চকবাজার ট্র্যাজেডি
স্বজনদের আহাজারি থামছেই না, দগ্ধদের অবস্থা স্থিতিশীল
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৯:১১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের শরীরের খোঁজ খবরের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। ছবি: ফোকাস বাংলা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও তারা কেউই এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে শনিবার ঢামেক বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীনদের স্বজনদের আহাজারি থামছেই না। আজ সকালেই দগ্ধদের দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের শরীরের খোঁজ খবরের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন।
অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ নয়জনের অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দগ্ধ নয়জনকেই একে একে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড থেকে আইসিইউ‘তে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দগ্ধদের ৬ জনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। অবশিষ্ট তিনজনকে শুক্রবার রাতে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই দগ্ধ সোহাগ (২২) আইসিইউতে ছিলেন।
পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নাস শাহানা রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের তিনজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সোহাগের শরীরের ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে।’
এদিকে বার্ন ইউনিটের বাইরে স্বজনদের আহা জরি থামছেই না। দূর দুরন্ত থেকে আত্মীয়স্বজন ছুটে আসছে এক নজর দেখতে। স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে ঢামেক। তবে রোগীদের স্বার্থে আইসিইউতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বান ইউনিটের সামনে দগ্ধ সেলিম ব্যাপারীর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আঁখি আক্তার জানান, শরীয়তপুরের করণ হোগলায় তাদের বাড়ি। চকবাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তার চার বছরের সামিহা নামের একটি মেয়ে রয়েছে। অসুস্থ শরীরেই স্বামীর পাশে আছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার স্বামী চকবাজারের একটি আয়নার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বুধবার কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার সময় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন। শরীরে পেছনের অংশ বেশি পুড়েছে।’
পুরান ঢাকায় এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা করত দগ্ধ জাকির হোসেন। কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার সময় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়। বার্ন ইউনিটের সামনে কথা হয় স্ত্রী খাদিজা বেগমের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে চোখ টলমল করছিল তার। গলাও ভিজে আসছিল। চোখের পানি আটকে রাখতে না পেরে এই প্রতিবেদকের সামনেই কেঁদে ফেলেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্বামীর কিছু হলে আমার দুনিয়া অন্ধকার। আমার দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব।’
রিকশা চালক আনোয়ার হোসেনের মেয়ে বীথি দিনরাত বাবার সেবা করে চলেছেন। তিনি জানান কামরাঙ্গীরচরে পরিবার নিয়ে তারা থাকেন। বাবাই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস।
বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ‘অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আনোয়ার হোসেনের শরীরের ২৮ ভাগ, মাহমুদুলের ১৩ ভাগ, সেলিম ব্যাপারীর ১৪ ভাগ, হেলালের ১৬ ভাগ, রেজাউলের ৫১ ভাগ, জাকিরের ৩৫ ভাগ, মোজাফফর মিয়ার ৩০ ভাগ, সোহাগের ৬০ ভাগ এবং সালাউদ্দীনের ১০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাদের অধিকাংশের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাদের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। দগ্ধদের চারজনকে আজ রবিবার সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হতে পারে। অন্যদের আরও কিছুদিন আইসিইউতে থাকা লাগবে।
দগ্ধ কারও অবস্থাই শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বান অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দগ্ধদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে তাদের আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের রিলিজ দিতে না পারব ততক্ষণ আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘আইসিইউতে থাকা চারজনকে রবিবার ওয়ার্ডে দেওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৯:১১

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও তারা কেউই এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে শনিবার ঢামেক বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীনদের স্বজনদের আহাজারি থামছেই না। আজ সকালেই দগ্ধদের দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের শরীরের খোঁজ খবরের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন।
অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ নয়জনের অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দগ্ধ নয়জনকেই একে একে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড থেকে আইসিইউ‘তে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দগ্ধদের ৬ জনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। অবশিষ্ট তিনজনকে শুক্রবার রাতে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই দগ্ধ সোহাগ (২২) আইসিইউতে ছিলেন।
পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নাস শাহানা রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের তিনজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সোহাগের শরীরের ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে।’
এদিকে বার্ন ইউনিটের বাইরে স্বজনদের আহা জরি থামছেই না। দূর দুরন্ত থেকে আত্মীয়স্বজন ছুটে আসছে এক নজর দেখতে। স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে ঢামেক। তবে রোগীদের স্বার্থে আইসিইউতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বান ইউনিটের সামনে দগ্ধ সেলিম ব্যাপারীর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আঁখি আক্তার জানান, শরীয়তপুরের করণ হোগলায় তাদের বাড়ি। চকবাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তার চার বছরের সামিহা নামের একটি মেয়ে রয়েছে। অসুস্থ শরীরেই স্বামীর পাশে আছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার স্বামী চকবাজারের একটি আয়নার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বুধবার কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার সময় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন। শরীরে পেছনের অংশ বেশি পুড়েছে।’
পুরান ঢাকায় এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা করত দগ্ধ জাকির হোসেন। কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার সময় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়। বার্ন ইউনিটের সামনে কথা হয় স্ত্রী খাদিজা বেগমের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে চোখ টলমল করছিল তার। গলাও ভিজে আসছিল। চোখের পানি আটকে রাখতে না পেরে এই প্রতিবেদকের সামনেই কেঁদে ফেলেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্বামীর কিছু হলে আমার দুনিয়া অন্ধকার। আমার দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব।’
রিকশা চালক আনোয়ার হোসেনের মেয়ে বীথি দিনরাত বাবার সেবা করে চলেছেন। তিনি জানান কামরাঙ্গীরচরে পরিবার নিয়ে তারা থাকেন। বাবাই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস।
বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ‘অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আনোয়ার হোসেনের শরীরের ২৮ ভাগ, মাহমুদুলের ১৩ ভাগ, সেলিম ব্যাপারীর ১৪ ভাগ, হেলালের ১৬ ভাগ, রেজাউলের ৫১ ভাগ, জাকিরের ৩৫ ভাগ, মোজাফফর মিয়ার ৩০ ভাগ, সোহাগের ৬০ ভাগ এবং সালাউদ্দীনের ১০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাদের অধিকাংশের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাদের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। দগ্ধদের চারজনকে আজ রবিবার সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হতে পারে। অন্যদের আরও কিছুদিন আইসিইউতে থাকা লাগবে।
দগ্ধ কারও অবস্থাই শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বান অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দগ্ধদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে তাদের আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের রিলিজ দিতে না পারব ততক্ষণ আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘আইসিইউতে থাকা চারজনকে রবিবার ওয়ার্ডে দেওয়া যাবে বলে আশা করছি।’