মিউজিক অ্যান্ড মি: অচেনা বালকের গান
নাজমুস সাকিব রহমান | ২৫ জুন, ২০২০ ১৭:৩১
মিউজিক অ্যান্ড মি (১৯৭৩) । মাইকেল জোসেফ জ্যাকসনের এই অ্যালবামটা আমি অনেকবার শুনেছি (হ্যাঁ, উনার আসল নাম এটাই)। শুনতে হয় বলে শুনেছি এরকম না। খুঁজে বের করে শোনা। এটা মাইকেলের থার্ড সলো অ্যালবাম। এর ভেতর দশটা গান আছে। গানগুলা যখন বানানো হচ্ছিল—তখন গায়কের বয়স মাত্র ১৪ বছর। মাইকেল ছিলেন চাইল্ড আর্টিস্ট। গান করা শুরু করেছিলেন ৫ বছর বয়সে।
মাইকেল তখনো জানতেন না, একদিন থ্রিলার (১৯৮২) নামে একটা অ্যালবাম হবে তার। এরপর পৃথিবী তার দিকে ঘুরে যাবে। পপ জিনিসটা তার ইশারায় উঠবে-বসবে। মিউজিক কানে ধরে দাঁড়াবে। কিন্তু এসব তো তখনো ভবিষ্যত। পিঁপড়া ছাড়া কেউ ভাবতে পারেনি।
মাইকেলের শুরুটা হয় 'জ্যাকসন ফাইভ' দিয়ে। ভাইদের ব্যান্ডে গাইতেন তিনি। শরীর দোলাতেন। দলের একজন হওয়ার চেষ্টা করতেন। অনেকে জানেন না, মাইকেলের সলো ক্যারিয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সম্পর্ক আছে। ঘন সম্পর্ক। তিনি সলো ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৭১ সালে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বছর। বলা যায়, বাংলাদেশ আর মাইকেল একইসঙ্গে স্ট্রাগল শুরু করেছিল।
যাই হোক, মাইকেলের থার্ড অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাকটা আমার পছন্দের। আমি এই গান অসংখ্যবার শুনেছি। প্রথম যখন শুনি তখন জীবন অন্যরকম ছিল। আমি তখন স্কুল ড্রেস পড়তাম। কিন্তু আমার গলায় আইডি কার্ড ঝুলতো না। সুন্দর একটা ব্যাজ থাকত। শার্টের পকেটের উপর, বুকে। দুপুরের শেষ দিকে আমরা কয়েকজন একসঙ্গে সাইবার ক্যাফেতে ঢুকতাম। আমি নিশ্চিত বলতে পারব না, সেই সময় কতবার 'মিউজিক অ্যান্ড মি' ডাউনলোড করেছি। এই গান এখনো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়।
আজকাল বলা হয়ে থাকে, নতুন প্রজন্ম অনেক এগিয়ে। তাদের হাতভর্তি গ্যাজেট। প্রযুক্তির কারণে তারা অনেককিছু পারে। আমি এসব জলে ভাসা পদ্ম-টাইপ উৎসাহের সঙ্গে একমত নই। এই শতাব্দীতে কোনো ১৪ বছর বয়সী ছেলের পক্ষে মাইকেলের মত 'মিউজিক অ্যান্ড মি' গাওয়া সম্ভব নয়। তারা হয়তো কোনো রিয়েলিটি শো'তে নাম লেখাবে। ইউটিউবের জন্য কন্টেট বানাবে। অন্য গায়কের গান ট্রিবিউট দেবে। কিন্তু নিজের গায়কী তৈরি করতে পারবে না। এই জায়গায় মাইকেলের দক্ষতা শিশুকালেই বিস্ময়কর।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে—মাইকেল নিজে সংরাইটার ছিলেন। তার লেখা গান সাউন্ড বক্স তো কাঁপিয়েছেই, ইনফ্লুয়েন্স করেছে অনেক লিরিসিস্টকে। কিন্তু 'মিউজিক অ্যান্ড মি' অ্যালবামের কোনো গানেই তিনি নাক গলাতে পারেননি। রেকর্ডিং কোম্পানি তাকে এলাউ করেনি। ফলে অন্যের লেখা লিরিক আর মিউজিকে যা হয়েছে, তা দেখার মত। শোনার মত তো অবশ্যই। 'মিউজিক অ্যান্ড মি' অ্যালবামটাকে আমি আণ্ডাররেটেড বলব না। তবে এটা আমার পছন্দের ৫০ অ্যালবামের একটা। আগ্রহীরা অ্যালবামটা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন।
লেখক: গল্পকার ও সাংবাদিক। ই-মেইল: [email protected]
