দিনাজপুরে যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
দিনাজপুর প্রতিনিধি | ৬ আগস্ট, ২০২২ ১৯:৪৬
সুমন দাস।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সুমন দাসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকি-ধামকি ও মারধরের কারণে কয়েকটি পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি।
দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার সকাল দুপুরে এসব অভিযোগ করেন চিরিরবন্দর উপজেলার পূর্ব সাইতারা গ্রামের আফতাবুজ্জামানের স্ত্রী লাভলী আরা। এ সময় ভুক্তভোগী শাহজাহান আলম, সোহেল মাহমুদসহ তাদের সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
যুবলীগ নেতা সুমন বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর, জীবন নাশের হুমকি এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীদেরকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা যুবলীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ খোদ যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লাভলী আরা বলেন, আমার স্বামী আফতাবুজ্জামান চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে রানীরবন্দর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি কর্মকর্তা। চলতি বছরের ১৮ জুলাই রাতে বাড়ি ফেরার পথে চিরিরবন্দর আমেনা বাকী স্কুলের গেটের সামনে যুবলীগ নেতা সুমন দাস, আক্কাস আলী, শাকিল ইকবাল, মোস্তাফিজুর রহমান লাল, দবিরুল ইসলাম, রতন বর্মনসহ আরও ৭/৮ জন মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। পরে তার উপর হামলা চালিয়ে সেখানে মাহবুবের চায়ের দোকানে পিছনে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় কিলঘুষি মেরে আহত করেন। এক পর্যায়ে সুমন দাস আমার স্বামীর গলায় ধারালো ছুরি ধরে এবং তার সহযোগীরা লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করেন। এসময় তারা আমার স্বামীর পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে নেন। পরে বাকি ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পরের দিনের মধ্যে দেয়ার হুমকি দেন।
পরে বিষয়টি টের পেয়ে এক ব্যক্তি পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এই ঘটনায় ২০ জুলাই আফতাবুজ্জামান আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করার পর ২২ জুলাই সুমন দাসের লোকজন ঘুঘুরাতলী কাঁচাবাজার এলাকায় আটক করে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। পরের দিন এই ঘটনায় থানায় জিডি দায়ের করলে আবারও ২৪ জুলাই সুমন দাস ও তার লোকজন তার স্বামীকে আটক করে মারধরের করার সময় এলাকাবাসী উদ্ধার করে। এই ঘটনায় ওইদিনই আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন তিনি।
শুধু একটি ঘটনাই নয়, সুমন দাস ও তার লোকজন “শিশির ক্যাবল নেটওয়ার্ক” ডিস লাইন ব্যবসায়ী সেলিনা পারভীনের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা গ্রহণ করেন এবং প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় গত ২০ জুন রাতে “শিশির ক্যাবল নেটওয়ার্ক” এর কর্মী বাবলাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে আহত করেন। এছাড়াও সেলিনা পারভীনের ছেলে সোহেল মাহমুদের ঘুঘুরাতলীতে “সোহেল সুইটস” নামের হোটেলে সুমন দাস ও তার সহযোগীরা খাবার খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যায়। কিছু বললে সুমন দাস বলেন, বেটা আমি যুবলীগ নেতা, আমার কথায় আইন কানুন থানা সব ওঠাবসা করে। আমাদের কাছে বিল চাস। এ ব্যাপারে গত ১২ জুলাই সেলিনা পারভীন বাদী হয়ে চিরিরবন্দর থানায় একটি চাঁদাবাজীর মামলা করেছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলার চিরিরবন্দর গ্রামের ইউসুফ আলী সুমন দাসের বিরুদ্ধে ১২ শতক জমি দখলে নেয়ার হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ক্রয়করা জমিতে বাউন্ডারি দেয়ার সময় উপজেলার দক্ষিণ সুকদেবপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে মাহির উদ্দিনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে যুবলীগ নেতা সুমন দাস। এই অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ব্যাংক কর্মকর্তা মহির উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে সুমন দাসের হাত থেকে উল্লেখিত পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এদিকে সুমন দাসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর, জীবন নাশের হুমকি, যুবদলের নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে ভুমিদখল, ছিনতাই, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে জেলা যুবলীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ খোদ যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সুমনের কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় বেশ কিছু যুবলীগের সদস্য শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে ওইসব অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল রিসিভ করেননি সুমন দাস। তাকে পরিচয় দিয়ে মোবাইলে খুদেবার্তা দেয়ার পরও কোন জবাব দেন নাই।
দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ বলেন, বেশ কিছু ভুক্তভোগী আমার কাছে এসে অভিযোগ করেছেন। এই সপ্তাহের মধ্যে দল থেকে থেকে বহিষ্কার হবে। আমরা সুপারিশ করেছি। এখন কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেবে। কেন্দ্রের কাছে কাগজপত্র পৌঁছালে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিবেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
