আবারো সচল হচ্ছে বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথ
বরিশাল সংবাদদাতা | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৪:৪১
দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। এ জন্য পরীক্ষামূলকভাবে দুটি জাহাজ চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রথম যাত্রায় বিফল হয়েছে বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের নব নির্মিত উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’এর পরীক্ষামূলক যাত্রা। ফলে প্রায় এক যুগ বন্ধ থাকার পরে উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করার সরকারি উদ্যোগ নিয়ে অজানা অনিশ্চয়তায় যাত্রীরা।
১২ ঘণ্টায় প্রায় পৌনে ৩শ কিলোমিটারের বিশাল উপকূলীয় নৌপথ পাড়ি দেয়ার কথা বলা হলেও ঘণ্টায় ১৮.৫২ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন নৌযানটি শুক্রবার প্রায় ২০ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে প্রথম ট্রায়াল ট্রিপে যাত্রা করে শুক্রবার সকাল ৫টায় বরিশাল বন্দরে নোঙর করে তাজউদ্দিন আহমদ।
পথিমধ্যে হাতিয়াতে এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি ও ভোলার ইলিশা ঘাটের ভাটিতে চর গজারিয়ার কাছে মেঘনার নাব্যতা সংকটে নৌযানটি দু দফায়য় প্রায় সাড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা নোঙরে ছিল।
শুক্রবার রাত ১০টায় এমভি তাজউদ্দিন আহমদ ফিরতি ট্রিপে বরিশাল বন্দর রথকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা।
এ ট্রায়াল টিপের ফলাফল বিশ্লেষণসহ সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় যাত্রীবাহী সার্ভিসটির সময়সূচি ও যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করা হবে বলে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এমনকি সার্ভিসটি কবে থেকে নিয়মিত বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু করবে সে সম্পর্কে এখনো কিছু বলতে পারেনি সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল।
তবে চলতি মাসের মধ্যোই সার্ভিসটি যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধান।
এ ব্যাপারে নৌযাটিতে ভ্রমণরত বিআইডব্লিটিসির ডিজিএম গোপাল মজুমদার বলেন, ‘আমরা সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করব।
তবে নৌ পথে নাব্যতা সংকট ও নৌ সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা’র ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা ৪টি নৌযানের সাহায্যে বরিশাল-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম ও বরিশাল-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করে।
গত ২৫ নভেম্বর পরীক্ষামূলক জাহাজ চলতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান।
তবে ২৫ নভেম্বর তা সম্ভব না হওয়ায় ৩ ডিসেম্বর থেকে এই সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়।
১৯৬৪ সালে প্রথম বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছিল। ওই সময় চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে বরিশালে পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজের চলাচল শুরু হয়। পরে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে রুটটি ঘুরিয়ে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া হয়ে বরিশাল করা হয়েছিল।
১৯৭৪ সালে দিকে নৌপরিবহন করপোরেশন এ পথে চলাচলকারী জাহাজ এমভি তাজুল ইসলামকে বিক্রি করে দেয়। এরপরও বাকি তিনটি জাহাজ চালু থাকে।
পরবর্তী সময়ে এমভি আলাউদ্দিন আহম্মেদকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এরপর জাহাজ সংকটে সপ্তাহে মাত্র দুদিন সেবা পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে মেরামতের কথা বলে এমভি মতিন ও এমভি মনিরুল হককে ডকইয়ার্ডে তোলার পর গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, এ রুটে চলাচলের জন্য দুটি জাহাজ এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি তাজউদ্দীন এই নতুন পরিকল্পনায় এখন বরিশাল পর্যন্ত যাবে।
এ ছাড়া সদ্য সংস্কার শেষে ডকইয়ার্ড থেকে আসা এমভি বার আউলিয়াও এ সেবায় যুক্ত হবে। ২০০২ সালে নির্মিত বার আউলিয়ার বিকল একটি ইঞ্জিন পাল্টে নতুন ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থ্রি-অ্যাঙ্গেল ডকইয়ার্ডে নতুন ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথে সরকারি সংস্থার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে বরিশালের নৌ যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বরিশাল থেকে এখন চট্টগ্রামে যাওয়ার সব কটি পথই সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
