সারা বিশ্ব অবাক হয়ে বাংলাদেশকে দেখবে : প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক | ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধনকালে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবেন যেন সমগ্র বিশ্ব অবাক হয়ে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (সুড়ঙ্গ পথের) নির্মাণের বোরিং (খনন) কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। এটাই আমার চাওয়া, আর কিছু না।’
শেখ হাসিনা যোগ করেন, ‘কোন নামও চাই না, কোন ধন-সম্পদও চাই না, কিচ্ছু চাই না। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমার চাওয়া। সে কারণেই চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু করার যেন বাংলাদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত জ্যাং জোউ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে টানেলের নির্মাণকাজের কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে টানেলের একটি রেপ্লিকা উপহার দেওয়া হয়।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না উল্লেখ করে ’৭৫ পরবর্তী শাসকদের অপশাসনের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ‘হ্যাঁ মাঝে ২১টি বছর বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। অসম্মানের চরম অবস্থায় বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল। আমরা সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে আবার ফিরিয়ে এনে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলছি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আবার নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে এবং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
’৭৫ পরবর্তী সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, বাংলাদেশ হলেই একটি নেতিবাচক মনোভাব তা তাঁকে ভীষণ পীড়া দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসটা খুব কষ্ট লাগতো, না এটা হতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যখন এত কিছু হয়ে গেছে তাই এটার সঙ্গে আর কোন নাম যুক্ত হবার দরকার নাই।’
ওবায়দুল কাদের তার বক্তৃতায় পদ্মা সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার প্রসঙ্গ টেনে এনে বক্তব্য প্রদানের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার মন্ত্রীকে বলব এখানে রাগ, ক্ষোভের কিছু নেই, আমি কোন নামও চাই না। আমি কিছুই চাই না। জীবনে কোন কিছু আমার চাওয়া পাওয়ার নেই।’
তিনিতো সব হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে এসেছেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, নইলে আমার মতো একদিনে যখন কেউ সব আপনজন হারায় তাদের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব হয় না।
তিনি এসব কাজ করে যাচ্ছেন একটা আদর্শের জন্য কারণ তার বাবা এ দেশের জন্য সারাটা জীবন কাজ করেছেন, তার মা কষ্ট করেছেন এবং তারা এ দেশের গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি এতটুকু কাজ সেই গরিব দুঃখী মানুষের জন্য করতে পারি, আমার জীবনে সেটাই সব থেকে বড় সার্থকতা। এর বাইরে আর কিছু চাওয়ার নেই।’
‘কারণ এর বাইরে আমরা আর কোনদিকে তাকাইও না, দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি ওইটুকু চিন্তা করে- আমার দেশের গরিব, দুঃখী মানুষ যেন গৃহহারা না থাকে, প্রতিটি মানুষ অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান এবং চিকিৎসা সেবা পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, ’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছি, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি।’
তিনি এ সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘বন্ধু প্রতিম দেশগুলো সকলেই এগিয়ে এসেছে যার কারণে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারছি। কাজেই সকলে দোয়া করবেন বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি। ’
প্রধানমন্ত্রী তার পরিবার এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, কানাডার একটি আদালত এই অভিযোগকে মিথ্যা এবং বানোয়াট বলে রায় দিয়েছে। ষড়যন্ত্রের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি দেশের দু’টি স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক এবং ড. ইউনুস যুক্ত ছিলেন বলে ইঙ্গিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে আমি বললাম-দুর্নীতির প্রমাণ দিন। মামলায় বিশ্বব্যাংক কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক যা যা বলেছে সব ভুয়া, বানোয়াট। কত যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তা আপনারা বুঝবেন না। আজ সেই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।’
‘দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তার সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে বলেই আজ উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে’ উল্লেখ করে দেশের বর্তমান জিডিপি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগকে দুই অঙ্কে নিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করলো। টানেলটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাকে শহরাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। কাজেই আরো ১০ কিলোমিটার সড়ক করা গেলে এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চারলেন সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সময় তিনি প্রকল্পটি রিভাইস করে এই সড়ক নির্মাণ করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে সরাসরি কক্সবাজারের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমাসহ যাতায়াতের সময়ও অনেকাংশে কমে যাবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে এবং কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকায় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এর ফলে পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত হবে। পূর্ব প্রান্তের শিল্প কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমান বন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সহজ হবে, বলেন তিনি।
বীর চট্টলার গণমানুষের নেতা প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর ওপর ব্রিজ করলে নদীর ক্ষতি হবে তাই, গণমানুষের এই নেতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনও করেছিলেন ।
তিনি বলেন, ‘তিনি থাকলে অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে তার অবদান রয়েছে। আজ আমি তাকে স্মরণ করছি।’
তিনি বলেন, এটি বন্দর নগরী। ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু এ জায়গা থেকে হয়। চট্টগ্রামে বিশাল আকারে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। শহরে যানজট কমানোর জন্য বাইপাস করে দিচ্ছি। টানেল নির্মাণ হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন হবে। কক্সবাজার পর্যটন শহর। যাতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠে সে লক্ষ্যে আলাদা কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি।
