
রোহিঙ্গাদের অবশ্যই রাখাইনে ফিরে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সফররত জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সায়মন বিচ রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিরা এ মন্তব্য করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) সদর দপ্তরের হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (হিউম্যানএ্যাফেয়ারস) মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনো।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতিসংঘ উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআর সদর দপ্তরের হাইকমিশনার মি. ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘এ জন্য মিয়ানমারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। রোহিঙ্গারা যত দিন থাকবে তত দিন জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
গ্রান্ডি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরিয়ে যাওয়ার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। বেশ কিছু ধরে রাখাইন আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহিংসতা জোরালো হয়েছে। এ কারণে রাখাইনে এখন রোহিঙ্গারা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে স্বাধীনভাবে চলাফেরার করার মতো পরিবেশ নেই। আমি মিয়ানমার সফর করব, তখন মিয়ানমারের সাথে এই বিষয়ে জোরালোভাবে তুলে ধরব। কারণ রোহিঙ্গাদের অবশ্যই রাখাইনে ফিরে যেতে হবে’।
এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনো বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গারা যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে সে জন্য কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আহবান জানান।
এর আগে সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থার এই ৩ প্রধান। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী-২ এর ১১ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান তারা। এসময় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ‘ডাব্লিউএফপি’ এর বিভিন্ন খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এছাড়া, তারা উখিয়ার ১১, ১৭ ও ১৮ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সাথে কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার দুই দিনের কক্সবাজার সফরে এসে বিকেল তিনটার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান এবং বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থী কমিশনারের সাথে পৃথক বৈঠক করেন ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
গত বুধবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার আসামি ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) রামপুরা থানার আদালতের নিবন্ধন শাখায় এ প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (ডিবি) ইয়াসিন শিকদার। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি ফারদিন হত্যা মামলায় আমাতুল্লাহ বুশরাকে জামিন দেন সপ্তম অতিরিক্ত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার।
এর আগে, ফারদিনকে খুন করা হয়েছে দাবি করে বুশরাসহ অজ্ঞাতনামাদের নামে হত্যা মামলা করেন ফারদিনের বাবা। এরপর গত ১০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর রামপুরার নিজ বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরা থেকে নিখোঁজ হন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদরের সিদ্ধিরগঞ্জ বনানী ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা হত্যার কথা বললেও বিভিন্ন নাটকীয়তার পর পুলিশ ও র্যাব জানায়, ফারদিন স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ বা আত্মহত্যা করেছেন।
চূড়ান্ত হিসাবে দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এই প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।
এর আগে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ। বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বিআইডিএস।
বিআইডিএস বলেছে, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। তারা বাদ পড়াদের যোগ করেছে।
তবে মোট জনসংখ্যার বাইরে আর কোনো তথ্য দেয়নি বিবিএস ও বিআইডিএস।
তিন ফসলি জমিতে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বা স্থাপনা তৈরি না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ হলে এ বিষয়ে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন।
সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার আজকের বৈঠকের নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরেও একটা বিশেষ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি হলো- তিন ফসলি জমিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, স্থাপনা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বা আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে সৌর প্যানেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভবন তৈরির প্রস্তাব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন- এখন থেকে কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না।
তিনি জানান, তিন ফসলি জমিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না, এটি সংরক্ষণ করতে হবে। এটি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা এখন থেকে নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে চিঠি দেবোয়া হবে।
সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে কি এর মধ্যে পড়বে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো ক্ষেত্রেই কোনো প্রকল্প হতে পারবে না। সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায় হোক না কেন। কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। প্রকল্প নেওয়ার সময় যাচাই করে দেখা হবে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছেও তা পাঠানো হবে।
দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২ হাজার ২৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ওই ১৩ রোগী শনাক্ত হয়। এই সময়ে মৃত্যু হয়নি কারও। তাতে দিনে শনাক্তের হার হয়েছে ০ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যা আগের দিন ০ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছিল।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬২২ জন হয়েছে। মৃতের মোট সংখ্যা রয়েছে আগের দিনের মতই ২৯ হাজার ৪৪৩ জন।
২৪ ঘণ্টায় ২৭১ জন কোভিড রোগীর সেরে ওঠার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫১৩ জন।
বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না- এমন মুচলেকার কথা নির্বাহী আদেশে মুক্তির আবেদনে ছিল না বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের '১১তম ওরিয়েন্টেশন কোর্স'-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দাবি করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ সেলিম এ দাবি করেন। এরই প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
আনিসুল হক বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি সংসদে একজন সংসদ সদস্য যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা একদম ভুল না। তবে, আমার যতদূর মনে পড়ে, এমন কথা ছিল না।
সারা বিশ্বে অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। পরিবারে এবং পরিচিতদের অনেককেই এই সমস্যা নিয়ে নাজেহাল হতে দেখা যায়। থাইরয়েডের সমস্যা নারীদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও, ইদানিং বহু পুরুষও নানাভাবে এমন সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সাধারণত বয়স বাড়লে এই ধরনের ক্রনিক সমস্যা দেখা দেয়। অনিয়ম আর শরীরের প্রতি অবহেলার কারণে থাইরয়েডের মতো সমস্যা কম বয়সেও দেখতে পাওয়া যায়।
থাইরয়েড গ্রন্থি যেই থাইরয়েড হরমোনের সৃষ্টি করে, তার মাত্রা প্রয়োজনের থেকে বেশি বা কম হওয়াতেই এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। থাইরয়েড হরমোন মূলত বিপাকের ক্ষেত্রে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই হরমোনের মাত্রা শরীরে অত্যধিক বেশি বা কম হয়ে গেলে তা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। কারণ এর মাত্রা বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলেই দেখা দেবে সমস্যা। থাইরয়েড শরীরে বাসা বেঁধেছে তা সব সময়ে আগে থেকে জানা যায় না। তবে থাইরয়েড হানা দিলে কয়েকটি উপসর্গ ফুটে ওঠে পায়ের পাতায়।
পায়ের পাতায় ব্যথা
থাইরয়েডের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হল পায়ের পাতায় ব্যথা। থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন তৈরি করে, যা শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যখন সেই হরমোন ঠিক করে কাজ করে না, তখন পায়ের পেশিতে ব্যথা শুরু হয়। এই ব্যথার নেপথ্যে থাকতে পারে ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’। পায়ে যদি মাঝেমাঝেই ব্যথা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে থাইরয়েডের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।
শুষ্ক পায়ের তলা
শরীরে থাইরয়েড বাসা বাঁধলে পায়ের তলা অত্যধিক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে তৈরি হওয়া হরমোন যদি ঠিক করে কাজ না করে, তখনই এমন সমস্যা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। থাইরয়েড গ্রন্থি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে বলে, শরীরে তেল এবং ঘামের উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে।
পায়ে চুলকানি
হাইপোথাইরয়েডিজমের একটি সাধারণ উপসর্গ হল পায়ে অস্বস্তি হওয়া। ধীরে এটি শুধুমাত্র পা নয়, মাথার ত্বক, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। থাইরয়েড হলে মূলত শরীর ভিতর থেকে শুকিয়ে যায়। ত্বক অত্যধিক রুক্ষ হয়ে পড়ে বলে ত্বকে অস্বস্তি শুরু হয়। কোনও কারণ ছাড়াই এই অস্বস্তি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, ‘ডেটা সুরক্ষা আইন যদি স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।’ গতকাল রবিবার রাজধানীর টি এম কে সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন পিটার হাস।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশে আসার পর থেকে দেশটির ডিজিটাল যুগে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ফুডপান্ডা থেকে বিকাশ এবং এর বাইরেও অনেক বিস্তৃতি দেখেছি। এটা আমার কাছে এখন স্পষ্ট, এই শতকে ডিজিটাল বিশ্বে দেশটি
স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করতে চায়। এর মধ্যে পৃথিবী দ্রুত বদলাচ্ছে। আর বদলানোর কারণে প্রতিটি দেশের সরকার ও সমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তির দ্রুতগতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের আইনেও নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সাজানোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সবাই। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশসহ সব দেশে এই চ্যালেঞ্জ আছে।’
পিটার হাস বলেন, ‘অনলাইন বিশ্ব যেমন বড় ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছে, তেমনি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। ফলে সরকারগুলোকে অবশ্যই অনলাইন ও এর সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যবহারকারীর ডেটাকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে এবং মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। তারপরও এর ভারসাম্য রাখতে হবে।’
