‘ফাইজলামি’ বলার জন্য দুঃখিত : মাশরাফী
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ০১:০৯
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেছেন, অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে কখনই আপস করবেন না। সোমবার দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপে সম্প্রতি ঝড় তোলা এক ইস্যুতে বলেছেন, ডাক্তারদেরও জবাবদিহি থাকা জরুরি। নিজের অবস্থানে অনড় থেকে মাশরাফী বলেছেন, তিনি শুধু তার একটি বাক্যের ব্যবহারে দুঃখিত। নড়াইল সদর হাসপাতালে ডাক্তারদের অনিয়ম মাশরাফীর চোখে ধরা পড়েছিল আগেই। বৈঠক করেছিলেন ডাক্তারদের সঙ্গে। কাজ হয়নি। তার প্রমাণ, গত বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে ডাক্তার-নার্সদের অনুপস্থিতির সাক্ষী হওয়া। সাংসদ মাশরাফী তখনই মোবাইলে ফোন করেছিলেন বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্টকে। ফোনে তাকে বলা মাশরাফীর কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে যায়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিকিৎসক সমাজের একটি অংশ মাশরাফীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে।
কিন্তু মাশরাফী তা তোয়াক্কা করেন না। ‘দেখেন, ওখানে তিনজন ডাক্তারই অনুপস্থিত ছিলেন। যে দুজনের অ্যাপ্লিকেশন দেওয়া ছিল তাদের ফোনও করা হয়নি। সরকারি চাকরিতে ছুটি নিতে অ্যাপ্লিকেশন তো দিতে হবে। ছুটি নিয়ে যেতে হবে। ওনাকে তো অনুপস্থিত আমি দেখাইনি। আরএমও সাহেব ও তত্ত্বাবধায়ক সাহেবের বিবৃতিও আছে ওখানে, দেখবেন যে অনিয়ম হচ্ছে। আরএমও সাহেব ওনাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। সেই প্রমাণও আছে।’ মাশরাফী বলছিলেন, ‘মহিলা ও পুরুষ বিভাগে তিনজন নার্স কাজ করছিলেন। আমাদের ওখানে ৭৩ জন নার্স আছেন। নার্সিং সুপারভাইজার যে তিনি তো এসব ঠিক করবেন। তাই না? তত্ত্বাবধায়ক যিনি তিনি স্টেশন ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এসেছেন। যেহেতু পরদিন শুক্রবার ছিল। ওনার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। উনি এসে বললেন, এখানে অনিয়ম আছে। আমি একদিন হলো জয়েন করেছি। আমি দেখেছি। ভাবছিলাম আমি অ্যাকশন নিলে ডাক্তাররা গ্রুপিং করে একটা সমস্যা করবেন। এই কথা কিন্তু তত্ত্বাবধায়কের স্টেটমেন্টেও আছে।’
তবে মাশরাফী দুঃখ প্রকাশের জায়গা, “হ্যাঁ, আমার একটা কথার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করতে পারি যেটা আমি ব্যবহার করেছি। সেটা হলো, ‘আপনি কি ফাইজলামি শুরু করেছেন’? এই কথার জন্য অবশ্যই আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু উনি যে অন্যায় করেছেন তার সঙ্গে আমি তো আপস করতে পারি না। উনি পাঁচ দিনের এক দিন থাকেন বা দেড় দিন থাকেন নড়াইলে। এটা তো ভাই অনিয়ম। সাধারণ মানুষরা তাহলে ঢালাও মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন? একজন রোগী হাসপাতালে থেকে মিথ্যে বলে যাচ্ছেন? দিনের পর দিন, বছরের পর বছর!”
