পাটের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে তৎপর সরকার
বিশেষ প্রতিনিধি | ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২৩:১৪
বিজেএমসির অধীন পাটের মিলগুলোকে লাভজনক করতে সরকার সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। গত দশ বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘পদক্ষেপগুলোর মধ্যে পাটের উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ, পাট চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে পাট কেনা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং পাট পণ্য ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্বাক্ষর চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করা’।
সোমবার স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সাংসদ দিদারুল আলমের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১৮ সময়ে মোট পাঁচটি বন্ধ মিল চালু করা হয়েছে। মিলগুলো হচ্ছে, পিপলস জুট মিলস লিমিটেড (বর্তমানে খালিশপুর জুট মিলস), কওমী জুট মিলস লিমিটেড (বর্তমানে জাতীয় জুট মিলস), দৌলতপুরপুর জুট মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড ও ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি। এসব মিলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নে খুলনা, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় ৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর আওতায় কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯০০ জনকে। এ ছাড়া সরকারের সহায়তায় বিএমআরইকরণ, স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল স্থাপন, বহুমুখী পাট পণ্য উৎপাদনসহ মোট ৬টি এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২টি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাছাড়া-ও বিজেএমসি’র নিজস্ব অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়ন হবে।
রাজশাহী-৩ আসনের এমপি মো. অয়েন উদ্দিনের আরেকটি প্রশ্নের জবাবে গাজী বলেন, বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি পাটকলের সংখ্যা ৩০টি। এর মধ্যে ২৯টি জুট মিল চালু আছে। এছাড়া বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৮১টি যার মধ্যে ৫৬টি কল বন্ধ রয়েছে।
সাংসদ আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে কম বেশি ৬.১৮ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়।
ঢাকা-২০ থেকে নির্বাচিত সাংসদ বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পাটের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে ২০ হাজার পাটচাষীকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উফশী পাট ও পাটবীজ উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাট ও পাট বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাঁচবছর মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় পাট চাষের জন্য প্রতি উপজেলায় ৩ হাজার জন চাষিকে বিনা মূল্যে উন্নত পাট বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হবে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় দেড় হাজার জন পাটচাষীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি পাটের উৎপাদন, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং দেশে-বিদেশে পাটের বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রেও সরকার পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
ভোলা-৩ আসনের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, পাট শিল্পের মতো রেশম শিল্পে সরকার গত দশবছরে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড দেশের রেশম ও সিল্ক শিল্পের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। গ্রামীণ জনপদে রেশম শিল্পের সম্ভাবনাময় এলাকায় গুচ্ছাকারে ২০টি রেশম পল্লি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর উন্নয়নে সরকার শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি রেশম পল্লিতে ৭৫জন চাষি মনোনীত করে ১৫ হাজার তুঁত চারা সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ব্লকে ২০০টি তুঁত ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে টেকসই তুঁত বাগান তৈরির কাজ চলছে। প্রতিটি ব্লকে ১ হাজারটি তুঁত চারা রোপণ করার কাজ শেষ হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তুঁত চাষ সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ৩৩টি জেলার ৯০টি উপজেলায় ৫২৮টি সমিতির মধ্যে জরিপ করে ৩ হাজার ৬০৭ জন আগ্রহী সদস্যকে নির্বাচন করা হয়েছে। মনোনীতদের মধ্যে ইতিমধ্যে ১০৪৫ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
বিশেষ প্রতিনিধি | ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২৩:১৪

বিজেএমসির অধীন পাটের মিলগুলোকে লাভজনক করতে সরকার সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। গত দশ বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘পদক্ষেপগুলোর মধ্যে পাটের উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ, পাট চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে পাট কেনা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং পাট পণ্য ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্বাক্ষর চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করা’।
সোমবার স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সাংসদ দিদারুল আলমের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১৮ সময়ে মোট পাঁচটি বন্ধ মিল চালু করা হয়েছে। মিলগুলো হচ্ছে, পিপলস জুট মিলস লিমিটেড (বর্তমানে খালিশপুর জুট মিলস), কওমী জুট মিলস লিমিটেড (বর্তমানে জাতীয় জুট মিলস), দৌলতপুরপুর জুট মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড ও ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি। এসব মিলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নে খুলনা, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় ৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর আওতায় কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯০০ জনকে। এ ছাড়া সরকারের সহায়তায় বিএমআরইকরণ, স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল স্থাপন, বহুমুখী পাট পণ্য উৎপাদনসহ মোট ৬টি এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২টি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাছাড়া-ও বিজেএমসি’র নিজস্ব অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়ন হবে।
রাজশাহী-৩ আসনের এমপি মো. অয়েন উদ্দিনের আরেকটি প্রশ্নের জবাবে গাজী বলেন, বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি পাটকলের সংখ্যা ৩০টি। এর মধ্যে ২৯টি জুট মিল চালু আছে। এছাড়া বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৮১টি যার মধ্যে ৫৬টি কল বন্ধ রয়েছে।
সাংসদ আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে কম বেশি ৬.১৮ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়।
ঢাকা-২০ থেকে নির্বাচিত সাংসদ বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পাটের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে ২০ হাজার পাটচাষীকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উফশী পাট ও পাটবীজ উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাট ও পাট বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাঁচবছর মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় পাট চাষের জন্য প্রতি উপজেলায় ৩ হাজার জন চাষিকে বিনা মূল্যে উন্নত পাট বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হবে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় দেড় হাজার জন পাটচাষীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি পাটের উৎপাদন, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং দেশে-বিদেশে পাটের বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রেও সরকার পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
ভোলা-৩ আসনের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, পাট শিল্পের মতো রেশম শিল্পে সরকার গত দশবছরে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড দেশের রেশম ও সিল্ক শিল্পের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। গ্রামীণ জনপদে রেশম শিল্পের সম্ভাবনাময় এলাকায় গুচ্ছাকারে ২০টি রেশম পল্লি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর উন্নয়নে সরকার শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি রেশম পল্লিতে ৭৫জন চাষি মনোনীত করে ১৫ হাজার তুঁত চারা সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ব্লকে ২০০টি তুঁত ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে টেকসই তুঁত বাগান তৈরির কাজ চলছে। প্রতিটি ব্লকে ১ হাজারটি তুঁত চারা রোপণ করার কাজ শেষ হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তুঁত চাষ সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ৩৩টি জেলার ৯০টি উপজেলায় ৫২৮টি সমিতির মধ্যে জরিপ করে ৩ হাজার ৬০৭ জন আগ্রহী সদস্যকে নির্বাচন করা হয়েছে। মনোনীতদের মধ্যে ইতিমধ্যে ১০৪৫ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।