মায়ের কাছেই আল মাহমুদের প্রত্যাবর্তন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৬:৫৭
‘...দীর্ঘ পাতাগুলো না না করে কাঁপছে। বৈঠকখানা থেকে আব্বা
একবার আমাকে দেখে নিয়ে মুখ নিচু করে পড়তে থাকবেন,
ফাবি আইয়ে আলা ই-রাব্বিকুমা তুকাজ্বিবান...।
বাসি বাসন হাতে আম্মা আমাকে দেখে হেসে ফেলবেন।
ভালোই হলো তোর ফিরে আসা। তুই না থাকলে
ঘরবাড়ি একেবারে কেমন শূন্য হয়ে যায়। হাত মুখ
ধুয়ে আয়। নাস্তা পাঠাই।
আর আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আমার প্রত্যাবর্তনের লজ্জাকে
ঘষে ঘষে
তুলে ফেলবো।’
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতায় এরকমই লিখেছিলেন। সেই শৈশবের তিতাসের তীরে নিজ জন্মগ্রামে বাবা-মায়ের কাছেই অন্তিম শয়ানে শায়িত হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। রোববার বিকেল ৩ টার দিকে কবিকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল কবরস্থানে সমাহিত করেন স্বজনরা।
এর আগে দুপুর সোয়া ২ টায় কবির নিজ বাড়ি দক্ষিণ মৌড়াইল মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন কবির আত্মীয় মাও. হাফেজ আশেকুল্লাহ। জানাজায় শত শত শোকার্ত স্বজন, আত্মীয়, এলাকাবাসী ও অনুরাগী অংশ নেন।
জানাজা পূর্ব সমাবেশে কবি মহিবুর রহিমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কবির ছেলে মীর মাহমুদ মনির, কিশোরবেলার সহচর প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ মুসা, মামা সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, যুগ্ম-সম্পাদক এড. আনিছুর রহমান মঞ্জু, কবির আপন ভাগনে লে.কর্ণেল অব.শাকিল আহমেদ চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সভাপতি খ আ ম রশিদুল ইসলাম, দৈনিক সমতটের বার্তা সম্পাদক মনজুরুল আলম, ঢাকা থেকে আসা কবি মো. কামরুজ্জামান, কবি ইব্রাহীম বাহারী।
এ সময় জেলা বিএনপি, নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, দৈনিক সমতট বার্তা পরিবার, ইউনেসকো ক্লাবসহ বেশ কিছু সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কবির মরদেহ নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানে কবিকে একনজর দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে শত শত মানুষ ভিড় করেন।
গত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ৮ টার দিকে কবি আল মাহমুদের মরদেহ স্বজনরা ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন পর নিথর দেহে কবির নিজ ভিটিতে ফেরায় স্বজনরা ছিলেন অশ্রুসজল। তার লাশ দেখে সেখানে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। কবির কফিনকে কেন্দ্র করে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আল মাহমুদকে যতটুকু সম্মান দেওয়া উচিত ছিল সেটা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে জানাজা পূর্ব সমাবেশে কবির ছেলে মীর মাহমুদ মণির দুঃখের সঙ্গে বলেন, তিনি কি পেলেন আর না পেলেন সেটা সাময়িক, তবে আমার বাবা মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। তার প্রায় লেখাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এ এলাকার মানুষ স্থান পেতেন। তিনি তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৬:৫৭

‘...দীর্ঘ পাতাগুলো না না করে কাঁপছে। বৈঠকখানা থেকে আব্বা
একবার আমাকে দেখে নিয়ে মুখ নিচু করে পড়তে থাকবেন,
ফাবি আইয়ে আলা ই-রাব্বিকুমা তুকাজ্বিবান...।
বাসি বাসন হাতে আম্মা আমাকে দেখে হেসে ফেলবেন।
ভালোই হলো তোর ফিরে আসা। তুই না থাকলে
ঘরবাড়ি একেবারে কেমন শূন্য হয়ে যায়। হাত মুখ
ধুয়ে আয়। নাস্তা পাঠাই।
আর আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আমার প্রত্যাবর্তনের লজ্জাকে
ঘষে ঘষে
তুলে ফেলবো।’
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতায় এরকমই লিখেছিলেন। সেই শৈশবের তিতাসের তীরে নিজ জন্মগ্রামে বাবা-মায়ের কাছেই অন্তিম শয়ানে শায়িত হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। রোববার বিকেল ৩ টার দিকে কবিকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল কবরস্থানে সমাহিত করেন স্বজনরা।
এর আগে দুপুর সোয়া ২ টায় কবির নিজ বাড়ি দক্ষিণ মৌড়াইল মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন কবির আত্মীয় মাও. হাফেজ আশেকুল্লাহ। জানাজায় শত শত শোকার্ত স্বজন, আত্মীয়, এলাকাবাসী ও অনুরাগী অংশ নেন।
জানাজা পূর্ব সমাবেশে কবি মহিবুর রহিমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কবির ছেলে মীর মাহমুদ মনির, কিশোরবেলার সহচর প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ মুসা, মামা সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, যুগ্ম-সম্পাদক এড. আনিছুর রহমান মঞ্জু, কবির আপন ভাগনে লে.কর্ণেল অব.শাকিল আহমেদ চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সভাপতি খ আ ম রশিদুল ইসলাম, দৈনিক সমতটের বার্তা সম্পাদক মনজুরুল আলম, ঢাকা থেকে আসা কবি মো. কামরুজ্জামান, কবি ইব্রাহীম বাহারী।
এ সময় জেলা বিএনপি, নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, দৈনিক সমতট বার্তা পরিবার, ইউনেসকো ক্লাবসহ বেশ কিছু সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কবির মরদেহ নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানে কবিকে একনজর দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে শত শত মানুষ ভিড় করেন।
গত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ৮ টার দিকে কবি আল মাহমুদের মরদেহ স্বজনরা ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন পর নিথর দেহে কবির নিজ ভিটিতে ফেরায় স্বজনরা ছিলেন অশ্রুসজল। তার লাশ দেখে সেখানে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। কবির কফিনকে কেন্দ্র করে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আল মাহমুদকে যতটুকু সম্মান দেওয়া উচিত ছিল সেটা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে জানাজা পূর্ব সমাবেশে কবির ছেলে মীর মাহমুদ মণির দুঃখের সঙ্গে বলেন, তিনি কি পেলেন আর না পেলেন সেটা সাময়িক, তবে আমার বাবা মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। তার প্রায় লেখাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এ এলাকার মানুষ স্থান পেতেন। তিনি তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।