বেগম রোকেয়ার আদর্শে সন্তানকে গড়ে তুলতে মায়েদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৮:১২
বেগম রোকেয়ার ১৩৮তম জন্মদিন এবং ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের সঙ্গে ছবি তোলেন। ছবি: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মা-বাবাকে, বিশেষত মায়েদের তাদের সন্তানকে বেগম রোকেয়ার আদর্শে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে যত্নবান হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের নারীরা সুশিক্ষিত হবে এবং নিজের সন্তানকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক থেকে ছেলেমেয়েরা যেন দূরে থাকে সে জন্য মায়েদের বিশেষ নজর দিতে হবে।’
বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘রোকেয়া পদক-২০১৮’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব বলেন।
শেখ হাসিনা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব না রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মায়েদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যাতে করে কোনো সমস্যা হলে ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের মনের কথা মা’কে বলতে পারে। কারণ মা-বাবাই হচ্ছে সন্তানের সব থেকে বড় বন্ধু। কাজেই সে ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ মা’কেই নিতে হবে।’
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম স্বাগত বক্তৃতা করেন।
এ বছর নারীর ক্ষমতায়নে আসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের বিশিষ্ট পাঁচ নারীকে বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ তে ভূষিত করা হয়।
তারা হলেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার, কুমিল্লা মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষয়িত্রী অধ্যাপক জোহরা আনিস, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মী শিলা চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখিকা এবং সমাজকর্মী রমা চৌধুরী এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার লেখিকা ও সমাজকর্মী রোকেয়া বেগম।
এর মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার অনুষ্ঠানে পদক বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং সত্যিকারের প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বেগম রোকেয়া আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং তার যে স্বপ্ন ছিল, আজকে কিন্তু পৃথিবী সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে এইদিকে আমরা অনেক দূর নিয়ে গেছি।’
তিনি এ সময় নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার বাণী ‘পুরুষের সক্ষমতা লাভের জন্য আমাদের যাহা করিতে হয় তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয় তবে তাহাই করিব’ উল্লেখ করে বলেন, ‘কাজেই তার এই কথাটা আমাদের মনে রাখতে হবে এবং আজকে যদি আমরা বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখব তার এই আহবান বৃথা যায়নি’।
প্রধানমন্ত্রী এসময় নারীর প্রগতির জন্য বেগম রোকেয়ার পদাংক অনুসরণ করেই তার সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং করবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ৬ মাসে বর্ধিত করেছে, সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করেছে এবং ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী আসন এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত করেছে।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০ করা, নারী উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে আড়াই লাখ ল্যাকটেটিং মা ও ৭ লাখ গর্ভবতী দরিদ্র মায়ের ভাতার পরিমাণ পাঁচ শ টাকার পরিবর্তে আট শ টাকা করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও শতকরা ৬০ ভাগ নিয়োগ নারীদের মধ্য থেকে করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশে রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়, অর্থনীতি, সাংবাদিকতা, ক্রীড়া, তথ্য-প্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং খেলাধুলাসহ পেশাভিত্তিক সব স্তরে নারীদের গর্বিত পদচারণা রয়েছে।
তিনি বলেন, এভারেস্ট বিজয় থেকে শুরু করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নারীরা সাফল্যের সঙ্গে ভূমিকা রাখছেন। অর্জন করছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মাননা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা এবং সংসদ উপনেতা এই চারটি পদে নারীরা আসীন, যার নজীর বিশ্বে বিরল।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অবদান চিরস্মরণীয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাদের দেশের নারী সমাজের ওপর বর্বর অত্যাচার চালানো সত্ত্বেও তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছিলেন।
তিনি দেশে নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘আজ যতটুকু আমরা এগুতে পেরেছি তার পথ দেখিয়েছেন বেগম রোকেয়া। কারণ, তিনি নারী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি নারীর উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯৭২ সালে সংবিধানে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন এবং নারীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সংগ্রাম করেছেন তেমনি পাশে থেকে তাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন আমার মা শেখ ফজিলাতুন নেছা। মা তার জীবনে যে আত্মত্যাগ করেছেন বড় সন্তান হিসেবে আমি তা জানি। তাই, আজ তার কথা বারবার মনে পড়ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু কিছু জায়গায় এখনও কূপমন্ডুকতা রয়েছে। কিন্তু সবকিছুর সঙ্গেই একটি আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকে। নারীরা যখন অর্থ উপার্জন করতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তখন সমাজে তাদের একটা জায়গা হয়, যে কথাটা জাতির পিতা সবসময় বলতেন।
জাতির পিতার বক্তব্য ‘মেয়েরা যদি কামাই করে ১০টা টাকা আঁচলে বেঁধে ঘরে আনে তাহলে ঐ সমাজ বা সংসারে তার একটা জায়গা থাকে। কথা বলার সুযোগ থাকে’ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর নারী তা করতে না পারলে তার অবস্থান সমাজ কিংবা সংসার কোথাও থাকে না। আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকার চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে যে সুযোগটা করেছে তার সুফল নারী সমাজ ভোগ করছে।
তিনি এ সময় নারীদের বেশি বেশি সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে কবিগুরুর ভাষায় বলেন, ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দেবে অধিকার হে বিধাতা’- এই কান্না আমরা কাঁদতে চাই না।
