পদ্মা সেতুতে বার্ষিক বরাদ্দ কমছে ২০৪০ কোটি টাকা
মামুন আব্দুল্লাহ | ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ১১:৩৬
ফাইল ফটো
প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে বার্ষিক বরাদ্দের পরিমাণ ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা কমানো হচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সংশোধনীতে এই বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
পরিকল্পনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নকশা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসেনি। এ জন্য বাস্তবায়নের মেয়াদকাল এক বছর বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এ বছরের পুরোপুরি অর্থ ব্যয় করতে না পেরে সমর্পণ করছে সেতু বিভাগ। চলতি বছরের প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এডিপির সংশোধনীতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তিন হাজার ২৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতু সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্প। প্রকল্পটি দুবার সংশোধনের পর বাস্তবায়নের মেয়াদকাল সাড়ে ৯ বছর পার হয়েছে। বর্তমানে এর মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বছরভিত্তিক বিভাজন করে এই অর্থ বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে এ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) থেকে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৩৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর বাকি টাকা বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে ব্যয় হওয়ার কথা।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, জিওবির এই বরাদ্দ থেকে ছেটে ফেলা হবে এক হাজার ৩০১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে জিওবিতে চলতি বছরে বরাদ্দ থাকবে এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা বৈদেশিক সহায়তার অংশ থেকে কাটা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নকশা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি। এ জন্য এক বছর মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। এখন বছরভিত্তিক বরাদ্দে রি-শিডিউল করা হচ্ছে। সময় যেহেতু পাওয়া গেছে, এ জন্য বরাদ্দও কমানো হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া বর্ধিত সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে কি না, সেটাও নিশ্চিত করা বলে যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না। ’
এই প্রকল্পে গত নভেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ১১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবির অর্থ ছিল চার হাজার ৯০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এই ব্যয় বরাদ্দের প্রায় ৬০ ভাগের মতো। গতকাল বৃহস্পতিবার শফিকুল ইসলাম জানান, ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দে ৬২ শতাংশ অর্থ।
সরকারের ফাস্টট্র্যাকভুক্ত পদ্মা সেতুর মূল আকার ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর বাইরে সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটর। সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি। মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হবে ছয়টি। পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৬৪টি। নির্মাণকাজ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ষষ্ঠ স্প্যান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এটি বসানো হবে। এটি বসলে সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হবে। আর ফেব্রুয়ারিতে বসতে পারে আরেকটি স্প্যান। সপ্তম স্প্যানটি বসানো হলে সেতুর এক কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হবে। তারপরও চলতি বছর কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও সদ্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী (বর্তমানে অর্থমন্ত্রী) আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছিলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় আর বাড়ানো হবে না। তবে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হবে। এরপর আর মেয়াদও বাড়াতে চাই না।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
মামুন আব্দুল্লাহ | ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ১১:৩৬

প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে বার্ষিক বরাদ্দের পরিমাণ ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা কমানো হচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সংশোধনীতে এই বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
পরিকল্পনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নকশা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসেনি। এ জন্য বাস্তবায়নের মেয়াদকাল এক বছর বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এ বছরের পুরোপুরি অর্থ ব্যয় করতে না পেরে সমর্পণ করছে সেতু বিভাগ। চলতি বছরের প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এডিপির সংশোধনীতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তিন হাজার ২৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতু সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্প। প্রকল্পটি দুবার সংশোধনের পর বাস্তবায়নের মেয়াদকাল সাড়ে ৯ বছর পার হয়েছে। বর্তমানে এর মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বছরভিত্তিক বিভাজন করে এই অর্থ বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে এ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) থেকে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৩৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর বাকি টাকা বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে ব্যয় হওয়ার কথা।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, জিওবির এই বরাদ্দ থেকে ছেটে ফেলা হবে এক হাজার ৩০১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে জিওবিতে চলতি বছরে বরাদ্দ থাকবে এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা বৈদেশিক সহায়তার অংশ থেকে কাটা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নকশা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি। এ জন্য এক বছর মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। এখন বছরভিত্তিক বরাদ্দে রি-শিডিউল করা হচ্ছে। সময় যেহেতু পাওয়া গেছে, এ জন্য বরাদ্দও কমানো হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া বর্ধিত সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে কি না, সেটাও নিশ্চিত করা বলে যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না। ’
এই প্রকল্পে গত নভেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ১১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবির অর্থ ছিল চার হাজার ৯০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এই ব্যয় বরাদ্দের প্রায় ৬০ ভাগের মতো। গতকাল বৃহস্পতিবার শফিকুল ইসলাম জানান, ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দে ৬২ শতাংশ অর্থ।
সরকারের ফাস্টট্র্যাকভুক্ত পদ্মা সেতুর মূল আকার ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর বাইরে সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটর। সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি। মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হবে ছয়টি। পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৬৪টি। নির্মাণকাজ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ষষ্ঠ স্প্যান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এটি বসানো হবে। এটি বসলে সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হবে। আর ফেব্রুয়ারিতে বসতে পারে আরেকটি স্প্যান। সপ্তম স্প্যানটি বসানো হলে সেতুর এক কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হবে। তারপরও চলতি বছর কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও সদ্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী (বর্তমানে অর্থমন্ত্রী) আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছিলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় আর বাড়ানো হবে না। তবে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হবে। এরপর আর মেয়াদও বাড়াতে চাই না।’