বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী
নড়াইল প্রতিনিধি | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৯:১০
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি)।
১৯৩৬ সালের এই দিনে (২৬ ফেব্রুয়ারি) নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর) তিনি। বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মাতার নাম জেন্নাতুন্নেছা। মতান্তরে জেন্নাতা খানম। নূর মোহাম্মদ বাল্যকালেই তিনি বাবা-মাকে হারান। লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত।
নূর মোহাম্মদ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান।
এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ।
৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটিতে বীরদর্পে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রুপক্ষের সঙ্গে মোকাবিলা করছিলেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। একপর্যায়ে পাকবাহিনীর আক্রমণে তিনি শহীদ হন। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।
জন্মস্থান নূর মোহাম্মদ নগরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কিছু কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, পৈতৃক ভিটায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নূর মোহাম্মদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এলাকার রাস্তাঘাট পাকা, বিদ্যুতায়নসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২০০৫ সালে নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পর ২০১০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (৮ম শ্রেণি) পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায় এমপিওভুক্ত হয়নি। বিদ্যালয়ে বর্তমানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি নারী শিক্ষাসহ এলাকা ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখলেও ১১ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। যার কারণে কলেজে কর্মরত ১৫ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ’র নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি বিশেষ বিবেচনায় জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের সদস্য সচিব মো. আজিজুর রহমান ভূঁইয়া জানান, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে পবিত্র কোরআনখানি, র্যালি, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচিত্র প্রদর্শনী, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান, আলোচনা সভা, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত।
এ ছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে যশোরের শার্শার কাশিপুরে বীরের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নড়াইল প্রতিনিধি | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৯:১০

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি)।
১৯৩৬ সালের এই দিনে (২৬ ফেব্রুয়ারি) নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর) তিনি। বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মাতার নাম জেন্নাতুন্নেছা। মতান্তরে জেন্নাতা খানম। নূর মোহাম্মদ বাল্যকালেই তিনি বাবা-মাকে হারান। লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত।
নূর মোহাম্মদ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান।
এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ।
৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটিতে বীরদর্পে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রুপক্ষের সঙ্গে মোকাবিলা করছিলেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। একপর্যায়ে পাকবাহিনীর আক্রমণে তিনি শহীদ হন। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।
জন্মস্থান নূর মোহাম্মদ নগরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কিছু কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, পৈতৃক ভিটায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নূর মোহাম্মদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এলাকার রাস্তাঘাট পাকা, বিদ্যুতায়নসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২০০৫ সালে নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পর ২০১০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (৮ম শ্রেণি) পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায় এমপিওভুক্ত হয়নি। বিদ্যালয়ে বর্তমানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি নারী শিক্ষাসহ এলাকা ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখলেও ১১ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। যার কারণে কলেজে কর্মরত ১৫ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ’র নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি বিশেষ বিবেচনায় জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের সদস্য সচিব মো. আজিজুর রহমান ভূঁইয়া জানান, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে পবিত্র কোরআনখানি, র্যালি, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচিত্র প্রদর্শনী, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান, আলোচনা সভা, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত।
এ ছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে যশোরের শার্শার কাশিপুরে বীরের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে।