অবশেষে ডিজিটাল হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৯:০৯
পুরো বাংলাদেশের জমির ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ৩ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার সিএস ও এসএ খতিয়ান অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়েছে। আর ১ কোটি ৫৮ লাখ খতিয়ান এন্ট্রি করতে পারলেই সাধারণ মানুষকে আর ভূমি অফিসে দৌঁড়াতে হবে না। নির্ধারিত ফি দিলেই তারা এসব খতিয়ান প্রিন্ট করাতে পারবেন। অবসান ঘটবে ভূমি অফিসে ঘুরে ঘুরে খতিয়ান-পর্চা সংগ্রহের হয়রানি আর ‘টেবিলে টেবিলে ঘুষ দেওয়া থেকে’।
ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘চলতি মাসের মধ্যেই বাকি দেড় কোটি সিএস ও এসএ খতিয়ান অনলাইনে এন্ট্রির কাজ শেষ হবে। এরপরই সাধারণ মানুষের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আমরা এই উন্মুক্তের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে চাই।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের সহায়তায় এরই মধ্যে ৩ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার সিএস (ব্রিটিশ শাসনামলের) ও এসএ (পাকিস্তান শাসনামলের) খতিয়ান অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করা হয়েছে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচির সহায়তায় ১ কোটি ১ লাখ আরএস (এইচ এম এরশাদের শাসনামলে) খতিয়ান অনলাইনে এন্ট্রি দেওয়া হয়েছে। এসব খতিয়ান এখন কর্মকতারা দেখতে পাচ্ছেন। চলতি মাসেই এসব খতিয়ান সাধারণ নাগরিকদের জন্য অনলাইনে উন্মুক্ত করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ভূমির শ্রেণি ৩০০টি। এ নিয়ে জটিলতার শেষ নেই। কারণ একেক শ্রেণির ভূমির জন্য একেক নিয়ম। তাই ভূমির শ্রেণি ১০ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। শ্রেণি কমানোর জন্য এরমধ্যে জরিপ অধিশাখা এবং জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয় থেকে মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। বর্তমানে নামজারির আবেদন করার পর ৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। সেটা কমিয়ে ২৮ দিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ আবেদন পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ভূমির মালিককে নামজারি করে দিতে বাধ্য থাকবেন।
তারা জানান, নামজারির জন্য ভূমির মালিককে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র এসিল্যান্ড কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। সেখান থেকে তা পাঠানো হয় তহশিলদারের কার্যালয়ে। তহশিলদার ‘সন্তুষ্ট হলে’ তা পাঠান ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। এক পর্যায়ে এই প্রক্রিয়ায় জড়িত হন ভূমি অফিসের নাজির। সব কিছু ঠিক থাকার পরও ভূমির মালিককে নামজারি করার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। একইসঙ্গে ভূমি অফিসের প্রায় প্রতিটি ধাপে ঘুষ দিতে হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ (টিআইবি) এর এক জরিপে ভূমি খাতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাত বলা হয় ।
জমি রেজিস্ট্রি করার সময় দলিল গ্রহীতা বর্তমানে দলিলের দুই কপি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দেন। আগামী মাস থেকে দলিলের আরও একটি অতিরিক্ত কপি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দেবেন। সেই কপি সরাসরি এসি-ল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। এর ওপর ভিত্তি করেই নামজারি কার্যক্রম শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, ভূমি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সরকার চাচ্ছে এসব অনিয়ম দূর করতে। এজন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩০২টি উপজেলায় ই-মিউটেশন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় ই-মিউটেশন চালু হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সার্ভেয়ার দেশ রূপান্তরকে জানান, ভূমি সমস্যা দূর করার জন্য ডিজিটাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। সব ডকুমেন্ট অনলাইনে থাকলেই ভূমির সমস্যা কমবে। নামজারির কাগজ কেন ভূমির মালিক দেবেন? সব কাগজ তো ভূমি অফিসে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা সেই কাগজ সরকারি দপ্তর থেকে না নিয়ে ভূমির মালিকের কাছে চাওয়ার একটিই কারণ, সেটি হলো উপরি।
তিনি জানান, নামজারির জন্য ২০১০ সালের আগে কোনো নির্ধারিত সময়সীমা ছিল না। স্বল্প সময়ে নামজারি করে দেওয়ার কথা। ৪৫ দিন সময় কোনো স্বল্প সময় না। নতুন করে যে ২৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে সেটাও দীর্ঘ সময়। এই সময় কমিয়ে আনতে না পারলে দেশের যে উন্নয়নের কথা বলা হয় তা অর্থহীন হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এক কাঠা হোক আর এক হাজার কাঠা হোক নামজারির ফি ১ হাজার ১৫০ টাকাই। এটা ঠিক নয়। জমির পরিমাণ বেশি হলে ফিও বেশি হওয়া উচিত। এটা হলে রাজস্ব যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে সরকারি সেবা।
শেয়ার করুন
Kaylasaday commented 29 days ago
Hello, did you receive my offer?
