টেকনাফে ইয়াবার ‘চেরাগ’
বাসের হেলপার, জেলেও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক
রিহান আবদুল্লাহ ও আবদুল আজিজ, কক্সবাজার থেকে | ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০৮:৪৬
(উপর থেকে) ১. টেকনাফের নাজিরপাড়ায় ‘ইয়াবা কারবারি’ নূর মোহাম্মদের বাড়ি, ২. নাজিরপাড়ারর এনাম মেম্বারের বাড়ি, ৩. নাজিরপাড়ায় জিয়াউর রহমানের বাড়ি, ৪. মৌলভীপাড়ায় আবদুর রহমানের বাড়ি, ৫. মৌলভীপাড়ায় রজব আলীর বাড়ী। ছবি: দেশ রূপান্তর
টেকনাফ শহরসংলগ্ন উত্তর লম্বরীপাড়ার বাসিন্দা মীর কাসেম। পেশা বলতে তেমন কিছুই নেই তার, ছেঁড়া লুঙ্গি আর শার্ট পরে চলাচল করেন। অথচ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মালিক তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১০ বছর ইয়াবার কারবার করে কক্সবাজারের পাহাড়গুলোর মতোই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত পৃষ্ঠপোষকদের অন্যতম মীর কাসেমের মতোই টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ও তাদের ঘনিষ্ঠরা গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। টেকনাফের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে তাদের ও স্বজনদের নামে রয়েছে আলিশান বাড়ি। কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আলোচিত সাবেক সাংসদ ও বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত আবদুর রহমান বদির ‘আশীর্বাদেই’ টেকনাফে ইয়াবা বাণিজ্যের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
গত কয়েক দিন টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে উঠেছে হাজারো বাড়ি-ঘর। অধিকাংশ বাড়িই দুই থেকে তিনতলা। অত্যাধুনিক এসব বাড়ির মালিক মাদক কারবারিরা। তাদের মধ্যে কারও কারও আগে এক বেলা খাবারও জুটত না। তারাই বদির ‘কল্যাণে যেন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন’।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণার পর মাদক কারবারিদের অঢেল সম্পদ নিয়ে এলাকায় আলোচনা এখন তুঙ্গে। টেকনাফে ঘুরে জানা গেছে, ইয়াবা কারবারিদের অনেকে ওই সব অট্টালিকায় তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউ কেউ রয়েছেন কারাগারে।
টেকনাফের শীলবনিয়াপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল করিম, তার ভাই জিয়াউল করিম ও রাশেদুল করিম। ১৫ বছর আগেও তারা ঠিকমতো খাবার পেতেন না। এখন প্রত্যেক পরিবার কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। ‘মাদকের রাজা’ হিসেবে পরিচিত সাইফুল করিম, তার ভাইসহ অনেক মাদক কারবারি বিদেশে পালিয়েছেন। মালয়েশিয়া, দুবাই ও মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদকের কারবার। মাদক কারবার করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফে অঢেল সম্পদ করেছেন বদির ‘আস্থাভাজন’ সাইফুল। টেকনাফের শীলবনিয়ায় তার রয়েছে অত্যাধুনিক বাড়ি, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে আবাসিক হোটেলসহ কয়েক শ কোটি টাকার জমি রয়েছে তার নামে। এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, নামের চেয়ে বেনামের সম্পদই তার অনেক বেশি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি ও বদির আপন ছোট ভাই আবদুস শুক্কুর, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান, বোন নুরজাহান ও ভাগনে সাহেদ রহমান প্রত্যেকেই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। বদির ইন্ধনে তারা মাদক কারবার চালিয়ে অল্প সময়েই এসব সম্পদের মালিক হন। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেন ছিল। প্রতি মাসেই তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ইয়াবার চালান আনতেন টেকনাফে। সবার নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
এখনকার শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত নুরুল হুদা একসময় ছিলেন গাড়ির হেলপার। ২০১০ সালে শুরু করেন ইয়াবা পাচার। মাত্র আট বছর ইয়াবা বেচাকেনা করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ‘কালো টাকার জোরে’ হ্নীলা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি হন। তার রয়েছে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও বিপুল পরিমাণ জায়গা। হুদাসহ তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
টেকনাফের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা সম্প্রতি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জিয়াউর রহমান ইয়াবার কারবার করে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হন। এলাকায় তিনি একটি আলিশান দোতলা বাড়ি করেন প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে তার নামে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ও জমি আছে। নামে-বেনামে তার আরও সম্পদ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুশরাতের মধ্যম জালিয়াপাড়ায় রয়েছে একটি অত্যাধুনিক বাড়ি। টেকনাফ স্টেশনে আছে দুটি গাড়ির শোরুম। এর বাইরে ব্যাংকে আছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। মাদক কারবারি একরাম হোসেন ওরফে পিচ্চি একরাম একসময় কোরআনে হাফেজ ছিলেন। ২০১০ সালের দিকে ইয়াবা কারবারিতে নাম লেখান। এখন মিয়ানমারে অবস্থান করে ইয়াবা পাঠাচ্ছেন। ইয়াবা কারবার করে মৌলভীপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের করেছেন তিনি।
