আইন করে জঙ্গি, যৌন নিপীড়কদের ফাঁসির দাবি সংসদে
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০১
কঠোর আইন করে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, যৌন নিপীড়ক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে জাতীয় সংসদে।
নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা ও ফেনীর নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাসহ সন্ত্রাসী যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সোমবার জাতীয় সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ সদস্যরা এ দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেন, ধর্মের নামে পুরো বিশ্বে রক্তের হোলিখেলা চলছে। বাংলাদেশেও নুসরাতসহ নানা সামাজিক অবক্ষয় ঘটিয়ে সরকারের ব্যাপক অর্জনকে ম্লান করার ষড়যন্ত্র চলছে। কঠোর আইন করে জঙ্গিসহ যৌন নিপীড়ক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এসব বন্ধ হবে না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংসদে এ প্রস্তাব আনেন।
১৪৪ (১) বিধিতে আনা এ প্রস্তাবে বলা হয়- ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ ও শ্রীলঙ্কার গির্জা, হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির নাতি জায়ান চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা ও আহত এবং ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এসব সন্ত্রাসী যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে’।
প্রস্তাবটি উত্থাপন করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারতে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষকেরা হলেন বাবার মতো। ছাত্ররাও শিক্ষকদের পিতার মতো শ্রদ্ধা করতো। কোথায় সেই দিনটি হারিয়ে গেছে? নুসরাত ঘটনার পরও অনেক জায়গায় শিশুরা নির্যাতনের শিকার কীভাবে হয়?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এতো বিশাল উন্নয়নকে আমরা ম্লান করে দিতে পারি না। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এমন একটি আইন করতে হবে, যাতে এক বা দেড় মাসের মধ্যে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। বাংলাদেশের ভেতরেও ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের উন্নয়নকে ম্লান করার জন্য দেশে এসব অপকর্ম ঘটানো হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে জড়িতদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা গেলে এসব বন্ধ হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ধর্মের নামে পুরো বিশ্বে যেন রক্তের হোলিখেলা শুরু হয়েছে। ধর্মের নামে একে অপরজনকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম আবেগঘন কণ্ঠে শ্রীলঙ্কার বোমা হামলায় নিহত তার নাতি শিশু জায়ান চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন, জায়ান নিষ্পাপ শিশু, কি অন্যায় সে করেছিল? আমার মেয়েটার বাচ্চাই (সন্তান) হলো তার পৃথিবী। তার বুকের ধন এভাবে কেড়ে নিলো, এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার নাতি জায়ান লেখাপড়া করতো, কোরআন পড়তো, এতো সুন্দর কণ্ঠে পড়তো মনে হতো উচ্চমানের হাফেজ। ক্রিকেট খেলতো, লাল রঙের জামা পরতে ভালোবাসত। তাকে হত্যা করে এরা কি পেল?
শেখ সেলিম বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আজ সব ধর্মকে বিতর্কিত করছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সারা বিশ্ব মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা এটা করছে এদের মানবতা কোথায়। শ্রীলঙ্কায় বোমা ফাটিয়ে নিজেরাও মরলো, সেখানে অনেক মানুষ মারা গেলো, আমার নাতি জায়ান মারা গেলো। এটা করে কি ইসলাম তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
শেখ সেলিম আরও বলেন, পৃথিবীতে যে হানাহানি, জঙ্গিবাদ, হত্যা এটা করে কি পাচ্ছে তারা, তাদের মানবতা কোথায়। তারা একটা স্টেটের কথা বলছে, কোরআনে কি একটা স্টেটের কথা বলা আছে। এখন সময় এসেছে গোটা পৃথিবীকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। ফেনীর নুসরাতকে কীভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। এরা কি মানুষ, এরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। একটা আইন করা উচিত এক মাসের মধ্যে বিচার করে এদের ফাঁসি দেওয়ার।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ আজ নিরাপদ নয়। নিরাপদ করতে হলে বৈশ্বিক সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন। শ্রীলঙ্কায় জায়ানসহ ৪৫ জন শিশু ধর্মের নামে হিংসার বলি হলো। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কেউই এ হিংসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের ফলেই সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী আক্রমণের ঘটনা ঘটে। নুসরাত হত্যা কেবল একটি সাধারণ অপরাধের ঘটনা নয়।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাসদের শিরিন আখতার, সংরক্ষিত নারী আসনের অরোমা দত্ত আলোচনায় অংশ নেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০১

