জঙ্গি হামলার বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ১৬:৩২
শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এর আগে বেলা ১১টার দিকে হুইসেল বাজিয়ে ও সবুজ পতাকা উড়িয়ে তিনি ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদ ও রাজশাহীর আমের কথা মাথায় রেখে এ সময়ে ট্রেনটির উদ্বোধন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, আজকে জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। মাত্র কয়েক দিন আগেই শ্রীলঙ্কায় যে ঘটনা ঘটল সেখানেও আমরা বাংলাদেশের কয়েকজনকে হারিয়েছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য অনেকগুলো শিশু সেখানে মারা যায়। সেখানে আমাদেরও বাংলাদেশের শিশু জায়ানকে আমাদের হারাতে হয়েছে এই জঙ্গি সন্ত্রাসের কারণে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটানোর অনেক চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে যাচ্ছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, এই ধরনের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে, কে কোথায় এই ধরনের সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে সাথে লিপ্ত সেটা শুধু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা না, দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।’
আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রেলের নতুন নতুন বগি কিনেছি সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাস কিনেছি, সেগুলো পুড়িয়েছে। তাছাড়া প্রাইভেট গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ এমন কিছু নেই যা অগ্নি সন্ত্রাসের কবলে ধ্বংস হয়নি। সাথে সাথে সাধারণ মানুষের জীবন। ছোট শিশু, নারী, পুরুষ। বাবা দেখেছে চোখের সামনে ছেলে পুড়ে যাচ্ছে, স্ত্রী দেখেছে চোখের সামনে স্বামী পুড়ে যাচ্ছে, মা দেখেছে সন্তান বা কন্যা পুড়ে যাচ্ছে- এই রকম ভয়াবহ চিত্র আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। আমরা চাই না এ জাতীয় ঘটনা বাংলাদেশে ঘটুক।”
ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানান। এছাড়াও অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সব ধর্মের শিক্ষা গুরুদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
রেলের উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক চালু করতে চাই। রাজধানীর সাথে যোগাযোগটা আরও উন্নত করে দিতে চাই।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের অপর প্রান্তে রাজশাহী রেলস্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে ট্রেনের ব্রডগেজ কোচগুলো আনা হয়েছে।
বনলতা এক্সপ্রেস নামটি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
১২টি কোচ নিয়ে চলবে ট্রেনটি। আসনসংখ্যা ৯২৮। এর মধ্যে এসি চেয়ার ১৬০টি, শোভন চেয়ার ৬৪৪টি, খাবার গাড়িতে আসন ১০৮টি এবং পাওয়ার কার ১৬টি। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলবে বনলতা এক্সপ্রেস।
ট্রেনটি রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকা থেকে ছাড়বে বেলা সোয়া ১টায় এবং রাজশাহী পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। বনলতা এক্সপ্রেসের ভাড়া একই রুটে চলমান অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া ট্রেনটিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম নিজস্ব ক্যাটারিং অ্যান্ড টুরিজম সার্ভিসেস (বিআরসিটিএস) দ্বারা খাবার সরবরাহ করা হবে। খাবার মূল্য ১৫০ টাকাসহ শোভন চেয়ারের মূল্য ৪২৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের মূল্য ৮৭৫ টাকা।
ট্রেনটিতে সংযুক্ত রয়েছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এ কারণে মলমূত্র রেললাইনের ওপরে পড়বে না। ট্রেনটিতে থাকছে রিক্লেনার চেয়ার। আছে ওয়াইফাই সুবিধা। প্রতিটি বগিতে রয়েছে এলইডি ডিসপ্লে। যার মাধ্যমে স্টেশন ও ভ্রমণের তথ্য প্রদর্শন করা হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ১৬:৩২

শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এর আগে বেলা ১১টার দিকে হুইসেল বাজিয়ে ও সবুজ পতাকা উড়িয়ে তিনি ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদ ও রাজশাহীর আমের কথা মাথায় রেখে এ সময়ে ট্রেনটির উদ্বোধন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, আজকে জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। মাত্র কয়েক দিন আগেই শ্রীলঙ্কায় যে ঘটনা ঘটল সেখানেও আমরা বাংলাদেশের কয়েকজনকে হারিয়েছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য অনেকগুলো শিশু সেখানে মারা যায়। সেখানে আমাদেরও বাংলাদেশের শিশু জায়ানকে আমাদের হারাতে হয়েছে এই জঙ্গি সন্ত্রাসের কারণে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটানোর অনেক চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে যাচ্ছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, এই ধরনের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে, কে কোথায় এই ধরনের সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে সাথে লিপ্ত সেটা শুধু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা না, দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।’
আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রেলের নতুন নতুন বগি কিনেছি সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাস কিনেছি, সেগুলো পুড়িয়েছে। তাছাড়া প্রাইভেট গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ এমন কিছু নেই যা অগ্নি সন্ত্রাসের কবলে ধ্বংস হয়নি। সাথে সাথে সাধারণ মানুষের জীবন। ছোট শিশু, নারী, পুরুষ। বাবা দেখেছে চোখের সামনে ছেলে পুড়ে যাচ্ছে, স্ত্রী দেখেছে চোখের সামনে স্বামী পুড়ে যাচ্ছে, মা দেখেছে সন্তান বা কন্যা পুড়ে যাচ্ছে- এই রকম ভয়াবহ চিত্র আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। আমরা চাই না এ জাতীয় ঘটনা বাংলাদেশে ঘটুক।”
ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানান। এছাড়াও অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সব ধর্মের শিক্ষা গুরুদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
রেলের উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক চালু করতে চাই। রাজধানীর সাথে যোগাযোগটা আরও উন্নত করে দিতে চাই।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের অপর প্রান্তে রাজশাহী রেলস্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে ট্রেনের ব্রডগেজ কোচগুলো আনা হয়েছে।
বনলতা এক্সপ্রেস নামটি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
১২টি কোচ নিয়ে চলবে ট্রেনটি। আসনসংখ্যা ৯২৮। এর মধ্যে এসি চেয়ার ১৬০টি, শোভন চেয়ার ৬৪৪টি, খাবার গাড়িতে আসন ১০৮টি এবং পাওয়ার কার ১৬টি। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলবে বনলতা এক্সপ্রেস।
ট্রেনটি রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকা থেকে ছাড়বে বেলা সোয়া ১টায় এবং রাজশাহী পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। বনলতা এক্সপ্রেসের ভাড়া একই রুটে চলমান অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া ট্রেনটিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম নিজস্ব ক্যাটারিং অ্যান্ড টুরিজম সার্ভিসেস (বিআরসিটিএস) দ্বারা খাবার সরবরাহ করা হবে। খাবার মূল্য ১৫০ টাকাসহ শোভন চেয়ারের মূল্য ৪২৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের মূল্য ৮৭৫ টাকা।
ট্রেনটিতে সংযুক্ত রয়েছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এ কারণে মলমূত্র রেললাইনের ওপরে পড়বে না। ট্রেনটিতে থাকছে রিক্লেনার চেয়ার। আছে ওয়াইফাই সুবিধা। প্রতিটি বগিতে রয়েছে এলইডি ডিসপ্লে। যার মাধ্যমে স্টেশন ও ভ্রমণের তথ্য প্রদর্শন করা হবে।