টেকনাফের মিঠাপানিরছড়া এলাকার শামশুল আলম ওরফে কানা শামশু একসময় নৌকায় মাছ ধরে জীবন চালাতেন। গত ১০ বছর ইয়াবা কারবারে নেমে এখন প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহর দুই ভাই জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান ইয়াবার কারবার করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের সহায়তা করছেন ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম মুন্না ও সুলতানসহ অনেকেই। টেকনাফের হাতিয়ার ঘোনার জাকির হোসেন ইয়াবার কারবার চালিয়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। এলাকায় রয়েছে তার একটি অট্টালিকা। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। চড়েন ২৮ লাখ টাকার প্রাইভেট কারে। একই এলাকার কামাল হোসেন দীর্ঘদিন ইয়াবার কারবার করে কোটি কোটি টাকা আয় করে সৌদি আরব পাড়ি জমান। বদির খালাতো ভাই মং মং সেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাতে একাধিকবার ধরা পড়েন। তবে বদির ‘বদৌলতে’ জামিনে বেরিয়ে আসেন। টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ায় তার রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। এ ছাড়া মুজিব ও সৈয়দ হোসেন এই ইয়াবার করে অল্প সময়ে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থানীয় অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও তাদের সহযোগীরা কারবার চালিয়ে আসছেন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইয়াবা কারবারিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সম্পদ বের করার কাজ চলছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, বেশিরভাগ ইয়াবা কারবারি অঢেল সম্পদের মালিক।’ কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারির অভিযোগ আছে। ইয়াবা কারবার করে তিনি এখন প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। টেকনাফে রয়েছে তার তিনটি বাড়ি ও অনেক জমিজমা। জাফর আহমেদের দুই ছেলে শাহজাহান ও দিদারের নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের সম্পদ খুঁজে বের করতে কাজ করছি। টেকনাফ পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর কুহিনুর বেগমের স্বামী শাহ আলম, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের ছেলে আবদুর রহমান, সাবেক মেম্বার বকতার আহমেদ, নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে নুরুল হক ভুট্টু, নুরুল হোসাইন, নাইট্যংপাড়ার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে ইউনুস, দক্ষিণ হ্নীলার ফকির চন্দ্র ধরের ছেলে নির্মল ধর, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার বোরহান উদ্দিনসহ অনেকের নামে অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
রিহান আবদুল্লাহ ও আবদুল আজিজ, কক্সবাজার থেকে | ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০৮:৪৬

টেকনাফ শহরসংলগ্ন উত্তর লম্বরীপাড়ার বাসিন্দা মীর কাসেম। পেশা বলতে তেমন কিছুই নেই তার, ছেঁড়া লুঙ্গি আর শার্ট পরে চলাচল করেন। অথচ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মালিক তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১০ বছর ইয়াবার কারবার করে কক্সবাজারের পাহাড়গুলোর মতোই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত পৃষ্ঠপোষকদের অন্যতম মীর কাসেমের মতোই টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ও তাদের ঘনিষ্ঠরা গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। টেকনাফের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে তাদের ও স্বজনদের নামে রয়েছে আলিশান বাড়ি। কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আলোচিত সাবেক সাংসদ ও বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত আবদুর রহমান বদির ‘আশীর্বাদেই’ টেকনাফে ইয়াবা বাণিজ্যের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
গত কয়েক দিন টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে উঠেছে হাজারো বাড়ি-ঘর। অধিকাংশ বাড়িই দুই থেকে তিনতলা। অত্যাধুনিক এসব বাড়ির মালিক মাদক কারবারিরা। তাদের মধ্যে কারও কারও আগে এক বেলা খাবারও জুটত না। তারাই বদির ‘কল্যাণে যেন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন’।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণার পর মাদক কারবারিদের অঢেল সম্পদ নিয়ে এলাকায় আলোচনা এখন তুঙ্গে। টেকনাফে ঘুরে জানা গেছে, ইয়াবা কারবারিদের অনেকে ওই সব অট্টালিকায় তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউ কেউ রয়েছেন কারাগারে।
টেকনাফের শীলবনিয়াপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল করিম, তার ভাই জিয়াউল করিম ও রাশেদুল করিম। ১৫ বছর আগেও তারা ঠিকমতো খাবার পেতেন না। এখন প্রত্যেক পরিবার কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। ‘মাদকের রাজা’ হিসেবে পরিচিত সাইফুল করিম, তার ভাইসহ অনেক মাদক কারবারি বিদেশে পালিয়েছেন। মালয়েশিয়া, দুবাই ও মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদকের কারবার। মাদক কারবার করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফে অঢেল সম্পদ করেছেন বদির ‘আস্থাভাজন’ সাইফুল। টেকনাফের শীলবনিয়ায় তার রয়েছে অত্যাধুনিক বাড়ি, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে আবাসিক হোটেলসহ কয়েক শ কোটি টাকার জমি রয়েছে তার নামে। এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, নামের চেয়ে বেনামের সম্পদই তার অনেক বেশি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি ও বদির আপন ছোট ভাই আবদুস শুক্কুর, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান, বোন নুরজাহান ও ভাগনে সাহেদ রহমান প্রত্যেকেই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। বদির ইন্ধনে তারা মাদক কারবার চালিয়ে অল্প সময়েই এসব সম্পদের মালিক হন। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেন ছিল। প্রতি মাসেই তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ইয়াবার চালান আনতেন টেকনাফে। সবার নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
এখনকার শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত নুরুল হুদা একসময় ছিলেন গাড়ির হেলপার। ২০১০ সালে শুরু করেন ইয়াবা পাচার। মাত্র আট বছর ইয়াবা বেচাকেনা করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ‘কালো টাকার জোরে’ হ্নীলা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি হন। তার রয়েছে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও বিপুল পরিমাণ জায়গা। হুদাসহ তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
টেকনাফের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা সম্প্রতি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জিয়াউর রহমান ইয়াবার কারবার করে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হন। এলাকায় তিনি একটি আলিশান দোতলা বাড়ি করেন প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে তার নামে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ও জমি আছে। নামে-বেনামে তার আরও সম্পদ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুশরাতের মধ্যম জালিয়াপাড়ায় রয়েছে একটি অত্যাধুনিক বাড়ি। টেকনাফ স্টেশনে আছে দুটি গাড়ির শোরুম। এর বাইরে ব্যাংকে আছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। মাদক কারবারি একরাম হোসেন ওরফে পিচ্চি একরাম একসময় কোরআনে হাফেজ ছিলেন। ২০১০ সালের দিকে ইয়াবা কারবারিতে নাম লেখান। এখন মিয়ানমারে অবস্থান করে ইয়াবা পাঠাচ্ছেন। ইয়াবা কারবার করে মৌলভীপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের করেছেন তিনি।
টেকনাফের মিঠাপানিরছড়া এলাকার শামশুল আলম ওরফে কানা শামশু একসময় নৌকায় মাছ ধরে জীবন চালাতেন। গত ১০ বছর ইয়াবা কারবারে নেমে এখন প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহর দুই ভাই জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান ইয়াবার কারবার করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের সহায়তা করছেন ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম মুন্না ও সুলতানসহ অনেকেই। টেকনাফের হাতিয়ার ঘোনার জাকির হোসেন ইয়াবার কারবার চালিয়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। এলাকায় রয়েছে তার একটি অট্টালিকা। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। চড়েন ২৮ লাখ টাকার প্রাইভেট কারে। একই এলাকার কামাল হোসেন দীর্ঘদিন ইয়াবার কারবার করে কোটি কোটি টাকা আয় করে সৌদি আরব পাড়ি জমান। বদির খালাতো ভাই মং মং সেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাতে একাধিকবার ধরা পড়েন। তবে বদির ‘বদৌলতে’ জামিনে বেরিয়ে আসেন। টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ায় তার রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। এ ছাড়া মুজিব ও সৈয়দ হোসেন এই ইয়াবার করে অল্প সময়ে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থানীয় অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও তাদের সহযোগীরা কারবার চালিয়ে আসছেন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইয়াবা কারবারিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সম্পদ বের করার কাজ চলছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, বেশিরভাগ ইয়াবা কারবারি অঢেল সম্পদের মালিক।’ কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারির অভিযোগ আছে। ইয়াবা কারবার করে তিনি এখন প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। টেকনাফে রয়েছে তার তিনটি বাড়ি ও অনেক জমিজমা। জাফর আহমেদের দুই ছেলে শাহজাহান ও দিদারের নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের সম্পদ খুঁজে বের করতে কাজ করছি। টেকনাফ পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর কুহিনুর বেগমের স্বামী শাহ আলম, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের ছেলে আবদুর রহমান, সাবেক মেম্বার বকতার আহমেদ, নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে নুরুল হক ভুট্টু, নুরুল হোসাইন, নাইট্যংপাড়ার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে ইউনুস, দক্ষিণ হ্নীলার ফকির চন্দ্র ধরের ছেলে নির্মল ধর, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার বোরহান উদ্দিনসহ অনেকের নামে অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।’