কঠোর আইন করে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, যৌন নিপীড়ক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে জাতীয় সংসদে।
নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা ও ফেনীর নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাসহ সন্ত্রাসী যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সোমবার জাতীয় সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ সদস্যরা এ দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেন, ধর্মের নামে পুরো বিশ্বে রক্তের হোলিখেলা চলছে। বাংলাদেশেও নুসরাতসহ নানা সামাজিক অবক্ষয় ঘটিয়ে সরকারের ব্যাপক অর্জনকে ম্লান করার ষড়যন্ত্র চলছে। কঠোর আইন করে জঙ্গিসহ যৌন নিপীড়ক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এসব বন্ধ হবে না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংসদে এ প্রস্তাব আনেন।
১৪৪ (১) বিধিতে আনা এ প্রস্তাবে বলা হয়- ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ ও শ্রীলঙ্কার গির্জা, হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির নাতি জায়ান চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা ও আহত এবং ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এসব সন্ত্রাসী যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে’।
প্রস্তাবটি উত্থাপন করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারতে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষকেরা হলেন বাবার মতো। ছাত্ররাও শিক্ষকদের পিতার মতো শ্রদ্ধা করতো। কোথায় সেই দিনটি হারিয়ে গেছে? নুসরাত ঘটনার পরও অনেক জায়গায় শিশুরা নির্যাতনের শিকার কীভাবে হয়?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এতো বিশাল উন্নয়নকে আমরা ম্লান করে দিতে পারি না। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এমন একটি আইন করতে হবে, যাতে এক বা দেড় মাসের মধ্যে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। বাংলাদেশের ভেতরেও ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের উন্নয়নকে ম্লান করার জন্য দেশে এসব অপকর্ম ঘটানো হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে জড়িতদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা গেলে এসব বন্ধ হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ধর্মের নামে পুরো বিশ্বে যেন রক্তের হোলিখেলা শুরু হয়েছে। ধর্মের নামে একে অপরজনকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম আবেগঘন কণ্ঠে শ্রীলঙ্কার বোমা হামলায় নিহত তার নাতি শিশু জায়ান চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন, জায়ান নিষ্পাপ শিশু, কি অন্যায় সে করেছিল? আমার মেয়েটার বাচ্চাই (সন্তান) হলো তার পৃথিবী। তার বুকের ধন এভাবে কেড়ে নিলো, এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার নাতি জায়ান লেখাপড়া করতো, কোরআন পড়তো, এতো সুন্দর কণ্ঠে পড়তো মনে হতো উচ্চমানের হাফেজ। ক্রিকেট খেলতো, লাল রঙের জামা পরতে ভালোবাসত। তাকে হত্যা করে এরা কি পেল?
শেখ সেলিম বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আজ সব ধর্মকে বিতর্কিত করছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সারা বিশ্ব মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা এটা করছে এদের মানবতা কোথায়। শ্রীলঙ্কায় বোমা ফাটিয়ে নিজেরাও মরলো, সেখানে অনেক মানুষ মারা গেলো, আমার নাতি জায়ান মারা গেলো। এটা করে কি ইসলাম তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
শেখ সেলিম আরও বলেন, পৃথিবীতে যে হানাহানি, জঙ্গিবাদ, হত্যা এটা করে কি পাচ্ছে তারা, তাদের মানবতা কোথায়। তারা একটা স্টেটের কথা বলছে, কোরআনে কি একটা স্টেটের কথা বলা আছে। এখন সময় এসেছে গোটা পৃথিবীকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। ফেনীর নুসরাতকে কীভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। এরা কি মানুষ, এরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। একটা আইন করা উচিত এক মাসের মধ্যে বিচার করে এদের ফাঁসি দেওয়ার।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ আজ নিরাপদ নয়। নিরাপদ করতে হলে বৈশ্বিক সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন। শ্রীলঙ্কায় জায়ানসহ ৪৫ জন শিশু ধর্মের নামে হিংসার বলি হলো। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কেউই এ হিংসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের ফলেই সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী আক্রমণের ঘটনা ঘটে। নুসরাত হত্যা কেবল একটি সাধারণ অপরাধের ঘটনা নয়।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাসদের শিরিন আখতার, সংরক্ষিত নারী আসনের অরোমা দত্ত আলোচনায় অংশ নেন।