কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজের কারবার সাহিদা বেগমের
অনলাইন ডেস্ক | ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ১১:৪৭
পেঁয়াজর ক্ষেতে স্বামীর সঙ্গে সাহিদা বেগম
কৃষক পরিবারের বউ হওয়ার কারণে আগে থেকেই নানা কৃষিকাজের সাথে পরিচয় ছিল সাহিদা বেগমের। শ্বশুর মূলত পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতেন কিন্তু অল্প পরিসরে। অনেকটা শখের বশেই তিনি পেঁয়াজ চাষ শুরু করেন। ২০ বছরে কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি।
ফরিদপুরের এই পেঁয়াজ চাষিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা।
সাহিদা বেগম জানান, প্রায় ১৮-১৯ বছর ধরে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করে চলেছেন তিনি। আর চলতি বছর প্রায় ২০০ মণ পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেছেন তিনি।
মৌসুমে এই বীজ মণ প্রতি ২ লাখ টাকা করে বিক্রি করেছেন। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বীজ বিক্রি হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা কেজি দরে।
তিনি বলেন, এখন আমাদের সিজন। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আমরা পেঁয়াজ লাগাই। অনেক লেবার থাকে। ৩০-৪০, এমনকি ৫০ জনও থাকে।
তবে বছরের এ সময়টাতে অন্য বছর আরো বেশি শ্রমিক থাকে। এবার কিছু জমির মাটিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় কাজ কিছুটা ধীরে চলছে।
এ বছর কিছু জমি নরম হয়ে গেছে। তাই কাজ কিছু বন্ধও আছে। ওগুলো শুকালে আবার কাজ শুরু হবে।"
বীজ উৎপাদনের জন্য যে পেঁয়াজ এখন লাগানো হচ্ছে তার ফলন আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে।
সাহিদা বেগম জানান, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগে ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেন তিনি। সে বছর মাত্র দুই মন বীজ উৎপাদিত হয়েছিল।
সেগুলো বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৮০ হাজার টাকা। পরের বছর আরো বেশি পরিমাণ জমিতে পেয়াজের চাষ করতে শুরু করেন তিনি। সেবছর পান ১৩ মণ বীজ।
বীজ বিক্রি করে দেখলাম যে আমি ভালই লাভবান। পরের বছর আরো জমি বাড়াইলাম। ৩২ মণ বীজ উঠলো। এভাবেই আমার ওঠা।
এরপর আর থেমে থাকেননি। সাহিদা বেগম জানান, গত বছর ১৫ একর আর চলতি বছর ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করেছিলেন। ঘরে তুলেছিলেন ২০০ মন বীজ।
অনেক শ্রম দিতে হয়, কষ্ট করতে হয়। পেঁয়াজের বীজের অনেক যত্ন করতে হয়। এখন লাগাবে, দুই দিন পর নিড়াবে (আগাছামুক্ত করা)। বার মাসই লেবার থাকে।
সাহিদা বেগম বলেন, আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করলেও অনেক সময় চাহিদা পূরণ করতে পারেন না তিনি। ফরিদপুর জেলার স্থানীয় কৃষকসহ সারাদেশে বীজ সরবরাহ করে থাকেন তারা।
তবে পেঁয়াজ চাষে খরচও কম নয় বলে জানান তিনি। পেঁয়াজের বাল্বের দাম অনেক বেশি থাকে। এছাড়া কীটনাশক, সার, সেচ দেয়ার ক্ষেত্রে খরচ বেশ ভালো পরিমাণে হয়।
এছাড়া অতিরিক্ত কুয়াশা, শীলাবৃষ্টি, ঝড়-বৃষ্টি বেশি হলেও বীজ নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান তিনি।
স্বামী ্ও দুই মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার সাহিদা বেগমের। ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী বক্তার উদ্দিন খান বীজ উৎপাদনে সাহায্য করেন তাকে।
সাহিদা বেগম নিজেই গড়ে তুলেছেন পেঁয়াজের বীজের কারখানা। সেখান থেকেই বীজ প্যাকেটজাত করা এবং ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
তার তৈরি করা বীজ ক্রেতাদের কাছে পরিচিত খান সিডস নামে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর পেঁয়াজের বীজের চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম ছিল বেশ চড়া।
প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দরে। সে হিসেবে সাহিদা বেগম প্রায় চার কোটি টাকার বেশি বীজ বিক্রি করেছেন।
ফরিদপুরের নগরকান্দা এলাকার পুরাপাড়া বাজারের কৃষিঘর বীজ ভান্ডারের মালিক মিজানুর রহমান জানান, বীজের মান ভাল হওয়ার কারণে খান সিডস থেকে ৫০০ কেজির মতো বীজ কিনেছিলেন তিনি।
ফরিদপুর জেলায় পেয়াজের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেরা চাষী হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন সাহিদা বেগম।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ফরিদপুরের অবস্থান দ্বিতীয়।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ১১:৪৭