ঘটনার পরের ঘটনা মাশরাফীর মুখেই শুনুন, “ওই ডাক্তারের সঙ্গে পরে আমি তিনবার ফোন দিয়ে কথা বলেছি। আমি তাকে বলেছি, আপনি যদি চান তাহলে প্রকাশ্যে আমি সবার সামনে বলব ওই ‘আপনি কি ফাইজলামি শুরু করেছেন’ কথাটার জন্য আমি অবশ্যই দুঃখিত। কিন্তু আপনার যে অন্যায় তার সঙ্গে তো আমি আপস করতে পারব না। করবও না।”
সেদিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নড়াইল হাসপাতালের চার চিকিৎসককে কারণ দর্শনোর নোটিস দেওয়ার পাশাপাশি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। পরে গতকাল সোমবার মাশরাফীর অনুরোধে শাস্তি প্রত্যাহারও হয়।
মাশরাফী আসলে একদিনে ক্ষেপেননি। ‘আমাদের ডাক্তার সংকট আছে। সেটা দূর না করা পর্যন্ত আমরা আসলে এই সমস্যার সমাধানও করতে পারব না। আরএমও সাহেবকে ঢাকায় এনে আমরা মন্ত্রীর কাছে গেছি। আমাদের কী কী সমস্যা আছে তা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে তাকে বলতে বলেছি। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলার পর উনি ডিও লেটার দিয়েছেন। উনি বলেছেন, সামনে ডাক্তার নিয়োগ হবে। তখন সমস্যার সমাধান হবে। এখন আপনারা একটু কষ্ট করে চালিয়ে নেন। অনিয়মটা করবেন না। তারপরও মিটিংয়ে তাদের পায়ে ধরতে বাকি রেখেছি। বললাম অনিয়মটা করবেন না। রোগীগুলো মারা যাবে।’
তারপর? ‘এরপর এবার নড়াইলে গিয়ে দেখি এটা হচ্ছে।’ মাশরাফীর ব্যাখ্যা, ‘আমি তো যারা নিয়ম মেনে ডাক্তারি করছেন তাদের উদ্দেশে কিছু বলছি না। সমাজে কি ভালো ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন না? আমি শুধু ওই ডাক্তারকে বলছি যিনি অনিয়ম করছেন।’
মাশরাফী বলছিলেন, ‘আপনি বলেন, সাকিব (আল হাসান) অনিয়ম কোথায় করে? তারপরও আপনারা বলেন না টেস্ট না খেলে সে টাকার জন্য আইপিএল খেলতে যায়। আমাদের ক্রীড়াসমাজে তো কম খেলোয়াড় নেই। আমরা কি সাকিবের ওই প্রসঙ্গে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি? কারণ, সামনের ওপর একটা জবাবদিহি হয়ে যায়। তাই না? আমরা কি বলেছি, আমাদের মাঠ সংকট আছে? ভারতে এক এক রাজ্যে দুটি করে মাঠ আছে। আমাদের আছে? আমরা একই উইকেটে খেলে অভ্যস্ত। আর খেলি বিশ্বের বিভিন্ন রকমের উইকেটে। আমরাও তো অভিযোগ করতে পারি। কিন্তু তা আমরা কখনো করিনি। আমরা বরং সবসময় জবাবদিহির মধ্যে থাকি।’ এমনকি প্র্যাকটিসে বিনা কারণে এক দিন অনুপস্থিত থাকলে যেকোনো ক্রিকেটারকে জবাবদিহি করতে হয় বলেও উল্লেখ করে উদাহরণ টানলেন মাশরাফী।
এই জবাবদিহি অন্তত সরকারি সব পেশাজীবীর জন্য সমান মানেন মাশরাফী। ডাক্তাররাও যার বাইরে না। যে ডাক্তারকে নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে তিনি সেদিন থেকেই চিকিৎসা শুরু করেছেন। মাশরাফীদের হাসপাতালও এখন বেশ নিয়মের মধ্যে চলছে।
কিন্তু এখানেই থামার বা সমাজের কোনো অংশের নিন্দা শুনে থমকে যাওয়ার মানুষ নন মাশরাফী। বলছিলেন, ‘যারা যশোর, ঢাকা, সিলেটে বসে থেকে যারা নড়াইলের পরিবেশ দেখছেন তারা তো আর নড়াইলে থাকবেন না। নড়াইলের মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। এমনও রাস্তা আছে স্বাধীনতার পর যেখানে একটা ইটও পড়েনি। সেই রাস্তা দিয়ে হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ লোক যাতায়াত করছে। আমি তো তাদের জন্য কাজ করতে চাচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে বাধা আসছে, আসবে তাতে সমস্যা নেই। আমি তাতে তখনই সম্মত হয়েছি যখন নির্বাচনে গেছি। তখন তো কত মানুষ অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেছেন। আমি তো শুনেছি। বিরোধী দল করেছে, সাধারণ মানুষ করেছে। আমি শুনেছি না? আবার এও বলেছেন, চুরি করতে তো গেছেন। তাও শুনেছি।’ সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘আর এখন স্রেফ একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। আমি আবারও বলছি, একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি যেখানে আমার ভাষার ওই বাক্যটা ঠিক হওয়া উচিত ছিল। ওটার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমি তো প্রতিবাদ করেছি অন্যায়ের।’
যারা তার ওই একটি বাক্যকে হাতিয়ার করছেন তাদের থোরাই কেয়ার করেন মাশরাফী। অন্যায়ের প্রতিবাদের কথাটা টেনে বলছিলেন, ‘ঠিক তখনই আপনারা একটা সমাজ লাফিয়ে উঠলেন! তাহলে তো আপনাদের নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হয় যে আপনারাও ঠিক কাজ করছেন কি না? কিংবা আপনারা বাংলাদেশের কতটা ভালো চান।’ এর সঙ্গে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘আর যদি আপনি ভালোই চান তাহলে প্রমাণ নেন। নড়াইলে যান, ডাক্তার সম্পর্কে প্রমাণ নিতে গিয়ে আমি যা বললাম তার প্রমাণ না মেলে তাহলে আপনারা আমাকে ধুয়ে দেন। নিয়মকানুন না জেনে তো আমি ওখানে গিয়ে আচমকা কিছু বলিনি বা করিনি। প্রমাণ নেওয়ার পরও যদি আপনি এ কথাই বলেন তাহলে আপনি যে পেশায় আছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আপনাকে সবসময় অনিয়ম করা মানুষ বলা ছাড়া আমার আর কিছু বলার থাকবে না। এর সঙ্গে আমি আপস করতে পারছি না।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ০১:০৯

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেছেন, অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে কখনই আপস করবেন না। সোমবার দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপে সম্প্রতি ঝড় তোলা এক ইস্যুতে বলেছেন, ডাক্তারদেরও জবাবদিহি থাকা জরুরি। নিজের অবস্থানে অনড় থেকে মাশরাফী বলেছেন, তিনি শুধু তার একটি বাক্যের ব্যবহারে দুঃখিত। নড়াইল সদর হাসপাতালে ডাক্তারদের অনিয়ম মাশরাফীর চোখে ধরা পড়েছিল আগেই। বৈঠক করেছিলেন ডাক্তারদের সঙ্গে। কাজ হয়নি। তার প্রমাণ, গত বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে ডাক্তার-নার্সদের অনুপস্থিতির সাক্ষী হওয়া। সাংসদ মাশরাফী তখনই মোবাইলে ফোন করেছিলেন বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্টকে। ফোনে তাকে বলা মাশরাফীর কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে যায়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিকিৎসক সমাজের একটি অংশ মাশরাফীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে।
