‘আমার ছাওয়াল সেলিমকে ওরা নির্যাতন কইরি মারি ফ্যালেচে’
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:৪৭
খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সেলিম হোসেনের পিতা শুকুর আলী অভিযোগ করেছেন, তার ছেলেকে নির্যাতন করে মেলে ফেলা হয়েছে। তিনি ঘটনার ন্যায় বিচারসহ সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোনে আলাপকালে শুকুর আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার ছাওয়াল সেলিমকে ওরা নির্যাতন কইরি মারি ফ্যালেচে, আমি বিচার চাই, প্রদানমুন্ত্রীর কাছে বিচার চাই, আপনেরা তদন্ত কল্লিই আসল তথ্য বাড়া আসপিনি।’
এসময় কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রামের বাসিন্দা ও গ্রামীন বাজারে কাঁচামালের ব্যবসায়ী শুকুর আলী।
তিনি বলেন, ‘আমি জানতি চাই সেলিমের কি অপরাধ ছিল যে ওরা এমন নির্যাতন কইরি মাইরি ফেইল্লি? যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের শাস্তি চাই বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘খুলনায় সেলিমের সাথে যারা প্রপেচারী করে, উনারা আমাক ফোন কইরি মামলা করতি বলেচে। আমি মামলা করব, আমি বিচার চাই। আ হা হা আমার এতো ত্যাগের বিনিময়ে মানুষ হওয়া ছেলেডাকে ওরা মাইরিই ফেল্লি?”
সেলিমের বন্ধু বাঁশগ্রাম বহুমুখী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুপকুমার জানান, সেলিম ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিল, তার এই অকাল মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সেলিমকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছেন তারা।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের সেলিমের এসএসসির বন্ধু আমরা যারা আছি সকলে মিলে এই মানববন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছি। দোষীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) লালন শাহ হলের প্রভোষ্ট, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন (৩৮) গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরে বিকেল তিনটার দিকে মারা যান। বুধবার সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
মারা যাওয়ার আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে মানসিক নিপীড়ন করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকেরা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। পালন করছেন নানা কর্মসূচি।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে, শিক্ষক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘কুচক্রী মহল’ নোংরা রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে। ওই শিক্ষকের মৃত্যুকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুক্রবার বিকেল চারটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:৪৭

খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সেলিম হোসেনের পিতা শুকুর আলী অভিযোগ করেছেন, তার ছেলেকে নির্যাতন করে মেলে ফেলা হয়েছে। তিনি ঘটনার ন্যায় বিচারসহ সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোনে আলাপকালে শুকুর আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার ছাওয়াল সেলিমকে ওরা নির্যাতন কইরি মারি ফ্যালেচে, আমি বিচার চাই, প্রদানমুন্ত্রীর কাছে বিচার চাই, আপনেরা তদন্ত কল্লিই আসল তথ্য বাড়া আসপিনি।’
এসময় কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রামের বাসিন্দা ও গ্রামীন বাজারে কাঁচামালের ব্যবসায়ী শুকুর আলী।
তিনি বলেন, ‘আমি জানতি চাই সেলিমের কি অপরাধ ছিল যে ওরা এমন নির্যাতন কইরি মাইরি ফেইল্লি? যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের শাস্তি চাই বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘খুলনায় সেলিমের সাথে যারা প্রপেচারী করে, উনারা আমাক ফোন কইরি মামলা করতি বলেচে। আমি মামলা করব, আমি বিচার চাই। আ হা হা আমার এতো ত্যাগের বিনিময়ে মানুষ হওয়া ছেলেডাকে ওরা মাইরিই ফেল্লি?”
সেলিমের বন্ধু বাঁশগ্রাম বহুমুখী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুপকুমার জানান, সেলিম ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিল, তার এই অকাল মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সেলিমকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছেন তারা।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের সেলিমের এসএসসির বন্ধু আমরা যারা আছি সকলে মিলে এই মানববন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছি। দোষীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) লালন শাহ হলের প্রভোষ্ট, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন (৩৮) গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরে বিকেল তিনটার দিকে মারা যান। বুধবার সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
মারা যাওয়ার আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে মানসিক নিপীড়ন করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকেরা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। পালন করছেন নানা কর্মসূচি।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে, শিক্ষক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘কুচক্রী মহল’ নোংরা রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে। ওই শিক্ষকের মৃত্যুকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুক্রবার বিকেল চারটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।