রাজনীতি হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো: রাষ্ট্রপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ১৭:০৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত
অবসরের পর আমলাদের অবাধে রাজনীতিতে প্রবেশের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রবীণ রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে তিনি এ সমালোচনা করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে প্রবাদ আছে গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ (ভাবি)। রাজনীতিও হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো। যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, বাধা নাই।’
কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার টানে তিনি বলেন, ‘আমি যদি বলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের লেকচারার হইতাম চাই, নিশ্চয়ই ভিসি সাহেব আমারে নেবেন না। বা কোনো হাসপাতালে গিয়া বলি, এতদিন রাজনীতি করছি, হাসপাতালে ডাক্তারি করতে দেন। বোঝেন অবস্থাটা কী হবে? এগুলো বললে হাসির পাত্র হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না।’
‘যদি বলি এত বছর রাজনীতি করছি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্ট এর পদ দিতে পার। সেখানে আমাকে দিবে? কিন্তু রাজনীতি গরিবের ভাউজ’ যোগ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে উদ্দেশ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘ভিসি সাহেবও অবসরের পর রাজনীতি করবেন। যারা সরকারি চাকরি করেন... জজ সাহেব যারা আছেন ৬৭ বছর চাকরি করবেন। রিটায়ারের পর বলবেন- আমিও রাজনীতিবিদ। আর্মির জেনারেল, সেনাপ্রধান, সরকারি সচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, কেবিনেট সেক্রেটারি রিটায়ার কইরা বলেন- আমি রাজনীতি করবো। কোনো রাখঢাক নাই। যার ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা তখনই রাজনীতি ঢোকে।’
তিনি বলেন, ‘চাকরি করে যা করার করছে। এরপর বলছে রাজনীতি করবো। আমার মনে হয় সকল রাজনৈতিক দলকে এটা চিন্তা করা উচিত।’
‘হ্যাঁ, এক্সপার্টের দরকার আছে। অনেক সময় বলা হয় পেশাভিত্তিক পার্লামেন্ট। হ্যাঁ, পেশাভিত্তিক করেন। এমবিবিএস পাস করে সরাসরি রাজনীতি করেন। কোনো অসুবিধা নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকরিতে না ঢুকে সরাসরি রাজনীতিতে ঢোকেন’ যোগ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘৫৯ বছর, ৬৫ বছর ৬৭ বছর পুলিশের ঊর্ধ্বতন ডিআইজি, আইজিরাও রাজনীতি করবেন। মনে মনে কই, রাজনীতি করার সময় এই পুলিশ তোমার বাহিনী দিয়ে পাছার মধ্যে বাড়ি দিছো। তুমি আবার আমার লগে আইছো রাজনীতি করতে। কই যামু!’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এই যে রাজনীতিবিদদের সমস্যা এই সমস্যার কারণও এটা। বিজনেসম্যানরা তো আছেই... শিল্পপতি-ভগ্নিপতিদের আগমন এভাবে হয়ে যায়। এগুলো থামানো দরকার।’
অতি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘ছোটবাচ্চাদের মোবাইল দিয়ে বসায়া রাখে। এইটাও চিন্তা-ভাবনার বিষয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘ট্রেনে-বাসে উঠলে পাশের যাত্রীকে বলতাম কোথায় যাবে। এখন কোনো কথাই নেই। বইয়াই মোবাইল টিপ দিয়া দেয়। তুই ব্যাটা জাহান্নামে যা, আমি আছি মোবাইল আছে। এই যে অবস্থা। আমার মনে হয় সামাজিক বন্ধন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ১৭:০৯

অবসরের পর আমলাদের অবাধে রাজনীতিতে প্রবেশের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রবীণ রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে তিনি এ সমালোচনা করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে প্রবাদ আছে গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ (ভাবি)। রাজনীতিও হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো। যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, বাধা নাই।’
কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার টানে তিনি বলেন, ‘আমি যদি বলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের লেকচারার হইতাম চাই, নিশ্চয়ই ভিসি সাহেব আমারে নেবেন না। বা কোনো হাসপাতালে গিয়া বলি, এতদিন রাজনীতি করছি, হাসপাতালে ডাক্তারি করতে দেন। বোঝেন অবস্থাটা কী হবে? এগুলো বললে হাসির পাত্র হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না।’
‘যদি বলি এত বছর রাজনীতি করছি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্ট এর পদ দিতে পার। সেখানে আমাকে দিবে? কিন্তু রাজনীতি গরিবের ভাউজ’ যোগ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে উদ্দেশ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘ভিসি সাহেবও অবসরের পর রাজনীতি করবেন। যারা সরকারি চাকরি করেন... জজ সাহেব যারা আছেন ৬৭ বছর চাকরি করবেন। রিটায়ারের পর বলবেন- আমিও রাজনীতিবিদ। আর্মির জেনারেল, সেনাপ্রধান, সরকারি সচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, কেবিনেট সেক্রেটারি রিটায়ার কইরা বলেন- আমি রাজনীতি করবো। কোনো রাখঢাক নাই। যার ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা তখনই রাজনীতি ঢোকে।’
তিনি বলেন, ‘চাকরি করে যা করার করছে। এরপর বলছে রাজনীতি করবো। আমার মনে হয় সকল রাজনৈতিক দলকে এটা চিন্তা করা উচিত।’
‘হ্যাঁ, এক্সপার্টের দরকার আছে। অনেক সময় বলা হয় পেশাভিত্তিক পার্লামেন্ট। হ্যাঁ, পেশাভিত্তিক করেন। এমবিবিএস পাস করে সরাসরি রাজনীতি করেন। কোনো অসুবিধা নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকরিতে না ঢুকে সরাসরি রাজনীতিতে ঢোকেন’ যোগ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘৫৯ বছর, ৬৫ বছর ৬৭ বছর পুলিশের ঊর্ধ্বতন ডিআইজি, আইজিরাও রাজনীতি করবেন। মনে মনে কই, রাজনীতি করার সময় এই পুলিশ তোমার বাহিনী দিয়ে পাছার মধ্যে বাড়ি দিছো। তুমি আবার আমার লগে আইছো রাজনীতি করতে। কই যামু!’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এই যে রাজনীতিবিদদের সমস্যা এই সমস্যার কারণও এটা। বিজনেসম্যানরা তো আছেই... শিল্পপতি-ভগ্নিপতিদের আগমন এভাবে হয়ে যায়। এগুলো থামানো দরকার।’
অতি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘ছোটবাচ্চাদের মোবাইল দিয়ে বসায়া রাখে। এইটাও চিন্তা-ভাবনার বিষয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘ট্রেনে-বাসে উঠলে পাশের যাত্রীকে বলতাম কোথায় যাবে। এখন কোনো কথাই নেই। বইয়াই মোবাইল টিপ দিয়া দেয়। তুই ব্যাটা জাহান্নামে যা, আমি আছি মোবাইল আছে। এই যে অবস্থা। আমার মনে হয় সামাজিক বন্ধন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।’