কিন্তু মাশরাফী তা তোয়াক্কা করেন না। ‘দেখেন, ওখানে তিনজন ডাক্তারই অনুপস্থিত ছিলেন। যে দুজনের অ্যাপ্লিকেশন দেওয়া ছিল তাদের ফোনও করা হয়নি। সরকারি চাকরিতে ছুটি নিতে অ্যাপ্লিকেশন তো দিতে হবে। ছুটি নিয়ে যেতে হবে। ওনাকে তো অনুপস্থিত আমি দেখাইনি। আরএমও সাহেব ও তত্ত্বাবধায়ক সাহেবের বিবৃতিও আছে ওখানে, দেখবেন যে অনিয়ম হচ্ছে। আরএমও সাহেব ওনাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। সেই প্রমাণও আছে।’ মাশরাফী বলছিলেন, ‘মহিলা ও পুরুষ বিভাগে তিনজন নার্স কাজ করছিলেন। আমাদের ওখানে ৭৩ জন নার্স আছেন। নার্সিং সুপারভাইজার যে তিনি তো এসব ঠিক করবেন। তাই না? তত্ত্বাবধায়ক যিনি তিনি স্টেশন ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এসেছেন। যেহেতু পরদিন শুক্রবার ছিল। ওনার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। উনি এসে বললেন, এখানে অনিয়ম আছে। আমি একদিন হলো জয়েন করেছি। আমি দেখেছি। ভাবছিলাম আমি অ্যাকশন নিলে ডাক্তাররা গ্রুপিং করে একটা সমস্যা করবেন। এই কথা কিন্তু তত্ত্বাবধায়কের স্টেটমেন্টেও আছে।’
তবে মাশরাফী দুঃখ প্রকাশের জায়গা, “হ্যাঁ, আমার একটা কথার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করতে পারি যেটা আমি ব্যবহার করেছি। সেটা হলো, ‘আপনি কি ফাইজলামি শুরু করেছেন’? এই কথার জন্য অবশ্যই আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু উনি যে অন্যায় করেছেন তার সঙ্গে আমি তো আপস করতে পারি না। উনি পাঁচ দিনের এক দিন থাকেন বা দেড় দিন থাকেন নড়াইলে। এটা তো ভাই অনিয়ম। সাধারণ মানুষরা তাহলে ঢালাও মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন? একজন রোগী হাসপাতালে থেকে মিথ্যে বলে যাচ্ছেন? দিনের পর দিন, বছরের পর বছর!”
ঘটনার পরের ঘটনা মাশরাফীর মুখেই শুনুন, “ওই ডাক্তারের সঙ্গে পরে আমি তিনবার ফোন দিয়ে কথা বলেছি। আমি তাকে বলেছি, আপনি যদি চান তাহলে প্রকাশ্যে আমি সবার সামনে বলব ওই ‘আপনি কি ফাইজলামি শুরু করেছেন’ কথাটার জন্য আমি অবশ্যই দুঃখিত। কিন্তু আপনার যে অন্যায় তার সঙ্গে তো আমি আপস করতে পারব না। করবও না।”
সেদিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নড়াইল হাসপাতালের চার চিকিৎসককে কারণ দর্শনোর নোটিস দেওয়ার পাশাপাশি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। পরে গতকাল সোমবার মাশরাফীর অনুরোধে শাস্তি প্রত্যাহারও হয়।
মাশরাফী আসলে একদিনে ক্ষেপেননি। ‘আমাদের ডাক্তার সংকট আছে। সেটা দূর না করা পর্যন্ত আমরা আসলে এই সমস্যার সমাধানও করতে পারব না। আরএমও সাহেবকে ঢাকায় এনে আমরা মন্ত্রীর কাছে গেছি। আমাদের কী কী সমস্যা আছে তা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে তাকে বলতে বলেছি। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলার পর উনি ডিও লেটার দিয়েছেন। উনি বলেছেন, সামনে ডাক্তার নিয়োগ হবে। তখন সমস্যার সমাধান হবে। এখন আপনারা একটু কষ্ট করে চালিয়ে নেন। অনিয়মটা করবেন না। তারপরও মিটিংয়ে তাদের পায়ে ধরতে বাকি রেখেছি। বললাম অনিয়মটা করবেন না। রোগীগুলো মারা যাবে।’
তারপর? ‘এরপর এবার নড়াইলে গিয়ে দেখি এটা হচ্ছে।’ মাশরাফীর ব্যাখ্যা, ‘আমি তো যারা নিয়ম মেনে ডাক্তারি করছেন তাদের উদ্দেশে কিছু বলছি না। সমাজে কি ভালো ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন না? আমি শুধু ওই ডাক্তারকে বলছি যিনি অনিয়ম করছেন।’
