‘সরকারি সম্পত্তি ফিরিয়ে না দিলে কঠোর পরিণতি’
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩১ মার্চ, ২০১৯ ১৯:১৫
সরকারি সম্পত্তি যে বা যারা গ্রাস করেছেন, সরকারকে ফিরিয়ে দিন, নইলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
রোববার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ও সততা সংঘের সমাবেশে সভাপতি দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুদক কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সমাজের সকল স্তরে মূল্যবোধ বিকশিত করার জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা কমিশনের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে লিখবেন, আমাদের গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা সর্বদাই স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন আর্থিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা সততা সংঘ এবং সততা স্টোর নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সীমিত অর্থ দিয়ে প্রতিটি সততা সংঘের সদস্যরা যাতে সাংবাৎসরিক ভিত্তিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমরা একটি গণ্ডির মধ্যে কাজ করি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন-১০৬ এ লক্ষ লক্ষ ফোন কল এসেছে। এর সামান্য সংখ্যক অভিযোগই আমলে নেওয়া হয়েছে। আর যেসব অভিযোগ কমিশন আইনের আওতায় নেই, সে বিষয়েও আমরা সঠিক পরামর্শ প্রদান করেছি।
হটলাইন-১০৬ এখন জনগণের অভিযোগ জানানোর এক বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে দাবি করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে দেশব্যাপী তাৎক্ষণিক দুর্নীতি প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অধিকাংশ অভিযানই সফল হচ্ছে এবং দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন যে সকল দুর্নীতিবাজ সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে দখল করে ভোগদখল করছেন, নদী দখল করেছেন, লুটপাট করে সম্পত্তি গ্রাস করেছেন, এই সব জনগণের সম্পত্তি ত্যাগ করুন নইলে আপনাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ,বাংলাদেশ রেলওয়ে কিংবা বন বিভাগের সম্পত্তি দখল করে রেস্ট হাউস বানিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সরকারের সম্পত্তি সরকারের নিকট সমর্পণ করুন। নইলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণ সাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সিলেটের একজন মেয়ে শিক্ষার্থী জানায় তার বাবা তাকে ঈদ উপলক্ষে ১৫ হাজার টাকার লেহেঙ্গা উপহার দিয়েছিল। সে তার বাবার বেতনাদি সম্পর্কেও জানত। সেই মেয়েই প্রকাশ্যে তার বাবাকে বলেছিল এটা কি দুর্নীতি না? পরবর্তীতে কোরবানির ঈদে ওই মেয়েটি তার বাবার দামি উপহার গ্রহণ করেনি। সেই মেয়েটিই তার বাবাকে দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি দুদকের প্রশংসা করে বলেন, দুদক নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অনেকেই বলেন ব্যাংক লুটপাট নিয়ে দুদক কাজ করুক। আমি বলব এ কাজ দুদক করবে। আগামী দিনে যারা ব্যাংক চালাবে তাদের নিয়ে যে কাজ করছে এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। নৈতিকতা, মূল্যবোধ জিপিএ-৫ এর মাধ্যমে অর্জন করা যাবে না। দুদক শ্রেণি কক্ষের ভেতরের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। সেই জন্য শিক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে দুদককে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, দুদক মিডিয়া জুড়ি বোর্ডের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিতার্কিক আলিফ আল জামাল, সততা সংঘের সদস্য সঞ্চিতা রহমান মিম, দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ও প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার মো. ফখরুল ইসলাম হারুণ, ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে বিজয়ী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও এএফএম আমিনুল ইসলাম।
এবারের দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী সাংবাদিকগণ হচ্ছেন যথাক্রমে ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকারী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু, ২য় স্থান অধিকারী ৭১ টিভির সিনিয়র রিপোর্টার পারভেজ নাদির রেজা এবং প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ফখরুল ইসলাম হারুণ এবং ২য় স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হকিকত জাহান হকি। প্রথম পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট এবং ২য় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৪০ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩১ মার্চ, ২০১৯ ১৯:১৫

সরকারি সম্পত্তি যে বা যারা গ্রাস করেছেন, সরকারকে ফিরিয়ে দিন, নইলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
রোববার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ও সততা সংঘের সমাবেশে সভাপতি দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুদক কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সমাজের সকল স্তরে মূল্যবোধ বিকশিত করার জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা কমিশনের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে লিখবেন, আমাদের গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা সর্বদাই স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন আর্থিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা সততা সংঘ এবং সততা স্টোর নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সীমিত অর্থ দিয়ে প্রতিটি সততা সংঘের সদস্যরা যাতে সাংবাৎসরিক ভিত্তিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমরা একটি গণ্ডির মধ্যে কাজ করি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন-১০৬ এ লক্ষ লক্ষ ফোন কল এসেছে। এর সামান্য সংখ্যক অভিযোগই আমলে নেওয়া হয়েছে। আর যেসব অভিযোগ কমিশন আইনের আওতায় নেই, সে বিষয়েও আমরা সঠিক পরামর্শ প্রদান করেছি।
হটলাইন-১০৬ এখন জনগণের অভিযোগ জানানোর এক বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে দাবি করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে দেশব্যাপী তাৎক্ষণিক দুর্নীতি প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অধিকাংশ অভিযানই সফল হচ্ছে এবং দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন যে সকল দুর্নীতিবাজ সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে দখল করে ভোগদখল করছেন, নদী দখল করেছেন, লুটপাট করে সম্পত্তি গ্রাস করেছেন, এই সব জনগণের সম্পত্তি ত্যাগ করুন নইলে আপনাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ,বাংলাদেশ রেলওয়ে কিংবা বন বিভাগের সম্পত্তি দখল করে রেস্ট হাউস বানিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সরকারের সম্পত্তি সরকারের নিকট সমর্পণ করুন। নইলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণ সাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সিলেটের একজন মেয়ে শিক্ষার্থী জানায় তার বাবা তাকে ঈদ উপলক্ষে ১৫ হাজার টাকার লেহেঙ্গা উপহার দিয়েছিল। সে তার বাবার বেতনাদি সম্পর্কেও জানত। সেই মেয়েই প্রকাশ্যে তার বাবাকে বলেছিল এটা কি দুর্নীতি না? পরবর্তীতে কোরবানির ঈদে ওই মেয়েটি তার বাবার দামি উপহার গ্রহণ করেনি। সেই মেয়েটিই তার বাবাকে দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি দুদকের প্রশংসা করে বলেন, দুদক নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অনেকেই বলেন ব্যাংক লুটপাট নিয়ে দুদক কাজ করুক। আমি বলব এ কাজ দুদক করবে। আগামী দিনে যারা ব্যাংক চালাবে তাদের নিয়ে যে কাজ করছে এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। নৈতিকতা, মূল্যবোধ জিপিএ-৫ এর মাধ্যমে অর্জন করা যাবে না। দুদক শ্রেণি কক্ষের ভেতরের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। সেই জন্য শিক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে দুদককে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, দুদক মিডিয়া জুড়ি বোর্ডের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিতার্কিক আলিফ আল জামাল, সততা সংঘের সদস্য সঞ্চিতা রহমান মিম, দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ও প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার মো. ফখরুল ইসলাম হারুণ, ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে বিজয়ী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও এএফএম আমিনুল ইসলাম।
এবারের দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী সাংবাদিকগণ হচ্ছেন যথাক্রমে ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকারী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু, ২য় স্থান অধিকারী ৭১ টিভির সিনিয়র রিপোর্টার পারভেজ নাদির রেজা এবং প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ফখরুল ইসলাম হারুণ এবং ২য় স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হকিকত জাহান হকি। প্রথম পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট এবং ২য় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৪০ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট।