বোয়াফের আলোচনা সভা
দখলদারদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২৩:৩৫
নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম বছরজুড়ে চলমান রাখার পাশাপাশি দখলদারদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, নদী দখলমুক্ত হলে দেশ বাঁচবে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বিকল্প নাই।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) আয়োজিত ‘নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের বর্তমান-ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব দাবি জানান।
সভায় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি লক্ষ করেছি যে নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সিনিয়র আইনজীবী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার পৈতৃক সম্পত্তি’...। যারা দুর্নীতি দমন করবেন, তাদের মধ্যেই যদি এরকম মানুষ থাকেন তাহলে আমাদের অবশ্যই ভাববার আছে।’
এসব দখলকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘এই যে ভূমি দখল, নদী দখল, রাস্তা দখল, এগুলোকে আমি মনে করি যুদ্ধাপরাধের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর জন্য সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা জরুরি।’
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শুধু আজ নয়, অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, নদী দখলমুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে যে নদী দখলের ব্যাপারে একটি মামলার রায় সব সময় প্রচলিত থাকবে। কিন্তু রায়ের প্রতিফলন আমরা সব ক্ষেত্রে দেখছি না।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার আদেশ আমি দিয়েছিলাম। ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল হাতিরঝিল খালের ওপর। অত্যন্ত পরাক্রমশালী একটি গোষ্ঠী এটি নির্মাণ করলেও আমি ভাঙার আদেশ দিয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত এখনো ভাঙা হয়নি, তারা বারবার এসে সময় বাড়িয়ে নিচ্ছে। আশা করি, কয়েক মাস পর এটি ভাঙা হবে। এছাড়া আমি নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি রায় দিয়েছি। কিছুটা সফলতা মিললেও পরবর্তীতে আবার যেই লাউ সেই কদুই হয়ে যাচ্ছে।’
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘নদী দখলের কারণে আমরা নৌপথের সাশ্রয়ী ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের কারণে নৌপথ ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের একসময় ৩৮ হাজার কিলোমিটার নৌ পথ ছিল, এখন সেটা ১২ হাজার কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বুড়িগঙ্গার পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর নেতৃত্বদানকারী বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে আমরা আবার শঙ্কিত হচ্ছি।’ উদ্ধার হওয়া জায়গায় ফুলের বাগানসহ সাধারণ মানুষের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান তিনি।
বোয়াফের সভাপতি কবির চৌধুরী তন্ময়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছির উদ্দিন আহমেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি অশোক বড়ুয়া প্রমুখ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২৩:৩৫

নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম বছরজুড়ে চলমান রাখার পাশাপাশি দখলদারদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, নদী দখলমুক্ত হলে দেশ বাঁচবে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বিকল্প নাই।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) আয়োজিত ‘নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের বর্তমান-ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব দাবি জানান।
সভায় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি লক্ষ করেছি যে নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সিনিয়র আইনজীবী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার পৈতৃক সম্পত্তি’...। যারা দুর্নীতি দমন করবেন, তাদের মধ্যেই যদি এরকম মানুষ থাকেন তাহলে আমাদের অবশ্যই ভাববার আছে।’
এসব দখলকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘এই যে ভূমি দখল, নদী দখল, রাস্তা দখল, এগুলোকে আমি মনে করি যুদ্ধাপরাধের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর জন্য সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা জরুরি।’
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শুধু আজ নয়, অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, নদী দখলমুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে যে নদী দখলের ব্যাপারে একটি মামলার রায় সব সময় প্রচলিত থাকবে। কিন্তু রায়ের প্রতিফলন আমরা সব ক্ষেত্রে দেখছি না।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার আদেশ আমি দিয়েছিলাম। ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল হাতিরঝিল খালের ওপর। অত্যন্ত পরাক্রমশালী একটি গোষ্ঠী এটি নির্মাণ করলেও আমি ভাঙার আদেশ দিয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত এখনো ভাঙা হয়নি, তারা বারবার এসে সময় বাড়িয়ে নিচ্ছে। আশা করি, কয়েক মাস পর এটি ভাঙা হবে। এছাড়া আমি নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি রায় দিয়েছি। কিছুটা সফলতা মিললেও পরবর্তীতে আবার যেই লাউ সেই কদুই হয়ে যাচ্ছে।’
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘নদী দখলের কারণে আমরা নৌপথের সাশ্রয়ী ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের কারণে নৌপথ ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের একসময় ৩৮ হাজার কিলোমিটার নৌ পথ ছিল, এখন সেটা ১২ হাজার কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বুড়িগঙ্গার পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর নেতৃত্বদানকারী বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে আমরা আবার শঙ্কিত হচ্ছি।’ উদ্ধার হওয়া জায়গায় ফুলের বাগানসহ সাধারণ মানুষের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান তিনি।
বোয়াফের সভাপতি কবির চৌধুরী তন্ময়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছির উদ্দিন আহমেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি অশোক বড়ুয়া প্রমুখ।