সংগত কারণেই আপনাকে ঈর্ষা হয়, জনাব প্রিন্স মাহমুদ
সোমেশ্বর অলি | ১৭ জুলাই, ২০১৯ ১২:৫০
প্রিন্স মাহমুদ ও সোমেশ্বর অলি
আগেভাগে পৃথিবীতে আসার কিছুটা বাড়তি ‘সুবিধা আপনি’ পেয়েছেন। আপনার বড় শক্তি ‘নব্বইয়ের দশক’। আমার প্রায়ই মনে হয়, আপনি যে সময়টা যাপন করে ‘গীতিসুরের নিজস্ব পৃথিবী’টা তৈরি করেছেন, সেটি আমিও পারতাম, আলবৎ পারতাম! আমিও পারতাম একটা স্টাইল, একটা ঘরানা প্রতিষ্ঠা করতে...
কিন্তু...
পৃথিবীতে আসতে আমার একটু দেরি হয়ে গেলো। আমি যখন গান লিখতে শুরু করেছি, অনেকটা অবিন্যস্ত পায়ে, কবিকবি ভঙ্গিমা নিয়ে, ঠিক তখন ব্যান্ডের গানের বাজার বিধ্বস্ত, সে সময় আপনি ও আপনার মতো অনেকেই কাজ কমিয়ে দিয়েছেন, আধুনিক গানে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েছে হিন্দি-অনুবাদ আর চটুল সুর, তত দিনে উচ্চমার্গীয় তথা সুশীল কথাসুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন শ্রোতারা, প্রযোজকরাও হয়ে উঠেছেন তথাকথিত ব্যবসায়ী- যারা লোকসানের ‘অজুহাত-ব্যানার’ টানিয়ে ঝিমুতে শুরু করেছেন।
ফলে আমি আর কোনো নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পারলাম না, পারলাম না কবিতাঘেঁষা ‘লাজুক লিরিক’গুলো ছড়িয়ে দিতে। ‘সময় পক্ষে নেই’ ভেবে বা না ভেবেই (কেননা আমার গীতিকার হওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো না, আমি সৌভাগ্যবশত গীতিকার) গা ভাসালাম স্রোতে, মিশে গেলাম ‘ক্রমে ফুরিয়ে যাবে’- এমন গীতিকারদের মিছিলে। আপনারই চোখের সামনে, আপনার এক অনুসারী, আমি ‘অস্তিত্বহীন’ হয়ে পড়ছি। দেখুন আমার মুখটা আলাদা করা যাচ্ছে না, আমার/আমাদের লেখাগুলোও ক্যামন গৎবাঁধা, নতুনত্বহীন, কাব্য নেই, নিষ্প্রাণ...
সংগত কারণেই আপনাকে ঈর্ষা হয়, জনাব প্রিন্স মাহমুদ।
আপনার গান ধরে ধরে আজ আপনাকে বিশ্লেষণ করছি না, সেটি করার সময় নিশ্চয়ই পাবো। আজ আপনার জন্মদিনে, এ বার্তা একজন অনুজ গীতিকারের রূঢ় অভিজ্ঞতার, যে কি-না অনেক দূর যেতে পারতো গানের খেয়ায় ভেসে, সে এখন গুটিসুটি মেরে পড়ে আছে ডুবুডুবু ‘অডিও ইন্ডাস্ট্রি’র স্যাঁতসেঁতে এক কোণে, যে কি-না এখনো ভাবছে, একদিন ফিরে আসবে বাংলাদেশি গানের সুবর্ণ সুদিন! ভাবছে, কবিরাই হাওয়া বদল করবে গানের রাজ্যে, শিল্পীরাও বুঝবেন কবিতার মর্ম ও মর্যাদা, দামি কথার ‘দাম’ বাড়বে বাজারে।
এমন দিন কি সত্যি দেখতে পাবো, প্রিয় প্রিন্স ভাই? আপনি কী পারবেন একটা নতুন ‘নব্বইয়ের দশক’ তুলে দিতে আমাদের হাতে? আমরা ইচ্ছেমতো সাজাতাম তাকে, আপনার মতো করে বা আপনার চেয়েও একটু বেশি ভালো করে! সম্ভব?
শুভ জন্মদিন, প্রিয়। ইচ্ছে মতো গুছিয়ে নিন পৃথিবীতে বিচরণের দিন-তারিখগুলো...