মাশরাফী বলছিলেন, ‘আপনি বলেন, সাকিব (আল হাসান) অনিয়ম কোথায় করে? তারপরও আপনারা বলেন না টেস্ট না খেলে সে টাকার জন্য আইপিএল খেলতে যায়। আমাদের ক্রীড়াসমাজে তো কম খেলোয়াড় নেই। আমরা কি সাকিবের ওই প্রসঙ্গে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি? কারণ, সামনের ওপর একটা জবাবদিহি হয়ে যায়। তাই না? আমরা কি বলেছি, আমাদের মাঠ সংকট আছে? ভারতে এক এক রাজ্যে দুটি করে মাঠ আছে। আমাদের আছে? আমরা একই উইকেটে খেলে অভ্যস্ত। আর খেলি বিশ্বের বিভিন্ন রকমের উইকেটে। আমরাও তো অভিযোগ করতে পারি। কিন্তু তা আমরা কখনো করিনি। আমরা বরং সবসময় জবাবদিহির মধ্যে থাকি।’ এমনকি প্র্যাকটিসে বিনা কারণে এক দিন অনুপস্থিত থাকলে যেকোনো ক্রিকেটারকে জবাবদিহি করতে হয় বলেও উল্লেখ করে উদাহরণ টানলেন মাশরাফী।
এই জবাবদিহি অন্তত সরকারি সব পেশাজীবীর জন্য সমান মানেন মাশরাফী। ডাক্তাররাও যার বাইরে না। যে ডাক্তারকে নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে তিনি সেদিন থেকেই চিকিৎসা শুরু করেছেন। মাশরাফীদের হাসপাতালও এখন বেশ নিয়মের মধ্যে চলছে।
কিন্তু এখানেই থামার বা সমাজের কোনো অংশের নিন্দা শুনে থমকে যাওয়ার মানুষ নন মাশরাফী। বলছিলেন, ‘যারা যশোর, ঢাকা, সিলেটে বসে থেকে যারা নড়াইলের পরিবেশ দেখছেন তারা তো আর নড়াইলে থাকবেন না। নড়াইলের মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। এমনও রাস্তা আছে স্বাধীনতার পর যেখানে একটা ইটও পড়েনি। সেই রাস্তা দিয়ে হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ লোক যাতায়াত করছে। আমি তো তাদের জন্য কাজ করতে চাচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে বাধা আসছে, আসবে তাতে সমস্যা নেই। আমি তাতে তখনই সম্মত হয়েছি যখন নির্বাচনে গেছি। তখন তো কত মানুষ অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেছেন। আমি তো শুনেছি। বিরোধী দল করেছে, সাধারণ মানুষ করেছে। আমি শুনেছি না? আবার এও বলেছেন, চুরি করতে তো গেছেন। তাও শুনেছি।’ সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘আর এখন স্রেফ একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। আমি আবারও বলছি, একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি যেখানে আমার ভাষার ওই বাক্যটা ঠিক হওয়া উচিত ছিল। ওটার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমি তো প্রতিবাদ করেছি অন্যায়ের।’
যারা তার ওই একটি বাক্যকে হাতিয়ার করছেন তাদের থোরাই কেয়ার করেন মাশরাফী। অন্যায়ের প্রতিবাদের কথাটা টেনে বলছিলেন, ‘ঠিক তখনই আপনারা একটা সমাজ লাফিয়ে উঠলেন! তাহলে তো আপনাদের নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হয় যে আপনারাও ঠিক কাজ করছেন কি না? কিংবা আপনারা বাংলাদেশের কতটা ভালো চান।’ এর সঙ্গে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘আর যদি আপনি ভালোই চান তাহলে প্রমাণ নেন। নড়াইলে যান, ডাক্তার সম্পর্কে প্রমাণ নিতে গিয়ে আমি যা বললাম তার প্রমাণ না মেলে তাহলে আপনারা আমাকে ধুয়ে দেন। নিয়মকানুন না জেনে তো আমি ওখানে গিয়ে আচমকা কিছু বলিনি বা করিনি। প্রমাণ নেওয়ার পরও যদি আপনি এ কথাই বলেন তাহলে আপনি যে পেশায় আছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আপনাকে সবসময় অনিয়ম করা মানুষ বলা ছাড়া আমার আর কিছু বলার থাকবে না। এর সঙ্গে আমি আপস করতে পারছি না।’