বদলে যাওয়ার সঙ্গে অর্থনীতির সংযোগ অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন পিটার হাস। তিনি বলেন, ‘আজকের বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত না করে বিশ্বের কোনো দেশের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের আমাদের মিশনের কাজের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ অন্যতম। একইভাবে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে একটি টেকসই ও যৌথভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এমন একটা অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত। আর এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যকে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছি। আমরা মনে করি, একটা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বৃহত্তর পরিসরে অর্থনৈতিক সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের আসনে স্থান করে দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আরও সংযুক্ত করতে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেন বিদেশি ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে আগ্রহ বোধ করেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ দেশে বিনিয়োগ করা এবং এখানে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছি।’
বাংলাদেশের বাজার খুবই আকর্ষণীয় উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, ‘এ কারণেই সম্প্রতি আমরা দূতাবাসের একটি ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস চালু করেছি। আর এর মধ্যেই আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আশঙ্কার কথাও শুনতে পেয়েছি। তারা বলছেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনের প্রবিধানগুলো এখানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণীত প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্যোগ রয়েছে। আমরা যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে মূল্য দিই, তাই আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা সরকারের কাছে সরাসরি তুলে ধরেছি।’
খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইন যদি ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, মানে তা যদি আইনে পরিণত করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানি এ দেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা এখানে ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে না। এ ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ প্রায় দুই হাজারের বেশি স্টার্টআপকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হতে পারে এবং প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন, তারা আর সেবাগুলো পাবেন না। তাই আমি মনে করি ব্যবসাকে আকর্ষণীয় করার জন্য উদ্ভাবনের সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জন্য অনলাইন উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়া দরকার।’
মানবাধিকারের বিষয় টেনে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য অনলাইন বিষয়বস্তুর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এটাও সত্যি এ কাজটি খুব সহজ নয়। তবে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে কোশ্চেন দেখেছি, সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন কনটেন্ট বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণায় উদ্বেগের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সমালোচনা গ্রহণ করার সক্ষমতা এবং অপ্রীতিকর বক্তব্য হলেও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা শক্তিশালী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। আমাদের দূতাবাস নাগরিক সমাজের অনেক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ আইনটির বিষয়ে শুনেছে। তাদের ভয় হলো এই নিয়ম আইন মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। ডেটা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডেটা তদারকি কর্র্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এই আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ তাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করবে কিন্তু আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে আন্তর্জাতিক মানদন্ড সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই।’
সবশেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ ডেটা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদ-, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে উপযুক্ত ভারসাম্য গড়ে তুললে সেটা এ দেশের অব্যাহত উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে। বাংলাদেশের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত অংশীদার আমরা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে চায়।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম নিয়ে কিছুই বলেননি বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নামাজে জানাজা শেষে সাংবাদিক এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সরকারি দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতার হিরো আলম সম্পর্কে মন্তব্য রাজনীতিতে সমালোচনার সৃষ্টি করে। অনেকে দাবি করেন হিরো আলম জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় চলে আসে আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যে।
গত শনিবার বিকালে কামরঙ্গীচরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘ফখরুল সাহেব বলেন রাষ্ট্রতন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায়রে মায়া। হিরো আলমের জন্য এতো দরদ উঠলো ফখরুলের। ফখরুল ভেবেছিল হিরো আলম জিতে যাবে। হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। তারা তো নির্বাচন চায় নাই। হিরো আলমকে বিএনপি দাঁড় করিয়েছে। সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্নভঙ্গ।
গত রবিবার ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন হিরো আলম। জবাবে হিরো বলেন, হিরো আলমের সঙ্গে একটা নির্বাচনে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও আপনি দলীয়ভাবে দাঁড়ান। এরপর আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন খেলা হয় কি-না। খেলার জন্য নাকি উনি মাঠে প্লেয়ার খুঁজে পান না!
বিএনপি ছেড়ে দেওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে প্রায় হাজার খানেক ভোটে পরাজিত হন হিরো আলম। জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হিরো আলম।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের তা অস্বীকার করেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি তাকে (হিরো আলম) কিছুই বলিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাব দিয়েছি। তিনি (হিরো আলম) প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে (নির্বাচন) করেছে। ভালো ভোটও পেয়েছে। তার সম্পর্কে আমার কোন মন্তব্য নেই। আমি যা বলেছি সেটা মির্জা ফখরুলের মন্তব্যের জবাব।
প্রয়াত সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিনকে স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মোসলেম উদ্দিন নেতা থেকে কর্মী হয়েছেন, দলের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর চেতনার সৈনিক। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আওয়ামী লীগকেই লালন করেন তিনি। তার জীবনে এমপি হওয়ার স্বপ্ন ও ইচ্ছে ছিলো। সেটা শেখ হাসিনা পূরণ করেছেন। তার মনে কোন না পাওয়ার বেদনা ছিলো না।
রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।
সোমবার সকাল ১১টার আগে মোছলেম উদ্দিনের মরদেহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হয়। সেখানে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগফল ভীষণ ফারাক সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে, এমন দাবি করেছেন দলটির অন্তত দুই ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলছেন, এ ফারাক কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে, যে কারণে দলীয় কাজকর্মে নিষ্ক্রিয় অনেকেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককেই এখন দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায় না।
ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাচিত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকাংশে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন তারা। ২০০৯ থেকে গত বছর ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে পাঁচটি। একই পদে থাকা একাধিক নেতার পদোন্নতি বা পদাবনতি কিছুই হয়নি। এটিও হতাশার বা নিষ্ক্রিয় থাকার অন্যতম কারণ। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এ ধরনের সমস্যা নেতৃত্ব তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন দেখে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা মনোবেদনায় ভুগছেন। অল্পসংখ্যক নেতা যারা কাজ না করেও পদ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন, ভালো আছেন তারাই।
সম্প্রতি সভাপতিমন্ডলী ও সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের। তাদের হতাশা ও মনোবেদনা গোপন করেননি তারা। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে থাকা এ নেতারা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সারা বছর কাজ করা নেতারা পদোন্নতি যেমন পাননি দলের জন্য কাজ না করা নেতাদের পদাবনতিও ঘটেনি। এ নীতি অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করায় নেতারা মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন। হতাশা হয়েছেন। এমনটা হলে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার কাজে অন্তরায় সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় রাগ-ক্ষোভ ভেতরে পুষে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন নেতারা। উচ্চবাচ্য করার সুযোগ নেই তাদের।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এক দিনের সম্মেলনে বিকেলের অধিবেশনে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক রেখেই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে নতুন তিন-চারজন যোগ হয়েছেন। কয়েকজন বাদে পুরনোরা সবাই থেকে গেছেন। পদোন্নতি বা পদাবনতি তেমন হয়নি। এর আগে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলনেও পুরনো নেতৃত্ব বহাল রেখে কমিটি করা হয়। এ নিয়ে তৃণমূলেও হতাশা-ক্ষোভ দেখা গেছে।
অবশ্য এবারের জাতীয় সম্মেলনে সক্রিয় নেতার বাদ পড়ার নজিরও আছে। গত কমিটি থেকে বাদ পড়া কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্মেলনে কমিটি নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে আমাকে বাদ দিতেই এ সম্মেলন। সামাজিকভাবে ও পরিবারের সদস্যদের কাছে আমি খুব লজ্জা পেয়েছি। আমি বাদ পড়ার কারণটাও খুঁজে পাই না।’
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছেন। কিন্তু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও মাহাবুবউল আলম হানিফসহ দুই-তিনজনকেই ঘুরেফিরে কর্মসূচিতে দেখা যায়। সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় এক নেতাকে একটি মাত্র কর্মসূচিতে দেখা গেছে। অন্য এক নেতা বিদেশে গিয়ে বসে আছেন। আগে সক্রিয় ছিলেন এমন আরেক নেতাকে আর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ে আগে নেতাদের ঘিরে নিচের দিকের নেতা ও কর্মীদের আড্ডা হতো। সেই আড্ডায় এখন ভাটা দেখা যাচ্ছে।
গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় কেন্দ্রের ডজনখানেক নেতাকে মঞ্চে দেখা গেছে। সাধারণত দলীয়প্রধানের জেলা সফরে কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই থাকেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করছেন কোনো কোনো নেতা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দিনরাত খাটাখাটুনি করা নেতারা যে ফল পেয়েছেন এবং দলীয় কার্যক্রমে না থেকে পদকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে ফায়দা লোটা নেতারাও একই ফল পেয়েছেন। তাহলে আর খাটুনি করে লাভ কি? তারা দাবি করেন, এ ধারা দলকে ও দলীয় রাজনীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলবে।
কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া নেতারা বলেন, দলীয় কাজে সক্রিয় থাকতে মন সায় দেয় না এখন। চলছেও তাই। সম্মেলনের পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি তেমন লক্ষণীয় নয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ও ধানমণ্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ের চিত্র দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা। বেসরকারি টেলিভিশনে টক শোতে অনেক নেতা যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
দলের দুটি কার্যালয়ের সহকারীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর একদিনও এখানে আসেননি এমন দুই ডজন নেতা রয়েছেন। তারা বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাদের নামে যেসব চিঠি আসে সেগুলো বিলি করতে হয় তাদের বাসায় গিয়ে। অফিস সহকারীরা আরও বলেন, অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দেশের বাইরে গেছেন এবং পরিবার-পরিজনকে সময় দিচ্ছেন। দেশে থাকা নেতারা বাসাবাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভেতরে হতাশা বাসা বাঁধায় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দলীয় ঐক্য দৃঢ় করে তোলার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোবলে চিড় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) সম্মেলনের দিন মঞ্চেই ঘোষণা করেছেন সামনের নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তেমন পরিবর্তন আনতে চান না। সে কারণেই কাউকে বাদ বা পদোন্নতি দেওয়া উল্লেখযোগ্য হারে হয়নি। যারা রাজনীতি করেন রাজনীতির স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত মানতে হয়।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলন মানে তিন বছর শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য একটি পরীক্ষার আয়োজন। তিন বছরের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া ও কাজ না করা নেতাদের বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তিরস্কার করা। কার কী অবদান তার পরিমাপক হলো জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সেখানে খাটাখাটুনির যাচাই করে কেউ মেধাতালিকায় জায়গা পান। আবার কেউ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করেন। ফেল করেন কেউ। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গতিশীল হয়ে উঠে যেকোনো সংগঠন। কিন্তু গেল সম্মেলনের চিত্র হলো কেউ ফেল করেনি। সবাই গড়ে পাস করে গেছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরীক্ষার ফলাফলের চিত্র এমন হলে সারা বছর কাজ করার কী দরকার! পদোন্নতির প্রত্যাশা করা আওয়ামী লীগের নেতা সবাই এখন এ নীতি অনুসরণ করে চলতে মনস্থির করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর নেতা নির্বাচন দেখে প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতা ভেতরে ভেতরে মানসিকভাবে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। ওপরে ওপরে সবাই স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতরের অবস্থা তাদের নিষ্ক্রিয় করে তুলছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনীতি এখন ‘পাওয়ার হাউজ’কেন্দ্রিক। আওয়ামী লীগ এখন ‘পাওয়ার হাউজ’ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে রাজনীতিতে যতই সক্রিয় থাকি বা নিষ্ক্রিয় থাকি ‘পাওয়ার হাউজ’-এর কৃপা না পেলে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার চেয়ে পাওয়ার হাউজের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কৌশলে এগিয়ে যেতে চান অনেক নেতা।
রাজনীতির বাইরের এই ‘পাওয়ার হাউজ’ একটি বলয়ে আবর্তিত জানিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর ওই নেতা বলেন, দলের জন্য কাজ না করলেও রাজনীতির পদপদবি ধরে রাখা সম্ভব। খাটাখাটুনির রাজনীতি এখন কেউ করবে না।
বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে ম্যারি ক্রিস্টিন তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে তাকে বহনকারী বিমানটি হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এসময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন বলেছেন, বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে জাতিসংঘ মহাসচিবের এসডিজি অর্জনের জন্য নিয়োজিত ১৭ জন অ্যাডভোকেটের একজন হিসেবে ৬-৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন।
জানা গেছে, বেলজিয়ামের রানি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তার সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ সফরে রানি মাথিল্ডে একটি গার্মেন্টস কারখানা পরিদর্শন করবেন। তিনি ওই কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানবেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনিসেফের পরিচালিত একটি স্কুল পরিদর্শন করবেন তিনি।
সফরসূচি অনুযায়ী, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন রানি মাথিল্ডে, সেখানে তিনি নারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে আলাপ করবেন। এছাড়া তিনি খুলনায় যাবেন। সেখানে ইউএনডিপির ওয়াটার সেক্টরের একটি প্রজেক্ট পরিদর্শন করে এর সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। মাথিল্ডে তাদের কাছে জানতে চাইবেন কীভাবে ওই প্রকল্প থেকে তারা সুবিধা পাচ্ছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ১৭ জন এসডিজি অ্যাডভোকেট আছেন, তাদেরই একজন বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে। এ ছাড়াও রয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, শান্তিতে নোবেলজয়ী ভারতের কৈলাশ সত্যার্থী ও বলিউড অভিনেত্রী দিয়া মির্জা। যারা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বা অনুপ্রেরণা যোগাতে তাদের ভূমিকা রয়েছে। সে কারণে রানি বাংলাদেশে আসছেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।