হামলা করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসীর মধ্যে।
পাবনা সদর উপজেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরের গ্রাম চর কোমরপুর। পাশেই পদ্মা নদী। বর্ষার থৈ থৈ জল শুকিয়ে এখন পায়ে হাটা পথ। ধু ধু বালুচরের মাঝে ছোট ছোট খাল। এমন খালে পরিণত হওয়া নদীতে গত দশ পনেরদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি কুমির। সম্প্রতি, নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কয়েকজন জেলে প্রথম দেখতে পান কুমিরটিকে। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি মাছধরা নৌকায় কুমিরটি হামলা করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসীর মধ্যে।
চরকোমর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জামাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েকদিন আগে পদ্মা নদীর চরে বড়শি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে হঠাত কুমিরটিকে মাথা তুলতে দেখি। ভয়ে আঁতকে উঠে আমি বড়শি ফেলে দৌড়ে এসে সবাইকে খবর দেই। এরপর অনেকেই কুমিরটিকে দেখেছে। ভয়ে চরে কেউ গরু ছাগল চরাতে পারছে না, আবাদ করাও বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে চরকোমরপুর গ্রামে কুমিরের সন্ধানে গিয়ে জামাল হোসেনের বক্তব্যের সত্যতা মেলে। প্রায় এক ঘণ্টা নৌকায় পদ্মা নদীতে ঘুরে দেখা পাওয়া যায় আটকে পড়া কুমিরের। প্রায় ছয় ফুট লম্বা কুমিরটিকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় শুকিয়ে খালে পরিণত হওয়া পদ্মার জলে।
স্থানীয়রা জানান, কুমিরের ভয়ে নদীতীরে কৃষিকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রামবাসী। গবাদি পশু ও শিশুদের নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। একাধিকবার অতি উৎসাহীরা কুমিরটিকে হত্যার উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয় জেলেরা জানান, কখনো নদী পাড়ে চরে বিশ্রামও নিতে ওঠে কুমিরটি। এ কারণে চরের জমিতে আবাদে ভয় পাচ্ছেন কৃষকেরা। গরু বাছুরও নিয়ে আসছেন না কেউ।
কুমির আতঙ্কে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। গত সপ্তাহে নৌকা নিয়ে আবু তালেব নামের একজন জেলে মাছ ধরতে গেলে কুমিরের হামলার শিকার হন। হাতের বৈঠা দিয়ে কুমিরটিকে সরিয়ে কোনমতে প্রাণ নিয়ে ফেরেন তিনি।
আবু তালেব জানান, বেশ কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পর এখন কিছুটা সুস্থ তিনি। ভয়ঙ্কর সে অভিজ্ঞতার কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। কুমিরটি খুবই ক্ষুধার্ত, তাই প্রচণ্ড হিংস্র হয়ে আছে। দ্রুত তাকে না সরালে, যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে কুমিরটিকে হত্যাও করতে পারে।
সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ খবর জেনে কুমির উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, কুমির উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খবর দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে কুমিরটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। সে পর্যন্ত স্থানীয়দের ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
পাবনার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের আহবায়ক এহসান বিশ্বাস লিঠু বলেন, বন্যার স্রোতে পথভুলে দলছুট হয়ে অনেক সময় কুমির লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় তাকে উত্যক্ত না করে নিজের মত থাকতে দিতে হবে। দ্রুত কুমিরটি উদ্ধার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংরক্ষণের দাবীও জানান তিনি।
এদিকে, কুমির আটকে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, পদ্মা নদীর যে স্থানে কুমিরটি আটকা পড়েছে সেখানে তার বিচরণের জন্য যথেষ্ট পানি আছে। নদীর এ স্থানের গভীরতাও অনেক, আছে প্রচুর মাছ। ফলে কুমিরটির টিকে থাকতে কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়। আগামী বর্ষায় কুমিরটি নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে পারবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়দের আতঙ্কের বিষয়ে জানতে চাইলে, মাহবুবুর রহমান বলেন বিরক্ত না করলে কুমিরটি কারো ক্ষতি করবে না। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
