
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মোংলায় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের যুদ্ধ জাহাজ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
রোববার (২৬ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দিগরাজ নৌঘাঁটিতে বিএনএস কপোতাক্ষ উম্মুক্ত রাখে নৌবাহিনী।
এছাড়া দিগরাজে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তরের জেটিতে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয় সিজিএস কামরুজ্জামান।
নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের এ জাহাজ দুইটি দেখার জন্য বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষজন জড়ো হন। এসময় তাদের জাহাজের কামান, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদির ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেন জাহাজের দক্ষ নাবিক ও অফিসারেরা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরব হয়ে উঠেছেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। বিগত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় বহিষ্কার হন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল সাড়ে ৭টায় শহরের মাসদাইর এলাকায় বড় পরিসরে দোয়া, মিলাদ ও রান্না করা খাবার বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচীর সূচনা করেন তৈমূর। পরে জেলার সদর, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন স্থানের শতাধিক স্থানে ঘুরে ঘুরে রান্না করা খাবার বিতরণ এবং বিশেষ দোয়ায় অংশ নেন তিনি।
এ সময় তৈমূর বলেন, একজন জিয়াউর রহমানের অভাব আজ দেশ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তার অবর্তমানে খালেদা জিয়া এ দেশকে আগলে রেখেছেন। স্বৈরাচারি এ সরকার দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। আমরা আমাদের দেশকে আবারো নতুন করে মুক্ত বাতাসের স্বাদ দেয়াব আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ পালন করে।
তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের আজ ভোটের অধিকার নাই, ভাতের অধিকার নাই, কথা বলার স্বাধীনতা নাই, আর বাজারের কথা তো নাই বললাম। এ অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে খালেদা জিয়ার ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের বিকল্প নেই। দ্রুতই জনগণের আন্দোলনে এ অবৈধ মসনদ ভেঙে দেওয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খান, বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মকুল, প্রবীন ও মহানগর বিএনপি নেতা আলহাজ মো. নুরউদ্দিন, ফখরুল ইসলাম মজনু, আওলাদ হোসেন, সরকার আলম, জয়নাল আবেদীন, অ্যাড. বিলাল হোসেন, অ্যাড. আনিসুর রহমান মোল্লা, অ্যাড. শরিফুল ইসলাম শিপলু প্রমুখ।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনের আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে মাছ ধরার অপরাধে ৯ জেলেকে আটক করেছে সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট প্যাট্টল টিমের সদস্যরা।
আজ মঙ্গলবার নদী থেকে মালামালসহ জেলেদের আটক করা হয়। সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটক জেলেরা হলেন- ২ নম্বর কয়রা এলাকার শাহাদাত গাজী, কামরুল ইসলাম, ওবাইদুল্যাহ, মিজানুর রহমান, মেছের ঢালী, গোবরা এলাকার আব্দুল বারী সরদার, বিল্লাল হোসেন, আমিরুল ইসলাম ও খাসখালী এলাকার আব্দুল বারী।
জানা গেছে, স্মার্ট প্যাট্টল টিমের দলপতি স্টেশন অফিসার (এসও) মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে বনকর্মীরা আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে অভিযান চালায়। এ সময় জেলেদের ব্যবহৃত নিষিদ্ধ ফাঁস জাল, ১০০ কেজি চাল ও ২টি নৌকা জব্দ করে বনকর্মীরা।
এসও মোবারক হোসেন জানান, আটকদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গায় আফরোজা আলম (৩৭) নামে এক নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে তার স্বামী রবিউল ইসলাম রবিকে (৪২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও তিনমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুর ১ টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শিহাবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি রবি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাকে জেলে পাঠানো হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আলফাডাঙ্গার শিয়ালদী গ্রামের মৃত নুরুল হক মোল্যার ছেলে রবি। ২০০৬ সালে তার সাথে একই উপজেলার উত্তর মালা গ্রামের শামচুল আলমের মেয়ে আফরোজার বিয়ে হয়। আফরোজা শিয়ালদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। এ দম্পতির আদনান ইসলাম নামে (৯) একজন বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে।
শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আফরোজা উপজেলার গড়ানিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ২০২০ সালের ৩ আগস্ট সেই বাড়িতে আফরোজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন স্বামী রবি। পরে এ ঘটনায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আলফাডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফয়সাল আহমেদ অভিযুক্ত রবিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সানোয়ার হোসেন বলেন, আদালত ৩০২/২০১ ধারায় স্ত্রী আফরোজা আলমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী রবিউল ইসলাম রবিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ও সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও তিনমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাহমিনা তাবাসতুম ও ফলদা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিকার চেয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারীরা লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলা পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ৩১ জন দায়িত্ব পালন করছেন। তাহমিনা তাবাসতুম ২০২১ সালের অক্টোবরে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান। যোগদানের পর থেকে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস ও উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস এবং অডিট খরচের নামে মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেন।
এছাড়াও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তাহমিনা তাবাসতুম। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিবার কল্যাণ সহকারীদের উঠান বৈঠকের বিল এক হাজার ২০০ টাকা পাওনা থাকলেও সেগুলো দেওয়া হয়নি। এছাড়া করোনার সময় টিকা প্রদানের জন্য সরকার টাকা দিলেও তারা পায়নি। মাঠ কর্মচারীদের ভ্রমণ ভাতা হতে ৪০-৫০ শতাংশ টাকা আদায় এবং অন্যান্য সকল ভাতা হতে বাড়তি মোটা অংকের উৎকোচ জোরপূর্বক আদায়ের অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়। ফলদা ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রেজাউল করিম উপজেলা অফিসে দাপ্তরিক কাজ করছে। ফলে তার নিজ কর্মস্থল ফলদায় না গিয়ে উপজেলা অফিসে অবস্থান করেন।
পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) নাজমিন নাহার ও আয়শা সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন সময় মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে বিভিন্ন ভাতার টাকা নিতে হয়। করোনার টিকা, উঠান বৈঠক বিলসহ বিভিন্ন টাকা কর্মীদের দেওয়া হয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে একাধিকবার জানানো হলে খারাপ আচরণ করা হয় কর্মীদের সাথে। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে প্রতিকার পাওয়ার জন্য।
ফলদা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রেজাউল করিম জানান, নিজ ইউনিয়নেই কাজ করি। কর্তৃপক্ষ ট্রাবলশুটার হিসেবে কাজের দায়িত্ব দেওয়ায় মাঝে মধ্যে উপজেলা অফিসে গিয়ে সমস্যা দেয়া ট্যাবগুলো ঠিক করে দেওয়া হয়। এছাড়া টিএফপিও’র সাথে মাঠ পরিদর্শনে যাওয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাহমিনা তাবাসতুম জানান, দুইজন এফডব্লিউএকে কর্মস্থলে উপস্থিত না পেয়ে শোকজ করার ১৫ দিন পর আমার ও একজন পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। এছাড়া হিসাবরক্ষক অবসরে যাওয়ার কারণে তাদের ৬ মাসের বিল বাদ রয়েছে কিন্তু সেগুলো তারা পাবেন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া দুর্ব্যবহারের যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা সত্য নয়।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আইভি ইয়াছমিন বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর উল্লেখ্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোট প্রদানে কেউ বাধা দিলে কোন অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতি অনেক উন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাজীপুরের নির্বাচন আপনারা দেখেছেন। এর আগে গাইবান্ধার নির্বাচনও আমরা বন্ধ করেছিলাম। সুতরাং প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবেন না, প্রভাব খাটিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২৩ উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সিইসি এসব কথা।
প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ভোটারদের মন জয় করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করুন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সরকারও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোন অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক রিটানিং কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন। তারা সমাধান না করলে আমাদেরকে জানাবেন।
তিনি আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে শঙ্কার কোন কারণ নেই। ইভিএমে ফল পরিবর্তন আদৌ সম্ভব নয়। আপনারা প্রতিটি বুথে এজেন্ট দিবেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই সেই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
সিইসি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে। সকলের সমান সুযোগ থাকবে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কোন পক্ষপাতমূলক নির্বাচন হবে না। খুলনায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে তিনি প্রার্থীদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে রিটানিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন স্বাগত বক্তৃতা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এম মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, খুলনার পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান প্রমুখ।
এসময় খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।