লেখক : গীতিকবি
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
সোমেশ্বর অলি | ১৭ জুলাই, ২০১৯ ১২:৫০

আগেভাগে পৃথিবীতে আসার কিছুটা বাড়তি ‘সুবিধা আপনি’ পেয়েছেন। আপনার বড় শক্তি ‘নব্বইয়ের দশক’। আমার প্রায়ই মনে হয়, আপনি যে সময়টা যাপন করে ‘গীতিসুরের নিজস্ব পৃথিবী’টা তৈরি করেছেন, সেটি আমিও পারতাম, আলবৎ পারতাম! আমিও পারতাম একটা স্টাইল, একটা ঘরানা প্রতিষ্ঠা করতে...
কিন্তু...
পৃথিবীতে আসতে আমার একটু দেরি হয়ে গেলো। আমি যখন গান লিখতে শুরু করেছি, অনেকটা অবিন্যস্ত পায়ে, কবিকবি ভঙ্গিমা নিয়ে, ঠিক তখন ব্যান্ডের গানের বাজার বিধ্বস্ত, সে সময় আপনি ও আপনার মতো অনেকেই কাজ কমিয়ে দিয়েছেন, আধুনিক গানে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েছে হিন্দি-অনুবাদ আর চটুল সুর, তত দিনে উচ্চমার্গীয় তথা সুশীল কথাসুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন শ্রোতারা, প্রযোজকরাও হয়ে উঠেছেন তথাকথিত ব্যবসায়ী- যারা লোকসানের ‘অজুহাত-ব্যানার’ টানিয়ে ঝিমুতে শুরু করেছেন।
ফলে আমি আর কোনো নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পারলাম না, পারলাম না কবিতাঘেঁষা ‘লাজুক লিরিক’গুলো ছড়িয়ে দিতে। ‘সময় পক্ষে নেই’ ভেবে বা না ভেবেই (কেননা আমার গীতিকার হওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো না, আমি সৌভাগ্যবশত গীতিকার) গা ভাসালাম স্রোতে, মিশে গেলাম ‘ক্রমে ফুরিয়ে যাবে’- এমন গীতিকারদের মিছিলে। আপনারই চোখের সামনে, আপনার এক অনুসারী, আমি ‘অস্তিত্বহীন’ হয়ে পড়ছি। দেখুন আমার মুখটা আলাদা করা যাচ্ছে না, আমার/আমাদের লেখাগুলোও ক্যামন গৎবাঁধা, নতুনত্বহীন, কাব্য নেই, নিষ্প্রাণ...
সংগত কারণেই আপনাকে ঈর্ষা হয়, জনাব প্রিন্স মাহমুদ।
আপনার গান ধরে ধরে আজ আপনাকে বিশ্লেষণ করছি না, সেটি করার সময় নিশ্চয়ই পাবো। আজ আপনার জন্মদিনে, এ বার্তা একজন অনুজ গীতিকারের রূঢ় অভিজ্ঞতার, যে কি-না অনেক দূর যেতে পারতো গানের খেয়ায় ভেসে, সে এখন গুটিসুটি মেরে পড়ে আছে ডুবুডুবু ‘অডিও ইন্ডাস্ট্রি’র স্যাঁতসেঁতে এক কোণে, যে কি-না এখনো ভাবছে, একদিন ফিরে আসবে বাংলাদেশি গানের সুবর্ণ সুদিন! ভাবছে, কবিরাই হাওয়া বদল করবে গানের রাজ্যে, শিল্পীরাও বুঝবেন কবিতার মর্ম ও মর্যাদা, দামি কথার ‘দাম’ বাড়বে বাজারে।
এমন দিন কি সত্যি দেখতে পাবো, প্রিয় প্রিন্স ভাই? আপনি কী পারবেন একটা নতুন ‘নব্বইয়ের দশক’ তুলে দিতে আমাদের হাতে? আমরা ইচ্ছেমতো সাজাতাম তাকে, আপনার মতো করে বা আপনার চেয়েও একটু বেশি ভালো করে! সম্ভব?
শুভ জন্মদিন, প্রিয়। ইচ্ছে মতো গুছিয়ে নিন পৃথিবীতে বিচরণের দিন-তারিখগুলো...
লেখক : গীতিকবি