from2325214cv
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৯:০৯

পুরো বাংলাদেশের জমির ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ৩ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার সিএস ও এসএ খতিয়ান অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়েছে। আর ১ কোটি ৫৮ লাখ খতিয়ান এন্ট্রি করতে পারলেই সাধারণ মানুষকে আর ভূমি অফিসে দৌঁড়াতে হবে না। নির্ধারিত ফি দিলেই তারা এসব খতিয়ান প্রিন্ট করাতে পারবেন। অবসান ঘটবে ভূমি অফিসে ঘুরে ঘুরে খতিয়ান-পর্চা সংগ্রহের হয়রানি আর ‘টেবিলে টেবিলে ঘুষ দেওয়া থেকে’।
ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘চলতি মাসের মধ্যেই বাকি দেড় কোটি সিএস ও এসএ খতিয়ান অনলাইনে এন্ট্রির কাজ শেষ হবে। এরপরই সাধারণ মানুষের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আমরা এই উন্মুক্তের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে চাই।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের সহায়তায় এরই মধ্যে ৩ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার সিএস (ব্রিটিশ শাসনামলের) ও এসএ (পাকিস্তান শাসনামলের) খতিয়ান অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করা হয়েছে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচির সহায়তায় ১ কোটি ১ লাখ আরএস (এইচ এম এরশাদের শাসনামলে) খতিয়ান অনলাইনে এন্ট্রি দেওয়া হয়েছে। এসব খতিয়ান এখন কর্মকতারা দেখতে পাচ্ছেন। চলতি মাসেই এসব খতিয়ান সাধারণ নাগরিকদের জন্য অনলাইনে উন্মুক্ত করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ভূমির শ্রেণি ৩০০টি। এ নিয়ে জটিলতার শেষ নেই। কারণ একেক শ্রেণির ভূমির জন্য একেক নিয়ম। তাই ভূমির শ্রেণি ১০ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। শ্রেণি কমানোর জন্য এরমধ্যে জরিপ অধিশাখা এবং জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয় থেকে মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। বর্তমানে নামজারির আবেদন করার পর ৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। সেটা কমিয়ে ২৮ দিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ আবেদন পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ভূমির মালিককে নামজারি করে দিতে বাধ্য থাকবেন।
তারা জানান, নামজারির জন্য ভূমির মালিককে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র এসিল্যান্ড কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। সেখান থেকে তা পাঠানো হয় তহশিলদারের কার্যালয়ে। তহশিলদার ‘সন্তুষ্ট হলে’ তা পাঠান ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। এক পর্যায়ে এই প্রক্রিয়ায় জড়িত হন ভূমি অফিসের নাজির। সব কিছু ঠিক থাকার পরও ভূমির মালিককে নামজারি করার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। একইসঙ্গে ভূমি অফিসের প্রায় প্রতিটি ধাপে ঘুষ দিতে হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ (টিআইবি) এর এক জরিপে ভূমি খাতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাত বলা হয় ।
জমি রেজিস্ট্রি করার সময় দলিল গ্রহীতা বর্তমানে দলিলের দুই কপি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দেন। আগামী মাস থেকে দলিলের আরও একটি অতিরিক্ত কপি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দেবেন। সেই কপি সরাসরি এসি-ল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। এর ওপর ভিত্তি করেই নামজারি কার্যক্রম শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, ভূমি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সরকার চাচ্ছে এসব অনিয়ম দূর করতে। এজন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩০২টি উপজেলায় ই-মিউটেশন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় ই-মিউটেশন চালু হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সার্ভেয়ার দেশ রূপান্তরকে জানান, ভূমি সমস্যা দূর করার জন্য ডিজিটাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। সব ডকুমেন্ট অনলাইনে থাকলেই ভূমির সমস্যা কমবে। নামজারির কাগজ কেন ভূমির মালিক দেবেন? সব কাগজ তো ভূমি অফিসে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা সেই কাগজ সরকারি দপ্তর থেকে না নিয়ে ভূমির মালিকের কাছে চাওয়ার একটিই কারণ, সেটি হলো উপরি।
তিনি জানান, নামজারির জন্য ২০১০ সালের আগে কোনো নির্ধারিত সময়সীমা ছিল না। স্বল্প সময়ে নামজারি করে দেওয়ার কথা। ৪৫ দিন সময় কোনো স্বল্প সময় না। নতুন করে যে ২৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে সেটাও দীর্ঘ সময়। এই সময় কমিয়ে আনতে না পারলে দেশের যে উন্নয়নের কথা বলা হয় তা অর্থহীন হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এক কাঠা হোক আর এক হাজার কাঠা হোক নামজারির ফি ১ হাজার ১৫০ টাকাই। এটা ঠিক নয়। জমির পরিমাণ বেশি হলে ফিও বেশি হওয়া উচিত। এটা হলে রাজস্ব যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে সরকারি সেবা।
