নড়িয়ায় মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে বাড়িছাড়া ২৫ পরিবার
শরীয়তপুর প্রতিনিধি | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১০:৪০
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মিন্টু ছৈয়াল (২৫) বাহিনীর ভয়ে আট মাস ধরে ২৫টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত মিন্টু ছৈয়াল একই গ্রামের মৃত ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, নড়িয়া উপজেলায় ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামের আরশেদ আলী ছৈয়ালের ছেলে ইয়াকুব ছৈয়াল (৫৫) ২০১৯ সালের ১০ জুন সকাল পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে কলাবাগান যাচ্ছিলেন। চান্দনী আবু সিদ্দিক ঢালীর বাড়ির সামনের পাকা সড়কে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পথরোধ করে বোমা নিক্ষেপ করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ইয়াকুব ছৈয়ালকে।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ইয়াকুবকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা প্রেরণ করে। ঢাকা নেওয়ার সময় ইয়াকুবের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ শিকদারকে প্রধান আসামি করে ও তার পরিবারের ১৪ জনসহ ২২জনকে আসামি করে ১১ জুন নড়িয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে মিন্টু ছৈয়াল (৩৩)।
ইয়াকুব হত্যার পর জুয়েল খান, আউয়াল মুন্সী, রিয়াজুল ছৈয়াল, শহিদুল ছৈয়াল, রুবেল মুন্সী, মোহাম্মদ আলী ছৈয়াল, নজু ছৈয়াল, রাব্বি বেপারীসহ ২৫/৩০ নিয়ে বাহিনী বানিয়েছেন মিন্টু ছৈয়াল।
এই বাহিনীর ভয়ে আট মাস ধরে অন্যত্র বাস করছেন চান্দনী গ্রামের নিরীহ প্রায় ২৫টি পরিবার। যারা ইয়াকুব হত্যা মামলায় জড়িত নয়। ওই নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুটপাট-পুড়িয়ে দেওয়া ও মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে মিন্টু বাহিনী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নানা ধরনের অপকর্মের জন্য বাহিনী গঠন করেছেন মিন্টু ছৈয়াল। মিন্টুর বিভিন্ন অপকর্মে কেউ বাধা দিলে কিংবা থানা-পুলিশকে জানালে নেমে আসে নির্যাতন। মিন্টুর ও তার বাহিনীর ভয়ে চান্দনী গ্রামের অলিম উদ্দীন ঢালী, খলিল ঢালী, জলিল ঢালী, ঢালীসহ ২৫টি পরিবারের প্রায় ১৫০ জন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নাদিয়া জানায়, সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মিন্টুদের ভয়ে কয়েক মাস ধরে সে ও তার বাবা-মা, ভাই-বোন বাড়িতে আসতে পারে না। সে স্কুলে যেতে পারে না। তারা অন্যত্র ভাড়া বাসায় থাকে। তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পথে।
ভুক্তভোগী অলিম উদ্দিন ঢালী বলেন, আমাদের গ্রামে একটি হত্যার ঘটনা ঘটে । কে বা কারা হত্যা করেছে তাও জানি না। আমরা ওই হত্যার মামলার আসামিও না। কিন্তু ঘটনার পর মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আট মাস ধরে নিজ গ্রাম ছেড়ে পরিবার নিয়ে শ্বশুর বাড়ি নড়িয়া ডিঙ্গামানিক গ্রামে থাকি। কত দিন অন্যের বাড়িতে থাকা যায়?