প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার শেষ দিকে ৯ ডিসেম্বর দিনটি তার কন্যা এবং বিশ্ব অটিজম আন্দোলনের অগ্রসেনানী সায়মা হোসেনের জন্মদিন উল্লেখ করে তার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৮:১২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মা-বাবাকে, বিশেষত মায়েদের তাদের সন্তানকে বেগম রোকেয়ার আদর্শে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে যত্নবান হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের নারীরা সুশিক্ষিত হবে এবং নিজের সন্তানকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক থেকে ছেলেমেয়েরা যেন দূরে থাকে সে জন্য মায়েদের বিশেষ নজর দিতে হবে।’ বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘রোকেয়া পদক-২০১৮’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব বলেন। শেখ হাসিনা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব না রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মায়েদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যাতে করে কোনো সমস্যা হলে ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের মনের কথা মা’কে বলতে পারে। কারণ মা-বাবাই হচ্ছে সন্তানের সব থেকে বড় বন্ধু। কাজেই সে ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ মা’কেই নিতে হবে।’ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম স্বাগত বক্তৃতা করেন। এ বছর নারীর ক্ষমতায়নে আসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের বিশিষ্ট পাঁচ নারীকে বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ তে ভূষিত করা হয়। তারা হলেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার, কুমিল্লা মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষয়িত্রী অধ্যাপক জোহরা আনিস, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মী শিলা চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখিকা এবং সমাজকর্মী রমা চৌধুরী এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার লেখিকা ও সমাজকর্মী রোকেয়া বেগম। এর মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার অনুষ্ঠানে পদক বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং সত্যিকারের প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বেগম রোকেয়া আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং তার যে স্বপ্ন ছিল, আজকে কিন্তু পৃথিবী সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে এইদিকে আমরা অনেক দূর নিয়ে গেছি।’ তিনি এ সময় নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার বাণী ‘পুরুষের সক্ষমতা লাভের জন্য আমাদের যাহা করিতে হয় তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয় তবে তাহাই করিব’ উল্লেখ করে বলেন, ‘কাজেই তার এই কথাটা আমাদের মনে রাখতে হবে এবং আজকে যদি আমরা বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখব তার এই আহবান বৃথা যায়নি’। প্রধানমন্ত্রী এসময় নারীর প্রগতির জন্য বেগম রোকেয়ার পদাংক অনুসরণ করেই তার সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং করবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ৬ মাসে বর্ধিত করেছে, সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করেছে এবং ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী আসন এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত করেছে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০ করা, নারী উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে আড়াই লাখ ল্যাকটেটিং মা ও ৭ লাখ গর্ভবতী দরিদ্র মায়ের ভাতার পরিমাণ পাঁচ শ টাকার পরিবর্তে আট শ টাকা করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও শতকরা ৬০ ভাগ নিয়োগ নারীদের মধ্য থেকে করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশে রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়, অর্থনীতি, সাংবাদিকতা, ক্রীড়া, তথ্য-প্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং খেলাধুলাসহ পেশাভিত্তিক সব স্তরে নারীদের গর্বিত পদচারণা রয়েছে। তিনি বলেন, এভারেস্ট বিজয় থেকে শুরু করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নারীরা সাফল্যের সঙ্গে ভূমিকা রাখছেন। অর্জন করছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মাননা। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা এবং সংসদ উপনেতা এই চারটি পদে নারীরা আসীন, যার নজীর বিশ্বে বিরল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অবদান চিরস্মরণীয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাদের দেশের নারী সমাজের ওপর বর্বর অত্যাচার চালানো সত্ত্বেও তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছিলেন। তিনি দেশে নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘আজ যতটুকু আমরা এগুতে পেরেছি তার পথ দেখিয়েছেন বেগম রোকেয়া। কারণ, তিনি নারী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি নারীর উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯৭২ সালে সংবিধানে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন এবং নারীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সংগ্রাম করেছেন তেমনি পাশে থেকে তাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন আমার মা শেখ ফজিলাতুন নেছা। মা তার জীবনে যে আত্মত্যাগ করেছেন বড় সন্তান হিসেবে আমি তা জানি। তাই, আজ তার কথা বারবার মনে পড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু কিছু জায়গায় এখনও কূপমন্ডুকতা রয়েছে। কিন্তু সবকিছুর সঙ্গেই একটি আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকে। নারীরা যখন অর্থ উপার্জন করতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তখন সমাজে তাদের একটা জায়গা হয়, যে কথাটা জাতির পিতা সবসময় বলতেন। জাতির পিতার বক্তব্য ‘মেয়েরা যদি কামাই করে ১০টা টাকা আঁচলে বেঁধে ঘরে আনে তাহলে ঐ সমাজ বা সংসারে তার একটা জায়গা থাকে। কথা বলার সুযোগ থাকে’ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর নারী তা করতে না পারলে তার অবস্থান সমাজ কিংবা সংসার কোথাও থাকে না। আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকার চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে যে সুযোগটা করেছে তার সুফল নারী সমাজ ভোগ করছে। তিনি এ সময় নারীদের বেশি বেশি সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে কবিগুরুর ভাষায় বলেন, ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দেবে অধিকার হে বিধাতা’- এই কান্না আমরা কাঁদতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার শেষ দিকে ৯ ডিসেম্বর দিনটি তার কন্যা এবং বিশ্ব অটিজম আন্দোলনের অগ্রসেনানী সায়মা হোসেনের জন্মদিন উল্লেখ করে তার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।