পাবনা প্রতিনিধি | ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২১:২৯

পাবনা সদর উপজেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরের গ্রাম চর কোমরপুর। পাশেই পদ্মা নদী। বর্ষার থৈ থৈ জল শুকিয়ে এখন পায়ে হাটা পথ। ধু ধু বালুচরের মাঝে ছোট ছোট খাল। এমন খালে পরিণত হওয়া নদীতে গত দশ পনেরদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি কুমির। সম্প্রতি, নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কয়েকজন জেলে প্রথম দেখতে পান কুমিরটিকে। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি মাছধরা নৌকায় কুমিরটি হামলা করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসীর মধ্যে।
চরকোমর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জামাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েকদিন আগে পদ্মা নদীর চরে বড়শি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে হঠাত কুমিরটিকে মাথা তুলতে দেখি। ভয়ে আঁতকে উঠে আমি বড়শি ফেলে দৌড়ে এসে সবাইকে খবর দেই। এরপর অনেকেই কুমিরটিকে দেখেছে। ভয়ে চরে কেউ গরু ছাগল চরাতে পারছে না, আবাদ করাও বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে চরকোমরপুর গ্রামে কুমিরের সন্ধানে গিয়ে জামাল হোসেনের বক্তব্যের সত্যতা মেলে। প্রায় এক ঘণ্টা নৌকায় পদ্মা নদীতে ঘুরে দেখা পাওয়া যায় আটকে পড়া কুমিরের। প্রায় ছয় ফুট লম্বা কুমিরটিকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় শুকিয়ে খালে পরিণত হওয়া পদ্মার জলে।
স্থানীয়রা জানান, কুমিরের ভয়ে নদীতীরে কৃষিকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রামবাসী। গবাদি পশু ও শিশুদের নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। একাধিকবার অতি উৎসাহীরা কুমিরটিকে হত্যার উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয় জেলেরা জানান, কখনো নদী পাড়ে চরে বিশ্রামও নিতে ওঠে কুমিরটি। এ কারণে চরের জমিতে আবাদে ভয় পাচ্ছেন কৃষকেরা। গরু বাছুরও নিয়ে আসছেন না কেউ।
কুমির আতঙ্কে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। গত সপ্তাহে নৌকা নিয়ে আবু তালেব নামের একজন জেলে মাছ ধরতে গেলে কুমিরের হামলার শিকার হন। হাতের বৈঠা দিয়ে কুমিরটিকে সরিয়ে কোনমতে প্রাণ নিয়ে ফেরেন তিনি। আবু তালেব জানান, বেশ কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পর এখন কিছুটা সুস্থ তিনি। ভয়ঙ্কর সে অভিজ্ঞতার কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। কুমিরটি খুবই ক্ষুধার্ত, তাই প্রচণ্ড হিংস্র হয়ে আছে। দ্রুত তাকে না সরালে, যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে কুমিরটিকে হত্যাও করতে পারে।
সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ খবর জেনে কুমির উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, কুমির উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খবর দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে কুমিরটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। সে পর্যন্ত স্থানীয়দের ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
পাবনার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের আহবায়ক এহসান বিশ্বাস লিঠু বলেন, বন্যার স্রোতে পথভুলে দলছুট হয়ে অনেক সময় কুমির লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় তাকে উত্যক্ত না করে নিজের মত থাকতে দিতে হবে। দ্রুত কুমিরটি উদ্ধার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংরক্ষণের দাবীও জানান তিনি।
এদিকে, কুমির আটকে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, পদ্মা নদীর যে স্থানে কুমিরটি আটকা পড়েছে সেখানে তার বিচরণের জন্য যথেষ্ট পানি আছে। নদীর এ স্থানের গভীরতাও অনেক, আছে প্রচুর মাছ। ফলে কুমিরটির টিকে থাকতে কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়। আগামী বর্ষায় কুমিরটি নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে পারবে বলেও জানান তিনি। স্থানীয়দের আতঙ্কের বিষয়ে জানতে চাইলে, মাহবুবুর রহমান বলেন বিরক্ত না করলে কুমিরটি কারো ক্ষতি করবে না। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে।