ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের বুকে জড়ালেন জোলি
কক্সবাজার প্রতিনিধি | ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৯:২৭
হলিউডের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের বুকে জড়িয়ে ধরে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সোমবার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এর আগে দুই দিনের জন্য সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি বেসরকারি বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। এরপর সরাসরি কক্সবাজারের ইনানীতে অবস্থানরত একটি হোটেলে ওঠেন। পরে দুপুর ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল ২১নং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে নির্যাতিত ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের কাহিনি শোনেন।
টেকনাফের চাকমারকুল ২১নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নেতা রশিদ উল্লাহ জানিয়েছেন, ‘হলিউড তারকা দুপুরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে ৩০জন রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গেও কিছুক্ষণ সময় কাটান’।
ওই ক্যাম্পের জি-ব্লকে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবক জহির আহমদ জানিয়েছেন, ‘অ্যাঞ্জেলিনা জোলি প্রথমে ক্যাম্পে এসে ব্র্যাকের একটি কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শন করেন। সেখানে ব্র্যাকের কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ও বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। পরে কিছু নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের ছবি তোলেন। জোলি প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান শেষে হোটেলের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেন’।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে এখন দিন কাটছে তাদের। এসব রোহিঙ্গা নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা শুনে ঢাকায় আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সে সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, জোলি যৌন নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের দেখতে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু সে সময়ে দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে এর আগে অন্তত চারবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বাংলাদেশ সফর বাতিল করা হয়।
গত বছরের ২১ মে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন বলিউড অভিনেত্রী, সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তিনি টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর মনখালী ব্রিজের পাশে অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরের শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। সেখানে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ‘ইউএনসিআর’ ব্র্যাক, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনা করার কথা রয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’র বিশেষ দূত হিসেবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন। পাঁচ দিনের বাংলাদেশ সফরে তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
কক্সবাজার প্রতিনিধি | ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৯:২৭

হলিউডের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের বুকে জড়িয়ে ধরে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সোমবার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এর আগে দুই দিনের জন্য সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি বেসরকারি বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। এরপর সরাসরি কক্সবাজারের ইনানীতে অবস্থানরত একটি হোটেলে ওঠেন। পরে দুপুর ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল ২১নং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে নির্যাতিত ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের কাহিনি শোনেন।
টেকনাফের চাকমারকুল ২১নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নেতা রশিদ উল্লাহ জানিয়েছেন, ‘হলিউড তারকা দুপুরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে ৩০জন রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গেও কিছুক্ষণ সময় কাটান’।
ওই ক্যাম্পের জি-ব্লকে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবক জহির আহমদ জানিয়েছেন, ‘অ্যাঞ্জেলিনা জোলি প্রথমে ক্যাম্পে এসে ব্র্যাকের একটি কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শন করেন। সেখানে ব্র্যাকের কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ও বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। পরে কিছু নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের ছবি তোলেন। জোলি প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান শেষে হোটেলের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেন’।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে এখন দিন কাটছে তাদের। এসব রোহিঙ্গা নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা শুনে ঢাকায় আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সে সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, জোলি যৌন নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের দেখতে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু সে সময়ে দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে এর আগে অন্তত চারবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বাংলাদেশ সফর বাতিল করা হয়।
গত বছরের ২১ মে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন বলিউড অভিনেত্রী, সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তিনি টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর মনখালী ব্রিজের পাশে অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরের শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। সেখানে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ‘ইউএনসিআর’ ব্র্যাক, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনা করার কথা রয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’র বিশেষ দূত হিসেবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন। পাঁচ দিনের বাংলাদেশ সফরে তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।