সতর্ক না হলে রোহিঙ্গারা উগ্রবাদে জড়াতে পারে: মনিরুল ইসলাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ১৭:৪৯
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি না রাখা হলে এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘমেয়াদি হলে তারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।
বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই শিশুরা যখন অ্যাডাল্ট হবে তখন বিভিন্ন ক্ষোভ থেকে উগ্রবাদে জড়িয়ে পরতে পারে। তবে এই মুহূর্তে তেমন কোণ আশঙ্কা নেই।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা বিশ্বজুড়ে ঝিমিয়ে পড়া উগ্রবাদীদের ফের জাগ্রত করার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশে সুসংগঠিতভাবে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা তাদের নেই।’
শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় কালচার অব ভায়োলেন্স রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। মুসলমানরা সেখানে খ্রিষ্টানদের থেকে সংখ্যা গরিষ্ঠ। মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে কোণ সংঘাত ছিল না। এলটিটি কখনো কোন ধর্মীয় গ্রুপকে টার্গেট করে হামলা চালায় নি। তারা গভর্নমেন্ট ম্যাকানিজমের সঙ্গে জারা জড়িত তাদের ওপর হামলা করেছে। কোন সিভিলিয়ানদের ওপর হামলা করেনি। শ্রীলঙ্কায় যেটি ঘটেছে সেটি সন্ত্রাসবাদ এ বিষয়ে কোণ সন্দেহ নাই। নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পরে খ্রিষ্টানদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ধর্ম ভিত্তিক উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো তাদের কমিউনিকেশন চ্যানেল সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছে যে খ্রিষ্টানদের যেখানে পাওয়া যাবে কিংবা তাদের চার্জ গুলোতে টার্গেট করতে হবে। এখানে খ্রিষ্টানরাই টার্গেট ছিল। এই হোটেলগুলো খুবই কাছাকাছি। এই সমস্ত জায়গাতে হামলার কারণ আমার ধারণা এইটার ইমপ্যাক্ট বারাতে চেষ্টা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘হামলার পেছনে এখন পর্যন্ত যাদের নাম জানা গেছে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকও সুইসাইডাল অ্যাটাকার হিসেবে ছিল। এটা একটা ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। এখানে একজ নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকও নিহত হয়েছেন। তার মানে ন্যাশনাল তওহিদ জামাত এদের একটা ভূমিকা আছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘গত ১১ এপ্রিল সরাসরি তওহিদ জামাতের নাম উল্লেখ করে গির্জা এবং ভারতীয় মিশনে হামলা চালাতে পারে বলে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সবাই সে দেশের নাগরিক বলে জানা গেছে। তওহিদ জামাতের একটা অংশও আইএসের বায়াত নিয়েছিল’।
তিনি বলেন, দেশে সহিংস উগ্রবাদ বা ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদের আমদানিকারকেরা প্রথম যুগের যারা ছিল সকলেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেউ কেউ ফাঁসিতে ঝুলেছেন। এই আমদানিকারকেরা ছিল সেই আফগানিস্তানের সিভিল ওয়ার, যেটা তারা জিহাদ বলেছে, সেই জিহাদে যারা গিয়েছিল মাওলানা আবদুস সালামসহ এই যে হরকাতুল জিহাদ, এদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, কেউ কেউ জেলে আছে দু-একজন পলাতক।
অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আইএসএর কোন খলিফা নাই। এটা ইরাক সিরিয়াতে থাকতে পারে। বাংলাদেশ থেকে কতিপয় লোক আইএসএ গিয়েছে তাদের অধিকাংশ ২০১৪ সালে। এদের পাসপোর্ট এর মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সিরিয়া থেকে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে গেলে এয়ারক্রাফটে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি আইডেনটিটি লাগবে। পার্শ্ববর্তী দেশের কোণ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাশ সংগ্রহ করতে হবে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব’।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ উগ্রপন্থা ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ারও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে যেন জঙ্গিবাদ নিয়ে সংবাদ এমন ভাবে প্রকাশ না করা যাতে তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বারতে পারে।
মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ ভাবে কাজ করতে হবে। যেমন জিহাদ, শহীদ, মুজাহিদ এই শব্দগুলো ব্যবহার আপনারা না করেন। কারণ এটার একটা ধর্মীয় ইতিবাচক অর্থ রয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা আসলে খুনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রাবের নবনির্বাচিত সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম, ডিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ১৭:৪৯

