শীতের শুরুতেই মশার যন্ত্রণা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২০:৪২
মশা নিধন। ফাইল ফটো
মশা নিয়ে রাজধানীবাসীর আক্ষেপ পুরনো। সিটি মেয়র, কাউন্সিলররা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও মশা নির্মূল করা যায়নি। অন্যান্য বারের মতো এবারো শীতের প্রথমেই শুরু হয়েছে মশার যন্ত্রণা।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান রনির ৬ বছর বয়সী মেয়ে সাবিহা রহমান। বাবা-মায়ের কাছে সে প্রায়ই জানতে চায়-এত মশা কেন? মশার কয়েল, মশা মারার ব্যাট-কোনো কিছু দিয়েই নাকি মশানিধন সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিশুটির বাবার। মিরপুরের এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে মশার জ্বালায় বিরক্ত হয়ে একটু পরপরই বলে উঠে উফ! বাবা, এত্ত মশা কেন?’
রাজধানীতে মশার জ্বালা নিয়ে এ অভিযোগ শুধু রনির নয়, বেশিরভাগ নগরবাসীর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ নিত্যদিনের। ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় শীত মৌসুমে মশার উপদ্রব আরো বেড়ে যায়। এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারো। মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচি নিলেও মশার উপদ্রব কমেনি।
মশা নিয়ন্ত্রণে গত ২ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় নিয়মিত মশানিধনে ফগিং ও স্প্রে কার্যক্রম চলছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
তবুও রাজধানীতে কমছে না মশার উপদ্রব। অথচ প্রতি বছর মশানিধন কার্যক্রমে দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বাড়ছেই। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে দুই সিটি মিলিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটের রাজস্ব ব্যয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় অংশের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডিএনসিসিতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশানিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এ ছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ডিএসসিসিতে চলতি অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। মশানিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
গত ২ ডিসেম্বর ডিএসসিসির পক্ষ থেকে মশা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গৃহীত স্পেশ্যাল ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ উদ্বোধন করেন মেয়র সাঈদ খোকন। সে সময় জানানো হয়, কর্পোরেশনের ৫টি অঞ্চলেই একযোগে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩৬৭ জন মশকনিধন কর্মী কাজ করবেন। এ কাজে ৩২৪টি হস্তচালিত মেশিন, ২৪৭টি ফগার মেশিন এবং ২০টি হুইল ব্যারো মেশিন ব্যবহার করা হবে।
ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মশকনিধন বিষয়টি শুধু তারা কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করে। মশার ওষুধ এখন কাউন্সিলরদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাই বিষয়টি এখন কাউন্সিলরদের দায়িত্বে। তবে সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তারা খুব শিগগিরই বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেবেন।
মশকনিধন বিষয়ে ডিএনসিসি অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী কর্মকর্তা গুল্লাহ সিংহ বলেন, ‘বর্তমানে মশানিধনের জন্য জনবল, ওষুধ, মেশিনসহ কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আমরা শুধু মনিটরিং করি।’
রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘শুধু পত্রিকা-টিভিতেই দেখি মশা নিধনের জন্য বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব মশকনিধন কর্মীদের দেখা পাই না।’
একই রকম অভিযোগ মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দা আহমেদ নূরের। তিনি বলেন, ‘মশার কামড়ে অতিষ্ঠ-বিরক্ত আমরা। ইদানিং মশার অত্যাচার আরো বেড়েছে। কয়েল, মশারি ব্যবহার করেও মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না অনেক সময়। এ ছাড়া মাঝে মাঝে মশকনিধন কর্মীদের মশার ওষুধ স্প্রে করতে দেখা গেলেও মশা মরে না।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২০:৪২

মশা নিধন। ফাইল ফটো
মশা নিয়ে রাজধানীবাসীর আক্ষেপ পুরনো। সিটি মেয়র, কাউন্সিলররা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও মশা নির্মূল করা যায়নি। অন্যান্য বারের মতো এবারো শীতের প্রথমেই শুরু হয়েছে মশার যন্ত্রণা।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান রনির ৬ বছর বয়সী মেয়ে সাবিহা রহমান। বাবা-মায়ের কাছে সে প্রায়ই জানতে চায়-এত মশা কেন? মশার কয়েল, মশা মারার ব্যাট-কোনো কিছু দিয়েই নাকি মশানিধন সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিশুটির বাবার। মিরপুরের এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে মশার জ্বালায় বিরক্ত হয়ে একটু পরপরই বলে উঠে উফ! বাবা, এত্ত মশা কেন?’
রাজধানীতে মশার জ্বালা নিয়ে এ অভিযোগ শুধু রনির নয়, বেশিরভাগ নগরবাসীর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ নিত্যদিনের। ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় শীত মৌসুমে মশার উপদ্রব আরো বেড়ে যায়। এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারো। মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচি নিলেও মশার উপদ্রব কমেনি।
মশা নিয়ন্ত্রণে গত ২ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় নিয়মিত মশানিধনে ফগিং ও স্প্রে কার্যক্রম চলছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
তবুও রাজধানীতে কমছে না মশার উপদ্রব। অথচ প্রতি বছর মশানিধন কার্যক্রমে দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বাড়ছেই। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে দুই সিটি মিলিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটের রাজস্ব ব্যয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় অংশের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডিএনসিসিতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশানিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এ ছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ডিএসসিসিতে চলতি অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। মশানিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
গত ২ ডিসেম্বর ডিএসসিসির পক্ষ থেকে মশা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গৃহীত স্পেশ্যাল ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ উদ্বোধন করেন মেয়র সাঈদ খোকন। সে সময় জানানো হয়, কর্পোরেশনের ৫টি অঞ্চলেই একযোগে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩৬৭ জন মশকনিধন কর্মী কাজ করবেন। এ কাজে ৩২৪টি হস্তচালিত মেশিন, ২৪৭টি ফগার মেশিন এবং ২০টি হুইল ব্যারো মেশিন ব্যবহার করা হবে।
ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মশকনিধন বিষয়টি শুধু তারা কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করে। মশার ওষুধ এখন কাউন্সিলরদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাই বিষয়টি এখন কাউন্সিলরদের দায়িত্বে। তবে সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তারা খুব শিগগিরই বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেবেন।
মশকনিধন বিষয়ে ডিএনসিসি অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী কর্মকর্তা গুল্লাহ সিংহ বলেন, ‘বর্তমানে মশানিধনের জন্য জনবল, ওষুধ, মেশিনসহ কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আমরা শুধু মনিটরিং করি।’
রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘শুধু পত্রিকা-টিভিতেই দেখি মশা নিধনের জন্য বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব মশকনিধন কর্মীদের দেখা পাই না।’
একই রকম অভিযোগ মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দা আহমেদ নূরের। তিনি বলেন, ‘মশার কামড়ে অতিষ্ঠ-বিরক্ত আমরা। ইদানিং মশার অত্যাচার আরো বেড়েছে। কয়েল, মশারি ব্যবহার করেও মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না অনেক সময়। এ ছাড়া মাঝে মাঝে মশকনিধন কর্মীদের মশার ওষুধ স্প্রে করতে দেখা গেলেও মশা মরে না।’
শেয়ার করুন