গ্রামবাসী জানায়, হামলা, লুটপাট, মাদক ও বিভিন্ন অপকর্ম করে মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর লোকজন। বাহিনীর ভয়ে কেউ কোনো কথা বলে না।
ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ শিকদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম শিকদার বলেন, ২০১৯ সালের ১০ জুন চান্দনী গ্রামে একটি সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে ইয়াকুব ছৈয়াল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় আমিসহ আমাদের পরিবারের ১৪ জনসহ ২২জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা হয়। সেই মিথ্যা মামলায় পাঁচ মাস জেল খেটেছি। মামলার আসামি সবাই জামিনে আছি।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চান্দনী গ্রামের নিরীহ ২৫টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করেছে মিন্টু ও তার বাহিনী। যারা মামলার আসামি নয়। ওই বাহিনীর ভয়ে গ্রামে ফিরতে পারছে না পরিবারগুলো। গ্রামছাড়া পরিবারগুলো যাতে বাড়ি ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি।
এ বিষয়ে মিন্টু ছৈয়াল মোবাইল ফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো মিথ্যা অভিযোগ করছে ওরা। তাদের বাড়িতে আসতে আমি না করার কে? আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি কোন ঝামেলার ভেতরে যাই না।
জানতে চাইলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। খবর নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
শরীয়তপুর প্রতিনিধি | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১০:৪০

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মিন্টু ছৈয়াল (২৫) বাহিনীর ভয়ে আট মাস ধরে ২৫টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত মিন্টু ছৈয়াল একই গ্রামের মৃত ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, নড়িয়া উপজেলায় ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামের আরশেদ আলী ছৈয়ালের ছেলে ইয়াকুব ছৈয়াল (৫৫) ২০১৯ সালের ১০ জুন সকাল পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে কলাবাগান যাচ্ছিলেন। চান্দনী আবু সিদ্দিক ঢালীর বাড়ির সামনের পাকা সড়কে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পথরোধ করে বোমা নিক্ষেপ করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ইয়াকুব ছৈয়ালকে।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ইয়াকুবকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা প্রেরণ করে। ঢাকা নেওয়ার সময় ইয়াকুবের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ শিকদারকে প্রধান আসামি করে ও তার পরিবারের ১৪ জনসহ ২২জনকে আসামি করে ১১ জুন নড়িয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে মিন্টু ছৈয়াল (৩৩)।
ইয়াকুব হত্যার পর জুয়েল খান, আউয়াল মুন্সী, রিয়াজুল ছৈয়াল, শহিদুল ছৈয়াল, রুবেল মুন্সী, মোহাম্মদ আলী ছৈয়াল, নজু ছৈয়াল, রাব্বি বেপারীসহ ২৫/৩০ নিয়ে বাহিনী বানিয়েছেন মিন্টু ছৈয়াল।
এই বাহিনীর ভয়ে আট মাস ধরে অন্যত্র বাস করছেন চান্দনী গ্রামের নিরীহ প্রায় ২৫টি পরিবার। যারা ইয়াকুব হত্যা মামলায় জড়িত নয়। ওই নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুটপাট-পুড়িয়ে দেওয়া ও মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে মিন্টু বাহিনী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নানা ধরনের অপকর্মের জন্য বাহিনী গঠন করেছেন মিন্টু ছৈয়াল। মিন্টুর বিভিন্ন অপকর্মে কেউ বাধা দিলে কিংবা থানা-পুলিশকে জানালে নেমে আসে নির্যাতন। মিন্টুর ও তার বাহিনীর ভয়ে চান্দনী গ্রামের অলিম উদ্দীন ঢালী, খলিল ঢালী, জলিল ঢালী, ঢালীসহ ২৫টি পরিবারের প্রায় ১৫০ জন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নাদিয়া জানায়, সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মিন্টুদের ভয়ে কয়েক মাস ধরে সে ও তার বাবা-মা, ভাই-বোন বাড়িতে আসতে পারে না। সে স্কুলে যেতে পারে না। তারা অন্যত্র ভাড়া বাসায় থাকে। তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পথে।
ভুক্তভোগী অলিম উদ্দিন ঢালী বলেন, আমাদের গ্রামে একটি হত্যার ঘটনা ঘটে । কে বা কারা হত্যা করেছে তাও জানি না। আমরা ওই হত্যার মামলার আসামিও না। কিন্তু ঘটনার পর মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আট মাস ধরে নিজ গ্রাম ছেড়ে পরিবার নিয়ে শ্বশুর বাড়ি নড়িয়া ডিঙ্গামানিক গ্রামে থাকি। কত দিন অন্যের বাড়িতে থাকা যায়?
গ্রামবাসী জানায়, হামলা, লুটপাট, মাদক ও বিভিন্ন অপকর্ম করে মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর লোকজন। বাহিনীর ভয়ে কেউ কোনো কথা বলে না।
ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ শিকদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম শিকদার বলেন, ২০১৯ সালের ১০ জুন চান্দনী গ্রামে একটি সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে ইয়াকুব ছৈয়াল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় আমিসহ আমাদের পরিবারের ১৪ জনসহ ২২জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা হয়। সেই মিথ্যা মামলায় পাঁচ মাস জেল খেটেছি। মামলার আসামি সবাই জামিনে আছি।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চান্দনী গ্রামের নিরীহ ২৫টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করেছে মিন্টু ও তার বাহিনী। যারা মামলার আসামি নয়। ওই বাহিনীর ভয়ে গ্রামে ফিরতে পারছে না পরিবারগুলো। গ্রামছাড়া পরিবারগুলো যাতে বাড়ি ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি।
এ বিষয়ে মিন্টু ছৈয়াল মোবাইল ফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো মিথ্যা অভিযোগ করছে ওরা। তাদের বাড়িতে আসতে আমি না করার কে? আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি কোন ঝামেলার ভেতরে যাই না।
জানতে চাইলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। খবর নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।