শিবপুরে গণপিটুনিতে ২ ‘ডাকাত’ নিহত
সুমন বর্মণ, নরসিংদী | ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:০৯
নরসিংদীর শিবপুরের যোশর ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রামে বুধবার ভোরে গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহতাবস্থায় মানিক মিয়া (২৫) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। নিহত দুই ও আহত এক ব্যক্তি ডাকাত বলে জানিয়েছে পুলিশ এবং গ্রামবাসী।
নিহতরা হলেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর এলাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে সোহেল (৩০) ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামের শায়েস্তা মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া (৩৫)। আটক মানিক কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১৫ জনের একদল ডাকাত জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের হারুন, গুলজার ও কাঞ্চন নামের তিন ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি করতে যান। এ সময় তারা পরিবারের লোকজনদের জিম্মি করে কয়েক লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেন।
তাদের অভিযোগ, ডাকাতি শেষে পার্শ্ববর্তী যোশর ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রাম হয়ে পালানোর সময় গ্রামের পাহারাদারদের সন্দেহ হয়। এ সময় গ্রামবাসী জড়ো হয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা গ্রামবাসীর ওপর হামলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গ্রামবাসী পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয় এবং একজন আহত হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহতকে আটক এবং নিহতদের মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিবপুরে ডাকাতির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে গ্রামবাসী নিয়মিত পাহারা দিচ্ছেন। গত ১৫ নভেম্বর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের ভঙ্গারটেক গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই রাতে একদল ডাকাত ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। ঘরে থাকা টাকাসহ ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তারা আরো অভিযোগ করেন, পর দিন ১৬ নভেম্বর রাতে একই ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়িতে ও নৌকা ঘাটা গ্রামের এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ছাড়া জয়নগর ইউনিয়নের ভেড়ামারা এলাকার রশিদ মীর ও মনির মীরের বাড়ি, গিলাবের গ্রামের বাসু ও মোক্তারের বাড়ি এবং কুমারটেক এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়।
জয়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাদিম সরকার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ইউনিয়নে কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনো ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে গ্রামবাসী ডাকাত থেকে রক্ষা পেতে রাতে নিজেরা পাহারা দিচ্ছে।
শিবপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবুল কালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আটক মানিক মিয়াকে আমাদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাকাতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমরা। এ ঘটনায় ডাকাতির শিকার গুলজার বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। নিহত ও আহত ডাকাতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতি ও নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা আছে।
ওসি জানান, ডাকাতের এই দলটিই উপজেলার বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। তারা উপজেলার বাইরে থেকে এসে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। এ জন্য রাতে প্রতিটি গ্রামে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি ডাকাতদের মোকাবিলায় পাহারারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুবই দ্রুত সব ডাকাতির রহস্য উদ্ঘাটন করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি আবুল কালাম।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
সুমন বর্মণ, নরসিংদী | ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:০৯

নরসিংদীর শিবপুরের যোশর ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রামে বুধবার ভোরে গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহতাবস্থায় মানিক মিয়া (২৫) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। নিহত দুই ও আহত এক ব্যক্তি ডাকাত বলে জানিয়েছে পুলিশ এবং গ্রামবাসী।
নিহতরা হলেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর এলাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে সোহেল (৩০) ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামের শায়েস্তা মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া (৩৫)। আটক মানিক কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১৫ জনের একদল ডাকাত জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের হারুন, গুলজার ও কাঞ্চন নামের তিন ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি করতে যান। এ সময় তারা পরিবারের লোকজনদের জিম্মি করে কয়েক লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেন।
তাদের অভিযোগ, ডাকাতি শেষে পার্শ্ববর্তী যোশর ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রাম হয়ে পালানোর সময় গ্রামের পাহারাদারদের সন্দেহ হয়। এ সময় গ্রামবাসী জড়ো হয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা গ্রামবাসীর ওপর হামলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গ্রামবাসী পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয় এবং একজন আহত হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহতকে আটক এবং নিহতদের মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিবপুরে ডাকাতির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে গ্রামবাসী নিয়মিত পাহারা দিচ্ছেন। গত ১৫ নভেম্বর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের ভঙ্গারটেক গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই রাতে একদল ডাকাত ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। ঘরে থাকা টাকাসহ ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তারা আরো অভিযোগ করেন, পর দিন ১৬ নভেম্বর রাতে একই ইউনিয়নের মুরগীবেড় গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়িতে ও নৌকা ঘাটা গ্রামের এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ছাড়া জয়নগর ইউনিয়নের ভেড়ামারা এলাকার রশিদ মীর ও মনির মীরের বাড়ি, গিলাবের গ্রামের বাসু ও মোক্তারের বাড়ি এবং কুমারটেক এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়।
জয়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাদিম সরকার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ইউনিয়নে কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনো ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে গ্রামবাসী ডাকাত থেকে রক্ষা পেতে রাতে নিজেরা পাহারা দিচ্ছে।
শিবপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবুল কালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আটক মানিক মিয়াকে আমাদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাকাতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমরা। এ ঘটনায় ডাকাতির শিকার গুলজার বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। নিহত ও আহত ডাকাতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতি ও নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা আছে।
ওসি জানান, ডাকাতের এই দলটিই উপজেলার বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। তারা উপজেলার বাইরে থেকে এসে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। এ জন্য রাতে প্রতিটি গ্রামে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি ডাকাতদের মোকাবিলায় পাহারারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুবই দ্রুত সব ডাকাতির রহস্য উদ্ঘাটন করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি আবুল কালাম।