বাংলাদেশে আঘাত হানা ৫ বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়
অনলাইন ডেস্ক | ২ মে, ২০১৯ ১৬:০৮
২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের একটি গ্রাম। ছবি: এএফপি
ভারতে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। ইতোমধ্যে এর আঁচ পেতে শুরু করেছে দেশটির ওডিশা রাজ্য। উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২১০ কিলোমিটার গতিতে ‘ফণি’ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরপর এটি গতিপথ কিছুটা ঘুরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ছুটে আসবে বাংলাদেশের উপকূলে।
বিধ্বংসী এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সরকার। এর আগেও এ রকম বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল দেশের উপকূল।
গোর্কি: ভোলা সাইক্লোন
১৯৭০ সালের ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড় ভোলা ঘূর্ণিঝড় নামেও পরিচিত। ১২ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে এটি। এ অঞ্চলে সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি এই গোর্কি।
৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়টি এবং ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার (১১৫ মাইল) এ পৌঁছায় এবং সে রাতেই ভয়াবহ আঘাতে লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপকূল।
ভয়াবহ এই দুর্যোগে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। তবে বেসরকারি হিসাবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়। এদিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোলা। এ জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার ১,৬৭,০০০ জন অধিবাসীর মধ্যে ৭৭,০০০ জনই প্রাণ হারান।
ঘূর্ণিঝড়: ভয়াল ২৯ এপ্রিল
১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল বাংলাদেশে দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটি একটি।
ঘণ্টায় প্রায় ২৫০কিলোমিটার বেগে এটি বাংলাদেশে আঘাত হানে। ভয়াবহ এ দুর্যোগে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এক কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়। চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
সিডর
২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরে এলাকায় সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় সিডর। শ্রীলঙ্কান শব্দ ‘সিডর’ এর অর্থ চোখ। ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ এই সামুদ্রিক ঝড় আঘাত হানে বরিশাল, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। সিডরের আঘাতে মারা যায় পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ।
সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দেশের ৩০টি জেলা। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবনের প্রাণীবৈচিত্র্য। সরকারি হিসাবেই ৩,৩৪৭ জন মানুষ নিহত, ৫৫,২৮২ জন আহত এবং ৮৭১ জন নিখোঁজ হন। গবাদিপশু মারা যায় ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৭টি। নষ্ট হয়ে যায় ৬ লাখ টনের বেশি ধান। বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ বলে ঘোষণা করে।
রুয়ানু
২০১৬ সালে ২১ মে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশের উপকূলে এবং ভারতে আংশিক আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রুয়ানু। মালদ্বীপ এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করেছিল। ‘রুয়ানু’ শব্দটিও মালদ্বীপের। এর অর্থ হচ্ছে নারিকেলের ছোবড়ার তৈরি দড়ি।
পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় রুয়ানু এর উৎপত্তিস্থল। ধারণা করা হয়, ঘূর্ণিঝড় রুয়ানুর ব্যাপ্তি ছিল দুটি বাংলাদেশের সমান আকৃতির। তবে একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে পড়ায় তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি এটি।
সরকারি হিসাবে এ ঝড়ের আঘাতে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। লক্ষাধিক ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাসে অধিকাংশ উপকূলীয় জেলার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আইলা
২০০৯ সালে ২১ মে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয় এ ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা এর নামে রাখেন ‘আইলা’, যার অর্থ ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। ২৫ মে ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে।
আইলার আঘাতে খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রাণ হারান ১৯৩ জন মানুষ। উপকূলের প্রায় ২,০০,০০০ একর কৃষিজমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। পর পর দুই মৌসুম কৃষিকাজ না হওয়ায় প্রায় আট লাখ টন খাদ্যঘাটতি সৃষ্টি হয়। জলোচ্ছ্বাস ও লোনা পানির প্রভাবে, প্রায় দুই হাজার গবাদিপশু মারা যায়। কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় প্রায় আড়াই লাখ ঘরবাড়ি। ভারতে অন্তত ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২ মে, ২০১৯ ১৬:০৮
