দুই স্কুলছাত্র হত্যায় অভিযুক্ত কিশোর গ্যাংয়ের ২৪ সদস্য
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি | ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ২৩:৪৯
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আলোচিত দুই স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বে থাকা এডিশনাল এসপি জাহেদ পারভেজ চৌধুরী।
শুক্রবার তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েকদিন আগে চাঞ্চল্যকর এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মূলত দুই দল কিশোর গ্যাংয়ের মাঝে পড়ে হত্যার শিকার হয় ওই দুজন।
দুটি গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলে তাদের পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ গুম করতে ফেলে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
জানা গেছে, গত বছরের ১০ আগস্ট বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে বন্দরের ইস্পাহানী ঘাট এলাকা থেকে বিকেলে কাজিমউদ্দিনের ছেলে জিসান (১৫) ও নাজিমউদ্দিন খানের ছেলে মিনহাজুল ইসলাম মিহাদ (১৮) নিখোঁজ হয়। রাতেই তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহত জিসানের বাবা বন্দর প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি কাজিমউদ্দিন বাদী হয়ে গ্রেপ্তার ছয় আসামিসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো আটজনকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি প্রথমে বন্দর থানা তদন্ত শুরু করে। পরে মামলাটি ডিবিতে বদলী করা হয়। ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক ফকির হাসানুজ্জামান তদন্ত শুরু করেন। এতে আটজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তারা হলো মোক্তার হোসেন, আলী আহাম্মদ, কাশেম, কাউসার, আনোয়ার হোসেন, শিপলু, মনির হোসেন, জাকির হোসেন।
মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তরা স্থানীয় দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গেছে। অভিযুক্তরা হলো আলভী, বড় শামীম, ছোট শামীম, শাকিল, সুজন, বাবু ওরফে টিঅ্যান্ডটি বাবু, নাহিদ, দেলোয়ার হোসেন বাবু, রাকিব, রয়েল, জাহান, বাবু, রবিন, সাজ্জাদ, ইমন, জয়, শান্ত, সজীব, রিয়াদ, রনি, রাজন, আবু মুসা, পাপ্পু।
তাদের সবার বাড়ি বন্দর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। আসামিদের মধ্যে আলভী, দেলোয়ার হোসেন বাবু ও আবু মুসা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ৯ আগস্ট কিছু লোক নৌকার মাঝি সুমনকে মারধর করে। কিন্তু সুমন তাদের চিনত না। ১০ আগস্ট বন্দরে আকিজ ফ্লাওয়ার মিলের সামনে একটি দোকানে আলভীর সঙ্গে থাকা অন্তর, অনিক, অনাবিল, প্রিন্স ওরফে সানি, শাহাদাত মুন্না, তোহা, আরসিমদের কাছে মাঝি সুমন বিচার দেয়। দুপুর দেড়টায় ইস্পাহানি বাজার এলাকায় পুতুল স্টুডিওতে বিচারের সময় বড় শামীম, ছোট শামীম, শাকিল, সুজন, হান্নান খান, রনি, রাকিব, নাহিদ টিএন্ডটি বাবু, বাবু, রয়েল, রবিন, জয়, শান্ত, জাহান, পাপ্পু, সজ্জাদ, সজীব, রিয়াদ, আবু মুসা, ইমন, রাজন, দেলোয়ার হোসেন বাবু ছুটে আসে। তখন উভয় পক্ষে মধ্যে বাগবিতণ্ডা ঘটে। একপর্যায়ে টিঅ্যান্ডটি বাবু নিজেই অকিলকে দুই হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে। খবর পেয়ে বড় শামীমের সরদারের ভাগিনা নাহিদা, শাকিল, সুজন, রনি, রকিব, বাবু, রয়েল, পাপ্পু, রবিন, জয়, শান্ত, জাহান, সাজ্জাদ, সজিব, রিয়াদ, আবু মুসা, ইমন, রাজন এসে অকিলকে ধরে ইস্পাহানী বাজারে নিয়ে যায়। আলী তখন ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তাকে কিল ঘুষি মারা হয়। ওই সময়ে অন্তর নিজেই শাকিলের নানা আবদুলকে আরসিমের মোবাইল দিয়ে বিষয়টি জানায়।
পরবর্তীতে আবদুল বড় শামীম ও নাহিদের কাছ থেকে অকিলকে ছুটিয়ে নিয়ে আসে। বিকেল ৩টায় অন্তর, অনিক, সানি, নাজমুল, অকিল ও আরসিম আকিজ কোম্পানীর ময়দার গেটের সামনে আসলে শামীম সরদারের ভাগিনা নাহিদ সরদার দলবল নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। ওই সময়ে আলভীর ফোন পেয়ে মিহাদ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। বিকাল সাড়ে ৪টায় বড় শামীম ও ছোট শামীম গ্রুপের লোকজন লাঠিসোটা, দা, রড নিয়ে আলভীদের ধাওয়া করে। ভয়ে তারা ইস্পাহানী ঘাটের দিকে দৌড়ে আসে।
সেখানে আলভী, মিহাদ, জিসান, তোহা, শাহাদাত হোসেন মুন্নাকে পেটানো হয়। তারা বাঁচার জন্য ইস্পাহানী ঘাটের সিড়ি থেকে লাফি দেয়। প্রিন্স, তোহা, মুন্না, জিসান, মিহাদ ঘাটে ভেড়ানো একটি নৌকায় উঠে পালানোর চেষ্টা করলে আসামীরা জিসান ও মিহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গুমের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে যায়।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি | ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ২৩:৪৯