কৃষক পরিবারের বউ হওয়ার কারণে আগে থেকেই নানা কৃষিকাজের সাথে পরিচয় ছিল সাহিদা বেগমের। শ্বশুর মূলত পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতেন কিন্তু অল্প পরিসরে। অনেকটা শখের বশেই তিনি পেঁয়াজ চাষ শুরু করেন। ২০ বছরে কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি।
ফরিদপুরের এই পেঁয়াজ চাষিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা।
সাহিদা বেগম জানান, প্রায় ১৮-১৯ বছর ধরে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করে চলেছেন তিনি। আর চলতি বছর প্রায় ২০০ মণ পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেছেন তিনি।
মৌসুমে এই বীজ মণ প্রতি ২ লাখ টাকা করে বিক্রি করেছেন। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বীজ বিক্রি হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা কেজি দরে।
তিনি বলেন, এখন আমাদের সিজন। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আমরা পেঁয়াজ লাগাই। অনেক লেবার থাকে। ৩০-৪০, এমনকি ৫০ জনও থাকে।
তবে বছরের এ সময়টাতে অন্য বছর আরো বেশি শ্রমিক থাকে। এবার কিছু জমির মাটিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় কাজ কিছুটা ধীরে চলছে।
এ বছর কিছু জমি নরম হয়ে গেছে। তাই কাজ কিছু বন্ধও আছে। ওগুলো শুকালে আবার কাজ শুরু হবে।"
বীজ উৎপাদনের জন্য যে পেঁয়াজ এখন লাগানো হচ্ছে তার ফলন আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে।
সাহিদা বেগম জানান, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগে ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেন তিনি। সে বছর মাত্র দুই মন বীজ উৎপাদিত হয়েছিল।
সেগুলো বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৮০ হাজার টাকা। পরের বছর আরো বেশি পরিমাণ জমিতে পেয়াজের চাষ করতে শুরু করেন তিনি। সেবছর পান ১৩ মণ বীজ।
বীজ বিক্রি করে দেখলাম যে আমি ভালই লাভবান। পরের বছর আরো জমি বাড়াইলাম। ৩২ মণ বীজ উঠলো। এভাবেই আমার ওঠা।
এরপর আর থেমে থাকেননি। সাহিদা বেগম জানান, গত বছর ১৫ একর আর চলতি বছর ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করেছিলেন। ঘরে তুলেছিলেন ২০০ মন বীজ।
অনেক শ্রম দিতে হয়, কষ্ট করতে হয়। পেঁয়াজের বীজের অনেক যত্ন করতে হয়। এখন লাগাবে, দুই দিন পর নিড়াবে (আগাছামুক্ত করা)। বার মাসই লেবার থাকে।
সাহিদা বেগম বলেন, আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করলেও অনেক সময় চাহিদা পূরণ করতে পারেন না তিনি। ফরিদপুর জেলার স্থানীয় কৃষকসহ সারাদেশে বীজ সরবরাহ করে থাকেন তারা।
তবে পেঁয়াজ চাষে খরচও কম নয় বলে জানান তিনি। পেঁয়াজের বাল্বের দাম অনেক বেশি থাকে। এছাড়া কীটনাশক, সার, সেচ দেয়ার ক্ষেত্রে খরচ বেশ ভালো পরিমাণে হয়।
এছাড়া অতিরিক্ত কুয়াশা, শীলাবৃষ্টি, ঝড়-বৃষ্টি বেশি হলেও বীজ নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান তিনি।
স্বামী ্ও দুই মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার সাহিদা বেগমের। ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী বক্তার উদ্দিন খান বীজ উৎপাদনে সাহায্য করেন তাকে।
সাহিদা বেগম নিজেই গড়ে তুলেছেন পেঁয়াজের বীজের কারখানা। সেখান থেকেই বীজ প্যাকেটজাত করা এবং ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
তার তৈরি করা বীজ ক্রেতাদের কাছে পরিচিত খান সিডস নামে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর পেঁয়াজের বীজের চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম ছিল বেশ চড়া।
প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দরে। সে হিসেবে সাহিদা বেগম প্রায় চার কোটি টাকার বেশি বীজ বিক্রি করেছেন।
ফরিদপুরের নগরকান্দা এলাকার পুরাপাড়া বাজারের কৃষিঘর বীজ ভান্ডারের মালিক মিজানুর রহমান জানান, বীজের মান ভাল হওয়ার কারণে খান সিডস থেকে ৫০০ কেজির মতো বীজ কিনেছিলেন তিনি।
ফরিদপুর জেলায় পেয়াজের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেরা চাষী হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন সাহিদা বেগম।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ফরিদপুরের অবস্থান দ্বিতীয়।