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি না রাখা হলে এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘমেয়াদি হলে তারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।
বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই শিশুরা যখন অ্যাডাল্ট হবে তখন বিভিন্ন ক্ষোভ থেকে উগ্রবাদে জড়িয়ে পরতে পারে। তবে এই মুহূর্তে তেমন কোণ আশঙ্কা নেই।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা বিশ্বজুড়ে ঝিমিয়ে পড়া উগ্রবাদীদের ফের জাগ্রত করার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশে সুসংগঠিতভাবে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা তাদের নেই।’
শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় কালচার অব ভায়োলেন্স রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। মুসলমানরা সেখানে খ্রিষ্টানদের থেকে সংখ্যা গরিষ্ঠ। মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে কোণ সংঘাত ছিল না। এলটিটি কখনো কোন ধর্মীয় গ্রুপকে টার্গেট করে হামলা চালায় নি। তারা গভর্নমেন্ট ম্যাকানিজমের সঙ্গে জারা জড়িত তাদের ওপর হামলা করেছে। কোন সিভিলিয়ানদের ওপর হামলা করেনি। শ্রীলঙ্কায় যেটি ঘটেছে সেটি সন্ত্রাসবাদ এ বিষয়ে কোণ সন্দেহ নাই। নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পরে খ্রিষ্টানদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ধর্ম ভিত্তিক উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো তাদের কমিউনিকেশন চ্যানেল সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছে যে খ্রিষ্টানদের যেখানে পাওয়া যাবে কিংবা তাদের চার্জ গুলোতে টার্গেট করতে হবে। এখানে খ্রিষ্টানরাই টার্গেট ছিল। এই হোটেলগুলো খুবই কাছাকাছি। এই সমস্ত জায়গাতে হামলার কারণ আমার ধারণা এইটার ইমপ্যাক্ট বারাতে চেষ্টা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘হামলার পেছনে এখন পর্যন্ত যাদের নাম জানা গেছে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকও সুইসাইডাল অ্যাটাকার হিসেবে ছিল। এটা একটা ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। এখানে একজ নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকও নিহত হয়েছেন। তার মানে ন্যাশনাল তওহিদ জামাত এদের একটা ভূমিকা আছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘গত ১১ এপ্রিল সরাসরি তওহিদ জামাতের নাম উল্লেখ করে গির্জা এবং ভারতীয় মিশনে হামলা চালাতে পারে বলে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সবাই সে দেশের নাগরিক বলে জানা গেছে। তওহিদ জামাতের একটা অংশও আইএসের বায়াত নিয়েছিল’।
তিনি বলেন, দেশে সহিংস উগ্রবাদ বা ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদের আমদানিকারকেরা প্রথম যুগের যারা ছিল সকলেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেউ কেউ ফাঁসিতে ঝুলেছেন। এই আমদানিকারকেরা ছিল সেই আফগানিস্তানের সিভিল ওয়ার, যেটা তারা জিহাদ বলেছে, সেই জিহাদে যারা গিয়েছিল মাওলানা আবদুস সালামসহ এই যে হরকাতুল জিহাদ, এদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, কেউ কেউ জেলে আছে দু-একজন পলাতক।
অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আইএসএর কোন খলিফা নাই। এটা ইরাক সিরিয়াতে থাকতে পারে। বাংলাদেশ থেকে কতিপয় লোক আইএসএ গিয়েছে তাদের অধিকাংশ ২০১৪ সালে। এদের পাসপোর্ট এর মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সিরিয়া থেকে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে গেলে এয়ারক্রাফটে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি আইডেনটিটি লাগবে। পার্শ্ববর্তী দেশের কোণ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাশ সংগ্রহ করতে হবে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব’।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ উগ্রপন্থা ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ারও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে যেন জঙ্গিবাদ নিয়ে সংবাদ এমন ভাবে প্রকাশ না করা যাতে তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বারতে পারে।
মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ ভাবে কাজ করতে হবে। যেমন জিহাদ, শহীদ, মুজাহিদ এই শব্দগুলো ব্যবহার আপনারা না করেন। কারণ এটার একটা ধর্মীয় ইতিবাচক অর্থ রয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা আসলে খুনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রাবের নবনির্বাচিত সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম, ডিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ।