দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতুর উদ্বোধন ২৫ মে
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি | ২২ মে, ২০১৯ ২০:২৩
দেশের ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মানেই এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। যানজটের কারণে বিগত সাত থেকে আট বছর ধরে এ মহাসড়কের অপর নাম ভোগান্তি।
কুমিল্লা থেকে ঢাকার যাতায়াত সময় পৌনে দুই ঘণ্টার মতো হলেও কখনো কখনো এ যাত্রায় নয় থেকে দশ ঘণ্টাও লেগে যায়। এর কারণ ছিল- অতিরিক্ত যানবাহন আর চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই লেনের মেঘনা ও গোমতী সেতু।
অবশেষে এ ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। আগামী ২৫ মে (শনিবার) মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় গোমতী সেতু খুলে দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত সেতু দুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু দুটি খুলে দিলে ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা অনেকটা যানজটমুক্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সূত্রমতে, জাতীয় এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। গোমতী-মেঘনা এ দুই সেতুর টোলপ্লাজা অতিক্রম করতে গিয়ে যানজটের মুখোমুখি হতে হয় যাত্রীদের। নিত্যদিনের যানজটের কারণে মহাসড়কটি মহাভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে। বিগত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে চলমান এ ভোগান্তির অবসানে ২০১৬ সালে দ্বিতীয় গোমতী-মেঘনা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গোমতী নদীর ওপর ১৭ টি স্প্যানের ১ হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় গোমতী সেতু এবং সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর ওপর ১২টি স্প্যানের ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণ করা হয়।
মেঘনা সেতুর প্রকৌশলী আমিনুল করিম জানান, ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় মেঘনা সেতুতে একটি জয়েন্ট এক্সপানশন রয়েছে। যার ফলে এই সেতুতে যানবাহন চলাচলে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না। খুব দ্রুতগতিতে সেতুতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরোনো মেঘনা সেতুটি দুই লেনের হলেও নতুনটি চার লেনের। অর্থাৎ দু’টি সেতুতে মোট লেন রয়েছে ছয়টি। চার লেনের সড়ক দিয়ে যানবাহন এসে দু’টি সেতুতে ছয় লেনে চলাচল করতে পারবে। ফলে আগের মতো সেতুর কারণে আর যানজট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। সেতুগুলো এখন যানজটমুক্ত থাকবে।
এই মহাসড়কে চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহনের চালক জানান, এই মহাসড়কে প্রতিদিন চলাচল করা যে কত কষ্টের তা বলে শেষ করা যাবে না। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার তো আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে এই মহাসড়ক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এই সড়কে। চরম ভোগান্তি বলতে যা বোঝায়, তার সবটাই আমরা ভোগ করে আসছি। তবে এবার আশা করছি নতুন সেতুটি খুলে দেওয়া হলে আর ভোগান্তি থাকবে না। আমরা একটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারব। যাত্রীরাও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
সেতু দু’টির প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান জানান, পুরোনো দুই লেনের সেতু দুটিরও সংস্কারকাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরোনো দুটি সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হবে। আশা করছি এবার ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত থাকবে।
তিনি আরও জানান, ১৯২ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ–ভারতের সংযোগস্থলের পাশাপাশি দেশের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগেরও প্রধান মাধ্যম।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রবেশদ্বার দাউদকান্দির গোমতী সেতু এলাকার প্রতিনিয়ত যানজটের ধাক্কা কিছুটা আমার গায়ে লাগত। আমি মনে করি চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার মেঘনা ও মেঘনা গোমতী দ্বিতীয় সেতু।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি | ২২ মে, ২০১৯ ২০:২৩

দেশের ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মানেই এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। যানজটের কারণে বিগত সাত থেকে আট বছর ধরে এ মহাসড়কের অপর নাম ভোগান্তি।
কুমিল্লা থেকে ঢাকার যাতায়াত সময় পৌনে দুই ঘণ্টার মতো হলেও কখনো কখনো এ যাত্রায় নয় থেকে দশ ঘণ্টাও লেগে যায়। এর কারণ ছিল- অতিরিক্ত যানবাহন আর চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই লেনের মেঘনা ও গোমতী সেতু।
অবশেষে এ ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। আগামী ২৫ মে (শনিবার) মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় গোমতী সেতু খুলে দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত সেতু দুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু দুটি খুলে দিলে ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা অনেকটা যানজটমুক্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সূত্রমতে, জাতীয় এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। গোমতী-মেঘনা এ দুই সেতুর টোলপ্লাজা অতিক্রম করতে গিয়ে যানজটের মুখোমুখি হতে হয় যাত্রীদের। নিত্যদিনের যানজটের কারণে মহাসড়কটি মহাভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে। বিগত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে চলমান এ ভোগান্তির অবসানে ২০১৬ সালে দ্বিতীয় গোমতী-মেঘনা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গোমতী নদীর ওপর ১৭ টি স্প্যানের ১ হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় গোমতী সেতু এবং সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর ওপর ১২টি স্প্যানের ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণ করা হয়।
মেঘনা সেতুর প্রকৌশলী আমিনুল করিম জানান, ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় মেঘনা সেতুতে একটি জয়েন্ট এক্সপানশন রয়েছে। যার ফলে এই সেতুতে যানবাহন চলাচলে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না। খুব দ্রুতগতিতে সেতুতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরোনো মেঘনা সেতুটি দুই লেনের হলেও নতুনটি চার লেনের। অর্থাৎ দু’টি সেতুতে মোট লেন রয়েছে ছয়টি। চার লেনের সড়ক দিয়ে যানবাহন এসে দু’টি সেতুতে ছয় লেনে চলাচল করতে পারবে। ফলে আগের মতো সেতুর কারণে আর যানজট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। সেতুগুলো এখন যানজটমুক্ত থাকবে।
এই মহাসড়কে চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহনের চালক জানান, এই মহাসড়কে প্রতিদিন চলাচল করা যে কত কষ্টের তা বলে শেষ করা যাবে না। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার তো আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে এই মহাসড়ক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এই সড়কে। চরম ভোগান্তি বলতে যা বোঝায়, তার সবটাই আমরা ভোগ করে আসছি। তবে এবার আশা করছি নতুন সেতুটি খুলে দেওয়া হলে আর ভোগান্তি থাকবে না। আমরা একটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারব। যাত্রীরাও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
সেতু দু’টির প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান জানান, পুরোনো দুই লেনের সেতু দুটিরও সংস্কারকাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরোনো দুটি সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হবে। আশা করছি এবার ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত থাকবে।
তিনি আরও জানান, ১৯২ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ–ভারতের সংযোগস্থলের পাশাপাশি দেশের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগেরও প্রধান মাধ্যম।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রবেশদ্বার দাউদকান্দির গোমতী সেতু এলাকার প্রতিনিয়ত যানজটের ধাক্কা কিছুটা আমার গায়ে লাগত। আমি মনে করি চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার মেঘনা ও মেঘনা গোমতী দ্বিতীয় সেতু।