দিনাজপুর প্রতিনিধি | ৬ আগস্ট, ২০২২ ১৯:৪৬

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সুমন দাসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকি-ধামকি ও মারধরের কারণে কয়েকটি পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি।
দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার সকাল দুপুরে এসব অভিযোগ করেন চিরিরবন্দর উপজেলার পূর্ব সাইতারা গ্রামের আফতাবুজ্জামানের স্ত্রী লাভলী আরা। এ সময় ভুক্তভোগী শাহজাহান আলম, সোহেল মাহমুদসহ তাদের সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
যুবলীগ নেতা সুমন বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর, জীবন নাশের হুমকি এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীদেরকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা যুবলীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ খোদ যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লাভলী আরা বলেন, আমার স্বামী আফতাবুজ্জামান চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে রানীরবন্দর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি কর্মকর্তা। চলতি বছরের ১৮ জুলাই রাতে বাড়ি ফেরার পথে চিরিরবন্দর আমেনা বাকী স্কুলের গেটের সামনে যুবলীগ নেতা সুমন দাস, আক্কাস আলী, শাকিল ইকবাল, মোস্তাফিজুর রহমান লাল, দবিরুল ইসলাম, রতন বর্মনসহ আরও ৭/৮ জন মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। পরে তার উপর হামলা চালিয়ে সেখানে মাহবুবের চায়ের দোকানে পিছনে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় কিলঘুষি মেরে আহত করেন। এক পর্যায়ে সুমন দাস আমার স্বামীর গলায় ধারালো ছুরি ধরে এবং তার সহযোগীরা লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করেন। এসময় তারা আমার স্বামীর পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে নেন। পরে বাকি ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পরের দিনের মধ্যে দেয়ার হুমকি দেন।
পরে বিষয়টি টের পেয়ে এক ব্যক্তি পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এই ঘটনায় ২০ জুলাই আফতাবুজ্জামান আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করার পর ২২ জুলাই সুমন দাসের লোকজন ঘুঘুরাতলী কাঁচাবাজার এলাকায় আটক করে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। পরের দিন এই ঘটনায় থানায় জিডি দায়ের করলে আবারও ২৪ জুলাই সুমন দাস ও তার লোকজন তার স্বামীকে আটক করে মারধরের করার সময় এলাকাবাসী উদ্ধার করে। এই ঘটনায় ওইদিনই আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন তিনি।
শুধু একটি ঘটনাই নয়, সুমন দাস ও তার লোকজন “শিশির ক্যাবল নেটওয়ার্ক” ডিস লাইন ব্যবসায়ী সেলিনা পারভীনের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা গ্রহণ করেন এবং প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় গত ২০ জুন রাতে “শিশির ক্যাবল নেটওয়ার্ক” এর কর্মী বাবলাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে আহত করেন। এছাড়াও সেলিনা পারভীনের ছেলে সোহেল মাহমুদের ঘুঘুরাতলীতে “সোহেল সুইটস” নামের হোটেলে সুমন দাস ও তার সহযোগীরা খাবার খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যায়। কিছু বললে সুমন দাস বলেন, বেটা আমি যুবলীগ নেতা, আমার কথায় আইন কানুন থানা সব ওঠাবসা করে। আমাদের কাছে বিল চাস। এ ব্যাপারে গত ১২ জুলাই সেলিনা পারভীন বাদী হয়ে চিরিরবন্দর থানায় একটি চাঁদাবাজীর মামলা করেছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলার চিরিরবন্দর গ্রামের ইউসুফ আলী সুমন দাসের বিরুদ্ধে ১২ শতক জমি দখলে নেয়ার হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ক্রয়করা জমিতে বাউন্ডারি দেয়ার সময় উপজেলার দক্ষিণ সুকদেবপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে মাহির উদ্দিনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে যুবলীগ নেতা সুমন দাস। এই অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ব্যাংক কর্মকর্তা মহির উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে সুমন দাসের হাত থেকে উল্লেখিত পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এদিকে সুমন দাসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর, জীবন নাশের হুমকি, যুবদলের নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে ভুমিদখল, ছিনতাই, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে জেলা যুবলীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ খোদ যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সুমনের কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় বেশ কিছু যুবলীগের সদস্য শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে ওইসব অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল রিসিভ করেননি সুমন দাস। তাকে পরিচয় দিয়ে মোবাইলে খুদেবার্তা দেয়ার পরও কোন জবাব দেন নাই।
দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ বলেন, বেশ কিছু ভুক্তভোগী আমার কাছে এসে অভিযোগ করেছেন। এই সপ্তাহের মধ্যে দল থেকে থেকে বহিষ্কার হবে। আমরা সুপারিশ করেছি। এখন কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেবে। কেন্দ্রের কাছে কাগজপত্র পৌঁছালে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিবেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।