পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ
সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি | ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ১৮:০০
সোনাগাজী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে জমি ক্রয়ে সরকার নির্ধারিত ৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে সাবরেজিস্ট্রার ও তার অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মেয়রের জালিয়াতির কারসাজিতে সহায়তার অভিযোগও রয়েছে।
গত ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাব-রেজিস্ট্রার আমির হামজার স্বাক্ষরিত দলিলের তথ্যে জানা যায়, সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতলী মৌজার ২৪ শতক নাল জমিকে ডোবা দেখিয়ে বিক্রি করা হয়। জমির ক্রেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন। আমমোক্তারনামা দলিলে মেয়রের কাছে জমিটি বিক্রি করেন তার স্ত্রী।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালী গ্রামের নাজমুল হুদা চৌধুরীর মালিকানাধীন ৩৯৬ নম্বর খতিয়ানভুক্ত পৌরসভার তুলাতুলি মৌজার ২৪ শতক নাল জমি তার স্ত্রীকে দানপত্র করেন। জমিটি নিজ নামে নামজারি করে ৮৮৯ নম্বর খতিয়ানভুক্ত করেন। ২০ জুন ২০১৭ সালে উক্ত জমি মতিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ৩৩৫৭ নম্বর দলিলে সোনাগাজী পৌর মেয়রের স্ত্রীর নিকট অফেরতযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল মূলে হস্তান্তর করা হয়। পরে ৪৪১২/১৮ দলিলে ২৪ শতক নাল জমি সাফ কবলায় তার স্বামী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের কাছে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় নাল জমিকে ডোবা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, রফিকুল ইসলাম খোকন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের তথ্য গোপন করতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেন। দলিলটির লেখক চরছান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন। তিনি আবার দলিলের সাক্ষীও হয়েছেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মিলন জানান, বিক্রেতার সরবরাহকৃত তথ্যে আমি দলিল লিখেছি। বিক্রেতা যদি জমির শ্রেণির প্রকৃত তথ্য গোপন করে থাকেন আইনানুযায়ী দায়-দায়িত্ব তার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সত্যতা পেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
মতিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তথ্যমতে, হালনাগাদ সরকারি মূল্য তালিকা অনুযায়ী সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতুলি মৌজার প্রতি শতক নাল জমির বিক্রয় মূল্য ৩ লাখ ৪২ হাজার পাঁচ শ ষাট টাকা ও ডোবা জমির মূল্য ৪০ হাজার সাত শ একাত্তর টাকা। সেই হিসেবে ২৪ শতক নাল জমির বিক্রয়মূল্য হবে ৮২ লাখ ২১ হাজার চার শ ষোলো টাকা। সরকারি নির্দেশনায় জমি রেজিস্ট্রি করতে বিক্রয় মূল্যের সাড়ে সাত শতাংশ টাকা রাজস্ব হিসেবে জমা দিতে হয়। সেই হিসেবে নাল জমিকে ডোবা দেখিয়ে বিক্রয় মূল্য কমিয়ে রেজিস্ট্রি করে মেয়র খোকন সরকারের ছয় লাখ ১৬ হাজার ছয় শ আট টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে, সে জন্য ডোবা দেখিয়ে জমিটি রেজিস্ট্রি করার পর মেয়র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল ১১৮৫ নম্বর খতিয়ানে ২৪ শতক জমি পুনরায় নাল হিসেবে নিজ নামে নামজারি করিয়ে নেন। কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), পৌর ভূমি কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, কানুনগো মেয়র খোকনকে সহযোগিতা করেন।
অভিযুক্ত মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে জমি নিবন্ধন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তার জন্য আমি দায়ী না, দায়ী সাব-রেজিস্ট্রার, কারণ তিনি জমি রেজিস্ট্রি করেছেন।
তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হয়ে ভিন্ন কর্মস্থলে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে কর্মরত সহকারী কমিশনার জাকির হোসেন জানান, অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে জড়িতদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বিবিধ ব্যবস্থার মাধ্যমে নামজারি বাতিল করা হবে।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আকরাম হোসেন রিয়াদ বলেন, সাধারণত জমির ক্রেতা-বিক্রেতা ও দলিল লেখক কাগজপত্র ঘষামাজা করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে শ্রেণি পরিবর্তন করে থাকে। তদন্ত করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা রেজিস্ট্রার আশ্রাফুজ্জামান বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রার কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি | ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ১৮:০০

