করোনার প্রভাবে প্রতিদিন মারা পড়ছে ২ লাখ বাচ্চা, কোটি টাকা লোকসান
যশোর প্রতিনিধি | ২৬ মার্চ, ২০২০ ২১:৪৯
যশোরের একটি পোলট্রি খামার। ছবি: দেশ রূপান্তর
করোনার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে পোলট্রি শিল্পে। বিক্রি না হওয়ায় যশোরাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ মুরগির বাচ্চা মারা পড়ছে। এসব বাচ্চা দ্রুততম সময়ে হ্যাচারি থেকে খামারে স্থান্তারিত না হওয়ায় মারা পড়ছে বলে জানিয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। তারা বলছেন, ৩২ টাকা খরচে উৎপাদিত প্রতিটি বাচ্চা ফ্রি দিলেও খামারিরা নিতে চাচ্ছেন না।
যশোরাঞ্চলে আফিল হ্যাচারি, কাজী হ্যাচারিসহ ছোট-বড় পাঁচটি হ্যাচারিতে প্রতিদিন চার লাখ বাচ্চা উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদনে হ্যাচারি মালিকদের খরচ হয় ৩২ টাকা। করোনার প্রভাবে পোলট্রি মুরগির বিকিকিনিতে এক প্রকার ধস নেমেছে। হ্যাচারি থেকে খামারিরা বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। যশোরের সবচেয়ে বেশি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রো লিমিটেড প্রতিদিন এক লাখের বেশি বাচ্চা উৎপাদন করে।
এ ফার্মের টেকনিক্যাল ম্যানেজার তোফায়েল আহমেদ জানান, ডিম পাড়ানোর চার মাস আগে একটি মুরগি প্রস্তুত করা হয়। এ মুরগি টানা দেড় বছর ডিম দেয়। প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২১ দিনের ডিম ইনকিউবেটর মেশিনে চাপাতে হয়। এক দিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি করা হয়। বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হয়। আবার উৎপাদন প্রক্রিয়া একবার বন্ধ করলে ফের চালু করা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। সে ড়্গেত্রে হ্যাচারি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানটি শত শত কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়বে।
পোলট্রি শিল্পের সবচেয়ে বড় বিপণন প্রতিষ্ঠান তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) খন্দকার ইদ্রিস হাসান জানান, এক দিন বয়সী প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদন খরচ ৩২ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক টাকারও কম। তাও আবার ক্রেতা খুঁজে আনতে হচ্ছে। শুধু বাচ্চা নয়, লেয়ার মুরগির ডিম ও পোলট্রি ফিডেও এর প্রভাব পড়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, যশোরাঞ্চলে আফিল, কাজী, চিফ, প্রভিটা ও প্যারাগনের ফিড মিল রয়েছে। এসব মিলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টন ফিড উৎপাদিত হয়। চাহিদা কমে যাওয়ায় ফিডের বিকিকিনিও কমে গেছে।
তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের উপব্যবস্থাপক (ব্রয়লার) আবদুল মুকিত জানান, যশোরাঞ্চলের এক হাজার খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১১ লাখ কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে শুধু আফিল ফার্ম থেকে উৎপাদিত হয় দিনে ২৫ হাজার কেজি। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা। বর্তমানে বাজার পড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজারও পড়তির দিকে বলে জানান তিনি। যশোরাঞ্চলে প্রতিদিন পাঁচ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে আফিল ফার্ম উৎপাদন করে চার লাখ। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ সাড়ে সাত টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা।
লোকসানে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধের অিন্তম পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আফিল এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মাহাবুব আলম লাবলু। তিনি এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম মোল্লা জানান, করোনার প্রভাবে যশোরাঞ্চলে পোলট্রি শিল্পে আঘাত পড়েছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, পোলট্রির মাংস ও ডিম খেলে কোনো ক্ষতি নেই। বরং উপকার। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু লোক পোলট্রির মাংস নিয়ে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি সবাইকে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
যশোর প্রতিনিধি | ২৬ মার্চ, ২০২০ ২১:৪৯

করোনার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে পোলট্রি শিল্পে। বিক্রি না হওয়ায় যশোরাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ মুরগির বাচ্চা মারা পড়ছে। এসব বাচ্চা দ্রুততম সময়ে হ্যাচারি থেকে খামারে স্থান্তারিত না হওয়ায় মারা পড়ছে বলে জানিয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। তারা বলছেন, ৩২ টাকা খরচে উৎপাদিত প্রতিটি বাচ্চা ফ্রি দিলেও খামারিরা নিতে চাচ্ছেন না।
যশোরাঞ্চলে আফিল হ্যাচারি, কাজী হ্যাচারিসহ ছোট-বড় পাঁচটি হ্যাচারিতে প্রতিদিন চার লাখ বাচ্চা উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদনে হ্যাচারি মালিকদের খরচ হয় ৩২ টাকা। করোনার প্রভাবে পোলট্রি মুরগির বিকিকিনিতে এক প্রকার ধস নেমেছে। হ্যাচারি থেকে খামারিরা বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। যশোরের সবচেয়ে বেশি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রো লিমিটেড প্রতিদিন এক লাখের বেশি বাচ্চা উৎপাদন করে।
এ ফার্মের টেকনিক্যাল ম্যানেজার তোফায়েল আহমেদ জানান, ডিম পাড়ানোর চার মাস আগে একটি মুরগি প্রস্তুত করা হয়। এ মুরগি টানা দেড় বছর ডিম দেয়। প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২১ দিনের ডিম ইনকিউবেটর মেশিনে চাপাতে হয়। এক দিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি করা হয়। বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হয়। আবার উৎপাদন প্রক্রিয়া একবার বন্ধ করলে ফের চালু করা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। সে ড়্গেত্রে হ্যাচারি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানটি শত শত কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়বে।
পোলট্রি শিল্পের সবচেয়ে বড় বিপণন প্রতিষ্ঠান তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) খন্দকার ইদ্রিস হাসান জানান, এক দিন বয়সী প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদন খরচ ৩২ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক টাকারও কম। তাও আবার ক্রেতা খুঁজে আনতে হচ্ছে। শুধু বাচ্চা নয়, লেয়ার মুরগির ডিম ও পোলট্রি ফিডেও এর প্রভাব পড়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, যশোরাঞ্চলে আফিল, কাজী, চিফ, প্রভিটা ও প্যারাগনের ফিড মিল রয়েছে। এসব মিলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টন ফিড উৎপাদিত হয়। চাহিদা কমে যাওয়ায় ফিডের বিকিকিনিও কমে গেছে।
তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের উপব্যবস্থাপক (ব্রয়লার) আবদুল মুকিত জানান, যশোরাঞ্চলের এক হাজার খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১১ লাখ কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে শুধু আফিল ফার্ম থেকে উৎপাদিত হয় দিনে ২৫ হাজার কেজি। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা। বর্তমানে বাজার পড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজারও পড়তির দিকে বলে জানান তিনি। যশোরাঞ্চলে প্রতিদিন পাঁচ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে আফিল ফার্ম উৎপাদন করে চার লাখ। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ সাড়ে সাত টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা।
লোকসানে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধের অিন্তম পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আফিল এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মাহাবুব আলম লাবলু। তিনি এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম মোল্লা জানান, করোনার প্রভাবে যশোরাঞ্চলে পোলট্রি শিল্পে আঘাত পড়েছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, পোলট্রির মাংস ও ডিম খেলে কোনো ক্ষতি নেই। বরং উপকার। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু লোক পোলট্রির মাংস নিয়ে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি সবাইকে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন।