সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার চান প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ১৭:৩৫
বাংলাদেশের সম্পত্তি আইন অনুযায়ী দাদার সম্পত্তির বিষয়ে বাবা গত হলে তার কন্যা ওয়ারিশরা যেন পুত্র সন্তানের ন্যায় অংশভাগ পায় তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব বলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিচারপতি এবং বিচারকদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের সামনে বিচারপতি বা অন্য সবাই রয়েছেন তাদের আমি অনুরোধ করব। হ্যাঁ, আমাদের ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম আইন (শরিয়া আইন) মানতে হবে, এটা ঠিক। কিন্তু কেবল শরিয়া আইনের দোহাই দিয়ে মা-মেয়েকে বঞ্চিত করে বাবার সম্পদ যে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় তার কোনো সুরাহা করা যায় কি না- আপনারা দয়া করে একটু দেখবেন। এটা করা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, এভাবেও অনেক সামাজিক অনাচার হচ্ছে। এখানে মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে, অথচ আমরা স্লোগান তুলি যে দু’টি সন্তানই যথেষ্ট। এখন দু’টি সন্তানই যদি মেয়ে হয়। তখন বাবার সম্পত্তির ভাগ স্ত্রী পাবে যতটুকু, মেয়ে ততটুকু পাবে বা বঞ্চিত হবে, এখানে কীভাবে এর সুরাহা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি শরিয়া আইনে হাত দিতে বলব না। কিন্তু সম্পত্তি আইনে তো এটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে মেয়ে-ছেলে না লিখে যদি সন্তান লিখে দেওয়া যায় তাহলে সন্তান ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক তার ভাগটা তো অন্তত সে পাবে। এর জন্য একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার।’
তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, এটা বলতে গেলে অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ এবং মওলানাগণ এর বিরোধিতাও করতে পারেন। তবে, তিনি এ বিষয়টিতে আমাদের অনেক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেছেন। যারা এই মেয়েদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। দেখা গেছে, তাদের অনেকেরই ওয়ারিশ কেবল কন্যা সন্তান বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীসহ সবাইকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যাদের ওয়ারিশ হিসেবে কন্যা সন্তান রয়েছে তারা আমৃত্যু যেন সম্পত্তি ভোগ করতে পারেন এবং তাদের মৃত্যুর পর তাদের কন্যারা যেন পৈতৃক সম্পত্তির ওপর নিজের অধিকার পায়।’
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুন, অগ্নি সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা এবং ধর্ষণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুন, অগ্নি সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা, ধর্ষণ ও নানা ধরনের সামাজিক অনাচার চলছে- এগুলোর বিচার যেন খুব দ্রুত হয়, এদের কঠোর শাস্তি হয়। যাতে এর কবল থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে এমন একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে ধনী, দরিদ্রের কোনো বৈষম্য থাকবে না। জনগণ মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাক এবং সেই ব্যবস্থাটা যেন চালু হয়। কারণ, আমরা চাই না ইনডেমনিটি অরডিন্যান্সের কারণে, আমরা যেমন বিচার না পেয়ে কেঁদেছি আর কাউকে যেন এভাবে কাঁদতে না হয়।
তিনি বলেন, অনেক মামলার দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। অনেকে বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রয়েছে, কেন যে আটকে রয়েছে তারা নিজেরাও জানে না। তাদের দোষটা যেমন কেউ জানে না, তেমনি কীভাবে আইনগত সহায়তা নিতে পারে তাও জানা নেই। সেই বিষয়টা দেখার জন্য আমরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং আমার মনে হয়, আইন মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
আইন, বিচার এবং সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এএসএসএম জহুরুল হক এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মানিকগঞ্জ এবং কুমিল্লার দু’জন উপকারভোগীও অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯’ উপলক্ষে বেসরকারি সংস্থা, প্যানেল আইনজীবী এবং লিগ্যাল এইড- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্তদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ১৭:৩৫

বাংলাদেশের সম্পত্তি আইন অনুযায়ী দাদার সম্পত্তির বিষয়ে বাবা গত হলে তার কন্যা ওয়ারিশরা যেন পুত্র সন্তানের ন্যায় অংশভাগ পায় তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব বলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিচারপতি এবং বিচারকদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের সামনে বিচারপতি বা অন্য সবাই রয়েছেন তাদের আমি অনুরোধ করব। হ্যাঁ, আমাদের ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম আইন (শরিয়া আইন) মানতে হবে, এটা ঠিক। কিন্তু কেবল শরিয়া আইনের দোহাই দিয়ে মা-মেয়েকে বঞ্চিত করে বাবার সম্পদ যে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় তার কোনো সুরাহা করা যায় কি না- আপনারা দয়া করে একটু দেখবেন। এটা করা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, এভাবেও অনেক সামাজিক অনাচার হচ্ছে। এখানে মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে, অথচ আমরা স্লোগান তুলি যে দু’টি সন্তানই যথেষ্ট। এখন দু’টি সন্তানই যদি মেয়ে হয়। তখন বাবার সম্পত্তির ভাগ স্ত্রী পাবে যতটুকু, মেয়ে ততটুকু পাবে বা বঞ্চিত হবে, এখানে কীভাবে এর সুরাহা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি শরিয়া আইনে হাত দিতে বলব না। কিন্তু সম্পত্তি আইনে তো এটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে মেয়ে-ছেলে না লিখে যদি সন্তান লিখে দেওয়া যায় তাহলে সন্তান ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক তার ভাগটা তো অন্তত সে পাবে। এর জন্য একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার।’
তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, এটা বলতে গেলে অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ এবং মওলানাগণ এর বিরোধিতাও করতে পারেন। তবে, তিনি এ বিষয়টিতে আমাদের অনেক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেছেন। যারা এই মেয়েদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। দেখা গেছে, তাদের অনেকেরই ওয়ারিশ কেবল কন্যা সন্তান বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীসহ সবাইকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যাদের ওয়ারিশ হিসেবে কন্যা সন্তান রয়েছে তারা আমৃত্যু যেন সম্পত্তি ভোগ করতে পারেন এবং তাদের মৃত্যুর পর তাদের কন্যারা যেন পৈতৃক সম্পত্তির ওপর নিজের অধিকার পায়।’
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুন, অগ্নি সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা এবং ধর্ষণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুন, অগ্নি সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা, ধর্ষণ ও নানা ধরনের সামাজিক অনাচার চলছে- এগুলোর বিচার যেন খুব দ্রুত হয়, এদের কঠোর শাস্তি হয়। যাতে এর কবল থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে এমন একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে ধনী, দরিদ্রের কোনো বৈষম্য থাকবে না। জনগণ মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাক এবং সেই ব্যবস্থাটা যেন চালু হয়। কারণ, আমরা চাই না ইনডেমনিটি অরডিন্যান্সের কারণে, আমরা যেমন বিচার না পেয়ে কেঁদেছি আর কাউকে যেন এভাবে কাঁদতে না হয়।
তিনি বলেন, অনেক মামলার দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। অনেকে বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রয়েছে, কেন যে আটকে রয়েছে তারা নিজেরাও জানে না। তাদের দোষটা যেমন কেউ জানে না, তেমনি কীভাবে আইনগত সহায়তা নিতে পারে তাও জানা নেই। সেই বিষয়টা দেখার জন্য আমরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং আমার মনে হয়, আইন মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
আইন, বিচার এবং সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এএসএসএম জহুরুল হক এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মানিকগঞ্জ এবং কুমিল্লার দু’জন উপকারভোগীও অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯’ উপলক্ষে বেসরকারি সংস্থা, প্যানেল আইনজীবী এবং লিগ্যাল এইড- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্তদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।