বরিশাল কিংবা ভোলার ইলিশা থেকে মেঘনা পাড়ি দিয়ে লক্ষ্মীপুর হয়ে চট্টগ্রাম যেতে একদিকে যেমন অনেক সময় লাগছে, তেমনি অর্থ ব্যয়ও হচ্ছে প্রচুর।
আবার বরিশাল থেকে চাঁদপুর-ঢাকা কিংবা শরীয়তপুর-হরিণা ফেরি পার হয়ে যেতেও লাগছে প্রায় দেড় থেকে দুই দিন। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে এই পথে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বরিশালের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে চার দিন জাহাজ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত জাহাজ দুটি ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলার সক্ষমতা রয়েছে। সেই হিসাবে চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পৌঁছাতে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না।
চট্টগ্রাম থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই বরিশালে পৌঁছানো যাবে। ২৫ নভেম্বর পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ভাড়া নির্ধারণ শেষে ডিসেম্বর মাস থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন শুরু হবে।
চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে আসার পথে হাতিয়া-সন্দ্বীপ-নোয়াখালী এবং ভোলার ইলিশায় ঘাট দেবে জাহাজটি। তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাশাপাশি প্রতিটি জাহাজে ২৫টি কেবিনসহ ৭৫০টি আসন রয়েছে।
বরিশাল থেকে ছেড়ে ভোলার ইলিশা পার হয়ে বাঁয়ে মনপুরা আর ডানে বোরহানউদ্দিনের মির্জাকালু রেখে বঙ্গোপসাগরে নামবে জাহাজ। এরপর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ঢোকার আগপর্যন্ত পুরোটাই সমুদ্রপথ।
এ বিষয়ে বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে একসময় এই নৌ সেবাই ছিল একমাত্র ভরসা। ২০০৯ সালে এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাঁরা দুর্ভোগে আছেন। সড়কপথে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতায় পড়তে হয়।
অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ার পাশাপাশি সময়ও লাগছে বেশি। জাহাজ চলাচলের মধ্য দিয়ে দুই বিভাগের পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
বরিশাল সংবাদদাতা | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৪:৪১

দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। এ জন্য পরীক্ষামূলকভাবে দুটি জাহাজ চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রথম যাত্রায় বিফল হয়েছে বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের নব নির্মিত উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’এর পরীক্ষামূলক যাত্রা। ফলে প্রায় এক যুগ বন্ধ থাকার পরে উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করার সরকারি উদ্যোগ নিয়ে অজানা অনিশ্চয়তায় যাত্রীরা।
১২ ঘণ্টায় প্রায় পৌনে ৩শ কিলোমিটারের বিশাল উপকূলীয় নৌপথ পাড়ি দেয়ার কথা বলা হলেও ঘণ্টায় ১৮.৫২ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন নৌযানটি শুক্রবার প্রায় ২০ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে প্রথম ট্রায়াল ট্রিপে যাত্রা করে শুক্রবার সকাল ৫টায় বরিশাল বন্দরে নোঙর করে তাজউদ্দিন আহমদ।
পথিমধ্যে হাতিয়াতে এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি ও ভোলার ইলিশা ঘাটের ভাটিতে চর গজারিয়ার কাছে মেঘনার নাব্যতা সংকটে নৌযানটি দু দফায়য় প্রায় সাড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা নোঙরে ছিল।
শুক্রবার রাত ১০টায় এমভি তাজউদ্দিন আহমদ ফিরতি ট্রিপে বরিশাল বন্দর রথকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা।
এ ট্রায়াল টিপের ফলাফল বিশ্লেষণসহ সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় যাত্রীবাহী সার্ভিসটির সময়সূচি ও যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করা হবে বলে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এমনকি সার্ভিসটি কবে থেকে নিয়মিত বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু করবে সে সম্পর্কে এখনো কিছু বলতে পারেনি সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল।
তবে চলতি মাসের মধ্যোই সার্ভিসটি যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধান।
এ ব্যাপারে নৌযাটিতে ভ্রমণরত বিআইডব্লিটিসির ডিজিএম গোপাল মজুমদার বলেন, ‘আমরা সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করব।
তবে নৌ পথে নাব্যতা সংকট ও নৌ সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা’র ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা ৪টি নৌযানের সাহায্যে বরিশাল-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম ও বরিশাল-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করে।
গত ২৫ নভেম্বর পরীক্ষামূলক জাহাজ চলতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান।
তবে ২৫ নভেম্বর তা সম্ভব না হওয়ায় ৩ ডিসেম্বর থেকে এই সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়।
১৯৬৪ সালে প্রথম বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছিল। ওই সময় চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে বরিশালে পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজের চলাচল শুরু হয়। পরে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে রুটটি ঘুরিয়ে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া হয়ে বরিশাল করা হয়েছিল।
১৯৭৪ সালে দিকে নৌপরিবহন করপোরেশন এ পথে চলাচলকারী জাহাজ এমভি তাজুল ইসলামকে বিক্রি করে দেয়। এরপরও বাকি তিনটি জাহাজ চালু থাকে।
পরবর্তী সময়ে এমভি আলাউদ্দিন আহম্মেদকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এরপর জাহাজ সংকটে সপ্তাহে মাত্র দুদিন সেবা পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে মেরামতের কথা বলে এমভি মতিন ও এমভি মনিরুল হককে ডকইয়ার্ডে তোলার পর গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, এ রুটে চলাচলের জন্য দুটি জাহাজ এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি তাজউদ্দীন এই নতুন পরিকল্পনায় এখন বরিশাল পর্যন্ত যাবে।
এ ছাড়া সদ্য সংস্কার শেষে ডকইয়ার্ড থেকে আসা এমভি বার আউলিয়াও এ সেবায় যুক্ত হবে। ২০০২ সালে নির্মিত বার আউলিয়ার বিকল একটি ইঞ্জিন পাল্টে নতুন ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থ্রি-অ্যাঙ্গেল ডকইয়ার্ডে নতুন ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথে সরকারি সংস্থার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে বরিশালের নৌ যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বরিশাল থেকে এখন চট্টগ্রামে যাওয়ার সব কটি পথই সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
বরিশাল কিংবা ভোলার ইলিশা থেকে মেঘনা পাড়ি দিয়ে লক্ষ্মীপুর হয়ে চট্টগ্রাম যেতে একদিকে যেমন অনেক সময় লাগছে, তেমনি অর্থ ব্যয়ও হচ্ছে প্রচুর।
আবার বরিশাল থেকে চাঁদপুর-ঢাকা কিংবা শরীয়তপুর-হরিণা ফেরি পার হয়ে যেতেও লাগছে প্রায় দেড় থেকে দুই দিন। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে এই পথে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বরিশালের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে চার দিন জাহাজ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত জাহাজ দুটি ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলার সক্ষমতা রয়েছে। সেই হিসাবে চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পৌঁছাতে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না।
চট্টগ্রাম থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই বরিশালে পৌঁছানো যাবে। ২৫ নভেম্বর পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ভাড়া নির্ধারণ শেষে ডিসেম্বর মাস থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন শুরু হবে।
চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে আসার পথে হাতিয়া-সন্দ্বীপ-নোয়াখালী এবং ভোলার ইলিশায় ঘাট দেবে জাহাজটি। তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাশাপাশি প্রতিটি জাহাজে ২৫টি কেবিনসহ ৭৫০টি আসন রয়েছে।
বরিশাল থেকে ছেড়ে ভোলার ইলিশা পার হয়ে বাঁয়ে মনপুরা আর ডানে বোরহানউদ্দিনের মির্জাকালু রেখে বঙ্গোপসাগরে নামবে জাহাজ। এরপর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ঢোকার আগপর্যন্ত পুরোটাই সমুদ্রপথ।
এ বিষয়ে বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে একসময় এই নৌ সেবাই ছিল একমাত্র ভরসা। ২০০৯ সালে এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাঁরা দুর্ভোগে আছেন। সড়কপথে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতায় পড়তে হয়।
অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ার পাশাপাশি সময়ও লাগছে বেশি। জাহাজ চলাচলের মধ্য দিয়ে দুই বিভাগের পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।