সোনাগাজী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে জমি ক্রয়ে সরকার নির্ধারিত ৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে সাবরেজিস্ট্রার ও তার অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মেয়রের জালিয়াতির কারসাজিতে সহায়তার অভিযোগও রয়েছে।
গত ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাব-রেজিস্ট্রার আমির হামজার স্বাক্ষরিত দলিলের তথ্যে জানা যায়, সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতলী মৌজার ২৪ শতক নাল জমিকে ডোবা দেখিয়ে বিক্রি করা হয়। জমির ক্রেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন। আমমোক্তারনামা দলিলে মেয়রের কাছে জমিটি বিক্রি করেন তার স্ত্রী।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালী গ্রামের নাজমুল হুদা চৌধুরীর মালিকানাধীন ৩৯৬ নম্বর খতিয়ানভুক্ত পৌরসভার তুলাতুলি মৌজার ২৪ শতক নাল জমি তার স্ত্রীকে দানপত্র করেন। জমিটি নিজ নামে নামজারি করে ৮৮৯ নম্বর খতিয়ানভুক্ত করেন। ২০ জুন ২০১৭ সালে উক্ত জমি মতিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ৩৩৫৭ নম্বর দলিলে সোনাগাজী পৌর মেয়রের স্ত্রীর নিকট অফেরতযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল মূলে হস্তান্তর করা হয়। পরে ৪৪১২/১৮ দলিলে ২৪ শতক নাল জমি সাফ কবলায় তার স্বামী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের কাছে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় নাল জমিকে ডোবা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, রফিকুল ইসলাম খোকন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের তথ্য গোপন করতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেন। দলিলটির লেখক চরছান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন। তিনি আবার দলিলের সাক্ষীও হয়েছেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মিলন জানান, বিক্রেতার সরবরাহকৃত তথ্যে আমি দলিল লিখেছি। বিক্রেতা যদি জমির শ্রেণির প্রকৃত তথ্য গোপন করে থাকেন আইনানুযায়ী দায়-দায়িত্ব তার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সত্যতা পেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
মতিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তথ্যমতে, হালনাগাদ সরকারি মূল্য তালিকা অনুযায়ী সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতুলি মৌজার প্রতি শতক নাল জমির বিক্রয় মূল্য ৩ লাখ ৪২ হাজার পাঁচ শ ষাট টাকা ও ডোবা জমির মূল্য ৪০ হাজার সাত শ একাত্তর টাকা। সেই হিসেবে ২৪ শতক নাল জমির বিক্রয়মূল্য হবে ৮২ লাখ ২১ হাজার চার শ ষোলো টাকা। সরকারি নির্দেশনায় জমি রেজিস্ট্রি করতে বিক্রয় মূল্যের সাড়ে সাত শতাংশ টাকা রাজস্ব হিসেবে জমা দিতে হয়। সেই হিসেবে নাল জমিকে ডোবা দেখিয়ে বিক্রয় মূল্য কমিয়ে রেজিস্ট্রি করে মেয়র খোকন সরকারের ছয় লাখ ১৬ হাজার ছয় শ আট টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে, সে জন্য ডোবা দেখিয়ে জমিটি রেজিস্ট্রি করার পর মেয়র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল ১১৮৫ নম্বর খতিয়ানে ২৪ শতক জমি পুনরায় নাল হিসেবে নিজ নামে নামজারি করিয়ে নেন। কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), পৌর ভূমি কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, কানুনগো মেয়র খোকনকে সহযোগিতা করেন।
অভিযুক্ত মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে জমি নিবন্ধন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তার জন্য আমি দায়ী না, দায়ী সাব-রেজিস্ট্রার, কারণ তিনি জমি রেজিস্ট্রি করেছেন।
তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হয়ে ভিন্ন কর্মস্থলে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে কর্মরত সহকারী কমিশনার জাকির হোসেন জানান, অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে জড়িতদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বিবিধ ব্যবস্থার মাধ্যমে নামজারি বাতিল করা হবে।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আকরাম হোসেন রিয়াদ বলেন, সাধারণত জমির ক্রেতা-বিক্রেতা ও দলিল লেখক কাগজপত্র ঘষামাজা করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে শ্রেণি পরিবর্তন করে থাকে। তদন্ত করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা রেজিস্ট্রার আশ্রাফুজ্জামান বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রার কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।