ভারতে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। ইতোমধ্যে এর আঁচ পেতে শুরু করেছে দেশটির ওডিশা রাজ্য। উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২১০ কিলোমিটার গতিতে ‘ফণি’ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরপর এটি গতিপথ কিছুটা ঘুরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ছুটে আসবে বাংলাদেশের উপকূলে।
বিধ্বংসী এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সরকার। এর আগেও এ রকম বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল দেশের উপকূল।
গোর্কি: ভোলা সাইক্লোন
১৯৭০ সালের ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড় ভোলা ঘূর্ণিঝড় নামেও পরিচিত। ১২ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে এটি। এ অঞ্চলে সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি এই গোর্কি।
৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়টি এবং ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার (১১৫ মাইল) এ পৌঁছায় এবং সে রাতেই ভয়াবহ আঘাতে লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপকূল।
ভয়াবহ এই দুর্যোগে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। তবে বেসরকারি হিসাবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়। এদিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোলা। এ জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার ১,৬৭,০০০ জন অধিবাসীর মধ্যে ৭৭,০০০ জনই প্রাণ হারান।
ঘূর্ণিঝড়: ভয়াল ২৯ এপ্রিল
১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল বাংলাদেশে দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটি একটি।
ঘণ্টায় প্রায় ২৫০কিলোমিটার বেগে এটি বাংলাদেশে আঘাত হানে। ভয়াবহ এ দুর্যোগে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এক কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়। চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
সিডর
২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরে এলাকায় সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় সিডর। শ্রীলঙ্কান শব্দ ‘সিডর’ এর অর্থ চোখ। ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ এই সামুদ্রিক ঝড় আঘাত হানে বরিশাল, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। সিডরের আঘাতে মারা যায় পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ।
সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দেশের ৩০টি জেলা। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবনের প্রাণীবৈচিত্র্য। সরকারি হিসাবেই ৩,৩৪৭ জন মানুষ নিহত, ৫৫,২৮২ জন আহত এবং ৮৭১ জন নিখোঁজ হন। গবাদিপশু মারা যায় ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৭টি। নষ্ট হয়ে যায় ৬ লাখ টনের বেশি ধান। বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ বলে ঘোষণা করে।
রুয়ানু
২০১৬ সালে ২১ মে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশের উপকূলে এবং ভারতে আংশিক আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রুয়ানু। মালদ্বীপ এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করেছিল। ‘রুয়ানু’ শব্দটিও মালদ্বীপের। এর অর্থ হচ্ছে নারিকেলের ছোবড়ার তৈরি দড়ি।
পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় রুয়ানু এর উৎপত্তিস্থল। ধারণা করা হয়, ঘূর্ণিঝড় রুয়ানুর ব্যাপ্তি ছিল দুটি বাংলাদেশের সমান আকৃতির। তবে একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে পড়ায় তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি এটি।
সরকারি হিসাবে এ ঝড়ের আঘাতে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। লক্ষাধিক ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাসে অধিকাংশ উপকূলীয় জেলার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আইলা
২০০৯ সালে ২১ মে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয় এ ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা এর নামে রাখেন ‘আইলা’, যার অর্থ ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। ২৫ মে ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে।
আইলার আঘাতে খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রাণ হারান ১৯৩ জন মানুষ। উপকূলের প্রায় ২,০০,০০০ একর কৃষিজমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। পর পর দুই মৌসুম কৃষিকাজ না হওয়ায় প্রায় আট লাখ টন খাদ্যঘাটতি সৃষ্টি হয়। জলোচ্ছ্বাস ও লোনা পানির প্রভাবে, প্রায় দুই হাজার গবাদিপশু মারা যায়। কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় প্রায় আড়াই লাখ ঘরবাড়ি। ভারতে অন্তত ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়।