রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে দায় আপনাদের: জাতিসংঘকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ২১:১২
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘পাহাড়ধসে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে দায় আপনাদের’।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানরা মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসলে তিনি এ কথা বলেন। এই তিন কর্মকর্তা হলেন- জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু আপনারা তাদের সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছেন। তবে বর্তমানে রোহিঙ্গারা যেখানে আছে, সেখানে পাহাড়ধসে তাদের প্রাণহানি হলে দায় আপনাদের নিতে হবে।
জাতিসংঘের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি আমরা কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় ভূমিধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে আমরা দায়ী থাকব না। যারা বাধা দিচ্ছে তারা এর জন্য দায়ী থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা জোর করে কাউকে ভাসানচরে নেব না। তবে যারা যাবে তাদের জন্য একটি ভালো অবস্থান হবে। আমরা নিজের পয়সায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। ওখানে গেলে পরে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কাজকর্ম করতে পারবে। মাছ ধরতে পারবে, গরু পালন করতে পারবে।
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানকে বাংলাদেশে কাজ কমিয়ে মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ দেন। মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি আপনাদের এখানে কাজ নাই, মিয়ানমারে যান। আমি বেশ শক্তভাবে বলেছি। মন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে আরও বলেন, আপনারা মিয়ানমারকে কনভিন্স করেন, যাতে তারা তাদের লোক নিয়ে যায় এবং ওখানে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেন।
রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ঝামেলা তৈরি করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনগণ খুব আপসেট, এরা দিনে দিনে ঝামেলার সৃষ্টি করছে। আমরা বলেছি ওদের সংখ্যা এতো যে তারা আমাদের বনজঙ্গল সব উজাড় করে দিচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ব জনমত তৈরির আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি আপনাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ যেমন- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেন মিয়ানমারকে চাপ দিতে বলুন। কারণ মিয়ানমারের বেশির ভাগ ব্যবসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে, জাপান সেখানে বিনিয়োগ করেই চলেছে, ব্যাংকিং চালায় সিঙ্গাপুর। আপনারা সেখানে চাপ দিলে তারা মিয়ানমারকে চাপ দেবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায় এবং কোনও ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না। মন্ত্রী বলেন, সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে। আমরা যুদ্ধ করব না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই।
শেয়ার করুন
সংশ্লিষ্ট সংবাদ
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ২১:১২

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘পাহাড়ধসে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে দায় আপনাদের’।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানরা মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসলে তিনি এ কথা বলেন। এই তিন কর্মকর্তা হলেন- জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু আপনারা তাদের সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছেন। তবে বর্তমানে রোহিঙ্গারা যেখানে আছে, সেখানে পাহাড়ধসে তাদের প্রাণহানি হলে দায় আপনাদের নিতে হবে।
জাতিসংঘের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি আমরা কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় ভূমিধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে আমরা দায়ী থাকব না। যারা বাধা দিচ্ছে তারা এর জন্য দায়ী থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা জোর করে কাউকে ভাসানচরে নেব না। তবে যারা যাবে তাদের জন্য একটি ভালো অবস্থান হবে। আমরা নিজের পয়সায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। ওখানে গেলে পরে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কাজকর্ম করতে পারবে। মাছ ধরতে পারবে, গরু পালন করতে পারবে।
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানকে বাংলাদেশে কাজ কমিয়ে মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ দেন। মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি আপনাদের এখানে কাজ নাই, মিয়ানমারে যান। আমি বেশ শক্তভাবে বলেছি। মন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে আরও বলেন, আপনারা মিয়ানমারকে কনভিন্স করেন, যাতে তারা তাদের লোক নিয়ে যায় এবং ওখানে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেন।
রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ঝামেলা তৈরি করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনগণ খুব আপসেট, এরা দিনে দিনে ঝামেলার সৃষ্টি করছে। আমরা বলেছি ওদের সংখ্যা এতো যে তারা আমাদের বনজঙ্গল সব উজাড় করে দিচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ব জনমত তৈরির আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি আপনাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ যেমন- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেন মিয়ানমারকে চাপ দিতে বলুন। কারণ মিয়ানমারের বেশির ভাগ ব্যবসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে, জাপান সেখানে বিনিয়োগ করেই চলেছে, ব্যাংকিং চালায় সিঙ্গাপুর। আপনারা সেখানে চাপ দিলে তারা মিয়ানমারকে চাপ দেবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায় এবং কোনও ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না। মন্ত্রী বলেন, সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে। আমরা যুদ্ধ করব না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই।