
ছেলে ছাগল চুরির অভিযোগে বাবা আঙ্গুর মিয়াকে (৫০) ইউনিয়ন পরিষদের কার্য্যালয়ে আটকে রেখে দিনভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার রশিদ বিপ্লবের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। পরে বুধবার সকালে অসুস্থ অবস্থায় আঙ্গুর মিয়াকে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী আঙ্গুর মিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এলাকার আউয়াল নবীর ছেলে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার চরসাগরদী গ্রামের এক বাড়ি থেকে ছাগল চুরি হয়। এ ঘটনায় আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাদিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে তার খোঁজে বাড়িতে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদের লোকেরা। তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের দ্রুত খুঁজে বের করে দিতে বলে চলে যান তারা। পরে সকাল ১০টার দিকে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আবার বাড়িতে আসেন চেয়ারম্যানের ১০-১২ জন কর্মী-সমর্থক। ওই সময় সাদিকুলকে না পেয়ে তার বাবা আঙ্গুর মিয়া ও মা রিমা আক্তারকে টেনেহিঁচড়ে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান। ইউপি কার্যালয়ে নেয়ার পর রিমা আক্তারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সেখানে একটি কক্ষে আঙ্গুর মিয়াকে দিনভর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে পরিবারের লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার রশিদ বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আটক রাখা হয়েছিল। পরে রাত ২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে আঙ্গুর মিয়া মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলে নাকি ছাগল চুরি করেছে, এমন মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে বাসায় না পেয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে এসে তার কার্যালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করেন। আমি রাতে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি। কিন্তু আমার অনুরোধ রাখেনি। উল্টো চেয়ারম্যান এক লাখ টাকা দাবি করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করা হোক। কিন্তু আমার স্বামীকে এভাবে ধরে এনে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারপিট করা আমার মানসম্মানের হানি হয়েছে। আমি চেয়ারম্যানের বিচার চাই।
খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো কাউছার রশিদ বিপ্লব বলেন, আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাদিকুল আগে এলাকায় অনেক গরু-ছাগল চুরি করেছেন। তার ছাগল চুরির সহযোগীকেও (১৬) ও আটক করেছি। সে এখন আমার কার্যালয়ে রয়েছে। আঙ্গুরের ছেলেকে বাড়িতে না পেয়ে লোকজন তাকে ধরে নিয়ে এসেছে।
ছেলেকে না পেয়ে কেন বাবাকে আটক করে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছেলেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করায় বাবাকে আটক করা হয়েছে। তবে, তাকে মারধর করা হয়নি এবং কোনো টাকা ও চাওয়া হয়নি।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ছাগল চুরির অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পটুয়াখালীর বাউফলে মৃত মা রুশিয়া বেগমের (৬৫) লাশ দাফনে বাঁধা দিয়েছেন তারই ছেলেরা।
শুক্রবার (৯ জুন) উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিউজ লেখা পর্যন্ত লাশ দাফন করা হয়নি।
মৃত রুশিয়া বেগমের মেয়ে নাাছিমা বেগম বলেন, তার মা রুশিয়া বেগম শুক্রবার দুপর ১২টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। মায়ের চিকিৎসায় তারা বোনেরা সকল সহযোগিতা করেছেন। ভাইয়েরা চিকিৎসার কোন খরচ দেন নাই। রাত ১০ টা পর্যন্ত মাকে গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করা হয়নি। আমরা মাকে দাফনের কথা বললে তাদের ভাই সুমন ও সায়েম দাফনের আগে জায়গা জমির ভাগ হবে তারপর লাশের দাফন করা হবে বলে বেঁকে বসেন। এর আগে কোন দাফন করা হবে না।
এ নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে ঝগড়া হলে এক পর্যায় ভাই সুমন ও সায়েম বোন নাছিমাকে পিটিয়ে আহত করে। কোন উপায় না পেয়ে নাছিমা বেগম বাউফল থানা পুলিশের আশ্রয় নেন। অবশেষে পুলিশ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগ রাত ১১টার দিকে লাশ দাফনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নাছিমা বেগম হলো দ্বিতীয় ঘরের মেয়ে। সুমন ও সায়েম তাদের সৎ ভাই। তাদের বাবা দশ বছর হয় মারা গেছেন। জায়গা জমি বুঝে নিতে মূলত লাশ ছেলেরা দাফন করতে দিচ্ছেনা।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম মহসিন বলেন, ‘জায়গা জমি নিয়ে সমস্যার কারণে ছেলেরা লাশ দাফনে বাঁধা দিয়েছে। আমি ইতোমধ্যে ওই ওয়ার্ডের মেম্বারকে দাফনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলেছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ঘটনাস্থলে আছেন, দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ আরিচুল হক জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পঞ্চগড়ে মোটরসাকেল চালক ও আরোহীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা সদরের সাতমেরা দশমাইল এলাকার পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাকেলসহ মস্তকবিহীন মরদেহ দুইটি উদ্ধার করে পুলিশ।
ট্রাক চাপায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। তবে কীভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ।