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আলোচিত দুই স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বে থাকা এডিশনাল এসপি জাহেদ পারভেজ চৌধুরী।
শুক্রবার তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েকদিন আগে চাঞ্চল্যকর এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মূলত দুই দল কিশোর গ্যাংয়ের মাঝে পড়ে হত্যার শিকার হয় ওই দুজন।
দুটি গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলে তাদের পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ গুম করতে ফেলে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
জানা গেছে, গত বছরের ১০ আগস্ট বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে বন্দরের ইস্পাহানী ঘাট এলাকা থেকে বিকেলে কাজিমউদ্দিনের ছেলে জিসান (১৫) ও নাজিমউদ্দিন খানের ছেলে মিনহাজুল ইসলাম মিহাদ (১৮) নিখোঁজ হয়। রাতেই তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহত জিসানের বাবা বন্দর প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি কাজিমউদ্দিন বাদী হয়ে গ্রেপ্তার ছয় আসামিসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো আটজনকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি প্রথমে বন্দর থানা তদন্ত শুরু করে। পরে মামলাটি ডিবিতে বদলী করা হয়। ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক ফকির হাসানুজ্জামান তদন্ত শুরু করেন। এতে আটজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তারা হলো মোক্তার হোসেন, আলী আহাম্মদ, কাশেম, কাউসার, আনোয়ার হোসেন, শিপলু, মনির হোসেন, জাকির হোসেন।
মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তরা স্থানীয় দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গেছে। অভিযুক্তরা হলো আলভী, বড় শামীম, ছোট শামীম, শাকিল, সুজন, বাবু ওরফে টিঅ্যান্ডটি বাবু, নাহিদ, দেলোয়ার হোসেন বাবু, রাকিব, রয়েল, জাহান, বাবু, রবিন, সাজ্জাদ, ইমন, জয়, শান্ত, সজীব, রিয়াদ, রনি, রাজন, আবু মুসা, পাপ্পু।
তাদের সবার বাড়ি বন্দর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। আসামিদের মধ্যে আলভী, দেলোয়ার হোসেন বাবু ও আবু মুসা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ৯ আগস্ট কিছু লোক নৌকার মাঝি সুমনকে মারধর করে। কিন্তু সুমন তাদের চিনত না। ১০ আগস্ট বন্দরে আকিজ ফ্লাওয়ার মিলের সামনে একটি দোকানে আলভীর সঙ্গে থাকা অন্তর, অনিক, অনাবিল, প্রিন্স ওরফে সানি, শাহাদাত মুন্না, তোহা, আরসিমদের কাছে মাঝি সুমন বিচার দেয়। দুপুর দেড়টায় ইস্পাহানি বাজার এলাকায় পুতুল স্টুডিওতে বিচারের সময় বড় শামীম, ছোট শামীম, শাকিল, সুজন, হান্নান খান, রনি, রাকিব, নাহিদ টিএন্ডটি বাবু, বাবু, রয়েল, রবিন, জয়, শান্ত, জাহান, পাপ্পু, সজ্জাদ, সজীব, রিয়াদ, আবু মুসা, ইমন, রাজন, দেলোয়ার হোসেন বাবু ছুটে আসে। তখন উভয় পক্ষে মধ্যে বাগবিতণ্ডা ঘটে। একপর্যায়ে টিঅ্যান্ডটি বাবু নিজেই অকিলকে দুই হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে। খবর পেয়ে বড় শামীমের সরদারের ভাগিনা নাহিদা, শাকিল, সুজন, রনি, রকিব, বাবু, রয়েল, পাপ্পু, রবিন, জয়, শান্ত, জাহান, সাজ্জাদ, সজিব, রিয়াদ, আবু মুসা, ইমন, রাজন এসে অকিলকে ধরে ইস্পাহানী বাজারে নিয়ে যায়। আলী তখন ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তাকে কিল ঘুষি মারা হয়। ওই সময়ে অন্তর নিজেই শাকিলের নানা আবদুলকে আরসিমের মোবাইল দিয়ে বিষয়টি জানায়।
পরবর্তীতে আবদুল বড় শামীম ও নাহিদের কাছ থেকে অকিলকে ছুটিয়ে নিয়ে আসে। বিকেল ৩টায় অন্তর, অনিক, সানি, নাজমুল, অকিল ও আরসিম আকিজ কোম্পানীর ময়দার গেটের সামনে আসলে শামীম সরদারের ভাগিনা নাহিদ সরদার দলবল নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। ওই সময়ে আলভীর ফোন পেয়ে মিহাদ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। বিকাল সাড়ে ৪টায় বড় শামীম ও ছোট শামীম গ্রুপের লোকজন লাঠিসোটা, দা, রড নিয়ে আলভীদের ধাওয়া করে। ভয়ে তারা ইস্পাহানী ঘাটের দিকে দৌড়ে আসে।
সেখানে আলভী, মিহাদ, জিসান, তোহা, শাহাদাত হোসেন মুন্নাকে পেটানো হয়। তারা বাঁচার জন্য ইস্পাহানী ঘাটের সিড়ি থেকে লাফি দেয়। প্রিন্স, তোহা, মুন্না, জিসান, মিহাদ ঘাটে ভেড়ানো একটি নৌকায় উঠে পালানোর চেষ্টা করলে আসামীরা জিসান ও মিহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গুমের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে যায়।