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নাজমুস সাকিব রহমান | ২৫ জুন, ২০২০ ১৭:৩১

মিউজিক অ্যান্ড মি (১৯৭৩) । মাইকেল জোসেফ জ্যাকসনের এই অ্যালবামটা আমি অনেকবার শুনেছি (হ্যাঁ, উনার আসল নাম এটাই)। শুনতে হয় বলে শুনেছি এরকম না। খুঁজে বের করে শোনা। এটা মাইকেলের থার্ড সলো অ্যালবাম। এর ভেতর দশটা গান আছে। গানগুলা যখন বানানো হচ্ছিল—তখন গায়কের বয়স মাত্র ১৪ বছর। মাইকেল ছিলেন চাইল্ড আর্টিস্ট। গান করা শুরু করেছিলেন ৫ বছর বয়সে।
মাইকেল তখনো জানতেন না, একদিন থ্রিলার (১৯৮২) নামে একটা অ্যালবাম হবে তার। এরপর পৃথিবী তার দিকে ঘুরে যাবে। পপ জিনিসটা তার ইশারায় উঠবে-বসবে। মিউজিক কানে ধরে দাঁড়াবে। কিন্তু এসব তো তখনো ভবিষ্যত। পিঁপড়া ছাড়া কেউ ভাবতে পারেনি।
মাইকেলের শুরুটা হয় 'জ্যাকসন ফাইভ' দিয়ে। ভাইদের ব্যান্ডে গাইতেন তিনি। শরীর দোলাতেন। দলের একজন হওয়ার চেষ্টা করতেন। অনেকে জানেন না, মাইকেলের সলো ক্যারিয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সম্পর্ক আছে। ঘন সম্পর্ক। তিনি সলো ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৭১ সালে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বছর। বলা যায়, বাংলাদেশ আর মাইকেল একইসঙ্গে স্ট্রাগল শুরু করেছিল।
যাই হোক, মাইকেলের থার্ড অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাকটা আমার পছন্দের। আমি এই গান অসংখ্যবার শুনেছি। প্রথম যখন শুনি তখন জীবন অন্যরকম ছিল। আমি তখন স্কুল ড্রেস পড়তাম। কিন্তু আমার গলায় আইডি কার্ড ঝুলতো না। সুন্দর একটা ব্যাজ থাকত। শার্টের পকেটের উপর, বুকে। দুপুরের শেষ দিকে আমরা কয়েকজন একসঙ্গে সাইবার ক্যাফেতে ঢুকতাম। আমি নিশ্চিত বলতে পারব না, সেই সময় কতবার 'মিউজিক অ্যান্ড মি' ডাউনলোড করেছি। এই গান এখনো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়।
আজকাল বলা হয়ে থাকে, নতুন প্রজন্ম অনেক এগিয়ে। তাদের হাতভর্তি গ্যাজেট। প্রযুক্তির কারণে তারা অনেককিছু পারে। আমি এসব জলে ভাসা পদ্ম-টাইপ উৎসাহের সঙ্গে একমত নই। এই শতাব্দীতে কোনো ১৪ বছর বয়সী ছেলের পক্ষে মাইকেলের মত 'মিউজিক অ্যান্ড মি' গাওয়া সম্ভব নয়। তারা হয়তো কোনো রিয়েলিটি শো'তে নাম লেখাবে। ইউটিউবের জন্য কন্টেট বানাবে। অন্য গায়কের গান ট্রিবিউট দেবে। কিন্তু নিজের গায়কী তৈরি করতে পারবে না। এই জায়গায় মাইকেলের দক্ষতা শিশুকালেই বিস্ময়কর।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে—মাইকেল নিজে সংরাইটার ছিলেন। তার লেখা গান সাউন্ড বক্স তো কাঁপিয়েছেই, ইনফ্লুয়েন্স করেছে অনেক লিরিসিস্টকে। কিন্তু 'মিউজিক অ্যান্ড মি' অ্যালবামের কোনো গানেই তিনি নাক গলাতে পারেননি। রেকর্ডিং কোম্পানি তাকে এলাউ করেনি। ফলে অন্যের লেখা লিরিক আর মিউজিকে যা হয়েছে, তা দেখার মত। শোনার মত তো অবশ্যই। 'মিউজিক অ্যান্ড মি' অ্যালবামটাকে আমি আণ্ডাররেটেড বলব না। তবে এটা আমার পছন্দের ৫০ অ্যালবামের একটা। আগ্রহীরা অ্যালবামটা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন।
লেখক: গল্পকার ও সাংবাদিক। ই-মেইল: [email protected]