নিহতরা হলেন, তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান এলাকার জনাব আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৫) এবং আব্দুর রজ্জাকের ছেলে শেখ ফরিদ (২৬)। এরা দুজন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার রাতে নিহত শেখ ফরিদ প্রতিবেশী ভাতিজা শরিফুলকে নিয়ে বাড়ি থেকে জেলা সদরের তিনমাইল এলাকায় শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। রাত ৯ টার দিকে মোটরসাইকেলসহ তাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে তেঁতুলিয়া হাইওয়ের পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মরদেহ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আছে।
তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন জানান, খবর পেয়ে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে বিপরীত দিক থেকে আসা কোন বাস বা ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে।
চট্টগ্রামে কনটেইনার চাপায় প্রাণ গেল মোয়াজ্জেম হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তির। তিনি রাইড শেয়ারিং করতেন। তেলবাহী ট্রেনের ধাক্কা লেগে রাস্তায় কাত হয়ে যায় একটি লরি।
এ সময় নিচে পড়ে যায় লরিতে থাকা একটি কনটেইনার। এতে চাপা পড়েন নিজের মোটরসাইকেলসহ মোয়াজ্জেম। ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ১০টার দিকে নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
রেল পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সল্টগোলা রাস্তার মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় পাশেই তেলবাহী ওয়াগনের সঙ্গে একটি লরি ধাক্কা খেয়ে কাত হয়ে যায়। তখন লরির ওপর থাকা কনটেইনার মোয়াজ্জেমের ওপর পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) তারেক মুহাম্মদ ইমরান।
তবে এটাই প্রথম ঘটনা নয়, মাসখানেক আগেও (১১ মে) নগরের পতেঙ্গা স্টিল মিল বাজার এলাকায় লরির রশি ছিঁড়ে কনটেইনার চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা গিয়েছে রিকশার আরোহী বাবা-ছেলে। এর আগে গত ৬ এপ্রিল একই এলাকায় তেলবাহী ওয়াগন ট্রেনের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার সংঘটিত হওয়ার দু'ঘণ্টা পর কনটেইনারের নিচ থেকে মোটরসাইকেলসহ মোয়াজ্জেমের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছেন লরি চালক। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার দুপুরে পরিবারের কাছে মোয়াজ্জেমের মরদেহ হস্তান্তর করেছে রেল পুলিশ।
এদিকে এই ঘটনায় শুক্রবার (৯ জুন) রেলওয়ে থানায় পলাতক লরির চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত মোয়াজ্জেমের ভাই নূর হোসেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে থানার এসআই আবু জাফর খান।
সরকারের উন্নয়ন, জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে 'জনতার মুখোমুখি, জনতার সেবক' প্রতিপাদ্য নিয়ে সিরাজগঞ্জে জনগণের সকল প্রশ্নের উত্তর ও সমস্যা - সম্ভাবনার কথা শোনার উদ্যোগ নিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের এমপি ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত মুন্না।
এই আয়োজনটি ইতিবাচক ভাবে সাড়া ফেলেছে পুরো সিরাজগঞ্জ জেলা জুড়ে। অনেকে বলছেন, স্থানীয় সাংসদ হাবিবে মিল্লাত উন্নয়ন করেছেন বলেই জনগণের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণকে বলছেন।
জনগণ তাদের দাবি, তাদের মনের ভিতর থাকা প্রশ্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা- কোনো রকম বাধা ছাড়াই স্থানীয় এমপি'র থেকে শুনতে ও জানতে পারছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৯ জুন) জেলার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনসাধারণ এর আয়োজনে রেলগেট মাইক্রো স্ট্যান্ড এ আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ হাবিবে মিল্লাত। এ সময় উন্মুক্ত ভাবে জনগণের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এমপি নিজেই। প্রতিটি মানুষ পেয়েছে নিজ ইচ্ছে মতো প্রশ্ন করার সুযোগ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ পৌর আ'লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ, সহ- সভাপতি আহসানুল হক দুলাল প্রমুখ।
আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গোশালা মণ্ডল পাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ড আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান।
সাংসদ হাবিবে মিল্লাত জানিয়েছেন, আমি নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন করেছি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করেছি। আমার দলের (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) হয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছি, উন্নয়ন দেখিয়ে। উন্নয়ন যখন করেছি, জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় নেই।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত এলাকা থেকে তিন রোহিঙ্গা নারী ও এক পুরুষকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।
আজ শুক্রবার তাদেরকে আটকের পর কমলগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তারা ভারতে প্রবেশের জন্য উখিয়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, কমলগঞ্জ উপজেলার দলই সীমান্ত দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার জেলার উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কুতুবপালং শরনার্থী শিবির থেকে পালিয়ে এসেছিল তারা।
আটক রোহিঙ্গারা হলেন- কক্সবাজার জেলার উখিয়ার সবুলাকাটা ক্যাম্পের মিনারা বেগম (২০), করমিনা বেগম (২০), হামিমা বেগম (২০) ও কুতুবপালং শরনার্থী শিবিরের আনসার আলম। এর আগেও গত ৭ জুন কমলগঞ্জের চাম্পারায় সীমান্ত থেকে আরও দুজন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছিল বিজিবি।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী দেশ রূপান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবির শ্রীমঙ্গল সেক্টর সদর দপ্তরের কমান্ডার কর্নেল ইয়াছিন বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদেরকে আটক করেছি। তাদের কমলগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।