খবর: বাসস
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধনকালে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবেন যেন সমগ্র বিশ্ব অবাক হয়ে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (সুড়ঙ্গ পথের) নির্মাণের বোরিং (খনন) কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। এটাই আমার চাওয়া, আর কিছু না।’
শেখ হাসিনা যোগ করেন, ‘কোন নামও চাই না, কোন ধন-সম্পদও চাই না, কিচ্ছু চাই না। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমার চাওয়া। সে কারণেই চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু করার যেন বাংলাদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত জ্যাং জোউ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে টানেলের নির্মাণকাজের কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে টানেলের একটি রেপ্লিকা উপহার দেওয়া হয়।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না উল্লেখ করে ’৭৫ পরবর্তী শাসকদের অপশাসনের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ‘হ্যাঁ মাঝে ২১টি বছর বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। অসম্মানের চরম অবস্থায় বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল। আমরা সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে আবার ফিরিয়ে এনে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলছি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আবার নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে এবং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
’৭৫ পরবর্তী সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, বাংলাদেশ হলেই একটি নেতিবাচক মনোভাব তা তাঁকে ভীষণ পীড়া দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসটা খুব কষ্ট লাগতো, না এটা হতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যখন এত কিছু হয়ে গেছে তাই এটার সঙ্গে আর কোন নাম যুক্ত হবার দরকার নাই।’
ওবায়দুল কাদের তার বক্তৃতায় পদ্মা সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার প্রসঙ্গ টেনে এনে বক্তব্য প্রদানের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার মন্ত্রীকে বলব এখানে রাগ, ক্ষোভের কিছু নেই, আমি কোন নামও চাই না। আমি কিছুই চাই না। জীবনে কোন কিছু আমার চাওয়া পাওয়ার নেই।’
তিনিতো সব হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে এসেছেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, নইলে আমার মতো একদিনে যখন কেউ সব আপনজন হারায় তাদের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব হয় না।
তিনি এসব কাজ করে যাচ্ছেন একটা আদর্শের জন্য কারণ তার বাবা এ দেশের জন্য সারাটা জীবন কাজ করেছেন, তার মা কষ্ট করেছেন এবং তারা এ দেশের গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি এতটুকু কাজ সেই গরিব দুঃখী মানুষের জন্য করতে পারি, আমার জীবনে সেটাই সব থেকে বড় সার্থকতা। এর বাইরে আর কিছু চাওয়ার নেই।’
‘কারণ এর বাইরে আমরা আর কোনদিকে তাকাইও না, দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি ওইটুকু চিন্তা করে- আমার দেশের গরিব, দুঃখী মানুষ যেন গৃহহারা না থাকে, প্রতিটি মানুষ অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান এবং চিকিৎসা সেবা পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, ’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছি, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি।’ তিনি এ সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘বন্ধু প্রতিম দেশগুলো সকলেই এগিয়ে এসেছে যার কারণে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারছি। কাজেই সকলে দোয়া করবেন বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি। ’
প্রধানমন্ত্রী তার পরিবার এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, কানাডার একটি আদালত এই অভিযোগকে মিথ্যা এবং বানোয়াট বলে রায় দিয়েছে। ষড়যন্ত্রের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি দেশের দু’টি স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক এবং ড. ইউনুস যুক্ত ছিলেন বলে ইঙ্গিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে আমি বললাম-দুর্নীতির প্রমাণ দিন। মামলায় বিশ্বব্যাংক কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক যা যা বলেছে সব ভুয়া, বানোয়াট। কত যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তা আপনারা বুঝবেন না। আজ সেই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।’
‘দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তার সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে বলেই আজ উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে’ উল্লেখ করে দেশের বর্তমান জিডিপি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগকে দুই অঙ্কে নিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করলো। টানেলটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাকে শহরাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। কাজেই আরো ১০ কিলোমিটার সড়ক করা গেলে এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চারলেন সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সময় তিনি প্রকল্পটি রিভাইস করে এই সড়ক নির্মাণ করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে সরাসরি কক্সবাজারের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমাসহ যাতায়াতের সময়ও অনেকাংশে কমে যাবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে এবং কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকায় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এর ফলে পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত হবে। পূর্ব প্রান্তের শিল্প কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমান বন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সহজ হবে, বলেন তিনি।
বীর চট্টলার গণমানুষের নেতা প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর ওপর ব্রিজ করলে নদীর ক্ষতি হবে তাই, গণমানুষের এই নেতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনও করেছিলেন ।
তিনি বলেন, ‘তিনি থাকলে অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে তার অবদান রয়েছে। আজ আমি তাকে স্মরণ করছি।’
তিনি বলেন, এটি বন্দর নগরী। ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু এ জায়গা থেকে হয়। চট্টগ্রামে বিশাল আকারে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। শহরে যানজট কমানোর জন্য বাইপাস করে দিচ্ছি। টানেল নির্মাণ হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন হবে। কক্সবাজার পর্যটন শহর। যাতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠে সে লক্ষ্যে আলাদা কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি।
খবর: বাসস